www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সার্বভৌমত্ব কি

সার্বভৌমত্ব কি?

এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীর লেখা থেকে -

মানুষ সামাজিক জীব, কাজেই একটা জীবন-ব্যবস্থা ছাড়া সে পৃথিবীতে বসবাস কোরতে পারে না। এবং সেই জীবনব্যবস্থা হলো দীন। সুতরাং সেই জীবন-ব্যবস্থা বা দীনের আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনীতি, সমাজবিধি সবই থাকতে হবে। এবং এর একটা সার্বভৌমত্বও অবশ্যই থাকতে হবে; সার্বভৌমত্ব ছাড়া তা চোলতেই পারবে না। সার্বভৌমত্বই হোচ্ছে সকল প্রকার জীবনব্যবস্থার ভিত্তি। যখনই আইন, দণ্ডবিধি, অর্থনীতি বা যে কোন ব্যাপারেই কোন সিদ্ধান্ত নিতে হবে তখনই একটা সার্বভৌমত্বের প্রয়োজন হবে।উদাহরণ: সমাজে অপরাধ দমনের জন্য নরহত্যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিৎ কিনা। কিংবা সমাজের সম্পদ সঠিক এবং সুষ্ঠু বিতরণের জন্য অর্থনীতি সুদ ভিত্তিক হওয়া সঠিক কিনা। সমাজের নেতারা যদি ঐসব বিষয়ে আলোচনা, পরামর্শ, যুক্তি-তর্ক করেন তবে তা অনন্তকাল ধরে চোলতে থাকবে- কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে না। কারণ এসব বিষয়ে প্রত্যেকেরই মতামত আছে। একদল বোলবেন নরহত্যার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড আইন না কোরলে সমাজে নরহত্যা থামবে না, বাড়বে; আরেকদলের মত এই হবে যে, মৃত্যুদণ্ড বর্বরোচিত, নৃশংসতা- এ কখনো আইন হোতে পারে না; আরেক দল হয়তো এই মত দিবেন যে, একটি নরহত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে একাধিক নরহত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ড আইন করা হোক। একাধিক অর্থে কয়টি নরহত্যা কোরলে মৃত্যুদণ্ডদেয়া হবে, দুইটি না একশ’টি তাও প্রশ্ন হোয়ে দাঁড়াবে। এবং এ বিতর্ক অনন্তকাল চোলতে থাকবে।অনুরূপভাবে সমাজের অর্থনীতি সুদ-ভিত্তিক হওয়া সঠিক না লাভ-লোকসান ভিত্তিক হওয়া উচিৎ এ নিয়ে বিতর্কের কোনদিন অবসান হবে না যদি না সিদ্ধান্ত নেবার মত একটা ব্যবস্থা না থাকে। কাজেই যে কোন জীবন-ব্যবস্থায়ই শেষ সিদ্ধান্ত নেবার জন্য একটি স্থান থাকতেই হবে। অন্যথায় জীবন-ব্যবস্থার যে কোন ব্যাপারে পরামর্শ আলোচনায় বোসলে তা অনন্তকাল চোলতে থাকবে। এই শেষ সিদ্ধান্ত নেবার ও দেবার কর্তৃত্ব ও অধিকারই হোচ্ছে সার্বভৌমত্ব। এই সার্বভৌমত্ব হোতে পারে মাত্র ২ প্রকার। যিনি সৃষ্টি কোরেছেন তাঁর, অর্থাৎ স্রষ্টার; কিংবা সৃষ্টের অর্থাৎ মানুষের। স্রষ্টা অর্থাৎ আল্লাহ্ মানুষের জন্য একটা জীবন-ব্যবস্থা দিয়েছেন যাকে তিনি বোলেছেন দীন, সুতরাং তিনি নিজেই সেটার সার্বভৌম। ঐ দীনের মধ্যেই তিনি মানুষের জীবনে যা কিছু প্রয়োজন আইন- কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনীতি, সমাজ-নীতি, শিক্ষা, এক কথায় ব্যক্তি, পরিবার, গোষ্ঠী, জাতি যে কোন পর্যায়ে অবিচার, অশান্তি, অন্যায় অপরাধহীন একটা সমাজ গঠন কোরে সেখানে বাস করার জন্য সিদ্ধান্ত দিয়ে দিয়েছেন।মানুষ যদি স্রষ্টার ঐ সিদ্ধান্ত অর্থাৎ আদেশগুলি মেনে নিয়ে সেই মোতাবেক তার ব্যক্তিগত, সামাজিক ও জাতীয় জীবন পরিচালিত করে তবেই সে আল্লাহ্র সার্বভৌমত্বকে মেনে নিল। আর যদি সে আল্লাহ্র দেয়া সিদ্ধান্তগুলিকে অস্বীকার করে তবে তাকে অতি অবশ্যই অন্য একটি জীবন-ব্যবস্থা অর্থাৎ দীন তৈরি কোরে নিতে হবে, কারণ একটা জীবন-ব্যবস্থা ছাড়া মানুষ পৃথিবীতে বাস কোরতে পারে না। তা অসম্ভব। এই নতুন জীবন-ব্যবস্থা তৈরি কোরতে গেলেই সেখানে অতি অবশ্যই একটা শেষ সিদ্ধান্তের স্থান, অধিকার থাকতে হবে; এবং যেহেতু স্রষ্টার সাবভৌমত্বকে ত্যাগ করা হলো সেহেতু এই শেষ সিদ্ধান্তের স্থান, কর্ত্তৃত্ব, অধিকার (Authority) হোতে হবে সৃষ্টির অর্থাৎ মানুষের।মোসলেম নামধারী জনসংখ্যাসহ সমগ্র মানবজাতি, আজ স্রষ্টার আল্লাহ্র সার্বভৌমত্ব (উলুহিয়াহ্) ত্যাগ কোরে মানুষের সার্বভৌমত্বকে গ্রহণ কোরেছে। এই দুই সার্বভৌমত্ব বিপরীতমুখী, একটি স্রষ্টার, অন্যটি সৃষ্টের; এ দু’টি পরস্পর সাংঘর্ষিক।

আল্লাহ্র সার্বভৌমত্বের ওপরই এসলাম প্রতিষ্ঠিত, এই সার্বভৌমত্ব ছাড়া কোন এসলাম নেই। আল্লাহ্র এই সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ইহুদি-খ্রিস্টান সভ্যতা অর্থাৎ দাজ্জাল আজ দাঁড়িয়েছে সৃষ্টির অর্থাৎ মানুষের সার্বভৌমত্বের প্রতিভূ, প্রতিনিধি হোয়ে। হওয়ার কথা ছিল এই যে, ‘লা এলাহা এল্লা আল্লাহ্’ অর্থাৎ আল্লাহ্র সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসের দাবিদার ‘মোসলেম’ বোলে পরিচিত এই জনসংখ্যা নিজেদের সর্বপ্রকার বিভেদ ভুলে যেয়ে মানুষের সার্বভৌমত্বের প্রতিনিধি দাজ্জালের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। দুর্ভাগ্যক্রমে তা তো হয়ই নাই বরং এই ‘লা এলাহা এল্লা আল্লাহ্’ যেক্রকারী, নামাজ, রোজা, হজ্বব্রত পালনকারী মোসলেম হবার দাবীদার জনসংখ্যা প্রায় সবটাই হয় গণতন্ত্র, না হয় রাজতন্ত্র, না হয় সমাজতন্ত্র, না হয় একনায়কতন্ত্রের কোন না কোনটা মেনে নিয়ে দাজ্জালের পায়ে সাজ্দায় প্রণত হোয়ে আছে।এর কারণ বর্তমান দুনিয়াতে যে এসলামটি চালু আছে তাতে এই আল্লাহর সার্বভৌমত্ব অর্থাৎ তওহীদ নেই। তওহীদহীন এসলাম মানেই প্রাণহীন, আত্মাহীন জড়বস্তু। আল্লাহকে মানুষের এলাহর আসন থেকে সোরিয়ে সেখানে পাশ্চাত্য ‘সভ্যতা’-কে অর্থাৎ মানুষকে বোসিয়ে যে আনুষ্ঠানিকতাসর্বস্ব ধর্ম পালন করা হোচ্ছে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আমাদের বৃহত্তর ও সমষ্টিগত জীবনে গায়রুল্লাহর সার্বভৌমত্বকে স্বীকার ও গ্রহণ কোরে নিয়ে শুধুমাত্র ব্যক্তিজীবনের সার্বভৌমত্বটুকু আমরা আল্লাহর জন্য রেখেছি। সেই জাল্লে-জালাল, আযিজুল জব্বার, স্রষ্টা ভিক্ষুক নন যে তিনি এই ক্ষুদ্র তওহীদ গ্রহণ কোরবেন। তাছাড়া ওটা তওহীদই নয়, ওটা শেরক ও কুফর।পরিষ্কার কোরে উপস্থাপন কোরতে গেলে এমনি কোরে কোরতে হয়:এই বিন্যাসই এ কথা পরিষ্কার কোরে দিচ্ছে যে সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোন আপোস সম্ভব নয়। ওপরের যে কোন একটাকে গ্রহণ কোরতে হবে। আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে বাদ দিয়ে অন্য যে কোনটি স্বীকার, গ্রহণ কোরে নিলে সে আর মোসলেম বা মো’মেন থাকতে পারে না। কোন লোক যদি ব্যক্তিগত জীবনে আল্লাহ বিশ্বাসী এবং জাতীয় জীবনের ওপরের যে কোনটায় বিশ্বাসী হয় তবে সে মোশরেক। আর উভয় জীবনেই কোন লোক যদি আল্লাহর সার্বভৌমত্ব বাদে ঐগুলির যে কোনটায় বিশ্বাস করে তবে সে কাফের। তাই এই মোসলেম দাবিদার জনসংখ্যাটি তাদের জাতীয় জীবনে কেউ সমাজতন্ত্র, কেউ গনতন্ত্র,  কেউ রাজতন্ত্র, কেউ একনায়কতন্ত্র ইত্যাদি ,তন্ত্র-মন্ত্র, রংস, পৎধপু ইত্যাদি মেনে চোলছে অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্ব বাদ দিয়ে ঐ সমস্ত তন্ত্রমন্ত্রের সার্বভৌমত্ব মানছে, এভাবে তারাও কার্যত: মোশরেক ও কাফেরে পরিণত হোয়েছে। কাজেই এই জাতির পরিণতি দুনিয়াময় এই লাঞ্ছনা, অপমান, গোলামী আর পরকালে তাদের জন্য অপেক্ষা কোরছে ভয়াবহ জাহান্নাম।
[যোগাযোগ: ০১৬৭০১৭৪৬৪৩, ০১৯৩৩৭৬৭৭২৫]

মোহাম্মদ হাবিব বেন আব্দুস ছোবান।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৯৭১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৯/০৮/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast