www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মেট্রো বিগড়ালে

মেট্রো বিগড়ালে
স্বাতী বিশ্বাস

মেট্রো যে কত সময় বাঁচায় সে আমরা তাকে যতই গাল মন্দ করি।

ভাড়া বাড়ানো দরকার (যেন ভাড়া বাড়ালেই সব্বাই হাসিমুখে মেনে নেবেন), মেট্রোর যাত্রীরা যেন আজকাল ক্যামন হয়ে গেছে (শুধু আমি বাদে), এক্কেবারে যেন বনগাঁ লোকাল ( ভাবখানা এমন যেন বনগাঁ লোকাল এ কোনও সভ্য লোকজন যাতায়ত করেন না ), কেন ইনফ্রাস্ত্রাকচার না বাড়িয়ে উত্তরে আর দক্ষিণে ষ্টেশন বাড়িয়ে দিল। বেশ তো চলছিল দমদম থেকে টালিগঞ্জ অবধি (যেন সব সুবিধা একাই ভোগ করবো)। দু এক জন হয়ত বললেন, ‘এতে তো ওই সব অঞ্চলের বাসিন্দারা উপকৃত হচ্ছেন...’। অমনি হাউমাউ করে সম্মিলিত জনতা তাঁদের থামিয়ে দিলেন ( এ ধরনের একাত্ম বোধ সাধারণত দুর্বলের বিরুদ্ধেই হয়ে থাকে। দেখবেন আসল প্রতিবাদের ক্ষেত্রে এদের উপস্থিতি অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়না)। জমে ওঠে তর্ক বিতর্ক রোজ রোজ।

কিন্তু এ সব চলে স্বল্প সময়ের জন্য। যে যার গন্তব্যে পৌঁছে ওটা শিকেয় তুলে রাখেন পরের বারের জন্য। মাটির তলা দিয়ে, ওপর দিয়ে শহরের এক একটা স্টেশনে যাত্রী পরিসেবা চালিয়ে যাচ্ছে আমাদের এই কোলকাতার গর্ব। হাসপাতাল, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ব্যবস্থা চালিয়ে যেতে গেলে যে এক মুহূর্ত অসচেতন হলে চলেনা সেটা অন্তত আজকাল আর কাউকে বুঝিয়ে বলতে হয়না।


অনেক সময় অনেকেই ভারতের সাথে অন্যান্য দেশের তুল্যমূল্য বিশ্লেষণে বসে যান। কিন্তু, আমাদের এই পোড়ার দেশের সব কিছু লুটে পুটে খেয়েছে তো অনেকেই। শুধু পার্থিব ধন সম্পদ নিয়ে ক্ষান্ত হয়নি, চরিত্রের মাঝখানটাও অনেক ক্ষেত্রে চুরি করে নিয়ে গেছে। এ সব কথা কে কাকে বোঝাবে। যারা বোঝেনা তাঁদের বোঝাবার চেষ্টা করতে গেলেই নানা ভাবে পিছিয়ে আসতে হয়। আর যারা বুঝে গেছেন তারা চিরকালই অন্যর খুঁত ধরে বেড়ান, একবারও বলেন না যে, চলুন আমরা চেষ্টা করি এর একটা সমাধান করার।


যেটা বলছিলাম, উত্তর থেকে দক্ষিণের যোগাযোগ হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। দক্ষিণ কলকাতায় আড্ডা মেরে উত্তরের ডেরায় ফেরা একদম জলভাত। মনে হয় যেন পাশের পাড়ায় ঘুরতে গেছি।

আমি তো লোকজনকে জিজ্ঞাসা করি, “তোর বাড়ি থেকে মেট্রো ষ্টেশন কত দূর?” অর্থাৎ আমি তা হলে সেখানে অনায়াসে যেতে পারি। বন্ধুরাও জানে, যে কোনও একটা মেট্রো স্টেশনে আমায় নামিয়ে দেয়- তাতে সময় ও বাঁচে- হর্ন নেই (অসম্ভব রকমের হর্নের দাপট বেড়েছে ইদানীং)- অহেতুক ব্রেক কষে বাসের ঝাঁকুনি নেই।

তবুও মেট্রো গালি খায় – আসতে যেতে। বেচারা! এখন তো আবার অনেক মেট্রোই শীততাপ নিয়ন্ত্রিত, হাল্কা সুরের গান বা যন্ত্র সঙ্গীত- এ সবই আছে।

পূজোতে সেই ঠাকুর দেখা- সেই মেট্রোই ভরসা। বন্ধের দিনে, বৃষ্টির দিনে – সব কিছুরই মুশকিল আসান মেট্রো। তবে যেদিন মেট্রো বিগড়ায়, ভোগান্তি কাকে বলে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

আগেই বলেছি, আমার দৈনন্দিন জীবন মেট্রো ছাড়া অচল। গাড়ির যত বেশী রাস্তা তত কম। আমার বাড়ি থেকে অফিস মেট্রোতে পনেরো মিনিট, বাসে এক ঘণ্টা, ড্রাইভ করে গেলে পৌনে এক ঘণ্টা। পঁয়তাল্লিশ মিনিট করে দু বারে আমি দেড় ঘণ্টা সময় বাঁচাই আর অনেক কাজ সারি।

মেট্রো না থাকলে উত্তর থেকে গিয়ে দক্ষিণের সঙ্গীত রিসার্চ একাডেমীতে তালিম নেয়ার কথা ভাবতেই পারতাম না। সবই অফিস ছুটির পড়। অনেক দিন এমন ও হয়েছে যে, রবীন্দ্র সদনে গান গেয়ে আবার অফিসে ফিরেছি বাকি কাজ শেষ করতে। আমার মতই অনেকেরই জীবন- যাপনের সাথে মেট্রো এক অপরিহার্য অংশ হিসেবে জড়িয়ে গেছে। তবুও বেচারা গাল মন্দ খেয়েই মরল।

মাঝে মাঝে মেট্রো বিগড়ে যায় আর তখনই আমাদের হাতে হ্যারিকেন অবস্থা! তেমনই একদিনের ছবি এবার তুলে ধরছি।

গতকাল গুরুজির কাছ থেকে তালিম নিয়ে টালিগঞ্জ থেকে মেট্রো চাপলাম। রবীন্দ্র সরোবরে এসে শুনলাম যে, ময়দানে একটি মেট্রো যান্ত্রিক বিভ্রাটে দাঁড়িয়ে আছে আর তাই সাময়িক ভাবে মেট্রো পরিসেবা বন্ধ আছে।

অপেক্ষা করলাম কিছুক্ষণ, তারপর আস্তে আস্তে ওপরে উঠে এলাম।

ট্যাক্সি যেতে চাইছে না, যদিও বা এক দুজন যাবে বলছে, বাড়তি ভাড়া দাবী করছে। খানিক্ষন উদভ্রান্তের মত ছোটাছুটি করার পড় আমারই বাড়ীর কাছের এক বাস পেলাম। JUNU র বাস – চলতি কথায় আমাদের কাছে ‘জুনু রামের’ বাস। এ ধরনের বাসের ভেতরটা প্রশস্ত থাকে বলে, মনে মনে একটু আসস্ত হলাম যে, চিড়ে চ্যাপটা হলেও শ্বাস নিতে পারবো।

বাসের পাদানিতে পা রাখতেই কনডাক্টর হেঁকে একদম বাসের শেষ প্রান্তে পাঠিয়ে দিয়ে আপন মনে গাদা-গাদি যাত্রী বোঝাই শুরু করল। তার ওপর মরার ওপর খাঁড়ার ঘা, এক একটা সিগন্যালের আগে ঠিক অংক কষে দাঁড়িয়ে পড়ছে। আর সাথে সাথেই অতিষ্ঠ যাত্রীদের সাথে কনডাক্টরের তুমুল বচসা। চার অক্ষর , পাঁচ অক্ষরের গালিগালাজের প্রতিযোগিতার মাঝেই বাস সেন্ট্রাল এভিনিউ ধরে গজেন্দ্র গমনে এগুতে লাগলো উত্তর থেকে দক্ষিণে। আর একেকটা মেট্রো ষ্টেশন থেকে জন সমুদ্রের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে বাসের দেওয়ালে।

যাত্রীরা আর কেউ নামছেন না। বাসে ঠায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পা যেন পাথর হয়ে গেছে! শোভা বাজারের কাছে আসতে লটারি পাওয়ার মত আমার সামনের ভদ্রলোক উঠে পড়লেন আর আমিও হাতে চাঁদ পাওয়ার মত বসে হাঁপ ছাড়লাম অনেকেরই দীর্ঘ শ্বাসের শব্দের মাঝে ( এমন অবস্থায় আমাদের সকলেরই দীর্ঘ শ্বাস পড়ে! একটা মাত্র সীট আর কত লোক দীর্ঘক্ষণ ঠায় দাঁড়িয়ে) ।

এর প্রায় আধ ঘণ্টা বাদে আমি আমার গন্তব্যে যখন পৌঁছলাম তখন ঘড়ির কাঁটায় রাত সওয়া দশটা। প্রায় দু ঘণ্টা সময় খামোখা নষ্ট হল। পরে ভাবলাম, যখন মেট্রো ছিলোনা, তখন এমন কত সময় নষ্ট হয়ে যেতো!

* স্বাতী বিশ্বাস * ৬/৯/১৩ * শুক্রবার *
* কোলকাতা থেকে তারাপীঠ যাওয়ার পথে ‘ ইন্টার সিটি এক্সপ্রেসে ‘ *
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ১০৬৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৯/০৯/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • খুবই ভালো লাগলো পড়ে।
  • Înšigniã Āvî ২০/০৯/২০১৩
    দুর্দান্ত স্বাতীদি........
    এরকম অভিজ্ঞতা আমারও হয়েছে।
  • জাত লেখক আপনি। এই লেখায় ই প্রিয়তে আমার :p আরো চাই। তবে শুধু গদ্য নয় গল্প ও :P
  • দিদি আপআনার লেখার হাত খুব নিখোদ। আপনি জে গদ্য লিখেন এটাই তার বড় প্রমান। এক নিমিষেই পড়ে শেষ করলাম।
    • স্বাতী বিশ্বাস ২০/০৯/২০১৩
      তমাদের ভাল লাগাতেই আমার ভাল লাগা। আমি কিছুই লিখি না। তমরা প ড় তাই লিখি।
    • সৌম্যকান্তি জানা ১৯/০৯/২০১৩
      চমতকার আপনার ভাষা বিন্যাস।বরণনা অসাধারন। আরো লিখুন।
 
Quantcast