www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

হিয়ার দাহ্যে প্রিয় পর্ব ৭ ও ৮

#হিয়ার_দাহ্যে_প্রিয়
#তাবেরী ইসলাম
#পর্ব ৭

বুকের পাজরে লুকিয়ে রাখার প্রচেষ্টায় চোখে মুখে অধর চুয়ে দিচ্ছেন। আমিও যে কখন স্বপ্ন বুনে বসে আছি তাকে নিয়ে।

ভালোবাসার রোদ্দুরে বিধাতা এবার আমায় তাকে দান করেছেন। প্রাপ্তির প্রশান্তি নিয়ে বক্ষ স্থলের শার্ট খামচে ধরেছি। একি বেদনা নাকি সুখ উপলব্ধির মাত্রা লোপ পেয়েছে।

নেত্রপল্লব ভারি হয়ে আছে। অভিমানে পাহাড় জমে রয়েছে। তাহলে কেন সেদিন আমায় কষ্টের সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন একা।হুট করে একটা নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে বেগ পেতে হয়েছে। আমার পোশাক পড়া নিয়েও অযাচিত কথা বলেছেন।

পারবো না আমি বার হাত রঙ্গা কাপড় পড়ে হাটতে। তোমায় কিছুই করতে হবে না রিমু। উনার উক্ত কথায় চোখ তুলে থাকাতেই বললেন অবাক হয়ে তাকিয়ে লাভ নেই।

পড়তে হবে না তো ওইসব  তুমি যেমন আছো তেমনই চাই আমার। আমি বুঝি তোমার মনের কোণে কি চলছে??আমার বউয়ের সুন্দর্য কেবল আমি দেখলেই চলবে। আমার হৃদয় ধীরে ধীরে তোমাতে আসক্ত হয়ে উঠছে। অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে আমার আমি তোমার মাঝে।


দু হাত বাড়িয়ে চোখের জল মুছে দিলেন। বলছি না  ভালোবাসি তবে তোমাকেই আমার চাই।কোলে নিয়ে পাশে বসিয়ে দিলেন এত অভিমান করে আছো জান পাখি। আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললাম চুপ আমি কারো পাখি টাখি না। মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।

গত এক সপ্তাহ কেমন কেটে জানো। মনে হচ্ছিল আমি মরে যাব সব কষ্ট আমায়  ঘিরে ধরেছে, হাত ধরে বুকের বা পাশে ছোঁয়ালেন টিক এইখানে। আমি মাথা এলিয়ে দিলাম উনার বুকে। পকেট থেকে কিছু একটা বের করে গলায় পড়িয়ে দিলেন। শীতল স্পর্শ মনে ঝড় তুলছে। চুলের বাধন খুলে দিয়ে বিলি কাটতে লাগলেন৷

একি চুল গুলো খোলে দিলেন কেন?? আমার কিন্তু ভূতের ভয় আছে ভীষণ। উনি উচ্চস্বরে হেসে বললেন সিরিয়াসলি রিমু তুমি ওই সবে বিশ্বাস কর।পুরোপুরি  না করলেও কিছু করি বলে চুল বাধতে চাইলে উনি হাত ধরে ফেললেন। ইসসস কি করছ?? মিষ্টি মূহুর্ত নষ্ট কর না।

আবার বিলি কাটতে লাগলেন আমার ঘুম যেন গাঢ় হয়ে আসছে। কখন ঘুমিয়েছি বুঝতে পারি নি।

সিয়াম তাকিয়ে আছি রিমুর দিকে। ঘুম ঘোর মায়াবী মুখ ঠোঁটের উপর তিল আমাকে আরো কাছে টানে। এই প্রথম মনে হচ্ছে ওকে আমি অন্য রকম দেখছি।

হালকা বাতাসে কান শীতল হতেই আমার ঘুম উড়ে গেল।নড়েচড়ে উঠলাম আমার কমর তো মনে হচ্ছে ব্যথা হয়ে গেছে। মৃধু হাওয়ায় দাঁড়িয়ে গেছে লোম কোপ গুলো।

উনার বলিষ্ঠ হাত দ্বারা আমায় জড়িয়ে আছেন।আমার ধাক্কায় উনি ধরপড়িয়ে উঠে বিরক্তিময় ভাব ফুটিয়ে উঠলেন মুখে। ভ্রু নাচিয়ে জানতে চাইলেন কি??

এভাবে কেউ ঘুমায়??নিজেই তো আমায় জড়িয়ে ধরে ছিলে তো আমার কি দোষ বলেই দুষ্টু হাসি দিলেন। এসে রুমে আবার ঘুমিয়ে গেলাম।

রান্নার তোরজোর চলছে বেশ। আমি আর ভাবি মিলে সবকিছু তৈরি করে নিয়েছি। ফ্রেশ হয়ে ভাবছি এই শাড়ি কিভাবে পড়ব?? আম্মু যে দিয়ে গেলেন।

শাড়ি সামলাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়।শাড়ির কুচি ধরে ঠিক করছি এসময় উনি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলেন।ভাবুক দৃষ্টিতে বলেন এতক্ষণ লাগে শাড়ি পড়তে।

আমি করুণ চোখে তাকিয়ে আছি উনি হেসে ঠিক করে দিতে লাগলেন কুচি গুলো। পিছনের পিন গুলোও মেরে দিলেন। অদ্ভুত অনুভূতি গুলো এলোমেলো করে রেখেছে। আয়নার সামনে বসে গলার চেইনটা খুলতে যাব তখনই চোখ পাকিয়ে ছুটে এলেন সিয়াম।

হাতে খুব জোরে চেপে ধরে বললেন আমি কি বলেছি এটা গলা থেকে খুলতে?? এটা কখনো খুলবে না। না হলে এর শাস্তি পাবে। এমনিতেই কাল থেকে তুমি কথা কম বলছ

আমি আঁখি যুগল নামিয়ে নিলাম বলবো না আমি কিছুই এতো সহজে মনে মনে ঠিক করে নিলাম।থুতনি ধরে হাত উচু করে ফিসেল কন্ঠে বললেন এই নিরবতার মানে কি হ্যাঁ ধরে নিব আমি।

অবাক চাউনিতে উনার দিকে তাকালাম উনি ক্রুর হেসে চোখ টিপ মেরে দিলেন। এতো লাল নীল হয়ে যাচ্ছ কেন তুমি?হুম বলেই অধর স্পর্শ করে দিলেন গালে।

মুনা দৌড়ে আসতেই উনার থেকে দুরে দাঁড়িয়ে পড়লাম। এসেই বললো ছোট আম্মু আমাকে সাজিয়ে দাও না। ফুপির বর আসবে আমি না সাজলে চলে।

উনি বিরবির করে বলে উঠলেন মা মেয়ে বউ সবাই গুষ্টি শুদ্ধো সাজো,দিলো তো আমার রোমান্টিক মুড টাই নষ্ট করে। আমি হেসে উঠতেই উনি কপালে ভাজ তুলে থাকিয়ে বললেন আমারও সময় আসবে দেখে নিব তখন। চাচ্চু কি আমাদের বকা দিচ্ছো? উনি হাসি দিয়ে বললেন না আম্মু।

মুনাকে নিয়ে চলে এলাম অহনার কাছে ননদিনী আমার পুরো তৈরি হয়ে বসে আছে। লজ্জায় মাথা নিচু  করে বসে আছে। ভাবি ইস্কাপ বেধে ঠিক করে দিলেন।

ড্রয়িংরুমের আম্মু আব্বু ফুপি ফুপা নিয়াজ ভাইয়া সিয়াম বসে গল্পে মশগুল হয়ে উঠলেন। মারুফ চুপ করে বসে আছে মুনা আর লাবিব এটা ওটা বলে দুষ্টুমি করছে। মাহিন, লাবণ্য অহনার সাথে খুনশুটিতে ব্যস্ত।

মারুফের পাশে বসিয়ে দিলাম অহনাকে,ফুপি বলে উঠলেন মাশা আল্লাহ। ভাবি নাস্তাসহ মিষ্টির প্লেট এগিয়ে দিলেন। মিষ্টি মুখ করে নিলেন সবাই।

আংটি বদলের সময় লজ্জা লাল নীল হয়ে যাচ্ছে অহনা। লাবণ্য দুষ্টুমি স্বরে বলল ভাবি ভাইয়ার দিকেও একটু তাকাও।


--------_-------------------------------------------------------

পর্ব ৮

এর মধ্যে ফুপা বললেন আমাদের কিছু ব্যস্ততা আছে তাই আজকেই যদি কাবিনটা করে নেই তো ভালোই হয়।আব্বু বললেন আমরা সেই প্রস্তুতি নেই নি ফুপি বললেন নিতে হবে না আর যা হয়েছে ঠিক আছে। আমরা ব্যবস্থা করে এসেছি ভাইয়া তুমি বললেই হবে। এর পর কাবিন হয়ে গেলে ।

খাওয়া দাওয়া পর্ব সেরে সবাই চলে গেলেন। মারুফ আর লাবণ্য আজকে থেকে যাবে। আমি বেশ ক্লান্ত হয়ে গেছি শাড়ি বদলে ড্রেস পড়ে নিলাম। মুনা ঘুমিয়ে আছে  পাশে আমি চোখ ভুজে গা এলিয়ে দিলাম বিছানায়।

উনি এসেই আমার দিকে তীক্ষ্ণ ভাবে তাকিয়ে বললেন সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছি চলো রিমু। আমি বললাম হেটে যেতে পারব না। সিয়াম উৎসুক দৃষ্টিতে বললেন কোলে করে যেতে চাইছ তো বললেই হয়।

উনি বলতে যতটুকু দেরি হলো কোলে তুলে হাটতে বিলম্ব হলো না। আমি হচকচিয়ে চোখ খুলে উনার শার্টের কলার খামচে ধরলাম।উনি কিছু হয় নি এমন একটা ভাব প্রকাশ করলেন। সবাই দেখলে কি ভাববে বলেন? বলবো পা মছকে গেছে তোমার।

কি আশ্চর্য আপনি মিথ্যে বলবেন? তো কি হয়েছে??  মন যখন এক্সট্রা কেয়ার পেতে চায় তখন একটু মিথ্যে বলায় কিছু আসে যায় না। ছাদে এসে বসিয়ে দিলেন  ভাবির পাশে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে।

লজ্জায় অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে এখন। ভাবি বললেন কি সিয়াম এতো প্রেম প্রেম আগে দেখি নি?? কি ব্যাপার বলে সবাই হেসে উঠলেন। পায়ে একটু ব্যথা করছে বলে একটা জোর পূর্বক হাসি দিয়ে উনার হাতে চিমটি কাটলাম। সিয়াম আমার দিকে চেয়ে বললেন এখন থেকে একটু আধটু এসব দেখবেই।

মারুফ বার বার আড় চোখে তাকাচ্ছে অহনার দিকে,বেচারি কি বলবে বুঝতে পারছে না। আড্ডায় নিয়াজ ভাইয়াকে চাপিয়ে ধরা হলো একটা গানের জন্য। ভাবি এর মধ্যে ফুলের পাকড়া আর চা নিয়ে হাজির হলেন।

ভাইয়া গান গাইছেন ভাবি লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছেন। আমি পাকড়া খাচ্ছি এ দিকে সিয়াম লাবণ্যের সাথে নাচছেন। কি সু্যোগের ব্যবহার করছেন উনি?? অহনার কথায় আমার ধ্যান ভাঙ্গে। হেসে বলি ননদিনী কি হয়েছে? ভাবি আমি আসলে রুমে যেতাম।

চুপিচুপি চলে যাও আমি পরে মারুফকে পাঠিয়ে দিব। অহনা চলে গেল আমি এখনো সিয়ামের নাচ দেখছি। ভাইয়া হঠাৎ বললেন তোমরা বস আমি ট্রায়াড বায় বলে চলে গেলেন।

ভাবি মারুফকে সাথে নিয়ে গেছেন কিন্তু এই বান্দরনী তো চিপকে আছে সিয়ামের সাথে। এখনো হাত ধরে আছে। রাগে গজগজ করে চলে আসতে নিলে সিয়াম বললেন কি হলো তুমি কোথায় যাচ্ছ?

ভ্রু যুগল আপনাআপনি কুচকে এলো এড়িয়ে যেতে চাইলে উনি হাত ধরে বললেন যাবে কিভাবে? আমি যেতে পারব কিছু হবে না। লাবণ্য স্মিত হেসে ফিসফিসিয়ে বললো ভাই ভাবি তো মারাত্মক জেলাসি ফিল করছেন। আরেকটু ঝুকে সিয়ামের গালে একটা কিস করে চলে গেল ও।

কি মেয়ে!এই কাজিন কি এমন হয়?? ভাবনার মাঝেই হাত ঝাড়ি মেরে ছাড়িয়ে নিলাম। উনি এসেই সামনে দাড়ালেন চিবুকে আঙ্গুল রেখে ভাবুক দৃষ্টিতে বললেন এমন করছ কেন?

আমি পা বাড়ালাম এগিয়ে যেতে উনি কমর ধরে জড়িয়ে নিলেন নিজের সাথে। অনুভূতি অনেক কিছুই বলতে চাইছে কিন্তু রাগ গুলো প্রকাশ হতে দিচ্ছে না।কটমটে দৃষ্টিতে তাকাতেই দেখি উনি স্নিগ্ধ শান্ত চোখে গভীরভাবে চেয়ে আছেন।

ঠোঁটের মুচকি হাসি মুহূর্তেই প্রশান্তি বইয়ে দিচ্ছে। মাথা থেকে ওড়না নামিয়ে দিলেন। ওই চোখে তাকিয়ে থাকার সাধ্য আমার নেই।চোখ নামিয়ে নিতে চাইলে বলে উঠলেন একদম নামাবে না চোখ,আমি দেখতে চাই কতক্ষণ পার তুমি।

কপলের চুলে ফু দিচ্ছেন তাতেই শিউরে উঠছে মন আঁখি যুগল কিচে বন্ধ করে নিলাম। উবে গেল মনের কোণে জমে রাখা সকল রাগ ক্ষোভ। ছেড়ে দিয়ে দরজা লাগাতে গেলেই আমি চলে আসি রুমে। সবাই ঘুমিয়ে আছে তাই বেচে গেছি।

কাথা গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম রাজ্যের ঘুমে ভারি হয়ে আসছে। উনার হেচকা টানে বিরক্তিবোধ করলাম মুখে চ' উচ্চারিত হাওয়ার আগেই বললেন এত কিসের বড়াই? বেটা খবিশ আসছেন এখন মায়া দেখাতে বিরবির করে বললাম। উনার নিঃস্বাস পড়ছে আমার কানে এতোই যখন পুড়ে,তাহলে বলেই দৃঢ় করে নিলেন হাতের বাঁধন।


আমার চুলের একি অবস্থা হাতের নিচে পড়ে আছে উনার। ধাক্কা দিয়েই যাচ্ছি বিড়ালের হাড্ডি,ঘুম ঘুম চোখে বললেন সকাল সকাল এমন করছ কেন??তোমার এই ফরেঞ্জ চুল কি জন্ম থেকে?? বিস্মিত হয়ে বললাম মানে।

এই যে লালচে বাদামি তোমার চুল মনে হয় আমায় ইমপ্রেস করার জন্য রাঙ্গিয়েছ। চুলের কাটা দিয়ে চুল গুলো বেধে নিলাম। গলায় জ্বলছে আয়নায় দেখে আঁতকে উঠলায় লাল হয়ে আছে চুলকানির ফলে আরো লাল হয়ে গেছে।

নাস্তার টেবিলে অহনা দুষ্টুমি করে বললো ছোট ভাবি গলায় কি ? সিয়াম পুরন কেটে বললেন ওই তো ছোট একটা গিফট দিয়েছি। ভাবি আর অহনা হাসছে। আমি চলে এলাম রুমে।

বজ্জাত লোক আমাকে খেতেও দিলো না বেশরম। কি হবে বলো তো এত মনে মনে বকে?সামনেই উনি দাঁড়িয়ে আছেন বললেন রেডি হয়ে জলদি আসবে। বাহিরে আসতেই দেখলাম উনি বাইক নি দাঁড়িয়ে আছেন।

কলেজে দুটো ক্লাস নিয়ে মনে হচ্ছে ক্লান্ত হয়ে গেছি। ফোনের ভাইব্রেশনে হাতে নিতেই সিয়াম প্রবেশ করলেন রুমে। মিষ্টি ভাষিতে সবার সাথে বাক্য বিনিময় করে নিয়ে আসলেন আমায়।আমায় পাশে অপূর্ব স্যারের প্রতি উনার তীক্ষ্ণ নজর চোখ এড়ায় নি আমার।


চলবে----
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ২২৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৯/০১/২০২২

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast