www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

নদী ও জীবন

সন্ধ্যাবেলা। সাইকেলের হ্যান্ডেলে দুইদিকে দুটি খরচভর্তি ব্যাগ। পাথর বালির ভাঙা রাস্তার উপর দিয়ে বাড়ির দিকে ফিরছে নিখিল। টিনের দরজায় আওয়াজ করতেই দরজা খুলে মিনু ব্যাগ দুটি হাতে নিয়ে মায়ের কাছে রান্নাঘরে গেল। মনে আজ ভীষণ আনন্দ।ইস্কুলে সে সাইকেল পেয়েছে।মা কোকিলা আনাজপত্র গুছিয়ে চা বানিয়ে শোয়ার ঘরে টিভি চালু করে বসল। ততক্ষণে নিখিল স্নান সেরে ঘরে এল।মিনু বিস্কুটের প্যাকেট হাতে করে ঘরে ঢুকেই”বাবা আজি হামার ইস্কুলত সাইকেল দিসে, মুইও একখান পাইসু।” মেয়ের হাসিখুশি মুখ দেখে নিখিলের মন ভরে গেল। “বাঃ ভালো তো, তা হামার এঠেকার কায় কায় পাল?” মিনু বলতে শুরু করল কে কে সাইকেল পেয়েছে।
“শুনিসেন কালি হাতে নাকি নদী বন্দ হোবে” কোকিলার এই কথাটা শোনার পর নিখিল একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। ও গতকাল শুনেছে। আসার সময় এই নিয়েই ভাবছিল। গত বছরও একবার নদীর ঘাট বন্ধ হয়েছিল। কি কষ্টে দিন গিয়েছিল সেবার। এবারও যদি এরকম চলে তাহলে তো বড় বিপদ। সামনে পূজা এসে গেছে, মেয়ের নতুন পোশাকটা তো কমসে কম জোগাড় করতে হবে।
কোকিলা রান্নার পর মিনুকে ডাকে পরিবেশনের জন্য। “বাবা ভাত বারিসু আয়”। মিনুর ডাকে হুস ফেরে নিখিলের। খাওয়া দাওয়া শেষে কিছুক্ষণ সাংসারিক আলোচনা চলে কোকিলার সাথে। পরে ক্লান্ত শরীর অজান্তে ঘুমিয়ে পড়ে।
“বাবা তোর চা, মা এই নে” চা পরিবেশন করে মিনু টিউশনে যাবে, তাই বাবাকে জানাল “বাবা টিউশনত একমাসের বাকি আছে কিন্তু, সগায় দিয়া দেছে, মোরটা কুনদিন দিব?”
“আছ্যা এই হাপতায় নিস যা” নিখিল আস্বস্ত করে মেয়েকে। মিনু নতুন সাইকেল নিয়ে পড়তে চলে যায়।
বেলা বাড়ে। কাজের সময় হয়ে এল। কোকিলা টিফিনবাটিতে খাবার ভরে নিয়ে নিখিলের ব্যাগে দেয়। খাওয়া শেষ হলে নিখিল বলে “তোর কি আজি কাম হোবে? নদী বন্দ হোলে কেমন করি কাম করিব?”
“দেখ আগত যাও তো নদী” কোকিলার উদ্বেগপূর্ণ উত্তর।
কাজের পথে নিখিল। সাইকেলে যেতে এই একঘন্টা প্রায় লাগে। মেয়েটার গতবারে কোন ভালো কাপড় কিনে দিতে পারেনি,এবার জেদ ধরেছে লেহেঙ্গা নেবে। কোকিলার কাছে জেনেছে দামটাও ভালো। মেয়েটাও বড় হয়ে গেল আজ একাদশে পড়ে আগামীতে হয়ত কলেজ যাবে। পড়ার খরচও বেড়েছে। বাড়ির উঠানে ছাদের ঘর দেওয়ার জন্য খুঁটি পর্যন্ত কাজ হয়েছে। বাকি কাজের জন্য হাতে কোন টাকা নেই। নদীর উপর সমস্ত নির্ভর। কোকিলার কিছু জমা টাকা আছে। তাও মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে, সেটাতে হাত দেওয়া হয় না।
“ও নিখলদা, কুণ্ঠে যাব” সাইকেলের ব্রেক কষে পাশের চায়ের দোকানে গোপালের ডাকে কাছে আসে।
“কিরে তুই কাম যাবা নাহাইস, মুই তো নিকলিসু।” নিখিল বলল।
“ও তুই বোধে পাইসনি এলাও, কাম বন্দ। নদী বন্দ করি দিসে সরকার থ্যাকে। তুই দেখিলনি আসিবার বেলা দুই নম্বর ঘাটত কতলা নোক জমা হইসে, পুলিশ ছিলেক তো, দেখিসনি”।গোপাল স্মরণ করাল।
নিখিল আসার সময় একটু অন্যমনস্ক ছিল,শুধু কথায় সাড়া দিল,”ও”।
গোপাল বলল “মোর ঠিকাদার তো ফোন করিলেক কাম আজি নাই, যদি সাইটত মাল পরে তাহলে কালি হাতে কাম হোবে। তোর সাইটত কি বালু-গিটি ছে আগের?”
“হ্যা হাপগাড়ির মতো হোবে আরকি।” নিখিল জবাব দেয়। “আচ্ছা ঠিক আছে গোপালভাই গেনু তাহলে হ্যা, দেখু কি হচে!” নিখিল সাইকেলে রওনা দেয়।
মিনু টিউশন থেকে ফিরে আসে। স্নান খাওয়া সেরে ইস্কুলে যায়। যাওয়ার সময় তার বান্ধবীরাও নদী বন্ধের বিষয়ে কথা বলছিল। সে সব শোনে বালাসন নদীর সেতু থেকে নিচের দিকে তাকাতে তাকাতে এগোতে থাকে। ওই দূরে মা-কে দেখে। কাজ নেই ঘাটের পাড়ে সবাই জমা হয়ে আছে। “এই মিনু তাড়াতাড়ি চল, টাইম শেষ হয়া যাছে”।
কোকিলার কাজ নেই। বাড়ি ফিরে কাপড় কাচা, ঘর-দোর পরিষ্কার করা শুরু করল।
“মিনুর মাও ও মিনুর মাও, বাড়িত আছিত না নাই গে” পড়শি ডাকে।
“ও দি আয় বস, মুই হাতটা ধুইয়া আচ্চ” কোকিলা বসতে দেয়।
“হাগে মিনুর মাও হিলা আরও কেমন বাহান শুরু হোলেক….” পড়শির কথা কোকিলা সব শুনতে থাকে।
পড়শী যা বলছে তা তো অযৌক্তিক নয়। নদী বন্ধের ফলে সবার পেটের অন্নের জোগান বন্ধ করেছে প্রশাসন। এখন এই পূজা পরবের দিনগুলো কেমনে কাটবে, কি খাওয়া হবে, কি পড়বে। তার উপরে কোন ঠিক নেই কবে খুলবে নদীর ঘাট। অন্য জেলায় নাকি কাজ হচ্ছে, তাহলে এইখানে কেন বন্ধ করা হয়েছে। সরকার শুধু সাধারণ মানুষগুলোকে নজর দেয়, যখন ঘাটের মধ্যে অনিয়ম হয় তখন কোথায় তাদের নজর থাকে? এখন নদীর গভীরতা বেশি হয়েছে বলে নদীর ঘাট বন্ধ। এটা কি সাধারণ মানুষের দোষ?....
কিছুক্ষণ পরেই নিখিল ঘরে ফিরে আসে। কোকিলা ব্যাগটা নামায়। বলে “কি তে আজি নগতে চলি আসিলেন যে?”
নিখিল অসহায় ভাবে উত্তর দেয় “আজি হাপবেলাতে কাম শেষ। কালি থ্যাকে যে কি হোবে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ২১২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৩/০৫/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast