নিঃসঙ্গ
খিটখিটে মেজাজ নিয়ে হোসেন সাহেব রোলিং চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছেন। তার কপালের বলিরেখা গুলো এক হয়ে জানালার পর্দার মত ভাঁজ হয়ে আছে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে। চেহারা শুকিয়ে কেমন যেন ডাইরিয়া রুগীর মত দেখাচ্ছে। চোখের উপরের সাদা ভ্রুগুলো যেন এসির হাওয়ায় উড়ছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে শরির অসুস্থ। অসুস্থতার জন্য ছুটিও নিয়ে ছিলেন। ৪দিন পর আজ অফিসে আসলেন। এই মূহুর্তে রোলিং চেয়ারে মৃদু দুলছেন।
হোসেন সাহেবের পুরো নাম মোহাম্মদ হোসেন। দেশীয় একটি নামিদামি কোম্পানিতে উচ্চ পদস্থ পদে কর্মরত আছেন। তার জীবনের ৬৮টি বসন্তের মধ্যে ২৬টি বসন্তই কেটে গেছে এই কোম্পানিতে চাকরি করে। এতো র্দীঘ সময় চাকরি করে তিনি কেমন যেন ক্লান্ত হয়ে উঠেছেন। মাঝে মাঝে সিদ্ধান্ত নেন কাল থেকে আর চাকরি করবেন না। কিন্তু চেয়্যারম্যান স্যার তাকে খুব ভাল জানেন। তাই অবসরের কথা বললেই চেয়্যারম্যান স্যার বলেন, “হোসেন সাব চাকরি ছাড়ি কি কইরবেন? বাসায় ভাবি আর আপনে, একাএকা খারাপ লাইগবো, তারচেয়ে অফিসে আইয়েন সবার সাথে কথাটথা কইয়েন, সময়টাও কাটি যাইবো, মনটাও ফ্রেস থাইকবো, আর আপনে এই সময় চলি যাইলে, আ্যঁই একটা সমস্যার মইধ্যে পড়ি যামু, আমার কথাটাও একটু চিন্তা করিয়েন।“ চেয়্যারম্যান স্যারের এই রকম আঞ্চলিক মায়া কান্না কথার জালে তার আর চাকরি ছাড়া হচ্ছে না। এই কোম্পানির পরিবারের সাথেও তার খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। অফিসে কানাঘুষা আছে, চেয়্যারম্যান স্যারের বোনের সাথে নাকি পড়ন্ত যৌবনে তার খুব ভাব বিনিময় ছিল।
হঠাৎ কলিংবেল এর উপর হাত গিয়ে পড়ল, বেল বাজতেই পিয়ন প্রভু ভক্তের মত এক দৌড়ে রুমে গিয়ে হাজির।
- জ্বি স্যার
- ঠান্ডা দেখে এক গ্লাস পানি দাও, দুই কাপ চা দাও আর রহমত সাহেব কে আসতে বল।
কথা গুলো শুনে মনে হলো কোন স্পেস ও বিরাম চিহ্ন বিহিন বলেছেন। আর পিয়নও যথা সম্ভব আদেশ পালনের জন্য দৌড় দিয়ে বের হয়ে গেল।
উত্তরা ৭নং সেক্টরে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে তিনি আর তার স্ত্রী থাকেন। কাজের মেয়ে একজন ছিল, সেও চলে গেছে। মনেহয় বয়স্ক লোকের বাসায় কোন বিনোদন না থাকায় কাজের মেয়েদের মন বসেনা। তাই কোন কাজের লোকই তার বাসায় বেশিদিন টিকেনা। এয়্যারর্পোটের পাশেই আশকনায় তারা ১০জন মিলে ৩কাঠা জায়গা কিনে ৬তলা একটি বাড়ী করেছেন। এখনও বাড়ীর ভিতরের কাজ শেষ করতে পারেন নি। তার স্ত্রী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন, গত কয়েক বছর আগে অবসর নিয়েছেন। সংসারে এখন শুধু তারা দুজন প্রানি। একমাত্র ছেলে ইশরাক হোসেন কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি করে সৌদি আরব কিং ফাহাদ ইউনিভার্সিটিতে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে আছে। ছেলে বিয়ে করেছে ভারতিয় নাগরিক ফারাহ নারগিস কে, সেও ফাইন আর্টস এর উপর পিএইচডি করে একজন আদর্শ গৃহিনির মত স্বামী ছেলে ও সংসার পরিচালনা করে। একমাত্র মেয়ে ইকরা হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইরেজিতে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট পেয়ে দেশের বাইরে থেকে এমপিল করে এখন একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে চাকরি করে। মেয়ের জামাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। মোহাম্মদপুরে ফ্ল্যাট কিনে স্বামী মেয়ে নিয়ে থাকে।
রহমত এই মূহুর্তে হোসেন সাহেবের টেবিলের সামনে বোসে আছে। পিয়ন চা দিয়ে গেছে, তাতে খুব সাবধানে মৃদু চুমুক দিচ্ছে, যাতে কোন প্রকার শব্দ না হয়। যেন চুমুকের শব্দে স্যারের চোখ খুলে যেতে পারে, এই ভয় তার ভিতর কাজ করছে।
হোসেন সাহেব চোখ খুললেন এবং নরম ও কোমল সুরে বললেন,
- রহমত তুমি এই কোম্পানিতে কতদিন ধরে চাকরি করছো?
- জ্বী স্যার এইতো ৬বছর চলছে স্যার।
- ওওও, আর আমি ২৬বছর ধরে আছি। যখন এই কোম্পানিতে নিয়োগ পাই তখন এটা এক প্রকার গদি ঘর এর মত ছিল। আর আজ কত বড় কোম্পানি হয়েছে দেখছ? তা তোমাকে যে জন্য ডেকেছি, আমি গত কয়েকদিন ধরে অসুস্থ জানো তো?
- জ্বী স্যার জানি স্যার।
- এই অফিসে আমার জুনিয়র অনেকেই আছে, কিন্তু তাদের বাদ দিয়ে আমি তোমাকে ডাকলাম গল্প করার জন্য। কেন জানো?
- জ্বী স্যার, না স্যার, জানি না স্যার।
- কারন তোমাকে আমি পছন্দ করি।
– থ্যাঙ্কু স্যার।
- আমি আর তোমার আন্টি গত ৪দিন ধরে জ্বরে ভুগতেছি। কিন্তু বাসায় কোন লোক নেই যে একটা ওষুধ এনে দিবে। মাথায় পানি দেয়ার মত কেউ ছিল না। আমাদের ভাতটা রান্না করে দেয়ার মত কোন লোক ছিলনা। আমার একমাত্র ছেলে খুবই উচ্চ শিক্ষিত, চাকরির কারনে দেশের বাইরে থাকে, বিয়ে করেছে নিজের পছন্দমত আরও এক বিদেশি উচ্চ শিক্ষিত মেয়েকে। যার সাথে চাইলেই মন খুলে বাংলায় কথা বলা যায় না। কারন সে বাংলা ভাল বুঝে না। নাতিটাও ইংরেজি ছাড়া বলতে পারেনা। আমার মেয়ে ওর চাকরি সংসারের ব্যস্থতার জন্য আমাদের দেখতে আসতে পারেনা। কোন কাজের লোক নেই। বাজার করার জন্য কেয়ারটেকারকে অনুরোধ করতে হয়। আমাদেরকে ডাক্তারের কাছে নেয়ার মত কোন লোক ছিলনা। ড্রাইভার ছুটিতে থাকায় আমরা দুই দিন পর ডাক্তারের কাছে গিয়েছি।
রহমত একদৃষ্টিতে হোসেন সাহেবের দিকে তাকিয়ে আছে এবং খুব মনযোগ দিয়ে কথা গুলো শুনছে। যেন সে চায়ের ঋণ শোধ করছে।
- আমি আমার জেলা শহরে একটা বাড়ী করেছি। ঢাকায় ১০জনে মিলে একটা বাড়ী করে একটা ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছি। ছেলে মেয়েকে লেখা পড়া করিয়েছি। এসবের জন্য আমি একা কৃতিত্ত নেব না, তোমার আন্টির অবদান প্রচুর। তারপরও এখন আমাকে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবতে হচ্ছে, এতো কিছু করার পর আমরা দুজন কি পেলাম?
- রহমত শুনতেছ?
- জ্বী স্যার শুনতেছি স্যার।
- আজ যদি আমার ছেলেটাকে কোন রকম মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াতাম। তাহলে দেশে কোন একটা ছোট চাকরি করত। অন্তত আমাদের সাথে তো থাকতো। মেয়েটাকে যদি আইএ পর্যন্ত পড়িয়ে বিয়ে দিয়ে দিতাম তবে প্রতি সপ্তাহে একবার করে আমাদের দেখতে আসতো, কারন তখন তার সংসার ছাড়া আর বাইরের ব্যস্ততা থাকতো না।
আমাদের অবস্থা দেখ, সব আছে সবাই আছে, তবুও কিছু নেই কেউ নেই। এর থেকে কি বৃদ্ধাশ্রম ভালো না?
- তুমি কি বিরক্ত হচ্ছো?
- জ্বী স্যার, না স্যার।
- আচ্ছা যাও এখন, কাজ কর। আর শুন একটা বাক্য বলতে এতোবার স্যার বলা লাগেনা, যাও।
রহমত উঠে গেট দিয়ে বের হয়ে সোজা অফিসের নিচে সিগারেটের দোকানে এসে একটা সিগারেট ধরালো। তার মাথার ভিতর স্যারের বুকপাটা কথা গুলো যেন ঝনঝন করে বাজছে। আর ভাবছে, সে কি তার মা বাবা কে প্রতিদিন ১ঘন্টা সময় দেয়? তাদের সাথে বসে কি সপ্তাহে একদিন মজার কোন গল্প করে? তার মা বাবা কে কি সে কখনও বাইরে ঘুরতে নিয়ে গেছে? না তার মনে পড়ছে না। এখন তার একটু নিরবে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। সে এখন ওয়াশরুমে গিয়ে একটু নিরবে কাঁদবে।
★★★★★★
হোসেন সাহেবের পুরো নাম মোহাম্মদ হোসেন। দেশীয় একটি নামিদামি কোম্পানিতে উচ্চ পদস্থ পদে কর্মরত আছেন। তার জীবনের ৬৮টি বসন্তের মধ্যে ২৬টি বসন্তই কেটে গেছে এই কোম্পানিতে চাকরি করে। এতো র্দীঘ সময় চাকরি করে তিনি কেমন যেন ক্লান্ত হয়ে উঠেছেন। মাঝে মাঝে সিদ্ধান্ত নেন কাল থেকে আর চাকরি করবেন না। কিন্তু চেয়্যারম্যান স্যার তাকে খুব ভাল জানেন। তাই অবসরের কথা বললেই চেয়্যারম্যান স্যার বলেন, “হোসেন সাব চাকরি ছাড়ি কি কইরবেন? বাসায় ভাবি আর আপনে, একাএকা খারাপ লাইগবো, তারচেয়ে অফিসে আইয়েন সবার সাথে কথাটথা কইয়েন, সময়টাও কাটি যাইবো, মনটাও ফ্রেস থাইকবো, আর আপনে এই সময় চলি যাইলে, আ্যঁই একটা সমস্যার মইধ্যে পড়ি যামু, আমার কথাটাও একটু চিন্তা করিয়েন।“ চেয়্যারম্যান স্যারের এই রকম আঞ্চলিক মায়া কান্না কথার জালে তার আর চাকরি ছাড়া হচ্ছে না। এই কোম্পানির পরিবারের সাথেও তার খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। অফিসে কানাঘুষা আছে, চেয়্যারম্যান স্যারের বোনের সাথে নাকি পড়ন্ত যৌবনে তার খুব ভাব বিনিময় ছিল।
হঠাৎ কলিংবেল এর উপর হাত গিয়ে পড়ল, বেল বাজতেই পিয়ন প্রভু ভক্তের মত এক দৌড়ে রুমে গিয়ে হাজির।
- জ্বি স্যার
- ঠান্ডা দেখে এক গ্লাস পানি দাও, দুই কাপ চা দাও আর রহমত সাহেব কে আসতে বল।
কথা গুলো শুনে মনে হলো কোন স্পেস ও বিরাম চিহ্ন বিহিন বলেছেন। আর পিয়নও যথা সম্ভব আদেশ পালনের জন্য দৌড় দিয়ে বের হয়ে গেল।
উত্তরা ৭নং সেক্টরে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে তিনি আর তার স্ত্রী থাকেন। কাজের মেয়ে একজন ছিল, সেও চলে গেছে। মনেহয় বয়স্ক লোকের বাসায় কোন বিনোদন না থাকায় কাজের মেয়েদের মন বসেনা। তাই কোন কাজের লোকই তার বাসায় বেশিদিন টিকেনা। এয়্যারর্পোটের পাশেই আশকনায় তারা ১০জন মিলে ৩কাঠা জায়গা কিনে ৬তলা একটি বাড়ী করেছেন। এখনও বাড়ীর ভিতরের কাজ শেষ করতে পারেন নি। তার স্ত্রী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন, গত কয়েক বছর আগে অবসর নিয়েছেন। সংসারে এখন শুধু তারা দুজন প্রানি। একমাত্র ছেলে ইশরাক হোসেন কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি করে সৌদি আরব কিং ফাহাদ ইউনিভার্সিটিতে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে আছে। ছেলে বিয়ে করেছে ভারতিয় নাগরিক ফারাহ নারগিস কে, সেও ফাইন আর্টস এর উপর পিএইচডি করে একজন আদর্শ গৃহিনির মত স্বামী ছেলে ও সংসার পরিচালনা করে। একমাত্র মেয়ে ইকরা হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইরেজিতে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট পেয়ে দেশের বাইরে থেকে এমপিল করে এখন একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে চাকরি করে। মেয়ের জামাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। মোহাম্মদপুরে ফ্ল্যাট কিনে স্বামী মেয়ে নিয়ে থাকে।
রহমত এই মূহুর্তে হোসেন সাহেবের টেবিলের সামনে বোসে আছে। পিয়ন চা দিয়ে গেছে, তাতে খুব সাবধানে মৃদু চুমুক দিচ্ছে, যাতে কোন প্রকার শব্দ না হয়। যেন চুমুকের শব্দে স্যারের চোখ খুলে যেতে পারে, এই ভয় তার ভিতর কাজ করছে।
হোসেন সাহেব চোখ খুললেন এবং নরম ও কোমল সুরে বললেন,
- রহমত তুমি এই কোম্পানিতে কতদিন ধরে চাকরি করছো?
- জ্বী স্যার এইতো ৬বছর চলছে স্যার।
- ওওও, আর আমি ২৬বছর ধরে আছি। যখন এই কোম্পানিতে নিয়োগ পাই তখন এটা এক প্রকার গদি ঘর এর মত ছিল। আর আজ কত বড় কোম্পানি হয়েছে দেখছ? তা তোমাকে যে জন্য ডেকেছি, আমি গত কয়েকদিন ধরে অসুস্থ জানো তো?
- জ্বী স্যার জানি স্যার।
- এই অফিসে আমার জুনিয়র অনেকেই আছে, কিন্তু তাদের বাদ দিয়ে আমি তোমাকে ডাকলাম গল্প করার জন্য। কেন জানো?
- জ্বী স্যার, না স্যার, জানি না স্যার।
- কারন তোমাকে আমি পছন্দ করি।
– থ্যাঙ্কু স্যার।
- আমি আর তোমার আন্টি গত ৪দিন ধরে জ্বরে ভুগতেছি। কিন্তু বাসায় কোন লোক নেই যে একটা ওষুধ এনে দিবে। মাথায় পানি দেয়ার মত কেউ ছিল না। আমাদের ভাতটা রান্না করে দেয়ার মত কোন লোক ছিলনা। আমার একমাত্র ছেলে খুবই উচ্চ শিক্ষিত, চাকরির কারনে দেশের বাইরে থাকে, বিয়ে করেছে নিজের পছন্দমত আরও এক বিদেশি উচ্চ শিক্ষিত মেয়েকে। যার সাথে চাইলেই মন খুলে বাংলায় কথা বলা যায় না। কারন সে বাংলা ভাল বুঝে না। নাতিটাও ইংরেজি ছাড়া বলতে পারেনা। আমার মেয়ে ওর চাকরি সংসারের ব্যস্থতার জন্য আমাদের দেখতে আসতে পারেনা। কোন কাজের লোক নেই। বাজার করার জন্য কেয়ারটেকারকে অনুরোধ করতে হয়। আমাদেরকে ডাক্তারের কাছে নেয়ার মত কোন লোক ছিলনা। ড্রাইভার ছুটিতে থাকায় আমরা দুই দিন পর ডাক্তারের কাছে গিয়েছি।
রহমত একদৃষ্টিতে হোসেন সাহেবের দিকে তাকিয়ে আছে এবং খুব মনযোগ দিয়ে কথা গুলো শুনছে। যেন সে চায়ের ঋণ শোধ করছে।
- আমি আমার জেলা শহরে একটা বাড়ী করেছি। ঢাকায় ১০জনে মিলে একটা বাড়ী করে একটা ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছি। ছেলে মেয়েকে লেখা পড়া করিয়েছি। এসবের জন্য আমি একা কৃতিত্ত নেব না, তোমার আন্টির অবদান প্রচুর। তারপরও এখন আমাকে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ভাবতে হচ্ছে, এতো কিছু করার পর আমরা দুজন কি পেলাম?
- রহমত শুনতেছ?
- জ্বী স্যার শুনতেছি স্যার।
- আজ যদি আমার ছেলেটাকে কোন রকম মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াতাম। তাহলে দেশে কোন একটা ছোট চাকরি করত। অন্তত আমাদের সাথে তো থাকতো। মেয়েটাকে যদি আইএ পর্যন্ত পড়িয়ে বিয়ে দিয়ে দিতাম তবে প্রতি সপ্তাহে একবার করে আমাদের দেখতে আসতো, কারন তখন তার সংসার ছাড়া আর বাইরের ব্যস্ততা থাকতো না।
আমাদের অবস্থা দেখ, সব আছে সবাই আছে, তবুও কিছু নেই কেউ নেই। এর থেকে কি বৃদ্ধাশ্রম ভালো না?
- তুমি কি বিরক্ত হচ্ছো?
- জ্বী স্যার, না স্যার।
- আচ্ছা যাও এখন, কাজ কর। আর শুন একটা বাক্য বলতে এতোবার স্যার বলা লাগেনা, যাও।
রহমত উঠে গেট দিয়ে বের হয়ে সোজা অফিসের নিচে সিগারেটের দোকানে এসে একটা সিগারেট ধরালো। তার মাথার ভিতর স্যারের বুকপাটা কথা গুলো যেন ঝনঝন করে বাজছে। আর ভাবছে, সে কি তার মা বাবা কে প্রতিদিন ১ঘন্টা সময় দেয়? তাদের সাথে বসে কি সপ্তাহে একদিন মজার কোন গল্প করে? তার মা বাবা কে কি সে কখনও বাইরে ঘুরতে নিয়ে গেছে? না তার মনে পড়ছে না। এখন তার একটু নিরবে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। সে এখন ওয়াশরুমে গিয়ে একটু নিরবে কাঁদবে।
★★★★★★
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শাহানাজ সুলতানা (শাহানাজ) ০৯/১২/২০১৫ভালো হয়েছে
-
মোঃ মুলুক আহমেদ ০৮/১২/২০১৫সুন্দর লিখেছেন|
এগিয়ে যান ভিতরের সুপ্ত প্রতিভা নিয়ে| -
জুনায়েদ বি রাহমান ০৭/১২/২০১৫ভালো হয়েছে।
-
দেবব্রত সান্যাল ০৭/১২/২০১৫তারুণ্যে স্বাগত ! একটু এডিট করে নিন।