করোনায় একজন প্রবাসী ll
করোনায় একজন প্রবাসী
১৬তম পর্ব।
একজন প্রবাসী বিয়ের পর স্বাভাবিকভাবে টাকা পয়সা নিজের স্ত্রীর কাছে পাঠায় কারণ এই সম্পর্কটা হলো সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক। যৌথ পরিবারও হলে মা বাপকে সংসার খরচ দিয়ে কিছু টাকা গচ্ছিত করতে চায় প্রত্যেক প্রবাসী । অনেক পরিবারে একটার পর একটা সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে প্রবাসী লোকটার জন্য বিয়ে করার টাকাই থাকে না । যেহেতু বিয়ের পর সংসারের অবস্থা দেখে মন খারাপ হয় বউয়ের সেই স্বামীকে পরামর্শ দিতে থাকে টাকা সঞ্চয় করার জন্য । বহু নারী আছে স্বামীর টাকা আমানত মনে করে এক টাকাও খরচ করে না । আজকাল প্রবাসী দেখলে বীমা করতে ধরে বীমাকারী তাহাছাড়া আছে ব্যাংক ডিপোজিট আছে আরো পোষ্ট অফিসে এককালীন জমা । এইসবের জন্য একজন প্রবাসী তাঁর স্ত্রীর উপরই ভরসা করতে হয় তাই একজন মানবিক ও সৎ নারী প্রত্যেক স্বামী অবশ্যই কামনা করে । কথায় বলে ’সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে”।
বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসংখ্য প্রবাসীও বহুগামী হয়ে একের অধিক নারীর মোহগ্রস্ত হচ্ছে। মধ্যপাচ্যে কঠোর আইনের কারণে এরাবিয়ান নারী হতে প্রবাসীরা দুরে থাকলেও বিভিন্ন মাধ্যমে অনেকে দেশে অন্য নারীর সাথে জড়িয়ে পড়ছে। টাকা পয়সা খরচ করে শেষ পর্যন্ত প্রচণ্ড প্রতারিত হয়ে চুপ থাকে মান সম্মান হারানোর ভয়ে। মাঝে মাঝে শুনা যায় ইউরোপ প্রবাসীরা ওখানে বিয়ে করে বউ বাচ্চা ফেলে এসে আবার দেশেও বিয়ে করে
তেমনি মালেয়শিয়াও অনেক বাংলাদেশের লোক বিয়ে করে দেশে আর আসেনি , লেবাননের কথাও বলা যায় তবে তা খুবই নগণ্য । এক সময় পাকিস্তান যেত মানুষ রোজগার করার জন্য প্রথমে ভারত তারপর ভারত হতে সীমান্ত পার হয়ে পাকিস্তান যেত।
করাচীর গলিতে গলিতে যেমন বাংলাদেশের লোক আছে তেমনি বাঙ্গালী কলোনিও আছে। আশির দশকে ফেনী জেলার শত শত লোক পাকিস্তান প্রবাসী হয়েছে । কিছু লোক ফেরত চলে আসলেও বহু লোক পাকিস্তান হতেই ইউরোপ এবং মধ্যপাচ্য প্রবাসী হয়েছে । আবার বহু লোক বিয়ে করে স্থায়ী নিবাস গঠেছে। এখন যেমন রোহিঙ্গা আমাদের দেশ হতে মালয়শিয়া যায় ঠিক তেমন ।
রেমিট্যান্সের শতকরা আশি ভাগই আসে মধ্যপাচ্য হতে অথচ এই লোকগুলি অবহেলার স্বীকার হয় ঘরে বাহিরে এবং এরা বেশীর ভাগই কষ্টের কাজ করে । অফিস ও রাস্তা পরিস্কার , বাসা বাড়ির ব্যক্তিগত ড্রাইভার , কৃষি কাজ , নির্মাণ শ্রমিক (দালানের যাবতীয় কাজ) , দোকানপাট ও হোটেল রেস্তোরাঁয় , অল্প অসংখ্য লোক ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার শিক্ষক ও অফিসিয়াল জব করে । আবার এরাবিয়ানের নাম ব্যবহার করে নিজের ব্যবসা বাণিজ্যে আছে স্বল্প সংখ্যক দেশী লোক , মাত্র দুই এক পারসেন্ট লোক বাটপারি ও ধান্ধবাজি নিয়ে ব্যস্ত । আর এই দুই এক পারসেন্টের জন্য কখনো কখনো কলষ্কিত হয় পুরো বাংলাদেশ । এরা এতই বেপরোয়া থাকে যে সব ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করে । ভিসার দালালি খুবই সাধারণ কাজ এদের জন্য এরা করে মাদকের কারবার , এরা করে ভাড়ায় সন্ত্রাসী , এরা করে চুরি এরা করে অবৈধ টেলিফোন ব্যবসা , এরা করে হুন্ডির ব্যবসা ।
কিছু লোকতো সাপ্লাই ( শ্রমিক ভাড়ায় খাটানো ) এর ব্যবসা করে চল চাতুরির আশ্রয় নিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে । এরাবিয়ানের নামে কাগজ পত্র করে নিরহ শ্রমিক সংগ্রহ করে বিভিন্ন কাজে দেয় এরা । মুল জায়গা হতে ঘন্টায় যেত রিয়েল নেয় তার অর্ধেক হয়তো তারও কম শ্রমিকদের দেয় । সবচেয়ে দুঃখজনক হলো কোন কোন সাপ্লাই ( আমাদের দেশীয় লোক ) নিরহ শ্রমিকের মজুরি সামন্য কিছু দিয়ে ( কেউ কেউ একদম না দিয়ে ) অফিস বন্ধ করে পালিয়ে যায় তবে তারা কাজের টাকা ঠিকই নিয়ে নেয়। আবার কেউ কেউ দুই চার মাস হলে এক মাসের পয়সা দেয় বাকি পয়সা ঘুরাতে থাকে শ্রমিক বিপদে পড়ে কাজ ছাড়তে পারে না আবার মজুরি চাইলে খারাপ ব্যবহার করে । আর এইসবই করে আমাদের কিছু বাংলাদেশী লোক যাদের সাথে সম্পর্ক থাকে দেশী বিদেশী বড় বড় লোকদের। এই বৈধ ব্যবসার আড়ালে চলে হরেকরকম অবৈধ কাজকারবার । (চলবে)।
করোনায় একজন প্রবাসী।
১৭তম পর্ব ।
মাঝে মাঝে আমাদের কর্মকান্ডে বিরক্ত হয়ে ভিসা বন্ধ করে দেয় বিভিন্ন দেশ। যেমন সৌদি আরব ২০০৮ সালে একবার বন্ধ করে দেওয়ার পর বহুদিন ভিসা বন্ধ ছিল পরে সরকার অনেক দেনদরবার করে চালু করে করে। কুয়েত , কাতার , ওমান ও আরব আমিরাত ভিসা বন্ধ করে বহুবার । দক্ষিন এশিয়ার দেশ মালয়শিয়াও ভিসা জালিয়াতির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার হলো সৌদি আরব সেখানে বৈধ অবৈধ মিলে প্রায় বিশ লাখ শ্রমিক কাজ করে । দক্ষ অদক্ষ সব ধরনের মিলে বিশাল শ্রম বাজার হলো এই সৌদি আরব। অবশ্যই প্রতি বছর প্রচুর লোক আমাদের দেশ হতে ওমরা ও হজ্ব করতেও যায় সৌদি অারব। শুধু এইবার করোনা মহামারীর কারণে রমজানে ওমরা কোরবানে হজ্ব বন্ধ থাকায় মুসলিম জনগণ হজ্ব করতে যায়নি । ধর্মীয় তীর্থ স্থান মক্কা মদিনা সৌদি আরব হওয়ায় মুসলিম শ্রমিকদের কাছে সৌদি আরবের একটা আলাদা মর্যদা রয়েছে। মানুষের মনে একটা আশা থাকে যে টাকা রোজগার করি আর না করি আল্লাহের ঘর দেখে আসতে পারবো।
সৌদি আরবের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যেমন তেল হতে আসে তেমনি হজ্ব এবং ওমরার ভিসা হতেও আসে । এই হজ্ব ওমরার কারণে মক্কা মদিনায় গঠে উঠেছে অসংখ্য হোটেল মোটেল ও রেস্তোরাঁ । মক্কা মদিনা ও তায়েব সারা বছর থাকে লোকারণ্য এবং ব্যবসা বাণিজ্যে জমজমাট। মক্কায় মসজিদ হারাম এবং মদিনায় মসজিদ নবী নয়াভিরাম স্থাপত্য মানুষকে করে মুগ্ধ। সামর্থ্য থাকলে প্রত্যেক মুসলিমের একবার ইসলামের তীর্থ স্থানে এসে নিজেকে সহী শুদ্ধ করা উচিত। এই সৌদিতে আছে আল্লাহর কুদরতীতে সৃষ্টি পানি জমজম , যা দুনিয়ার সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও সবচেয়ে মান সম্মত । পৃথিবীর ঝানু ঝানু বৈজ্ঞানিক এই পানি পরীক্ষা করে দেখে বলেছে সমস্ত উপদান এই পানিতে বিদ্যমান । এই পানি ইসলামের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং মানসম্মত বলে সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে পবিত্র । সারা দুনিয়ার আনাছে কানাছে যেখানেই মুসলিম আছে নিজেকে আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণভাবে সমর্পণ করতে ছুটে আসে সৌদি আরবে। হজ্বের সময় তিল ধারণের ঠায় হয় না মক্কা মদিনায় , লক্ষ লক্ষ মানুষের মুখে থাকে একটি শব্দ “আল্লাহুমা লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক”। ওমরা এবং হজ্বের সময় বহু প্রবাসী অবৈধ হলেও ভাত পানি বিক্রি করে প্রচুর রোজগার করে। এমনও দেখা যায় অন্য সময় বেকার থেকে শুধু দুই ঈদের সময় কাজ করে ভালো রোজগার করে ফেলে।
তবে এই সময় সাড়াশি পুলিশী অভিযান থাকে । রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুটপাতে কোন কিছু বিক্রির অনুমতি নাই সৌদি আরবে। তারপর বহু দেশী (অনেক আছে অবৈধ) ভাত পানি বাদেও ফলমূল হতে যাবতীয় জিনিসপত্রের হকারী করে, কিছু লোক আবার হুইল চেয়ারও ভাড়ায় চালায় । অনেক হাজ্বী বৃদ্ধ বলে অসুস্থ হয়ে পড়ে তাদের চলাফেরা কষ্ট হয় তাই হুইল চেয়ার ব্যবহার করে আর প্রবাসীরা এই সুযোগে ভালো রোজগার করতে পারে । কেউ কেউ নিজের থাকার বাসা রুম ভাড়া দিয়ে দেয় হাজ্বীদের কাছে তারা ওই সময় কোন রকম জান বাঁঁচিয়ে রাখে এখানে সেখানে থেকে। অনেকে আছে বাড়ী ভাড়ার ব্যবসাও করে কারণ হজ্বের সময় ভাড়া তিন/চার গুণ বেশী থাকে। দেশের অনেক নামী দামী লোকজন সৌদিতে বাড়ী ভাড়ার ব্যবসায় জড়িত। যেমন ফেনীর স্টার লাইন গ্রুপ বহু বছর ধরে নিজস্ব লোক দিয়ে ব্যবসা করে আসছে। তাদের মত এমন আরো বহু আছে।
প্রিয়জনহীন নিঃসঙ্গ জীবনের কষ্ট অন্যজন অনুভব করতে চায় না । প্রবাসীরা মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করে অন্যের জন্য সুখের চাষ করে অহর্নিশ । যেসব সৌদি প্রবাসী হজ্ব ওমরা করে তারা কিছুটা মনের তৃপ্তি পায় এই ভেবে যে নিজের জন্য কিছু একটা করলাম মনের পর পরকালের একটা পুজি হলো । কবুল করার মালিক আল্লাহ । (চলবে)।
করোনায় একজন প্রবাসী ।
১৮ তম পর্ব ।
এখন আমার কোন সমস্যা মনে হয় না কাজে তাহাছাড়া কাজও তেমন একটা বেশী নাই এইদিকে গরমও কমে আসছে । বেশ কয়েক মাস কাজ করলাম কিছু ধার দেনা শোধ করেছি আরো কিছু বাকি আছে মনে হয় আর এক বছর লাগবে ঋণ পুরো শোধ করতে । ফকির শাহ না থাকলে এখানে হয়তো কাজ করতে পারতাম না , সহজ সরল আমার মত অশিক্ষিত কলকাতার এই লোকটি প্রবাসে ভাষা ধর্মের টানে আমাকে কাছে টেনে নিয়েছে । কাজে সহযোগিতা করেছে রান্না করে খেতে দিয়েছে কৃতজ্ঞ আমি তার কাছে।
আশপাশে কোন আলো নাই। অনেক দুরে দক্ষিন পূর্ব কোণে কোটি কোটি জোনাকির মত আলো জ্বলছে ওটা ছোটখাটো একটা শহর তার একটু দুরে স্থানীয় বিমান বন্দর। আমি তাবুর বাহিরে বসে আছি মৃদ মৃদ বাতাস আকাশে লক্ষ কোটি তারা । এখন রাতে একটু একটু ঠান্ডা পড়ে ভালো লাগে ঘুমাতে কিন্ত আজ ঘুম আসছে না । বিদেশ এসে কত কষ্টকর অভিজ্ঞতা মানুষ সঞ্চয় করে জানা হল। আমি এখন অবৈধ প্রবাসী পাসপোর্টই পরিচয় বাংলাদেশী আমি, দেশে যেতে হলেও শত ঝামেলা সয়ে তারপর এই দেশ ত্যাগ । আকাশের দিকে তাকাতে নিজের না পাওয়া বেদনায় আঁখি জলে ভরপুর হয়। স্বজনের মত তারা গুলি ঘুমে আচ্ছন্ন আর আকাশ পানে বিধাতার করুণা খোজ করি আমি। ভাবছি চাকরী নিয়ে লোক আসবে আর আসলে হয়তো আমাকে চলে যেতে হবে । কিন্তু কোথায় যাব আমি এই বিশাল আকাশের নিচে। এক টানা কয়েকমাস চাকরী করে ভুলে গিয়ে ছিলাম আমি এখানে বদলিতে আসছি ।
হঠাৎ এক ঘটনা মনে পড়ে তখন আমি ঢাকায় সবজির আড়তে চাকরী করি । এমনি এক রাতে ঘুম আসছে না আমি ছাদের উপরে উঠে বসে আছি । একটা লোক লুঙ্গি পরা গেন্জি গায়ে কাঁধে একটা ব্যাগ এবং হাতে বালতি , চুপ করে দেখে থাকলাম এত রাতে লোকটি কি করে। পোস্টার লাগায় দেয়ালে দেয়ালে এটা করে কিছু টাকা পাবে আর বউ বাচ্চার আহার হবে । পেটের দায় এত রাতে আরামের ঘুম হারাম করে পোস্টার লাগাচ্ছে । আমি উনার হতে ভালো আছি তেমনি আরো দশজন হতেও ভালো আছি । পরক্ষনে নিজেকে নিয়ে ভাবনা কমে গেল আমার বউ বাচ্চারাতো আর না খেয়ে থাকে না । আমিতো রাতেম আরামের ঘুম খারাপ করে কষ্ট করছি না । লক্ষ্যে পৌছতে হলে কষ্ট করে চেষ্টা করতে হবে।
সুনশান জনমানবশূন্য রাস্তায় শুধু সোড়িয়াম বাতি জ্বল জ্বল করছে। আগে এই রাস্তায় লক্ষ কোটি গাড়ির ছুটাছুটি ছিল পারাপারে বেগ পেতে হতো সেই রাস্তা মৃত এখন ১৪৪ ধারার কারণে । করোনা মহামারী সমস্ত মানব জাতিকে ঘর বন্ধি রেখে ক্ষমতাহীন করেছে। মরুভূমি হতে জানুয়ারীর মাঝে আজিজিয়ায় এক গুদামে রাতের পাহাদারের চাকরী পেয়ে চলে আসি। এখানে গুদামের সাথেই থাকার রুম , খাওয়ারও সমস্যা হয় না । এখন শীতকাল আরব দেশে মেঘ বাদলের দিন। ভেড়ার কাজে থাকলে কষ্ট হতো কারণ ভেড়ার বাচ্চা দেওয়ার সময় এখন আর এই সময় অনেক যত্ন নিতে হয় । রাতে বার বার দেখতে হয় , নতুন বাচ্চা দিলে সাথে সাথে দুধ খাওয়াতে হয় , আলাদা ঘরে রাখতে হয় যাতে ঠান্ডা না লাগে । প্রচন্ড নোংরা কাজ হতে এখন ভালোই আছি কিন্তু একমাস যেতেই করোনায় সব বন্ধ তবে আমার চাকরী চালু আছে। আমার চাকরী চালু থাকলেও ব্যবসা বাণিজ্য অফিস আদালত বন্ধ থাকায় বেতন পাচ্ছি না । এইখানে একমাস কাজ করতেই মহামারীর ধাক্কায় মার্চের নয় তারিখে সব বন্ধ হয়ে যায় । এক মাসের বেতন পেয়ে বিকাশ করে ভালোই করে ছিলাম না হয় বাড়িতেও সমস্যা হতো। বেতন পেলেই পাঠাই দিতে মন চায় পরে নিজে এইদিক সেদিক করি চলি এইবারও তাই কিন্তু হঠাৎ মহামারী সব এলোমেলো । (চলবে)।
করোনায় একজন প্রবাসী।
১৯ তম পর্ব।
সৌদি গৃহকর্তা ও তার ছেলে কুলসুম নামের এক বাংলাদেশী শিশু গৃহকর্মীর দুই হাঁটু ও কোমর ভেঙে চোখ উপড়ে মেরে ফেলে। অসহায় মেয়েটির বয়স ছিলো ১৪ বছর মাত্র। বাংলাদেশ সরকার সৌদি সরকারের কাছে এই শিশুটির হত্যার জন্য ন্যায্যবিচার দাবী করে কোন পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা এখনো শুনলাম না । দারিদ্রতার কাছে কতটা অসহায় হলে মা বাপ এই ছোট মেয়েকে বর্বর দেশে গৃহকর্মীর কাজ করতে পাঠায় ভেবে মন শিহরিত হয়। আর আমরাও কেমন মা বাবা এমন ছোট মেয়েকে বাঘের মুখে ঠেলে দিয়ে সুখ খুজি বুঝে আসে না । এইসব ভাবলে মন খারাপ হয় কান্না আসে অসহায় হয়ে দুঃখ লাগে। বাবা ভাই ও স্বামীরা সৌদি আরবের মানুষ প্রচণ্ড নারীর দেহ লোভী এই কথা কোন যুক্তি ছাড়া তোমরা বিশ্বাস করো । টাকার লোভে পড়ে নিজের ঘরের ইজ্জত আরবে প্রেরণ করে নিজের বিবেক ধ্বংস করছি আমরা । বিশাল হৃদয়ের মানুষ এবং বিশাল ব্যক্তিত্ববান মানুষ যেমন দুনিয়ায় কমে যাচ্ছে তেমনি উদরতা সহজ সরলতা ও মানবিকতা আজ মানুষের ভিতর কমে যাচ্ছে, এর ব্যতিক্রমও আছে।
বহু আগে আমাদের দেশ হতে হিন্দু কাজ করতে সৌদি আরব আসতে পারতো না । কিন্তু হিন্দু আসতো নিজের ধর্মীয় পরিচয় গোপন করে এই জন্য পাসপোর্টে মুসলিম নাম দিতে হতো । অবশ্যই তখন প্রযুক্তি এত আধুনিকও ছিল না হাতে লিখা পাসপোর্ট ছিল ইচ্ছামত নাম লিখে দিতো । এখন যে কোন ধর্মের লোক যেমন সৌদিতে স্বাগত তেমন ইউরোপের কিংবা আমেরিকার নাগরিক নর নারী হলেও বন্ধু হিসাবে একত্রে বাস করতে পারে ভ্রমনকারী হলে। অনেক ধর্মীয় কঠোর আইন সৌদিতে শিথিল করা হয়েছে বর্তমান শাসক আমলে। তাদের অভিমত আইন শিথিল করলে ভ্রমণকারী দেশটিতে আসবে এতে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে । শুধু তেলের উপর নির্ভর করে চলা সম্ভব না কারণ একসময় তেল ফুরিয়ে যেতে পারে। আমেরিকার সাথে যৌথভাবে সৌদি তেল কোম্পানি আরামকো প্রতিষ্ঠিত। তাহাছাড়া ইজরাঈল এর সাথে আরব বিশ্বের সম্পর্ক উন্নয়নে বর্তমান সৌদি রাজ পুত্রের বড় ভূমিকা আছে । আর প্রাচীন কাল হতে সৌদির পররাষ্ট্রনীতি চলে আমেরিকা পন্থী হয়ে ।
আমরা নিজের মেয়েদের ইচ্ছাকৃত আরবদের হাতে তুলে দিচ্ছি ভোগের পণ্য হিসাবে। চোদ্দ বছরের ছোট একটা মেয়েকে বয়স বাড়িয়ে গৃহকর্মী হিসাবে সৌদি পাঠায় তৃতীয় বিশ্বের বোকা অভিভাবক। এদের লেবাস ধর্ম কর্ম আইন সবই রাস্তায় , বাসায় এরা যৌন লিপ্সু কামুক আরবী যার ফল ছোট মেয়েটার লাশ বাংলাদেশে । এই জন্য ইন্দোনেশিয়া গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে ফিলিপাইনের গৃহকর্মী অনেকটা মানিয়ে নেয় কারণ ওদের দেশে ফ্রী সেক্সের প্রচলন আছে। বাংলার নারীর কাছে সৌদি রিয়েলের চেয়ে ইজ্জতের মূল্য অনেক বেশী তাই দেহ দিতে রাজি হয় না । যেহেতু গৃহকর্মী না দিলে পুরুষ শ্রমিকের ভিসা দিবে না সৌদি তাই সরকার কঠোর তদারকি করতে পারে যাতে কোনমতে কম বয়সের মেয়ে আসতে না পারে । আর অন্য নতুন নতুন দেশ খোঁজ করা উচিত যাতে শ্রমিক পাঠানো যায় । তবে সৌদিতে শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করা যাবে না কারণ রেমিট্যান্সের বড় বাজার সৌদি। আর ভিসা বন্ধ করলেও ওদের ক্ষতি হবে না কারণ তাদের শ্রমিকের অভাব পূরণ করবে ভারত ও নেপাল । আর ভারত এই সুযোগের অপেক্ষায় আছে অবিরাম। তাই বাংলাদেশী শ্রমিকের ভুলভ্রান্তি ভারতের প্রত্রিকায় বড় আকারে প্রচার করে, কেরালা ও হিন্দী ও উর্দু ভাষায় প্রত্রিকা বের হয় সৌদিতে যার পাঠক ও সম্পাদক লেখক সবই ভারতীয় । (চলবে)।
করোনায় একজন প্রবাসী।
২০তম প্রবাসী।
এই করোনা মহামারীর ভিতর খবর যে চারশত পঞ্চাশজন ভারতীয় লোক আটক যারা ভিক্ষা করতো সৌদি আরবে। শুধু এইটা নয় অতীতেও মদ জুয়া কিংবা অন্য অপরাধেও ভারতীয় লোক আটক হলে তাদের পত্রিকার খবর হয় না । এইতো কিছু দিন আগে জাবেদ নামে এক ভারতীয় কম্পিউটার ব্যবসায়ী প্রায় দুইকোটি টাকা মেরে কানাডায় চলে যায়। এমন কাজ বাংলাদেশের কেউ করলে প্রতিটি ভারতীয় এই খবর ফলাও করে প্রচার করতো। আগে এইখানে রাস্তাখাট পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার কর্মী ছিল একমাত্র বাংলাদেশী এখন সেটাতে ভারতীয় শ্রমিকও আসে। তবে নেপালীরা যে কোন কাজে আসে না । এবং বছরের পর বছর পড়েও থাকে না কারণ তাদের চাহিদা সামন্য আমাদের মত বিশাল নয় এবং পুরো পরিবার একজনের কাঁধের বোঝাও নয়। তারা আসেও শুধু বিমান ভাড়া দিয়ে তাই তেমন খরচ বেশী হয়না । আর আমরা আসতে লাগে আট দশ লাখ টাকা যা উঠাতে জীবন শেষ এরপর পুরো পরিবারের বোঝা বহনতো আছেই। অনেক ভারতীয় আছে কাজ করে না এরা ভারতীয় উপমহাদের শ্রমিকদের বাসায় বাসায় ভিন্ন মিথ্যা বলে ভিক্ষা করে । আমাদের দেশের লোক আগে বাথা হারা সাইকো কিংবা মক্কা মদিনায় হাত পাতলেও বর্তমানে একদম নাই তবে মক্কা মদিনায় পরিচ্ছন্ন কর্মীদের হাজ্বীরা এমনিতে টাকা পয়সা দেয়।
প্রচণ্ড গরমের দিনে রাস্তা পরিচ্ছন্ন কর্মীদের টাফিক সিগন্যালে দাঁড়ানো গাড়ি হতেও ঠান্ডা পানীয় ও টাকা দেয় কেউ কেউ। রামু নামের এক হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন কর্মী আট ঘন্টা ডিউটি শেষ করে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে মাসে দুই লাখ টাকা দেশে পাঠাতো । আর সে ছিল জেলের অশিক্ষিত সন্তান । এলাকার স্থানীয় বাজারে জায়গা কিনে দুই/তিনটা দোকান করেছে সে অথচ একদিন দিনে আনে দিনে খেতেও পারতো না । আরেক বৃদ্ধ লোক রাস্তার পরিচ্ছন্ন শ্রমিক যে কিনা ভারী কোন কাজ করার শক্তিও নাই সেও প্রতি মাসে এক লাখ টাকা দেশে পাঠাতো। ওই যে বললাম টাফিক সিগন্যালে দাঁড়ানো গাড়ি হতে সাহায্য করে আর উনাকে বৃদ্ধ দেখে সবাই সাহায্য করতো , উনি রাস্তার যে অংশ পরিস্কারের দায়িত্ব ছিলো তাতে আছে টাফিক জ্যাম এবং রাস্তার দুই পাশে দোকানপাট ও অফিস আদালত । একই জায়গায় অনেক বছর কাজ করায় উনি সবার পরিচিত অফিসের কিংবা দোকানেও পরিস্কার করার কাজ করে রোজগার করতে পারতো । এমন পছন্দমত জায়গায় কাজ করার জন্য কোম্পানির ফোরম্যানকে মাসে মাসে একটা কমিশন দিতে হয় । তারপরও লাভ আছে আর এইসব রোজগার করোনায় বন্ধ হয়ে যায় । এখন বেকার বসে মানুষের অতীত গল্প শুনি এবং শুনে।
আসলে ভাগ্য বলেও একটা ব্যাপার আছে। আমি সৌদিতে এসেই একের পর এক বিপদে পড়ছি । অধৈব হয়ে পড়া এবং স্থায়িত্বভাবে কোন চাকরীও না পাওয়া এখানে সেখানে গড়াগড়ি খাওয়া। গুদামঘরের রাতের পাহারাদার হয়ে কয়েক মাস কাজ করতে লাগে করোনার ঢেউ বন্ধ হয় যায় পুরো সৌদি আরব । মার্চের প্রথম সপ্তাহে সৌদির শিয়া বসতি এলাকা কাতিফে প্রথম ধরা পড়ে করোনা রোগী। বলা যেতে পারে শিয়াদের বাহারাইনে যাতায়াত বেশী কারণ সেখানে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ তবে শাসক সুন্নি । সৌদিসহ পুরো মধ্যপাচ্যে সুন্নি শাসক বিরোধী শিয়া সরকারী আনুগত্য মেনে চলেও এদের কঠোরভাবে নজরদারিতে রাখে। কাতিফে সামরিক আধাসামরিক বাহীনি সবসময় মোতায়েন থাকে তারপরও এরা সরকার বিরোধী সভা সমাবেশ করে এবং অকাতরে মরে ও জেলে যায়, যারা মরে তাদের অনেকের লাশও পাওয়া যায় না । এই কারণে ঝামেলা এড়াতে সরকার কাতিফকে প্রধান্য দেয় যাতে বিশৃঙ্খলা না হয় আর শিয়াদের ভয় করোনা যদি শিয়াদের প্রথম ধরা পড়ে সরকার বিমাতাসুলভ আচরণ করতে পারে তবে কোনটাই সঠিক হয়নি সরকার যথাযথ চিকিৎসা দিয়েছে এবং শিয়ারাও সরকারকে সহযোগিতা করছে। তবে করোনা খুবই দ্যূত সারা সৌদি আরবে ছড়িয়ে পড়ে এবং কারো কারো মতে রিয়াদ ও জেদ্দায় প্রথম করোনা রোগী পাওয়া যায়। আর পাওয়া যাওয়ার সাথে সাথেই বিশেষ ব্যবস্থা রেখে সৌদির সমস্ত সীমান্ত এবং বিমান বন্দর বন্ধ ঘোষণা করে এবং সারা সৌদিতে সান্ধ্য আইন জারি করে । (চলবে)।
১৬তম পর্ব।
একজন প্রবাসী বিয়ের পর স্বাভাবিকভাবে টাকা পয়সা নিজের স্ত্রীর কাছে পাঠায় কারণ এই সম্পর্কটা হলো সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক। যৌথ পরিবারও হলে মা বাপকে সংসার খরচ দিয়ে কিছু টাকা গচ্ছিত করতে চায় প্রত্যেক প্রবাসী । অনেক পরিবারে একটার পর একটা সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে প্রবাসী লোকটার জন্য বিয়ে করার টাকাই থাকে না । যেহেতু বিয়ের পর সংসারের অবস্থা দেখে মন খারাপ হয় বউয়ের সেই স্বামীকে পরামর্শ দিতে থাকে টাকা সঞ্চয় করার জন্য । বহু নারী আছে স্বামীর টাকা আমানত মনে করে এক টাকাও খরচ করে না । আজকাল প্রবাসী দেখলে বীমা করতে ধরে বীমাকারী তাহাছাড়া আছে ব্যাংক ডিপোজিট আছে আরো পোষ্ট অফিসে এককালীন জমা । এইসবের জন্য একজন প্রবাসী তাঁর স্ত্রীর উপরই ভরসা করতে হয় তাই একজন মানবিক ও সৎ নারী প্রত্যেক স্বামী অবশ্যই কামনা করে । কথায় বলে ’সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে”।
বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসংখ্য প্রবাসীও বহুগামী হয়ে একের অধিক নারীর মোহগ্রস্ত হচ্ছে। মধ্যপাচ্যে কঠোর আইনের কারণে এরাবিয়ান নারী হতে প্রবাসীরা দুরে থাকলেও বিভিন্ন মাধ্যমে অনেকে দেশে অন্য নারীর সাথে জড়িয়ে পড়ছে। টাকা পয়সা খরচ করে শেষ পর্যন্ত প্রচণ্ড প্রতারিত হয়ে চুপ থাকে মান সম্মান হারানোর ভয়ে। মাঝে মাঝে শুনা যায় ইউরোপ প্রবাসীরা ওখানে বিয়ে করে বউ বাচ্চা ফেলে এসে আবার দেশেও বিয়ে করে
তেমনি মালেয়শিয়াও অনেক বাংলাদেশের লোক বিয়ে করে দেশে আর আসেনি , লেবাননের কথাও বলা যায় তবে তা খুবই নগণ্য । এক সময় পাকিস্তান যেত মানুষ রোজগার করার জন্য প্রথমে ভারত তারপর ভারত হতে সীমান্ত পার হয়ে পাকিস্তান যেত।
করাচীর গলিতে গলিতে যেমন বাংলাদেশের লোক আছে তেমনি বাঙ্গালী কলোনিও আছে। আশির দশকে ফেনী জেলার শত শত লোক পাকিস্তান প্রবাসী হয়েছে । কিছু লোক ফেরত চলে আসলেও বহু লোক পাকিস্তান হতেই ইউরোপ এবং মধ্যপাচ্য প্রবাসী হয়েছে । আবার বহু লোক বিয়ে করে স্থায়ী নিবাস গঠেছে। এখন যেমন রোহিঙ্গা আমাদের দেশ হতে মালয়শিয়া যায় ঠিক তেমন ।
রেমিট্যান্সের শতকরা আশি ভাগই আসে মধ্যপাচ্য হতে অথচ এই লোকগুলি অবহেলার স্বীকার হয় ঘরে বাহিরে এবং এরা বেশীর ভাগই কষ্টের কাজ করে । অফিস ও রাস্তা পরিস্কার , বাসা বাড়ির ব্যক্তিগত ড্রাইভার , কৃষি কাজ , নির্মাণ শ্রমিক (দালানের যাবতীয় কাজ) , দোকানপাট ও হোটেল রেস্তোরাঁয় , অল্প অসংখ্য লোক ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার শিক্ষক ও অফিসিয়াল জব করে । আবার এরাবিয়ানের নাম ব্যবহার করে নিজের ব্যবসা বাণিজ্যে আছে স্বল্প সংখ্যক দেশী লোক , মাত্র দুই এক পারসেন্ট লোক বাটপারি ও ধান্ধবাজি নিয়ে ব্যস্ত । আর এই দুই এক পারসেন্টের জন্য কখনো কখনো কলষ্কিত হয় পুরো বাংলাদেশ । এরা এতই বেপরোয়া থাকে যে সব ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করে । ভিসার দালালি খুবই সাধারণ কাজ এদের জন্য এরা করে মাদকের কারবার , এরা করে ভাড়ায় সন্ত্রাসী , এরা করে চুরি এরা করে অবৈধ টেলিফোন ব্যবসা , এরা করে হুন্ডির ব্যবসা ।
কিছু লোকতো সাপ্লাই ( শ্রমিক ভাড়ায় খাটানো ) এর ব্যবসা করে চল চাতুরির আশ্রয় নিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে । এরাবিয়ানের নামে কাগজ পত্র করে নিরহ শ্রমিক সংগ্রহ করে বিভিন্ন কাজে দেয় এরা । মুল জায়গা হতে ঘন্টায় যেত রিয়েল নেয় তার অর্ধেক হয়তো তারও কম শ্রমিকদের দেয় । সবচেয়ে দুঃখজনক হলো কোন কোন সাপ্লাই ( আমাদের দেশীয় লোক ) নিরহ শ্রমিকের মজুরি সামন্য কিছু দিয়ে ( কেউ কেউ একদম না দিয়ে ) অফিস বন্ধ করে পালিয়ে যায় তবে তারা কাজের টাকা ঠিকই নিয়ে নেয়। আবার কেউ কেউ দুই চার মাস হলে এক মাসের পয়সা দেয় বাকি পয়সা ঘুরাতে থাকে শ্রমিক বিপদে পড়ে কাজ ছাড়তে পারে না আবার মজুরি চাইলে খারাপ ব্যবহার করে । আর এইসবই করে আমাদের কিছু বাংলাদেশী লোক যাদের সাথে সম্পর্ক থাকে দেশী বিদেশী বড় বড় লোকদের। এই বৈধ ব্যবসার আড়ালে চলে হরেকরকম অবৈধ কাজকারবার । (চলবে)।
করোনায় একজন প্রবাসী।
১৭তম পর্ব ।
মাঝে মাঝে আমাদের কর্মকান্ডে বিরক্ত হয়ে ভিসা বন্ধ করে দেয় বিভিন্ন দেশ। যেমন সৌদি আরব ২০০৮ সালে একবার বন্ধ করে দেওয়ার পর বহুদিন ভিসা বন্ধ ছিল পরে সরকার অনেক দেনদরবার করে চালু করে করে। কুয়েত , কাতার , ওমান ও আরব আমিরাত ভিসা বন্ধ করে বহুবার । দক্ষিন এশিয়ার দেশ মালয়শিয়াও ভিসা জালিয়াতির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার হলো সৌদি আরব সেখানে বৈধ অবৈধ মিলে প্রায় বিশ লাখ শ্রমিক কাজ করে । দক্ষ অদক্ষ সব ধরনের মিলে বিশাল শ্রম বাজার হলো এই সৌদি আরব। অবশ্যই প্রতি বছর প্রচুর লোক আমাদের দেশ হতে ওমরা ও হজ্ব করতেও যায় সৌদি অারব। শুধু এইবার করোনা মহামারীর কারণে রমজানে ওমরা কোরবানে হজ্ব বন্ধ থাকায় মুসলিম জনগণ হজ্ব করতে যায়নি । ধর্মীয় তীর্থ স্থান মক্কা মদিনা সৌদি আরব হওয়ায় মুসলিম শ্রমিকদের কাছে সৌদি আরবের একটা আলাদা মর্যদা রয়েছে। মানুষের মনে একটা আশা থাকে যে টাকা রোজগার করি আর না করি আল্লাহের ঘর দেখে আসতে পারবো।
সৌদি আরবের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যেমন তেল হতে আসে তেমনি হজ্ব এবং ওমরার ভিসা হতেও আসে । এই হজ্ব ওমরার কারণে মক্কা মদিনায় গঠে উঠেছে অসংখ্য হোটেল মোটেল ও রেস্তোরাঁ । মক্কা মদিনা ও তায়েব সারা বছর থাকে লোকারণ্য এবং ব্যবসা বাণিজ্যে জমজমাট। মক্কায় মসজিদ হারাম এবং মদিনায় মসজিদ নবী নয়াভিরাম স্থাপত্য মানুষকে করে মুগ্ধ। সামর্থ্য থাকলে প্রত্যেক মুসলিমের একবার ইসলামের তীর্থ স্থানে এসে নিজেকে সহী শুদ্ধ করা উচিত। এই সৌদিতে আছে আল্লাহর কুদরতীতে সৃষ্টি পানি জমজম , যা দুনিয়ার সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও সবচেয়ে মান সম্মত । পৃথিবীর ঝানু ঝানু বৈজ্ঞানিক এই পানি পরীক্ষা করে দেখে বলেছে সমস্ত উপদান এই পানিতে বিদ্যমান । এই পানি ইসলামের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং মানসম্মত বলে সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে পবিত্র । সারা দুনিয়ার আনাছে কানাছে যেখানেই মুসলিম আছে নিজেকে আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণভাবে সমর্পণ করতে ছুটে আসে সৌদি আরবে। হজ্বের সময় তিল ধারণের ঠায় হয় না মক্কা মদিনায় , লক্ষ লক্ষ মানুষের মুখে থাকে একটি শব্দ “আল্লাহুমা লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক”। ওমরা এবং হজ্বের সময় বহু প্রবাসী অবৈধ হলেও ভাত পানি বিক্রি করে প্রচুর রোজগার করে। এমনও দেখা যায় অন্য সময় বেকার থেকে শুধু দুই ঈদের সময় কাজ করে ভালো রোজগার করে ফেলে।
তবে এই সময় সাড়াশি পুলিশী অভিযান থাকে । রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুটপাতে কোন কিছু বিক্রির অনুমতি নাই সৌদি আরবে। তারপর বহু দেশী (অনেক আছে অবৈধ) ভাত পানি বাদেও ফলমূল হতে যাবতীয় জিনিসপত্রের হকারী করে, কিছু লোক আবার হুইল চেয়ারও ভাড়ায় চালায় । অনেক হাজ্বী বৃদ্ধ বলে অসুস্থ হয়ে পড়ে তাদের চলাফেরা কষ্ট হয় তাই হুইল চেয়ার ব্যবহার করে আর প্রবাসীরা এই সুযোগে ভালো রোজগার করতে পারে । কেউ কেউ নিজের থাকার বাসা রুম ভাড়া দিয়ে দেয় হাজ্বীদের কাছে তারা ওই সময় কোন রকম জান বাঁঁচিয়ে রাখে এখানে সেখানে থেকে। অনেকে আছে বাড়ী ভাড়ার ব্যবসাও করে কারণ হজ্বের সময় ভাড়া তিন/চার গুণ বেশী থাকে। দেশের অনেক নামী দামী লোকজন সৌদিতে বাড়ী ভাড়ার ব্যবসায় জড়িত। যেমন ফেনীর স্টার লাইন গ্রুপ বহু বছর ধরে নিজস্ব লোক দিয়ে ব্যবসা করে আসছে। তাদের মত এমন আরো বহু আছে।
প্রিয়জনহীন নিঃসঙ্গ জীবনের কষ্ট অন্যজন অনুভব করতে চায় না । প্রবাসীরা মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করে অন্যের জন্য সুখের চাষ করে অহর্নিশ । যেসব সৌদি প্রবাসী হজ্ব ওমরা করে তারা কিছুটা মনের তৃপ্তি পায় এই ভেবে যে নিজের জন্য কিছু একটা করলাম মনের পর পরকালের একটা পুজি হলো । কবুল করার মালিক আল্লাহ । (চলবে)।
করোনায় একজন প্রবাসী ।
১৮ তম পর্ব ।
এখন আমার কোন সমস্যা মনে হয় না কাজে তাহাছাড়া কাজও তেমন একটা বেশী নাই এইদিকে গরমও কমে আসছে । বেশ কয়েক মাস কাজ করলাম কিছু ধার দেনা শোধ করেছি আরো কিছু বাকি আছে মনে হয় আর এক বছর লাগবে ঋণ পুরো শোধ করতে । ফকির শাহ না থাকলে এখানে হয়তো কাজ করতে পারতাম না , সহজ সরল আমার মত অশিক্ষিত কলকাতার এই লোকটি প্রবাসে ভাষা ধর্মের টানে আমাকে কাছে টেনে নিয়েছে । কাজে সহযোগিতা করেছে রান্না করে খেতে দিয়েছে কৃতজ্ঞ আমি তার কাছে।
আশপাশে কোন আলো নাই। অনেক দুরে দক্ষিন পূর্ব কোণে কোটি কোটি জোনাকির মত আলো জ্বলছে ওটা ছোটখাটো একটা শহর তার একটু দুরে স্থানীয় বিমান বন্দর। আমি তাবুর বাহিরে বসে আছি মৃদ মৃদ বাতাস আকাশে লক্ষ কোটি তারা । এখন রাতে একটু একটু ঠান্ডা পড়ে ভালো লাগে ঘুমাতে কিন্ত আজ ঘুম আসছে না । বিদেশ এসে কত কষ্টকর অভিজ্ঞতা মানুষ সঞ্চয় করে জানা হল। আমি এখন অবৈধ প্রবাসী পাসপোর্টই পরিচয় বাংলাদেশী আমি, দেশে যেতে হলেও শত ঝামেলা সয়ে তারপর এই দেশ ত্যাগ । আকাশের দিকে তাকাতে নিজের না পাওয়া বেদনায় আঁখি জলে ভরপুর হয়। স্বজনের মত তারা গুলি ঘুমে আচ্ছন্ন আর আকাশ পানে বিধাতার করুণা খোজ করি আমি। ভাবছি চাকরী নিয়ে লোক আসবে আর আসলে হয়তো আমাকে চলে যেতে হবে । কিন্তু কোথায় যাব আমি এই বিশাল আকাশের নিচে। এক টানা কয়েকমাস চাকরী করে ভুলে গিয়ে ছিলাম আমি এখানে বদলিতে আসছি ।
হঠাৎ এক ঘটনা মনে পড়ে তখন আমি ঢাকায় সবজির আড়তে চাকরী করি । এমনি এক রাতে ঘুম আসছে না আমি ছাদের উপরে উঠে বসে আছি । একটা লোক লুঙ্গি পরা গেন্জি গায়ে কাঁধে একটা ব্যাগ এবং হাতে বালতি , চুপ করে দেখে থাকলাম এত রাতে লোকটি কি করে। পোস্টার লাগায় দেয়ালে দেয়ালে এটা করে কিছু টাকা পাবে আর বউ বাচ্চার আহার হবে । পেটের দায় এত রাতে আরামের ঘুম হারাম করে পোস্টার লাগাচ্ছে । আমি উনার হতে ভালো আছি তেমনি আরো দশজন হতেও ভালো আছি । পরক্ষনে নিজেকে নিয়ে ভাবনা কমে গেল আমার বউ বাচ্চারাতো আর না খেয়ে থাকে না । আমিতো রাতেম আরামের ঘুম খারাপ করে কষ্ট করছি না । লক্ষ্যে পৌছতে হলে কষ্ট করে চেষ্টা করতে হবে।
সুনশান জনমানবশূন্য রাস্তায় শুধু সোড়িয়াম বাতি জ্বল জ্বল করছে। আগে এই রাস্তায় লক্ষ কোটি গাড়ির ছুটাছুটি ছিল পারাপারে বেগ পেতে হতো সেই রাস্তা মৃত এখন ১৪৪ ধারার কারণে । করোনা মহামারী সমস্ত মানব জাতিকে ঘর বন্ধি রেখে ক্ষমতাহীন করেছে। মরুভূমি হতে জানুয়ারীর মাঝে আজিজিয়ায় এক গুদামে রাতের পাহাদারের চাকরী পেয়ে চলে আসি। এখানে গুদামের সাথেই থাকার রুম , খাওয়ারও সমস্যা হয় না । এখন শীতকাল আরব দেশে মেঘ বাদলের দিন। ভেড়ার কাজে থাকলে কষ্ট হতো কারণ ভেড়ার বাচ্চা দেওয়ার সময় এখন আর এই সময় অনেক যত্ন নিতে হয় । রাতে বার বার দেখতে হয় , নতুন বাচ্চা দিলে সাথে সাথে দুধ খাওয়াতে হয় , আলাদা ঘরে রাখতে হয় যাতে ঠান্ডা না লাগে । প্রচন্ড নোংরা কাজ হতে এখন ভালোই আছি কিন্তু একমাস যেতেই করোনায় সব বন্ধ তবে আমার চাকরী চালু আছে। আমার চাকরী চালু থাকলেও ব্যবসা বাণিজ্য অফিস আদালত বন্ধ থাকায় বেতন পাচ্ছি না । এইখানে একমাস কাজ করতেই মহামারীর ধাক্কায় মার্চের নয় তারিখে সব বন্ধ হয়ে যায় । এক মাসের বেতন পেয়ে বিকাশ করে ভালোই করে ছিলাম না হয় বাড়িতেও সমস্যা হতো। বেতন পেলেই পাঠাই দিতে মন চায় পরে নিজে এইদিক সেদিক করি চলি এইবারও তাই কিন্তু হঠাৎ মহামারী সব এলোমেলো । (চলবে)।
করোনায় একজন প্রবাসী।
১৯ তম পর্ব।
সৌদি গৃহকর্তা ও তার ছেলে কুলসুম নামের এক বাংলাদেশী শিশু গৃহকর্মীর দুই হাঁটু ও কোমর ভেঙে চোখ উপড়ে মেরে ফেলে। অসহায় মেয়েটির বয়স ছিলো ১৪ বছর মাত্র। বাংলাদেশ সরকার সৌদি সরকারের কাছে এই শিশুটির হত্যার জন্য ন্যায্যবিচার দাবী করে কোন পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা এখনো শুনলাম না । দারিদ্রতার কাছে কতটা অসহায় হলে মা বাপ এই ছোট মেয়েকে বর্বর দেশে গৃহকর্মীর কাজ করতে পাঠায় ভেবে মন শিহরিত হয়। আর আমরাও কেমন মা বাবা এমন ছোট মেয়েকে বাঘের মুখে ঠেলে দিয়ে সুখ খুজি বুঝে আসে না । এইসব ভাবলে মন খারাপ হয় কান্না আসে অসহায় হয়ে দুঃখ লাগে। বাবা ভাই ও স্বামীরা সৌদি আরবের মানুষ প্রচণ্ড নারীর দেহ লোভী এই কথা কোন যুক্তি ছাড়া তোমরা বিশ্বাস করো । টাকার লোভে পড়ে নিজের ঘরের ইজ্জত আরবে প্রেরণ করে নিজের বিবেক ধ্বংস করছি আমরা । বিশাল হৃদয়ের মানুষ এবং বিশাল ব্যক্তিত্ববান মানুষ যেমন দুনিয়ায় কমে যাচ্ছে তেমনি উদরতা সহজ সরলতা ও মানবিকতা আজ মানুষের ভিতর কমে যাচ্ছে, এর ব্যতিক্রমও আছে।
বহু আগে আমাদের দেশ হতে হিন্দু কাজ করতে সৌদি আরব আসতে পারতো না । কিন্তু হিন্দু আসতো নিজের ধর্মীয় পরিচয় গোপন করে এই জন্য পাসপোর্টে মুসলিম নাম দিতে হতো । অবশ্যই তখন প্রযুক্তি এত আধুনিকও ছিল না হাতে লিখা পাসপোর্ট ছিল ইচ্ছামত নাম লিখে দিতো । এখন যে কোন ধর্মের লোক যেমন সৌদিতে স্বাগত তেমন ইউরোপের কিংবা আমেরিকার নাগরিক নর নারী হলেও বন্ধু হিসাবে একত্রে বাস করতে পারে ভ্রমনকারী হলে। অনেক ধর্মীয় কঠোর আইন সৌদিতে শিথিল করা হয়েছে বর্তমান শাসক আমলে। তাদের অভিমত আইন শিথিল করলে ভ্রমণকারী দেশটিতে আসবে এতে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে । শুধু তেলের উপর নির্ভর করে চলা সম্ভব না কারণ একসময় তেল ফুরিয়ে যেতে পারে। আমেরিকার সাথে যৌথভাবে সৌদি তেল কোম্পানি আরামকো প্রতিষ্ঠিত। তাহাছাড়া ইজরাঈল এর সাথে আরব বিশ্বের সম্পর্ক উন্নয়নে বর্তমান সৌদি রাজ পুত্রের বড় ভূমিকা আছে । আর প্রাচীন কাল হতে সৌদির পররাষ্ট্রনীতি চলে আমেরিকা পন্থী হয়ে ।
আমরা নিজের মেয়েদের ইচ্ছাকৃত আরবদের হাতে তুলে দিচ্ছি ভোগের পণ্য হিসাবে। চোদ্দ বছরের ছোট একটা মেয়েকে বয়স বাড়িয়ে গৃহকর্মী হিসাবে সৌদি পাঠায় তৃতীয় বিশ্বের বোকা অভিভাবক। এদের লেবাস ধর্ম কর্ম আইন সবই রাস্তায় , বাসায় এরা যৌন লিপ্সু কামুক আরবী যার ফল ছোট মেয়েটার লাশ বাংলাদেশে । এই জন্য ইন্দোনেশিয়া গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে ফিলিপাইনের গৃহকর্মী অনেকটা মানিয়ে নেয় কারণ ওদের দেশে ফ্রী সেক্সের প্রচলন আছে। বাংলার নারীর কাছে সৌদি রিয়েলের চেয়ে ইজ্জতের মূল্য অনেক বেশী তাই দেহ দিতে রাজি হয় না । যেহেতু গৃহকর্মী না দিলে পুরুষ শ্রমিকের ভিসা দিবে না সৌদি তাই সরকার কঠোর তদারকি করতে পারে যাতে কোনমতে কম বয়সের মেয়ে আসতে না পারে । আর অন্য নতুন নতুন দেশ খোঁজ করা উচিত যাতে শ্রমিক পাঠানো যায় । তবে সৌদিতে শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করা যাবে না কারণ রেমিট্যান্সের বড় বাজার সৌদি। আর ভিসা বন্ধ করলেও ওদের ক্ষতি হবে না কারণ তাদের শ্রমিকের অভাব পূরণ করবে ভারত ও নেপাল । আর ভারত এই সুযোগের অপেক্ষায় আছে অবিরাম। তাই বাংলাদেশী শ্রমিকের ভুলভ্রান্তি ভারতের প্রত্রিকায় বড় আকারে প্রচার করে, কেরালা ও হিন্দী ও উর্দু ভাষায় প্রত্রিকা বের হয় সৌদিতে যার পাঠক ও সম্পাদক লেখক সবই ভারতীয় । (চলবে)।
করোনায় একজন প্রবাসী।
২০তম প্রবাসী।
এই করোনা মহামারীর ভিতর খবর যে চারশত পঞ্চাশজন ভারতীয় লোক আটক যারা ভিক্ষা করতো সৌদি আরবে। শুধু এইটা নয় অতীতেও মদ জুয়া কিংবা অন্য অপরাধেও ভারতীয় লোক আটক হলে তাদের পত্রিকার খবর হয় না । এইতো কিছু দিন আগে জাবেদ নামে এক ভারতীয় কম্পিউটার ব্যবসায়ী প্রায় দুইকোটি টাকা মেরে কানাডায় চলে যায়। এমন কাজ বাংলাদেশের কেউ করলে প্রতিটি ভারতীয় এই খবর ফলাও করে প্রচার করতো। আগে এইখানে রাস্তাখাট পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার কর্মী ছিল একমাত্র বাংলাদেশী এখন সেটাতে ভারতীয় শ্রমিকও আসে। তবে নেপালীরা যে কোন কাজে আসে না । এবং বছরের পর বছর পড়েও থাকে না কারণ তাদের চাহিদা সামন্য আমাদের মত বিশাল নয় এবং পুরো পরিবার একজনের কাঁধের বোঝাও নয়। তারা আসেও শুধু বিমান ভাড়া দিয়ে তাই তেমন খরচ বেশী হয়না । আর আমরা আসতে লাগে আট দশ লাখ টাকা যা উঠাতে জীবন শেষ এরপর পুরো পরিবারের বোঝা বহনতো আছেই। অনেক ভারতীয় আছে কাজ করে না এরা ভারতীয় উপমহাদের শ্রমিকদের বাসায় বাসায় ভিন্ন মিথ্যা বলে ভিক্ষা করে । আমাদের দেশের লোক আগে বাথা হারা সাইকো কিংবা মক্কা মদিনায় হাত পাতলেও বর্তমানে একদম নাই তবে মক্কা মদিনায় পরিচ্ছন্ন কর্মীদের হাজ্বীরা এমনিতে টাকা পয়সা দেয়।
প্রচণ্ড গরমের দিনে রাস্তা পরিচ্ছন্ন কর্মীদের টাফিক সিগন্যালে দাঁড়ানো গাড়ি হতেও ঠান্ডা পানীয় ও টাকা দেয় কেউ কেউ। রামু নামের এক হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন কর্মী আট ঘন্টা ডিউটি শেষ করে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে মাসে দুই লাখ টাকা দেশে পাঠাতো । আর সে ছিল জেলের অশিক্ষিত সন্তান । এলাকার স্থানীয় বাজারে জায়গা কিনে দুই/তিনটা দোকান করেছে সে অথচ একদিন দিনে আনে দিনে খেতেও পারতো না । আরেক বৃদ্ধ লোক রাস্তার পরিচ্ছন্ন শ্রমিক যে কিনা ভারী কোন কাজ করার শক্তিও নাই সেও প্রতি মাসে এক লাখ টাকা দেশে পাঠাতো। ওই যে বললাম টাফিক সিগন্যালে দাঁড়ানো গাড়ি হতে সাহায্য করে আর উনাকে বৃদ্ধ দেখে সবাই সাহায্য করতো , উনি রাস্তার যে অংশ পরিস্কারের দায়িত্ব ছিলো তাতে আছে টাফিক জ্যাম এবং রাস্তার দুই পাশে দোকানপাট ও অফিস আদালত । একই জায়গায় অনেক বছর কাজ করায় উনি সবার পরিচিত অফিসের কিংবা দোকানেও পরিস্কার করার কাজ করে রোজগার করতে পারতো । এমন পছন্দমত জায়গায় কাজ করার জন্য কোম্পানির ফোরম্যানকে মাসে মাসে একটা কমিশন দিতে হয় । তারপরও লাভ আছে আর এইসব রোজগার করোনায় বন্ধ হয়ে যায় । এখন বেকার বসে মানুষের অতীত গল্প শুনি এবং শুনে।
আসলে ভাগ্য বলেও একটা ব্যাপার আছে। আমি সৌদিতে এসেই একের পর এক বিপদে পড়ছি । অধৈব হয়ে পড়া এবং স্থায়িত্বভাবে কোন চাকরীও না পাওয়া এখানে সেখানে গড়াগড়ি খাওয়া। গুদামঘরের রাতের পাহারাদার হয়ে কয়েক মাস কাজ করতে লাগে করোনার ঢেউ বন্ধ হয় যায় পুরো সৌদি আরব । মার্চের প্রথম সপ্তাহে সৌদির শিয়া বসতি এলাকা কাতিফে প্রথম ধরা পড়ে করোনা রোগী। বলা যেতে পারে শিয়াদের বাহারাইনে যাতায়াত বেশী কারণ সেখানে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ তবে শাসক সুন্নি । সৌদিসহ পুরো মধ্যপাচ্যে সুন্নি শাসক বিরোধী শিয়া সরকারী আনুগত্য মেনে চলেও এদের কঠোরভাবে নজরদারিতে রাখে। কাতিফে সামরিক আধাসামরিক বাহীনি সবসময় মোতায়েন থাকে তারপরও এরা সরকার বিরোধী সভা সমাবেশ করে এবং অকাতরে মরে ও জেলে যায়, যারা মরে তাদের অনেকের লাশও পাওয়া যায় না । এই কারণে ঝামেলা এড়াতে সরকার কাতিফকে প্রধান্য দেয় যাতে বিশৃঙ্খলা না হয় আর শিয়াদের ভয় করোনা যদি শিয়াদের প্রথম ধরা পড়ে সরকার বিমাতাসুলভ আচরণ করতে পারে তবে কোনটাই সঠিক হয়নি সরকার যথাযথ চিকিৎসা দিয়েছে এবং শিয়ারাও সরকারকে সহযোগিতা করছে। তবে করোনা খুবই দ্যূত সারা সৌদি আরবে ছড়িয়ে পড়ে এবং কারো কারো মতে রিয়াদ ও জেদ্দায় প্রথম করোনা রোগী পাওয়া যায়। আর পাওয়া যাওয়ার সাথে সাথেই বিশেষ ব্যবস্থা রেখে সৌদির সমস্ত সীমান্ত এবং বিমান বন্দর বন্ধ ঘোষণা করে এবং সারা সৌদিতে সান্ধ্য আইন জারি করে । (চলবে)।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
স্বপন রোজারিও (মাইকেল) ২৭/০৯/২০২০দারুণ।
-
আব্দুর রহমান আনসারী ০৭/০৯/২০২০নির্মম সত্য
-
Mousumi ০৬/০৯/২০২০Khub dukhajanak
-
কুমারেশ সরদার ০৬/০৯/২০২০বাহ্
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০৫/০৯/২০২০বড় সত্য কথা।