www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আমাদের হিমু

আমাদের হিমু

রাত ৩টার সময় যদি আপনার পাশে কাউকে অনুভব করেন, তাহলে নিশ্চয় ভাল লাগার কথা নয় । তার শরীরের গন্ধ নাকে আসছ । কম দামি আতরের কটু গন্দ । হিমু ভাবছে পাশ ফিরে তাকাবে কি না । টিনের উপর বৃষ্টির শব্দ জানান দিছে যে, ঝড় হচ্ছে ।
পাশের মানুষটা হটাত বলে উঠল, * ভাই ঘুম ভাংছে ?*
পাশ না ফিরেই উত্তর দিলাম, তাই ত মনে হচ্ছে ।
ভাই আমি জহির ।
আমি খুব আগ্রহ নিয়ে বললাম, কেমন আছেন জহির ভাই ?
জি, আলহামদুল্লিলা
ভাল । ভাইজান কি আমার পরিচয় জানতে চান ?
আপনার নাম জহির, বাহিরে বৃষ্টি ছিল, তাই এ মেস এর বারিন্দায় দাঁড়ান । আমার ঘরের দরজা খুলা থাকায় আপনার আগ্রহ জাগে । আপনি ঘরে ঢুকার
পর জানালা খোলা দ্যাখতে পান । বৃষ্টির পানি ভিতরে আসতে দেখে আপনি বন্ধ করে দেন । এক সময় বিছানায় বশে পড়েন । তার পর আর কিছু আপনার মনে নেই । ২ মিনিট হয় আপনি ঘুম থেকে উঠেছেন ।
জহির এর মুখ হা হএ গেল । তার জামির দাঁত পর্যন্ত দেখা গেল । সে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে বলল, ভাই কি সজাগ ছিলেন ?
আমার কাছ থেকে সে শুধু সবজান্তার একটা হাসি উপহার পেল।
ভাই কি আমার উপর রাগ করেছেন ?
আমি বললাম অবশ্যই করেছি, আপনার রুমে যদি কেউ না বলে ঢুকে পড়ে তাহলে কি আপনি খুশি হবেন ?
জহির এর মুখ ছুটো হয়ে গেল ।
রাতে কিছু খয়েছেন ?
জবাব পালাম না ।
চলেন লোকমান মিয়ার হোটেল থেকে খেয়ে আসি ।
জহির কিছু না বলে উঠে দাঁড়াল ।
আমরা বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বের হলাম ।
আমি খালি পা এ হাঁটছি, আর জহির একটু পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছে ।
লোকমান মিয়ার হোটেল সারারাত খুলা থাকে । লোকমান মিয়া দেখতে দানব এর মত । মাথার সব চুল সাদা ।
লোকমান মিয়ার সবচে প্রিয় জিনিস হল মোছ এ তা দেয়া । সে এক হাতে রান্না করবে, অন্য হাতে মোছে তা দিবে । কথা বলার সময় সে একি কাজ করতে থাকে । আমাকে দেখে সে এমন ভাব দেখাল যে সে চরম বিরক্ত । কিন্তু তার সব কর্মচারী যানে যে সে কতখানি খুসি ।
আমি বললাম, লোকমান ভাই কি খবর ?
আর খবর, বেচাকেনা নাই, খালি বাকি ।
আমার কাছে ত ভাই টাকা নাই ।
লোকমান বিড়বিড়েএ বলল, আমি কি তার কাছে টাকা চাইছি যে আমারে টাকার কথা শুনায় । তার টাকারে আমি ইএ করি ।
আমাদের সামনে ভাত দেওয়া হয়েছে । সাথে মুরগী, রুই মাছ, ডিম আর সালাদ । জহির ভাই এর টাসকি খাওয়ার মত অবস্থা । আমি যখন বললাম ভাই শুরু করেন । বেচারা ভাত এ হাত দিল । তার খাবার গতি বলে দিল তার খুদার পরিমান।
আমি আরাম করে সিগারেট ধরালাম। সিগারেট টা এক কর্মচারী আমার সামনে এনে রাখে গিয়াছিল। যখনি লোকমান মিয়ার হোটেল আসি, লোকমান মিয়ার লোক এক প্যাকেট বেন্সন টেবিল রেখে যায়। লোকমান মিয়া আমার রক্তের কেউ না। আমার সাথে যে তার ভাল সম্পর্ক, তাও না। তার পরও কেন জানি মানুষটা আমাকে ভালবাসে।
হিমু ভাই,
চোখ তুলে তাকাতে দেখলাম লোকমান মিয়ার হাতে একটা খাম।
সাইফুল ভাই আইছিল, কইল খুব দরকার। এই চিঠি আর একটা মোবাইল দিয়া গেসে।
লোকমান একটা মোবাইল পকেট থাকে বের করল।
মোবাইল দেখে জহির ভাই বলল, ভাই চাইনিজ মোবাইল। ১২০০ টাকা দাম। কথায় বলেনা, “ চাইনা, গেলে আর আসেনা “।
আমি জহির কে খুশি করার জন্য বললাম, “ কি, আমাকে চাইনিজ মোবাইল দেয়, কত বড় সাহস, সে জানে না আমি জাপান এর জিনিস ছাড়া অন্য কিছু ব্যাবহার করি না । ”
জহির ভাই আমার কথা শুনে খুশি হল।
প্রতেক মানুষ নিজের জ্ঞান দেখানোর চেষ্টায় থাকে। আমার এই ছুটো কথার কারনে জহির নামের মানুষটা কতখানি খুশি হল তা শুধু এইরকম অবস্থায় যারা পড়েছেন তারা জানেন।
জদিও মানুষকে খুসি করা হিমুদের কাজ নয়, তবুও আমি ত আর compiler না যে “ ; “ এর জন্য error দেখাবে।
জহির ভাই এর খাওয়া শেষ হয়েছে। তিনি আমাকে মোবাইল এর খুঁটিনাটি দেখাতে লাগলেন।
ইতিমধ্যে পান চলে আসেছে । আমরা পান খেতে খেতে বের হলাম। লোকমান মিয়াকে একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত না দিয়ে। পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে যারা ধন্যবাদ
এর ধার ধারে না। শুধু ভালবেসে যায়।
আমি হাঁটছি, পিছনে জহির ভাই। আমি বললাম, ভাই একটা গান ধরেন ত।
“ যদি তর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবা একলা চল রে “ এই গান কত শুনাছি, তবে মনে হল এই গান শুধু এই মানুষ টার কণ্ঠে ভাল শুনাছে।
হঠাত পুলিশ এর সিইরেন শুনা গেল। চারিদিকে কথাও পুলিশ এর দেখা নেই। একটু পর খেয়াল করলাম সিইরেন আমার মোবাইলেই বাজছে। মোবাইল এর রিংটোন ছিল এইটা।
মোবাইল ধরতেই সাইফুল এর কণ্ঠ, এই তুই কই ?
আমি মাঝ রাস্তায়, গাড়ি ঘোড়া নাই, শান্ত পরিবেশ। খালি পা, একটু টাণ্ডা লাগছে তবু খুব ভাল লাগছে।
সাইফুল এর মাথা এমনিতেই খারাপ, আরও খারাপ করে দিল আমার কথাগুলো।
সাইফুল কাঁদকাঁদ গলায় বলল, তর ভাবি আমাকে ফেলে চলে গেছে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১২৩৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৪/০২/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast