www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ঐক্যের মাঝেই রোয়েছে শান্তির পথ

প্রাক এসলামিক আরবের যাবতীয় অন্যায়-অবিচার, গোত্রে-গোত্রে যুদ্ধ এবং সীমাহীন অশান্তির পেছনের কারণ হিসেবে যে বিষয়টি প্রকটভাবে দৃষ্টিগোচর হয় তাহলো ঐক্যহীনতা। তদানীন্তন আরবরা গোত্র, বংশ, দল-উপদলে এমনভাবে বিভক্ত ছিলো এবং এক গোত্র বা বংশ থেকে অপর গোত্রের প্রাধান্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা এমন উদ্ভট আকার ধারণ কোরেছিল যে নিষিদ্ধ চারটি মাস ব্যতীত এমন একটি দিনও বাদ যেতো না যেদিন কোন যুদ্ধ-রক্তপাত হয় নি। যেখানে ছিলো যত বেশি বিভক্তি, সেখানে ছিলো তত বেশি যুদ্ধ-রক্তপাত, হানাহানি, অশান্তি। এই অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে – বাকি পৃথিবী আরবদেরকে দেখতো অসভ্য, বর্বর একটি জাতি হিসেবে। তারা ছিলো বাকি পৃথিবীর ঘৃণার পাত্র।

এমনই অস্থিতিশীল পরিবেশে আরবদের মাঝে আগমন হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, সমস্ত পৃথিবীর জন্য আল্লাহর প্রেরিত বিশেষ রহমত মোহাম্মদ (দ:)। তাঁর দায়িত্ব ছিলো মানবজাতির মধ্যকার যাবতীয় অন্যায়-অবিচার, অশান্তি নির্মূল কোরে শান্তি স্থাপন করার। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়- নবুয়্যত পাবার মুহূর্ত থেকে ওফাত পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ক্ষণ তিনি এই একটি কাজেই ব্যয় কোরেছেন। তাঁর নবী জীবনের দীর্ঘ ১৩ টি বছর কেটেছে জন্মভূমি মক্কার মানুষকে দাওয়াত দিয়ে। তিনি চেষ্টা কোরেছিলেন মক্কার শতধা বিচ্ছিন্ন গোত্রগুলিকে ভ্রাতৃঘাতী লড়াই বন্ধ কোরে এক সূত্রে গাঁথতে; চেষ্টা কোরেছিলেন যাবতীয় অন্যায়-অবিচার, নিজেরা নিজেরা কৃত যুদ্ধ-রক্তপাত বন্ধ কোরে এক সত্যের পথে, ন্যায়ের পথে, শান্তির পথে নিয়ে আসতে। কিন্তু মক্কা তাঁর আহ্বান শোনে নি। তারা রসুলাল্লাহর এই শান্তির আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান কোরে আগের মতোই ফেতনা-ফাসাদে নিমজ্জিত হোয়ে থাকলো।

ইতিহাসে পাই – রসুলাল্লাহ তাঁর আহ্বান এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ রাখেন নি। যখন যেখানে সুযোগ পেয়েছেন সেখানেই মানবজাতির ঐক্যের পথ, ভ্রাতৃত্বের পথ এবং সত্যের পথের দাওয়াত পেশ কোরেছেন। শত নির্যাতন, আঘাত, বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও তিনি তাঁর দায়িত্ব থেকে পিছু হটেন নি।
আরবের ঐতিহ্যগত কারণে নিষিদ্ধ চারটি মাস তারা যাবতীয় যুদ্ধ-রক্তপাত বন্ধ রাখতো। সেই সময় চিরশত্র“কে হাতের কাছে পেলেও তাকে কেউ আঘাত কোরত না। এই সময়টিতে তারা হজ্ব ও ওমরা পালন কোরত। দূর দূরান্ত থেকে হজ্বের কাফেলা আসতো মদিনায়। এই সুযোগে রসুলাল্লাহ প্রতিটি কাফেলাতে গিয়ে তাদেরকে যাবতীয় ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত পরিহার কোরে সত্যের পথে, ন্যায়ের পথে, তওহীদের পথে আহ্বান কোরতেন। একদা মদিনা থেকে আগত খাজরাজ গোত্রের একটি কাফেলার সাথে রসুলাল্লাহর সাক্ষাৎ হয় আকাবা নামক স্থানে যা ছিলো মক্কা থেকে আনুমানিক তিন মাইল দূরে। অন্যান্যর মতো মদিনাও (তৎকালীন সময়ে ইয়াছরিব) ছিলো গোত্র-বংশ, দল-উপদলে বিভক্ত এবং হানাহানি-যুদ্ধ, রক্তপাতে নিমজ্জিত। কিছুদিন আগেই মদিনায় দুইটি গোত্র আওস ও খাজরাজের মধ্যে যুদ্ধ হয় এবং সে যুদ্ধে খাজরাজ গোত্র জয়ী হয়। মদিনা থেকে আগত ঐ কাফেলাটি ছিলো খাজরাজ গোত্রের। সেখানে উপস্থিত ছয়জন ব্যক্তি রসুলাল্লাহর সত্য দীনের দাওয়াত গ্রহণ কোরে নেন। এই ছয়জন বিশুদ্ধচিত্ত মো’মেনের দ্বারা পরবর্তীতে মদিনার আওস ও খাজরাজ গোত্রে রসুলাল্লাহর নাম ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে এসলামের প্রচার শুরু হয় এবং ঐ ছয়জন ছাড়াও আরো কয়েকজন এসলাম গ্রহণ করেন। মক্কায় তখন রসুলাল্লাহর বিরোধিদের দ্বারা মো’মেনদের উপর চলছে অবর্ণনীয় নির্যাতন। মক্কাবাসীদের সত্য দীনকে গ্রহণ কোরে নেবার কোন চিহ্ন তখনও দৃষ্টিগোচর হোচ্ছিল না। অতঃপর নবুয়্যতের দ্বাদশ বর্ষে হজ্ব মওসুমে আওস ও খাজরাজ গোত্রের বারো জন (আগের বারের ৬ জন সহ) পুনরায় মক্কার আকাবায় আসেন এবং রসুলাল্লাহর হাতে বায়াত নেন। এটাই ইতিহাসে প্রথম আকাবার বায়াত নামে পরিচিত। তারা নিুোক্ত বিষয়গুলোর উপর বায়াত নিয়েছিলেন-

১. আমরা এক আল্লাহর এবাদত কোরব এবং তাঁর সাথে আর কাউকে শরীক কোরব না।
২. চুরি ও ব্যভিচার থেকে বিরত থাকবো।
৩. নিজেদের সন্তানদের (কন্যা সন্তানদের) হত্যা কোরব না।
৪. কারো বিরুদ্ধে অপবাদ রটনা কোরব না এবং কারো নিন্দাও কোরব না।
৫. যাবতীয় ভালো কাজে রসুলাল্লাহর অনুগত থাকবো।

অতঃপর রসুলাল্লাহ তাদের সাথে একজনকে মদিনায় পাঠালেন এসলামের দাওয়াত সকলের কাছে পরিপূর্ণভাবে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। অল্প কিছুদিনের মধ্যে সাদ বিন মু’আজ এবং উসায়দ বিন হুযায়রের (রা:) মতো মদিনার গোত্রপতিরা ক্রমেই এসলামের বন্ধনে নিজেদের বাঁধতে সক্ষম হোল। গোত্রপতিদের সমর্থন পেয়ে দলে দলে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হোতে লাগলো। যাবতীয় বিভেদ-অনৈক্য ভুলে গিয়ে এসলামের ‘এক জাতি-এক নেতা’ মূলমন্ত্রকে সাদরে গ্রহণ কোরে নিলো। রসুলাল্লাহ মক্কা থেকে যাকে মদিনায় দীনি শিক্ষা প্রচারের জন্য পাঠিয়েছিলেন সেই মুস’আব (রা:) তাঁর প্রচারের কাজ অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন কোরে মক্কায় ফিরে আসেন এবং রসুলাল্লাহকে সবকিছু অবহিত করেন। তখনো মক্কা ও তার আশে পাশে চলছে গোত্রে গোত্রে হানাহানি, রক্তপাত, বংশগত বৈষম্য, যুদ্ধ ইত্যাদি। অপরদিকে মদিনায় যে গোত্রগুলো এসলামের বন্ধনে আবদ্ধ হোয়েছে তাদের গোত্রগুলোর পারস্পরিক হানাহানি-যুদ্ধ ইত্যাদি বন্ধ হোয়ে গেছে। কয়েকদিন পূর্বেই যে ছিলো সবচেয়ে বড় শত্র“, এসলামের ঐক্যবন্ধনীর বেষ্টনিতে প্রবেশ কোরে সেই তখন হোয়ে গেছে পরম আপনজন।

অতঃপর মদিনা থেকে তেহাত্তর জন ব্যক্তি হজ্ব পালনের জন্য মক্কায় আসেন। তাদের অভিপ্রায় ছিলো রসুলাল্লাহকে মদিনায় হেজরত করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো। রসুলাল্লাহ তাদের সাথে সাক্ষাৎ কোরলেন এবং তাদের অভিপ্রায় শুনলেন। অতঃপর তাদের কাছে থেকে দুইটি বিষয়ে বায়াত নিলেন-
১. আপনারা কি এসলাম প্রচারে আমাকে পুরোপুরি সাহায্য কোরবেন?
২.আপনারা কি আপনাদের শহরে আমার এবং আমার সঙ্গীদের ঠিক সেরূপ যতœ নেবেন, যেরূপ নেন আপনাদের নিজস্ব আত্মীয়স্বজন এবং পরিবারবর্গের?
আগন্তুকরা হ্যাঁবোধক উত্তর দিলেন এবং রসুলাল্লাহও চিরদিন তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার কোরলেন। দীর্ঘ ১৩ বছর অত্যন্ত ধৈর্য্যরে সাথে যাবতীয় জুলুম-নির্যাতন সহ্য করার পর এভাবেই আল্লাহ আপন করুণা গুণে এসলামের জন্য এমন একটি আশ্রয় স্থলের ব্যবস্থা কোরে দিলেন যেখান থেকে এই সত্যদীনের আইন-কানুন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রেও বিশ্বের জন্য অভূতপূর্ব কল্যাণ ও বরকত বয়ে নিয়ে আসে। যেখানে মক্কা এবং তায়েফের অধিকাংশ নেতৃস্থানীয়রা এই পবিত্র দীন এবং এর পবিত্র শিক্ষাকে প্রত্যাখ্যান কোরেছিল সেখানে আওস ও খাজরাজ গোত্র এটাকে পরম সোহাগভরে নিয়েছিল নিজেদের মাথায় তুলে। এই সত্য দীনকে সাহায্য করার কারণেই তারা ‘আনসার’ উপাধিতে ভূষিত হন।

এরপর থেকে সাহাবিরা রসুলাল্লাহর অনুমিতপ্রাপ্ত হোয়ে মদিনায় হেজরত করা শুরু কোরলেন এবং রসুলাল্লাহও মদিনায় হেজরত কোরলেন। রসুলসহ হেজরত করা সাহাবিদেরকে মদিনার আনসাররা বুকে টেনে নিলো এবং তাদের নিরাপত্তা, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ যাবতীয় দায়-দায়িত্ব তাদের নিজেদের কাঁধে তুলে নিলো। মক্কার মোহাজের আর মদিনার আনসারদের সমন্বয়ে মদিনাতে মো’মেনরা এমন অখণ্ড শক্তিতে পরিণত হোল যারা স্থাপন কোরেছিলেন পারস্পরিক øেহ-মায়া-ভালোবাসা এবং ভ্রাতৃত্বের এক নজীরবিহীন দৃষ্টান্ত। যে মদিনায় নিজ নিজ গোত্রের মধ্যেও হানাহানি-রক্তপাত ঘটতো, যারা সামান্য বিষয়ের জের ধরে বিভক্ত হোয়ে পরস্পরঘাতী ষড়যন্ত্র-হত্যা-রক্তপাতের মতো ঘটনা ঘটাতো তারাই ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হোয়ে অল্প কিছুদিনের মধ্যে হোয়ে উঠলো এক অখণ্ডনীয় মানবীয় শরীরের মতো অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। শরীরের এক অংশে আঘাত কোরলে যেমন সম্পূর্ণ শরীরেই ব্যথা অনুভূত হয় তেমনি এই ন্যায় ও সত্যের পথে ঐক্যবদ্ধ মানুষগুলোর একজনের কষ্ট সবাইকে ব্যথিত কোরত, এক জনের সুখ সবাইকে আনন্দিত কোরত। এসলাম পূর্ব আরবে এমন সমাজ ছিলো কল্পনার পরিসীমা থেকেও বহুদূর। এতদিন যে মানুষগুলোর মত-পথ, সিদ্ধান্ত ছিলো আলাদা, যাদের নেতা ছিলো ভিন্ন ভিন্ন, যাদের হাতে আপন সন্তানও নিরাপদ ছিলো না তারাই হোয়ে গেল একে অপরের জীবন-সম্পদের পাহারাদার। তাদের নেতা হোল এক, দীন হোল এক, উদ্দেশ্যও হোয়ে গেলো একটি। ঐক্য, শৃঙ্খলা এবং আনুগত্যের সংমিশ্রণে তারা এমন একটি বজ্রশক্তিতে পরিণত হোলেন যাদের গড়া ভিত্তির উপর পরবর্তীতে গড়ে উঠেছিল অর্ধ পৃথিবীর এসলামি সভ্যতা।

এই ঐক্যের ধারাবাহিকতা পরবর্তীতে জাতি রক্ষা কোরতে পারে নি। গত ১৩০০ বছরের ইতিহাস শুধুই অনৈক্যের ইতিহাস, বিভেদের ইতিহাস। অর্ধপৃথিবী জুড়ে যে মোসলেম নামক জাতিটি মৃত লাশের মতো পড়ে আছে তাদের অধঃপতনের অন্যতম কারণই হোল ঐক্যহীনতা। সেদিনের ঐ মক্কার আইয়্যামে জাহেলিয়াত আজ পৃথিবীব্যাপী বিস্তার কোরেছে। মোসলেম নামধারী জাতিগুলোও এই নব্য জাহেলিয়াতের বাইরে নেই বরং সত্য কথা বোলতে গেলে এটাই বোলতে হয় যে- অন্যান্য জাতিগোষ্ঠিগুলোর তুলনায় আজ এই মোসলেম নামধারী জনংখ্যাটিই বেশি অনৈক্য-হানাহানি, মারামারি, বোমাবাজি, যুদ্ধ-রক্তপাতে আপাদমস্তক নিমজ্জিত হোয়ে আছে। রসুলাল্লাহ যে ঐক্যের বন্ধনে মদিনার মোসলেমদেরকে বেঁধেছিলেন এবং যে ঐক্যের উপর ভিত্তি কোরে এই জাতিটি এক সময় অর্ধপৃথিবীর পরাশক্তিতে পরিণত হোয়েছিল সেই ঐক্যের শিক্ষা থেকে আজকের মোসলেম নামধারীরা অনেক দূরে অবস্থান কোরছে।

আমরা বাঙালিরাও এর বাইরে নেই। যতোই দিন যাচ্ছে ততোই দেশে নিত্য নতুন অনৈক্যের জন্ম হোচ্ছে সেই সাথে বাড়ছে অস্থিতিশীলতা। দেশের ১৬ কোটি মানুষ আজ বিভিন্ন দল, মত, পথ, সিদ্ধান্তে বিভক্ত হোয়ে এসলাম পূর্ব আরবদের মতো ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত-হত্যা, মারামারি, হানাহানিতে লিপ্ত রোয়েছে। যতোই দিন যাচ্ছে এই অনৈক্যের প্রবণতা ততোই বাড়ছে। পারিবারিক, সামাজিক বা রাষ্ট্র্রীয় প্রতিটি অঙ্গনেই আমরা শত-সহস্র মত-পথ-শ্রেণিতে বিভক্ত হোয়ে আছি। পশ্চিমা সভ্যতার অনুকরণে গণতন্ত্র নামক ভারসাম্যহীন সিস্টেমকে গ্রহণ করার দরুণ রাজনৈতিকভাবে আজ আমরা কমপক্ষে ৫০ টির মতো রাজনৈতিক দলে বিভক্ত হোয়ে একে অপরকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টায় মেতে আছি। রাজনৈতিক অধিকারের নামে হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর, জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি সাধন কোরে নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছি। বাকি পৃথিবী আমাদেরকে নিয়ে ঠাট্টার হাসি হাসছে। ১৪০০ বছর আগের আরবদের মতো আমরাও বহির্বিশ্বে অসভ্য-বর্বর হিসেবে চিত্রায়িত হোচ্ছি। এভাবে চলতে পারে না। এমতাবস্থায় আমাদের সর্বপ্রথম দায়িত্ব হোল ‘একতা’কে ফিরিয়ে আনা। সেদিন যদি রসুলাল্লাহর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মদিনাবাসী এবং পরবর্তীতে পুরো আরব জাতি তাদের মধ্যে বিরাজমান ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত পরিহার কোরে এক জাতি হোয়ে না যেত তাহোলে কোনভাবেই তাদের দ্বারা অর্ধপৃথিবী জয় করা সম্ভব হোত না। বর্বর, অশিক্ষিত, অসভ্য ঐ জাতিটির ঐক্যের সূত্রপাত ঘোটেছিল গুটিকতক বিষয়ে মদিনাবাসীর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে যা পূর্বে উল্লেখ কোরেছি। পরবর্তীতে সেই ঐক্য ছড়িয়ে পড়েছিল জীবনের প্রতিটি দিকে, প্রতিটি অঙ্গনে।
ঠিক একইভাবে বর্তমানে আমরা যদি আমাদের সমাজে চলমান এই অনৈক্য, বিভেদ, হানাহানি এক কথায় সর্বরকম অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে চাই তাহোলে এখন ধর্ম, বর্ণ, দল-উপদল, ফেরকা-মাজহাব যার যার ব্যক্তিগত জীবনে রেখে মানুষ হিসাবে, একটি স্বাধীন জাতি হিসাবে আমাদের কয়েকটি বিষয়ে একতাবদ্ধ হোতেই হবে। এটা আমাদের অস্তিত্বের দাবি। এই গুটিকতক বিষয়ের ঐক্যমত্যই একসময় আমাদের চূড়ান্ত ঐক্যবদ্ধ একটি শক্তিশালী, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে পরিচয় কোরিয়ে দেবে। আমাদেরকে বুঝতে হবে – আমরা সকলে এক জাতি, এক মত। আমরা একে অপরের ভাই-বোন। সুতরাং, “আমরা কেউ কারো কোন ক্ষতি কোরবো না। কোন কিছুতে অগ্নিসংযোগ কোরব না, ভাঙচুর কোরব না, হানাহানি কোরব না। আমরা শক্তি প্রদর্শনের মিথ্যা নেশায় আত্মমগ্ন হোয়ে আমাদের দুর্বল ভাইদের উপর আক্রমণ চালাবো না। যে যেই দলই কোরি না কেন দল-মতকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে রেখে মানবতার কল্যাণে আমাদেরকে এই ন্যায়ের পক্ষে, সত্যের পক্ষে একতাবদ্ধ হোতে হবে। অন্তত আমরা নিজেদের পাড়ায়, নিজেদের মহল্লায়, নিজেদের গ্রামে, নিজেদের থানা-জেলায় একতাবদ্ধ হোয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা কোরে মডেল হবো।”

এটা প্রাকৃতিক নিয়ম যে – ঐক্য অনৈক্যের উপর সর্বদাই বিজয় লাভ কোরবে। কাজেই সময় এসেছে নিজেদের মধ্যে বিরাজিত যাবতীয় অনৈক্যের মূলোৎপাটন ঘোটিয়ে শান্তি-সমৃদ্ধপূর্ণ সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ একটি জাতি গড়ে তোলার। মনে রাখতে হবে আমরা কারো বিরুদ্ধে নই, আমরা ন্যায়ের পক্ষে, সত্যের পক্ষে। আল্লাহ আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হবার সুযোগ দান কোরুন। আমীন।
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ৭৩৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ৩১/০৮/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • একনিষ্ঠ অনুগত ০১/০৯/২০১৪
    অনেক সুন্দর বিশ্লেষণধর্মী লেখা। বেশ ভালো লাগলো।

    এসলাম, মোমেন, মোসলেম... শব্দগুলো কি ইচ্ছাকৃত লেখা।। ইসলাম, মু'মিন, মুসলিম এমন ই তো লেখা উত্তম মনে করি।
    • বাংলা ভাষায় প্রবিষ্ট আরবী শব্দের বিকৃতি

      এ কথা সর্বজনবিদিত যে, বর্তমান বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত বিদেশী ভাষার শব্দ যেমন- আরবি, ফারসি, উর্দু, ইংরেজি, চাইনিজ ইত্যাদির উচ্চারণ রীতিতে যথেষ্ট ভুল-ভ্রান্তি পরিলক্ষিত হোচ্ছে। শুধু বলার সময় উচ্চারণে ভুল হোলে কথা ছিল না, লেখার বেলায়ও যদি ভুল হয় তবে তা কোন ক্রমেই গ্রহণযোগ্য হোতে পারে না। বর্তমানে ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা, সর্বত্র ইংরেজির জয়জয়কার। তাই ইংরেজি শব্দের বাংলা বানানের বিভ্রাট অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ কোরেছে। কিন্তু এটা ইতিহাস যে, এ দেশে ইংরেজি ভাষা প্রবেশের বহু পূর্বেই আরবি ও ফারসি ভাষাভাষীরা শত শত বছর এ দেশ শাসন কোরেছেন, তাদের ধর্ম, সংস্কৃতি দিয়ে এদেশের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ কোরেছেন। তাদের ভাষা থেকে শত শত শব্দ বাংলা ভাষায় ঠাঁই কোরে নিয়েছে। কাজী রফিকুল হক এর সBanan-rity-1ম্পাদনায় বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত অভিধানে ১৭১৭ টি আরবি শব্দ বাংলা ভাষায় ব্যবহারের কথা উল্লেখ করা হয়। ফার্সী ভাষা আছে এর চেয়েও বেশী। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বাংলায় ব্যবহৃত অধিকাংশ আরবি শব্দের যথাযথ উচ্চারণ এবং বাংলা বানান এর মূল ভাষার ধারে-কাছেও রাখা হয় নি যেটা সম্পূর্ণ অনুচিত। কিছু কিছু শব্দ বানানের ক্ষেত্রে সঠিক থাকলেও ব্যবহারিকভাবে তার উচ্চারণ করা হোচ্ছে অশুদ্ধভাবে। অনেক শব্দ এই উভয় দোষেই দুষ্ট। ইংরেজি শব্দের সঠিক বানান নিয়ে যেমন কেউ কেউ লিখছেন, বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত আরবি শব্দের সঠিক ব্যবহার নিয়ে তেমন কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হোচ্ছে না। এই ক্ষেত্রে সংস্কার সাধনের জন্য যিনি প্রথম উদ্যোগ নেন তিনি হেযবুত তওহীদের এমাম, এ যামানার এমাম, ঞযব খবধফবৎ ড়ভ ঃযব ঞরসব জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী। তিনি এ সব শব্দের সঠিক বানান ও উচ্চারণ ব্যবহার কোরেছেন তাঁর লিখিত বইগুলিতে।
      আরবি শব্দ সমূহের বাংলা বানানরীতির কয়েকটি নিয়ম যেমনÑ (১) আরবি স্বরবর্ণ ‘যের’ এর জন্য বাংলায় ‘এ’-কার ব্যবহার হয়। যেমনÑ বেসমেল্লাহ (২) ‘যবর’ এর জন্য ব্যবহার হয় ‘আ’-কার। যেমনÑ আলহামদুলেল্লাহ (৩) ‘পেশ’ এর জন্য ‘ও’-কার ব্যবহার হয়। যেমনÑ মোস্তাকেম, মোহাম্মদ (৪) ‘খাড়া যের’ এবং ‘যের এর পরে যদি ইয়া সাকিন’ থাকে তাহলে ‘ি ’-কার ব্যবহার হয়, কোন কোন ক্ষেত্রে ‘ ী’-কার ব্যবহার হয়। যেমনÑ রহিম, দোয়াল্লিন, (৫) আরবি ব্যঞ্জনবর্ণ ‘ইয়া’ এর উচ্চারণ বাংলায় ‘ই’ হবে ‘এ’ হবে না। যেমনÑ ‘ইয়াতিম’, ‘এতিম’ নয়, ‘ইয়ামেন’, ‘এয়ামেন’ নয়।
      বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত আরবি, ফারসি, তুর্কি, হিন্দি, ও উর্দু শব্দের বাংলা ভাষার অভিধানে আরবি শব্দগুলির যে বানান রীতি প্রণয়ন কোরছে সেখান থেকে কয়েকটি শব্দ সুচিন্তিত পাঠকদের জন্য উল্লেখ করা হলো। এই বানানগুলিও বিকৃত আরবি বানান রীতির কবলে পড়ে এখন প্রায়সই ভুলভাবে লেখা হোচ্ছে এবং সেই ভুলগুলি রীতিমত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ কোরেছে। বলা হোচ্ছে আরবিতে নাকি এ-কারের এবং ও-কারের উচ্চারণই নেই যা সম্পূর্ণ অসত্য। কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক।
      বাংলা একাডেমির “আরবি, ফারসি, তুর্কি, হিন্দি, ও উর্দু শব্দের বাংলা অভিধান” থেকে নিচের তালিকাটি দেওয়া হোল।
      Bananrity
      
      Banan-rity
      এমন উদাহরণ আমরা আরও বহু দিতে পারবো কিন্তু যুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন পাঠকের জন্য এ ক’টি উদাহরণই যথেষ্ট। আরব বিশ্বে ও বিভিন্ন মোসলেম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে আরবী শব্দের উচ্চারণে যেরের স্থলে এ-কারের ন্যায় উচ্চারণ করার কয়েকটি নমুনা তুলে ধোরছি। বর্তমানে পত্রপত্রিকায় মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃবৃন্দের ও কয়েকটি স্থানের নামের বানান লক্ষ্য কোরুন:
      ১. ওসামা বিন লাদেন, ‘লাদিন’ লেখা হয় না।
      ২. বেন আলী (তিউনেশিয়ার সাবেক প্রধান), ‘বিন আলী’ লেখা হয় না।
      ৩. বেন বেল্লাহ (আলজেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট), ‘বিন বিল্লাহ’ লেখা হয় না।
      ৪. আলী আব্দাল্লাহ সালেহ (ইয়ামেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট), ‘সালিহ’ লেখা হয় না।

      ৫. বেন গাজী (লিবিয়ার শহর), ‘বিন গাজী’ লেখা হয় না।
      ৬. এল বারাদি (মিশরীয় কুটনীতিক), ইল বারাদি লেখা হয় না।
      আবার খেয়াল কোরুন ইয়াকীন শব্দটি। আরবি ইয়া’র উপরে যবর। ইয়া একটি স্বরবর্ণ। এর উপরে যবর হওয়ার ফলে স্বভাবতই শব্দটির প্রথম অংশের উচ্চারণ ও বানান হবে ‘ইয়া’। তবে ক্বাফ-এর নিচে যের থাকায় এর উচ্চারণ এ-কার দিয়ে হবে। অর্থাৎ ইয়াকিন শব্দটির সঠিক উচ্চারণ হবে ইয়াকেন। ঠিক যেভাবে হয় ইয়ামেন, ইয়ামিন হয় না। একইভাবে ইয়াসির এর সঠিক উচ্চারণ ও বানান হবে ইয়াসের। আইন একটি স্বরবর্ণ। এর নিচে যের হোলেও ই-কার হবে। বর্তমানে লেখার ক্ষেত্রে ইয়া বর্ণের বেলায় ‘ই’ কার অর্থাৎ ‘ি ’ ব্যবহৃত হয়। আবার যের এর জন্যও ‘ই’ ব্যবহৃত হয় যা একেবারেই যুক্তিসঙ্গত নয়।
      মাত্র ৩০/৪০ বছর আগেও সর্বত্র আরবি ‘যের’ এর উচ্চারণ এ-কার দিয়েই করা হোত। উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মওলানা আকরাম খাঁ রচিত বিখ্যাত ‘মোস্তফা চরিত’ গ্রন্থটিতেও এসলামের বানান ‘এছলাম’। তার সমসাময়িক সবাই এভাবেই লিখতেন। কবি কাজী নজরুল ইসলামও তার নামের বানানে ‘এসলাম’ লিখতেন। তখনকার একটি বহুল প্রচারিত পত্রিকার নাম ছিলো ‘মোসলেম ভারত’, ‘মুসলিম ভারত’ নয়। এমনকি আমরাও অনেক আরবি শব্দ এ-কার এবং ও-কার দিয়ে উচ্চারণ কোরি যা অভিধান মোতাবেক শুদ্ধ উচ্চারণ। যেমন: কায়েম, মোবারক, মোকাবেলা, মেহরাব, কাফেলা, কাফের, মোশরেক, আলেম, জালেম, এবাদত, জামে মসজিদ, এজাহার, এতেকাফ, গায়েব, এশা, হাফেজ ইত্যাদি। কিছুদিন হোল আরবি থেকে এ-কার (ে ) এবং ও-কার (ে া) এর ব্যবহার বাদ দেওয়া হোচ্ছে। এ পদ্ধতি যারা চালু কোরেছেন তারা শুধু যে একটি ভুলই কোরেছেন তাই নয়, তারা পুরো আরবি ভাষা থেকে দু’টি উচ্চারণই বাদ দিয়ে দিয়েছেন। এমনিতেই আরবি ভাষা উচ্চারণের (চযড়হবঃরপং) দিক থেকে খুব বেশী সমৃদ্ধ নয়; চ, ট, ঠ, থ, প, ড় ইত্যাদি অনেক উচ্চারণই এ ভাষায় নেই। তার মধ্যে এ ভাষা থেকে ‘এ’ (অ) এবং ও (ঙ)-কারের মতো দু’টি গুরুত্বপূর্ণ উচ্চারণ উঠিয়ে দিয়ে আরবি ভাষাকে আরো দরিদ্র করা হোচ্ছে।
      বাংলাদেশে সম্প্রতি একটি আন্দোলনের নাম ‘হেফাজতে ইসলাম’ রাখা হোয়েছে। লক্ষণীয় এ আন্দোলনের উদ্যোক্তারা প্রায় সবাই বড় বড় মাদ্রাসা শিক্ষিত ব্যক্তি। এই ক্ষেত্রে আলেমরা ‘হিফাজত-ই-ইসলাম’ না লিখে ‘হেফাজতে ইসলাম’ লিখেছেন অর্থাৎ একই শব্দের মধ্যে দুইটি এ-কার ব্যবহার কোরেছেন; প্রকৃতপক্ষে তারা ‘হেফাজত’ বানান ঠিকই লিখেছেন। কিন্তু যে কারণে তারা ‘হেফাজত’ লিখেছেন সেই একই কারণে তাদের ‘ইসলাম’ না লিখে ‘এসলাম’ লেখা উচিৎ ছিল। কারণ এখানেও আলিফের নিচে যের রোয়েছে। হা-এর নিচে ‘যের’ থাকায় যদি ‘হেফাজত’ উচ্চারণ হয়, আলিফের নিচে যের থাকলে ভিন্ন সিদ্ধান্ত হোতে পারে না। সুতরাং এখানেও ‘ইসলাম’ না হোয়ে সঠিক উচ্চারণ হবে ‘এসলাম’।
      উচ্চারণ তত্ত্বে (চযড়হবঃরপং) এমনিতেই আরবি দরিদ্র ভাষা তার মধ্যে যদি নির্দিষ্ট উচ্চারণ বাদ দেওয়া হয় তবে কালক্রমে এই ভাষা আরো দরিদ্র হোয়ে পড়বে এবং এক সময় পূর্ণ বিকৃত হোয়ে যাবে। তাই এখনই সময় এসেছে আরবি ভাষাকে বাংলায় লেখা এবং বলার সময় সঠিকভাবে বলা এবং সঠিক উচ্চারণটি লেখা।
      - See more at: http://desherpatro.com/2013/12/08/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%b7%e0%a6%be%e0%a7%9f-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%9f-%e0%a6%86%e0%a6%b0%e0%a6%ac-7/#sthash.3Jrxi89X.dpuf
      • একনিষ্ঠ অনুগত ০২/০৯/২০১৪
        দেখুন আমি অতো কিছু জানি না... তবে আপনি যা বলেছেন তা আরবি শব্দের বাংলা উচ্চারন হতে পারে কেননা আরবি শব্দের উচ্চারণ কেবল আরবি বর্ণমালা দিয়েই কেবল সম্ভব। যেমন ইংরেজি মাসগুলোর উচ্চারণ আরবিতে সম্ভব নয় বলে আরবিতে ইংরেজি বারো মাসের আলাদা নাম রয়েছে। আপনার যুক্তির উপর যদি আপনি অটল হয়ে থাকেন তবে আপনার ভাষ্যমতে সাড়া বিশ্বের যত আলেম, হাফেজ ও ক্বারী রয়েছেন তারা সকলেই ভুল উচ্চারণে কুরআন তেলাওয়াত করছেন, কিন্তু তা কি মানা যায়?
 
Quantcast