www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ভাঙা আয়না

ছোট আয়নাটা হাতে নিয়ে মাথায় চিরুনী চালাচ্ছিল আবির । হঠাৎ হাতে থেকে আয়নাটা পড়ে তিন টুকরা। টুকরো তিনটা আঠা দিয়ে জোড়া লাগানোর
চেষ্টা করেছিল সে। হঠাৎ একটা ব্যাঙ্গময়
মেয়েলী হাসির শব্দ। অরনীর হাসি; আবিরের ফুফাতো বোন। এবার
এইস,এস,সি পরীক্ষা দিয়েছে। এখন পড়াশুনার বোঝা হালকা তাই অরনী এবং তার মা নাহার আবিরদের
বাসায় এসেছে। হাসতে হাসতে অরনী আবিরের কক্ষে ঢুকল।
'কিরে, কুট কুট করে হাসছিস ক্যান?' আবির আয়নায় আঠা লাগাতে লাগাতে বলল।
অরনী হাসতে হাসতে বলল, 'আপনার
কাহিনী দেখে।'
‘কাহিনীর কী হল? আয়না হাত
থেকে পড়ে ভেঙে গেছে টুকরো তো বেশি হয়
নাই। চেষ্টা করে দেখি জোড়া লাগে নাকি । তুই
একটু সাহায্য করবি কিনা শুধু হাসছিস।' আবিরের রাগ মিশ্রিত
কণ্ঠ।
- হাসবো না, তো কী করব?
-কী করবি মানে, বললাম তো একটু সাহায্য করবি।
-ধ্যাত, ভাঙ্গা আয়না কোনদিন জোড়া লাগে নাকি?
অরনীর কণ্ঠে বিরক্তি ফুটে ওঠে।
-ধর না একটু প্লিজ, লাগতেও তো পারে।
'আঠাটা কিন্তু ভালো।' আবির বিনম্রভাবে বলল।
-আচ্ছা ধরলাম আপনাকে আমি কতদিন বললাম, ছোট
আয়নায় মুখ না দেখে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায়
মুখ দেখবেন। পুরো চেহারাটাও
দেখতে পাবেন, হাত থেকে পড়ে ভাঙবেও না।
আমি বুঝিনা আপনি কী কারণে যে দেখেন না ?
-কারণ হলো , ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজেকে মেয়ে মেয়ে লাগে। আর
পুরো চেহারা দেখার তো কোন প্রয়োজন
নেই।

দুপুর বেলা। সবাই এক সঙ্গে খেতে বসেছে।
খাওয়ার মাঝে হঠাৎ অরনী আবিরের বাবাকে বলল, শুনেছেন মামা আপনার ছেলের কাহিনী’।
‘কি কাহিনী বল মা শুনি’ আবিরের বাবা বললেন।
আবির
বিরক্তি আর রাগ মিশ্রিত দৃষ্টিতে অরনীর
দিকে তাকাচ্ছিল।
‘আবির ভাইয়ার হাত থেকে তার মুখ দেখা ছোট আয়নাটা পড়ে ভেঙে গেছে তখন
দেখি সেটা জোড়া লাগাচ্ছেন। আমি বললাম এর চেয়ে বরং ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় মুখ দেখলেইতো হয়।
ভাইয়া বলে, ড্রেসিং টেবিলের আয়নার মুখ দেখলে নিজেকে নাকি মেয়ে মেয়ে লাগে।'
এই বলে অরনী হাসতে লাগলো।
-তাই নাকি বাবা? আবিরের মা মুচকি হেসে বললেন।
-ধ্যাত, আর খাবই না! খাওয়ার সময় একটু শান্তিতে খেতে দেবেনা, খাও তোমরাই খাও।
এই বলে আবির খওয়া ছেড়ে উঠে গেল।
অরনী হাসতে লাগল।
-অরনী চুপ কর। এই বাবা আবির আসো, এ তো তোমার সঙ্গে দুষ্টুমী করল। অরনী ও তোমার বড় ভাই আর তুমি ওর সাথে...?
অরনীর মা অরনীর ওপরে রেগে গেছে।
-বড় ভাই হু, এক বছরের বড়-একটু
দুষ্টুমী করতেও পারব না?
অরনী কাঁদো কাঁদো সুরে বলল।
'এই নাহার চুপ কর। ছেলে মেয়েরা এই
বয়সে একটু দুষ্টুমী করবেই। এতে রাগের
কী আছে? এখন তোরা খেয়ে নে, আবির পরে খাবে।'
আবিরের বাবার
পরিস্থিতি সামলানো উক্তি।

দুদিন পর।
আবিরের ঘরে ঢুকল অরনী। আবির চুপ
করে বসে জোড়া লাগানো আয়নায় মুখ দেখছিল।
আবিরের পাশে গিয়ে অরনী বসল। এরই
মাঝে আয়ানার একটা অংশ খুলে গেল।
-সরি ভাইয়া। আয়নাটা খুলে গেল এ জন্য নয়; আমি জানি ভাঙা আয়না জোড়া লাগেনা। লাগলেও টিকবেনা।
সরি বললাম, আপনি দুদিন থেকে আমার সঙ্গে কথা বলছেন না। তাই ঐ দুষ্টুমীটার জন্য সরি।
আমি আপনাদের বাড়িতে আর কার সঙ্গে সময় কাটাই বলুন? মা আর মামি দুজনে সারাদিন কাজে আর গল্পে ব্যস্ত, মামার সঙ্গে তো আর গল্প করা যায় না। বাকি শুধু আপনি। যা হবার হয়েছে আর
বিরক্ত করব না। তবুও আমার সাথে কথা বলুন; যা চাবেন তাই দেব।
এতক্ষণ অরনী একা একা বলে যাচ্ছিল।
'সত্যি? যা চাইব তাই
দিবি?' আবিরের নীরবতা ভাঙল।
অরনী হাসতে হাসতে বলল, ‘কথা তো বললেন। আর দেব না ।
আবির আবার নীরব।
-সরি, সরি, সরি, আর দুষ্টুমী করব না । সত্যি যা চাইবেন তাই পাবেন।
-তাহলে চল বাহিরে গাছের নিচে গিয়ে বসি। তারপর বলব আমার কি চাই।
-চলেন।

বাড়ির দক্ষিণ দিকে বিশাল বাগানবাড়িতে কী সুন্দর মনোরম পরিবেশ। একটা গাছের
নিচে দুজনে বসল।
-বলেন কী নেবেন আমার কাছে থেকে?
-আমি তোর বড় ভাই তাইতো নাকি?
-হ্যাঁ অবশ্যই।
-তুই কিন্তু আমার চেয়ে মাত্র এক বছরের ছোট
অর্থাৎ সমবয়সী বলা চলে। তুই লেখাপড়া করছিস আর আমি এস,এস,সি পাস করে বসে আছি। যা হোক আজ থেকে তুই আমাকে তুমি বলবি কেমন?
-কেনো?
-কেনোর মানে নেই!
-আচ্ছা বলছি (আবির একটু ভাবল)
আপনি বললে নিজেকে কেমন
বুড়ো বুড়ো লাগে তাই।
-ও ঠিক আছে এখন থেকে তুমি করে বলব।
-একবার বল, শুনি কেমন লাগে ?
অরনী হাসতে হাসতে বলল, 'ভাইয়া, তুমি আমার উপর
আর রাগ করনা।'
-সুন্দর হয়েছে ঠিক আছে আর রাগ করব না।
-ভাইয়া এখন থেকে তুমি ও আমাকে তুমি বলবে।
-আচ্ছা বললাম, এই অরনী তুমি কেমন আছিস? সরি, কেমন আছো ?
-ভালো এখন বল কী চাও?
-ও ভুলেই গিয়েছিলাম! আমি চাই
তুমি আমাকে না মানে তুমি বলে ডাকবে এটাই।
-ও আচ্ছা। তাহলে চল এখন ভিতরে যাই
সন্ধ্যা হয়ে আসছে।

রাতে সবাই এক সঙ্গে খেতে বসেছে।
অরনী আবির বলল, ভাইয়া সেদিন তো তুমি ভাত খাওনি, আজ একটু বেশি করে খাও।
-এই আজ আবার ওকে বিরক্ত করছ? অরনীর মা বলল।
-'সমস্যা নেই ফুফু, আমি বিরক্ত হবনা।
এতে আমারি ক্ষতি।
সেদিন না খেয়ে উঠে গেলাম। ভাবছিলাম
রাতে খাবো কিন্তু রাতে মুরগীর মাংস নেই ।' আবির বলল আর অমনি সবাই একসঙ্গে হেসে উঠল।
'এই অরনী তুমি ভাত নাও একটু
দিনে দিনে তো শুকিয়ে যাচ্ছো। একটু
বেশি করে খেতে পারনা।' অরনীর
দিকে তাকিয়ে আবির বলল।
'কী ব্যাপার? তোমাদের দুজনের দেখি কথা বলার ধরণ বদলে গেছে।' আবিরের মা বললেন।
হ্যাঁ মামি, আবির ভাইয়া বলল……আবির অরনীর
মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল, হ্যাঁ মা ,
আমাকে ও আপনি বলত আর আমি ওকে তুই বলে ডাকতাম। কিন্তু দেখ মা ইংরেজি ভাষায় তুই
বা আপনি কিছুই নেই। শুধু একটি শব্দ 'ইউ' যার অর্থ তুমি। তাই সবাইকে তুমি বলাই উচিৎ।
‘হ্যাঁ বাবা তুমি ঠিকই বলেছ। আমার ছেলেটার লেখাপড়া কম থাকলে কী হবে বুদ্ধি কম নয়।'
আবিরের বাবার হাস্যজ্জল মুখের উক্তি।

বিকেল বেলা।
বাড়ির দখিন দিকের বাগান বাড়ির গাছ তলায় আবির আর অরনী বসে গল্প করছিল।
-ভাইয়া তুমি আমাকে বলেছিলে বুড়ো বুড়ো লাগে, তাই আপনি না বলে তুমি বলতে বলেছিলে কিন্তু তখন খাওয়ার সময় সবার সামনে বললে অন্য কথা।
এখন তো মনে হচ্ছে তুমি দুখানেই
মিথ্যে বলেছ। সত্যটা কী? বলতো শুনি।
-আরে তুমি দেখি একদম বোকা । কেউ
আপনি বললে বুড়ো লাগে এ কথা কি সবার সামনে বলা সম্ভব? তাই ওটা বলেছিলাম। কিন্তু প্রথমেরটাই ঠিক।
-ভাইয়া তখন তো চট করে একটা কারণ বানালে এখন
আরেকটা কারণ বলতে পারবা?
-আরেকটা কারণ কাকে বলার জন্য ?
-ধর তোমার বন্ধুদের।
-ও তাহলে বলব আমি ওকে ভালবাসি।
-মানে?
-মানে আমি তোমাকে ভালবাসি।
-এটা সম্ভব নয় ভাইয়া।
-কেন?
-আমি একজনকে ভালবাসি।
একথা শুনে আবিরের মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল।
এ যেন চৈত্রের আকাশে শ্রাবণের মেঘ! তবুও আবির নিজেকে একটু সামলিয়ে বলল, ভালোবাসো তাতে কি হয়েছে? আমি তো আর
সত্যি সত্যি ভালোবাসার কথা বললাম না, এটা আপনি থেকে তুমি বলার কারণ মাত্র।
একথা শুনে অরনী একটু হাসল। এ
হাসি দেখে আবিরের বুকের
ভিতরটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল
আয়না ভাঙার মতো।
-ও সরি ভাইয়া, আমি বুঝতেই পারিনি ।
-কিন্তু তুমি একজনকে ভালোবাসো আমাকে আগে বলোনি তো! বলনা একটু শুনি তোমার ভালোবাসার গল্প।
অরনী বলতে শুরু করে, ছেলেটার নাম জাহিদ। আমাদের সঙ্গে এবার পরীক্ষা দিয়েছে।...

কয়েকদিন পর । অরনী বাসায় চলে গেল।
দু মাস পর এইচ,এস,সি ফলাফল হল। অরনী ভালো রেজাল্ট করেছে। কিন্তু জাহিদ খারাপ রেজাল্ট করায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।
ভালো রেজাল্ট করেও অরনীর
মুখে হাসি ফুটেনা। সে বুঝতে পারেনা এখন কী করবে? সেদিন সারারাত ভাবে ভাবনার রাজ্যে স্বপ্ন বুনে অরনী। নতুন স্বপ্ন।

পরদিন। আবির কে ফোন করে এদের বাসায় দাওয়াত করল অরনী; ভালো রেজাল্টের জন্য। আবির
ইচ্ছা-অনিচ্ছার দোলাচলে দুলতে দুলতে অরনীদের বাসায়
আসলো । সবার সঙ্গে ভালোমন্দ কথা হল, অনেক খাওয়া দাওয়া হল। তারপর আবিরকে অরনী ওর ঘরে নিয়ে গেল।
-বল কী বলবা?
-ভাইয়া, (অরনীর চোখে জল এসে যায়) আমি... তোমাকে ভালোবাসি।
-কী বলছ এসব? তুমি তো জাহিদকে ভালোবাসো; সে দিন আমার
হৃদয়টা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। তুমিই
তো বলেছিলে ভাঙা আয়না কি জোড়া লাগে?
-হ্যাঁ লাগে ভাইয়া লাগে। তুমি তো সেদিন বলেছিলে-
“একটু হেল্প করোনা , জোড়া তো লাগতেও
পারে”। প্লিজ ভাইয়া, একটু হাতটা বাড়াও। সেদিন তোমার ঐ ভাঙা আয়না জোড়া লেগেছিল আমার
সাহায্যে, আজ সেই আমি কি পারবোনা তোমার ভাঙা হৃদয়কে জোড়া লাগাতে?
-কিন্তু………
-কিন্তু কী?
-আয়নাটা তো পরে আবার জোড়া খুলে গিয়েছিল।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৯০৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৮/০১/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • নির্ঝর ১৯/০১/২০১৬
    খুব সুন্দর হয়েছে।
  • আমি যতদুর জানি অরণী ( যে কাঠের ঘর্ষণে আগুন জ্বলে) পুরুষের নাম হয় , নারীর নয়। আয়না ভেঙ্গে গেলে জোড়া লাগলেও একাধিক প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। আপনার লাইন সাজানো ঠিক নেই , দয়া করে ঠিক করুন। আপনার গল্পের বিষয় বস্তুতে / পরিবেশনায় উন্নতি প্রয়োজন।
    • শিস খন্দকার ০৯/০১/২০১৬
      লেখাটি ২০১২ সালের। পরিবেশন ত্রুটি আছে।
      কিন্ত নাম ও আয়না বিষয়ক অযুহাত অযৌক্তিক। রবি ঠাকুরের গল্পের নায়িকাদের নামের মতো নারী সুলভ কোমল নাম সমসাময়িক গল্পে বড্ড বেমানান।
      • অজুহাত শব্দটি ভুল প্রয়োগ। নাম অলক্ষনার্থক হয় , তবু বিশেষ কোনো নাম নারীর জন্য ব্যবহার করলে ভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। গল্পটি ভালো হতে পারত বলে আমার মনে হয়।
 
Quantcast