www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সুন্দর ও সুখময় সংসার জীবনের চাবিকাঠি

1. পতি পরমেশ্বর ও পত্নী পরমেশ্বরী― এই ভাবটিতে দৃঢ় বিশ্বাস রেখে এবং এই ভাব অবলম্বন করে একে অপরের দায়িত্ব নেবে এবং নিজের নিজের কর্তব্য পালন করবে। এইভাবেই উভয়েই মানুষ হিসেবে আরও উন্নত হবে। যদি একান্তই তোমার স্বামী বা স্ত্রী এইভাবে না দেখে, তবুও তুমি তাকে সেইভাবে দেখো― এই মহামূল্যবান মানব জন্মটিকে সার্থক করে যাও। কারোর জন্য তোমার নিজের আত্মবিকাশ থামিয়ে রাখবে না। তুমি ভালোবাসো, ভালোবাসতে থাকো― ভালোবাসা পাবেই পাবে, কম হলেও পাবে। সহ‍্য করো, সহ‍্যশক্তি এক মহৎ গুণ। তবে তোমার আত্মমর্যাদা বা মানবাধিকার নষ্টের চেষ্টা বারবার হলে বোঝাও তাকে― কাজ না হলে ডিভোর্স দাও। মনে রাখবে ডিভোর্স একেবারে শেষ অপসন― ব্রহ্মাস্ত্রকে কখনোই প্রথমে চালাতে নেই। কেবল নিজের স্বার্থটা না দেখে সন্তানের ভালোটাও দেখো। সন্তানকে ঈশ্বরের দান এবং ঈশ্বরের আশীর্বাদ হিসেবে দেখে তাকে সুসংস্কার, শিক্ষা এবং সময় দিতে হবে। মনে রাখতে হবে সন্তান দেখে শেখে তাই নিজেদের আচরণ ও কথাবার্তা আরও উন্নত করো। নিজেরা এমন মানুষ হন যেন সন্তান মা বাবাকে নিয়ে গর্ববোধ করে। GET & FORGET এর রাস্তা ছেড়ে GIVE & FORGIVE এর রাস্তাতে এসো। কোনো একজন মনীষী বলেছেন― "Distance never kills a relation. Closeness never builds a relation. It's the caring of one's feelings that builds faith and maintains a relation." নিজের বাড়ির যেভাবে যত্ন নাও সেভাবে স্বামী স্ত্রী একে অপরের যত্ন নিও। সব পরিবারেই ঝগড়াঝাঁটি আছে। নিজেকে তোমার স্বামী বা স্ত্রীর জায়গায় রেখে দেখো। হৃদয়বান হও, হৃদয়ের সম্প্রসারণ করো। একগুণ ঝগড়াকে দশগুণ ভালোবাসা দিয়ে পরাজিত করাই তো সংসার। '"আমরা', 'আমাদের' কেন্দ্রে থাক ভালোবাসায় নেই জয় পরাজয়,/ 'আমি', 'আমার' কমতে থাকাতেই ভালোবাসার পরিচয়।"



2. স্বামী-স্ত্রীর যৌনতা দরকার এবং থাকবে। তবে যৌনজীবন হবে অপরের ইচ্ছার মর্যাদা রেখে। কোনো জোর জবরদস্তি নয়। স্বামী বা স্ত্রী কেউ কারোর বিনে পয়সার বেশ‍্যা নয়। একে অপরের মনের মণি, প্রাণের প্রিয় এবং আদরের সম্পদ। এই কথা মাথায় রাখতে হবে। জীবনসঙ্গীকে তোমার যৌনাঙ্গের স‍্যাটিসফেকসনের বস্তু বা অবজেক্ট বা কমোডিটি ভেবো না। তাকে পরিবারসেবা, সমাজসেবা এবং ঈশ্বরসেবার সঙ্গী হিসাবে দেখো― see him or her as a co-contributer. এই philosophy-টাকে ঠিক রেখো, তারপর দুজন মিলে আলোচনা করে নিজেদের মতো করে যৌনজীবন যাপন করো। আর যাদের বাড়িতে একটাই রুম বা যারা বস্তিতে থাকে তাদের এমনভাবে স্বামী স্ত্রীর যৌনতার সময় ও সুযোগ বার করতে হবে যাতে সন্তান ওসব না দেখতে পায়― না হলে সন্তানের প্রচন্ড মানসিক ক্ষতি হবে। এই ক্ষতি প্রায় অপূরণীয়।



3. পতির একমাত্র পেমাস্পদ হবে পত্নী এবং পত্নীর একমাত্র প্রেমাস্পদ হবে পতি। মানুষ হিসেবে সৎ থাকতে হবে। ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া এমনভাবে ব‍্যবহার করো না যাতে সুখের সংসার দুঃখের সমুদ্র হয়ে যায়! খাল কেটে কুমির ডেকে এনো না। বর্তমানকে নিয়ে ভালোভাবে বাঁচো। সমগ্র মনপ্রাণে কেবল বর্তমানকেই ভালোবাসো।



4. আগে দায়িত্ব কর্তব্য পালন করতে হয়, তারপর অধিকারবোধ। অধিকারবোধটিও শাষনের অধিকারবোধ নয়, বরং ভালোবাসার অধিকারবোধ হবে। কোনো অবস্থাতেই স্বামী বা স্ত্রীর ঈশ্বর প্রদত্ত জন্মগত অধিকার স্বাধীনতা ও মানবাধিকার এবং সাথে সাথে কেরিয়ারের স্বপ্নে হস্তক্ষেপ করা চলবে না। এটা মাথায় রাখতে হবে জোর করলে বড়োজোর ভালোবাসার অভিনয় পাওয়া যায়, বিশুদ্ধ ভালোবাসা পেতে গেলে স্বাধীনতা দিতেই হবে। মানুষ কখনোই perfect নয়, জীবনসঙ্গীর সব জিনিস তোমার পছন্দ হবে না― understanding এবং respect বাড়াতে হবে সেজন্যই। ভালোবেসে তাকে ভালো করো। একে অপরকে আত্মবিকাশে সহায়তা করাই ভালোবাসা। বন্ধুভাবাপন্ন হয়ে একে অপরের জীবনকে সরল করাই ভালোবাসা। একে অপরের স্বপ্ন পূরণে দেবদূত হওয়া, একে অপরকে উন্নত করে সম্পূর্ণ করা এবং একে অপরের সুখ দুঃখকে আপন করে নেওয়াই ভালোবাসা। মাঝেমধ্যে বেড়াতে যেতে হবে, ভালো খাবার খেতে হবে এবং একে অপরকে উপহার দিতে হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন "লোকে ভুলে যায় দাম্পত্যটা একটা আর্ট, প্রতিদিন ওকে নতুন করে সৃষ্টি করা চাই।"



5. নিজেকে সবসময় স্বামী বা স্ত্রী হিসেবে দেখা ভুল জীবন দর্শন এবং বড়োসড়ো বদ অভ‍্যাস। নিজেকে মানুষ হিসেবেও দেখো। জীবনটাকে জীবন হিসাবে দেখো, সংসারটা জীবনের অংশ বা রাস্তামাত্র। অলসতা পরিত্যাগ করো। কাজ করো কাজ। পরিবারের, সমাজের এবং পরিবেশের সেবাতে আন্তরিক আত্মনিয়োগ করো। ঈশ্বরের কথা ভাবো, উনি সর্বশক্তিমান উনার তাই নিজের কাজ করার দরকার নেই, সেই ঈশ্বরও জগতের সেবার জন্য কাজ করেন― ঈশ্বরই শ্রেষ্ঠ সেবক। তাই আমাদের পায়ের উপর পা তুলে না বসে থেকে বা শুয়ে শুয়ে আল্তুফাল্তু চিন্তা না করে বা মোবাইল ফোন বা টিভির দাস না হয়ে ঘাম ঝরাতে হবে। নিজের জীবনকে সার্থক করে যাও। সেবাই জীবন, অলসতাই মৃত্যু। অলসতা না রেখে অবদান রাখো। কিছু না হোক, অন্তত পক্ষে নিজের পরিবারের সেবার জন্য কাজ করো, মানুষ হিসেবে ভালো হবে এবং ঈশ্বরের আশীর্বাদ পাবেই পাবে। অলসতা সর্বদাই ঘৃণার যোগ্য। নিজেকে নারী বা পুরুষ হিসেবে না দেখে মানুষ হিসেবে দেখো এবং পরিবারের সেবার জন‍্য সৎপথে অর্থ উপার্জন করো কিংবা বাড়ির কাজ করে সেবা করো বা দুটোই করো। দেখতে হবে যেন সংসারের কাজগুলো একজনের উপর ভারস্বরূপ না হয়, দুজনেই কাজ ভাগাভাগি করে নিতে হবে। আবার উপার্জনের কাজটিকেও নিষ্ঠা সহকারে ভালোভাবে করো― এর দ্বারাও অন‍্যের উপকার হয়। সেবাই পূজা। দুজনে মিলে বা একজনে যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করো যাতে পরিবারের সেবার সাথে সাথে গরীব দুঃখী, অনাথাশ্রম ও বৃদ্ধাশ্রমের সেবা করতে পারো। শুধু টাকা দিয়েই সেবা করতে হবে এমন কোনো মানে নেই, সময় বা কাজ বা জ্ঞান দ্বারাও দেশসেবা করা যায়। এসব সমাজের প্রতি তোমার পরিবারের অবদান হবে। মানুষ ও পরিবার হিসেবে উন্নত হও― জীবন এজন্যই। স্বামী বিবেকানন্দ স্বদেশ-মন্ত্রে আমাদের আহ্বান জানিয়েছেন, " হে ভারত, ভুলিও না-তোমার বিবাহ, তোমার ধন, তোমার জীবন ইন্দ্রিয়সুখের-নিজের ব্যক্তিগত সুখের জন্য নহে; ভুলিও না— তুমি জন্ম হইতেই ‘মায়ের’ জন্য বলিপ্রদত্ত; ভুলিও না—নীচজাতি, মূর্খ, দরিদ্র, অজ্ঞ, মূচি, মেথর তোমার রক্ত, তোমার ভাই!" জগত কতখানি স্বার্থপর সে প্রশ্ন মোটেও করবে না, বরং তোমরা কতখানি ভালো হতে চাও কেবলমাত্র এই প্রশ্নটিই করবে। না হলে পশুর মতো খাবার জোগাড় করো, খাও, সেক্স করো আর ঘুমাও। Choice is yours.



6. সুখী ও ভালো সংসারের ছয়টি গুণ হল― Politeness, Cleanliness, Peace, Love, Motivation and Discipline. ঘরের প্রত‍্যেককে এগুলো মানা উচিত। তাহলেই গৃহ আর গৃহ থাকবে না, গৃহ দেবালয় হয়ে যাবে। A human being should defend his/her honour and home. পরিবারের সাথে যেটুকু সময় কাটাবে সেটুকু সময় মোবাইল বা ইন্টারনেটে খুটখাট করো না। ঘরদোর বিশেষত রান্নাঘর এবং বাথরুম সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখবে। বাড়িতে সবসময় ভদ্র থাকবে। বাড়ির প্রত‍্যেক সদস্য একে অপরকে ভালোবাসবে। দাদা-ভাই পরস্পর পরস্পরকে আজীবন ভালোবাসবে। চিৎকার চেঁচামেচি না করে শান্তিপূর্ণ ভাবে বাঁচো― বাইরের দুনিয়ার সাথে তো এত খিটিমিটি তর্কাতর্কি ঝামেলা করছো, বাড়িতে তাই শান্তি দরকার। একে অপরের কাজে উৎসাহ দাও এবং নিয়মানুবর্তি থেকো। আর যারা ভগবান মানেন তারা প্রতিদিন নিজের ধর্মের রীতি অনুযায়ী বাড়িতে পুজোপাঠ করুন― এতে বাড়ির vibration উচ্চ হয়, সুচিন্তার ও শান্তিপূর্ণ বাতাবরণ তৈরি হয়। অবতার পুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন― "তাঁকে(ঈশ্বরকে) জেনে― একহাত ঈশ্বরের পাদপদ্মে রেখে আর একহাতে সংসারের কার্য কর l" এবার যারা মদ খায় তাদের জন্য― মদ খাওয়ার জন্য পৃথিবীতে অনেক জায়গা আছে, বার আছে, ক্লাবঘর আছে সেখানে গিয়ে মদ খাও, গালিগালাজ করো― নেশা কাটলে দেবালয়ে অর্থাৎ নিজের বাড়িতে ফিরে এসো।



7. তুমি কৃষক হও, শ্রমিক হও আর বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব‍্যক্তিই হও, জেনে রেখো কেবলমাত্র গাধার মতো খাটার জন্যই এই জীবনটা নয়। প্রতিদিন নিজের জন্য একঘন্টা সময় দাও। চব্বিশ ঘন্টার মধ্য থেকে একঘন্টা সময় বের করো। এই সময়টি কেবলমাত্র তোমার নিজের জন্য। এই একঘন্টার মধ্যে আধঘণ্টা physical exercise করো, কুড়িমিনিট কোনও ভালো বই পড়ো যেমন― মহাপুরুষদের জীবনী, নিজের নিজের ধর্মগ্রন্থ কিংবা ইউটিউবে জ্ঞানের কোনো ভিডিও দেখো। বাকি রইল দশমিনিট এইসময়ে নিজের নিজের ধর্মের ঈশ্বরের পূজা করো বা তার নাম জপ করো বা গুরুর দেওয়া মন্ত্র জপ করো কিংবা ধ‍্যান করো। যারা নাস্তিক তারা "I am peace, I am love and I am happiness" এই মন্ত্র জপ করতে পারো। এই ঘন্টা সময় কিন্তু কোনো luxury নয় এটা need. এটা তোমার শরীর মন ও আত্মার যত্ন নেওয়া। নিজেকে ভালোবাসো। যেদিন বই পড়তে বা জ্ঞানের ভিডিও দেখতে মন যাবে না সেদিন ভালো কোনো মানুষের সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটাও। বাড়ির সকলকেই উৎসাহিত করো তারাও যাতে নিজের জন্য প্রতিদিন একঘন্টা করে এভাবে সময় দেয়। এটা করো তাহলে বর্তমানের গতিময় জীবনেও স্ট্রেস তোমার পাশ ঘেঁষতে পারবে না। ধীরে ধীরে নিজের মধ্যে পরিবর্তন দেখতে পাবে। মাস তিনেক করার পর থেকেই দেখতে পাবে নিজেকে নিজের ভালো লাগবে― অনেক বেশি হাসিখুশি fell করবে।



8. পরিবারে নারীদের মর্যাদা সম্বন্ধে মনুসংহিতার কয়েকটি শ্লোক দেখে নিই―

"যত্র নার্য্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ।/ যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ।।" (মনুসংহিতা 3/56) অর্থাৎ যেখানে নারীদের যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা হয় সেখানে দেবতা বিরাজ করেন। আর যারা নারীদের যোগ্য সম্মান করে না, তারা যতই মহৎ কর্ম করুক না কেন, তার সবই নিষ্ফল হয়ে যায়।

“একজন পিতা, ভাই, পতি বা দেবর― তাদের কন্যা, বোন, স্ত্রী বা ভ্রাতৃবধুকে মৃদুবাক্য, ভদ্র ব্যবহার ও উপহারাদি দ্বারা খুশি ও সন্তুষ্ট রাখবেন। যারা যথার্থ কল্যাণ ও উন্নতি চান, তারা নিশ্চিত করবেন যে, তাদের পরিবারের নারীরা যাতে সর্বদা খুশী থাকেন এবং কখনো দুর্দশা ভোগ না করেন”। (মনুসংহিতা 3/55)

“যে বংশে ভগিনী ও গৃহস্থের স্ত্রী (নারীকূল) পুরুষদের কৃতকর্মের জন্য দুঃখিনী হয়, সেই বংশ অতি শীঘ্র ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আর যে বংশে স্ত্রীলোকেরা সন্তুষ্ট থাকে, সেই বংশ নিশ্চিতভাবেই শ্রীবৃদ্ধি লাভ করে”। (মনুসংহিতা 3/57)

স্বামী বিবেকানন্দ তার "কর্মযোগ" গ্রন্থে "মহানির্বান তন্ত্র" থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে কি বলেছেন দেখা যাক―

"ন ভার্যান্তাড়য়েৎ কৃপি মাতৃবৎ পালয়েৎ সদা।
ন ত্যজেৎ ঘোরকষ্টেহপি যদি সাধ্বী পতিব্রতা।।
স্থিতেষু স্বীয়দারেষু স্ত্রিয়মন্যাং ন সংস্পৃশেৎ।
দুষ্টেন চেতসা বিদ্বান্ অন্যথা নারকী ভবেৎ।।
বিরলে শয়নং বাসং ত্যজেৎ প্রাজ্ঞঃ পরস্ত্রিয়া।
অযুক্তভাষণঞ্চৈব স্ত্রিয়ং শৌর্যং ন দর্শয়েৎ।।
ধনেন বাসসা প্রেম্না শ্রদ্ধয়ামৃতভাষণৈঃ।
সততং তোষয়েদ্দারান্ নাপ্রিয়ং কৃচিদাচরেৎ।। 9
যস্মিন্নরে মহেশানি তুষ্টা ভার্যা পতিব্রতা।
সর্বো ধর্মঃ কৃতস্তেন্ ভবতি প্রিয় এব সঃ।। 10

-পত্নীর প্রতিও গৃহস্থের অনুরূপ কর্তব্য আছে : গৃহী ব্যক্তি পত্মীকে কখনও তাড়না করিবে না, তাঁহাকে সর্বদা মাতৃবৎ পালন করিবে, আর যদি তিনি সাধ্বী ও পতিব্রতা হন, তবে ঘোর কষ্টে পতিত হইলেও তাঁহাকে ত্যাগ করিবে না। বিদ্বান্ ব্যক্তি নিজ পত্নী বর্তমানে অন্য স্ত্রীকে স্ত্রীভাবে স্পর্শ করিবেন না; এরূপ করিলে নরকে যাইতে হয়। প্রাজ্ঞ ব্যক্তি পরস্ত্রীর সহিত নির্জনে শয়ন বা বাস করিবেন না, স্ত্রীলোকের সন্মুখে অশিষ্ট বাক্য প্রয়োগ করিবেন না এবং নিজের বাহাদুরিও দেখাইবেন না। ধন, বস্ত্র, প্রেম, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও অমৃততুল্য বাক্য দ্বারা সর্বদা পত্নীর সন্তোষ বিধান করিবেন, কখনও তাঁহার কোনরূপ অপ্রিয় আচরণ করিবেন না। হে পার্বতি, যে ব্যক্তির উপর পতিব্রতা ভার্যা তুষ্ট থাকেন, তিনি সমুদয় ধর্মই আচরণ করিয়াছেন এবং তিনি তোমার প্রিয়।"

নারীদের সম্মান, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যের অধিকার প্রাপ্য। মহিলাদের কেবলমাত্র গর্ভকালীন স্বাস্থ্য দেখলেই হবে না, অন্য সময়েও তাদের শরীর খারাপ হলে ডাক্তার দেখাতে হবে। বাড়িতে শৌচাগার ও গ‍্যাসের উনুনের ব‍্যাবস্থা করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। কন‍্যাকে যথেষ্ট শিক্ষা দিতে হবে। কন‍্যা, বোন এবং স্ত্রীর কেরিয়ার গড়তে সহায়তা করতে হবে। পুত্রসন্তান এবং কন‍্যাসন্তান উভয়কেই সমান আদর যত্ন করতে হবে― সমান সমান খেতে দিতে হবে। কন‍্যা সন্তানদের সাথে সেলফি তুলে সোস‍্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা খুবই ভালো― এতে অন‍্যরাও কন‍্যাসন্তানকে যত্ন করতে উৎসাহ পাবে। আর স্ত্রী বা পুত্রবধূ চাকরি করলে বা business করলে তার বাড়ির কাজ ভাগাভাগি করে করতে হবে। তাকে ভালোভাবে বাঁচার সুযোগ করে দিতে হবে। দরকারে বাড়িতে কাজের লোক রাখতে হবে।



9. নারীদের জেন্ডার "অর্ধাঙ্গিনী" না হয়ে "আত্মনির্ভর" হওয়া উচিত। সকলকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। সবাই হয়তো চাকরি পাবে না। কেউ গানের শিক্ষিকা হতে পারে। কেউ নাচের স্কুল খুলতে পারে। কেউ হয়তো ছোট দোকান খুলল। কেউবা বিউটিপার্লার খুলল। অর্থাৎ সৎ পথে রোজগার কিছু একটা করতে হবে। তখন মনও ভালো থাকবে আবার কথার জোরও থাকবে। রান্নাটা সবাই পারে। বাড়িতে রেঁধে হোম ডেলিভারির ব‍্যবস্থা করতে পারে, বর বা কেউ সাহায্য অবশ্যই করবে। শহরের দিকে বাড়ির রান্নার হোম ডেলিভারির ভালো বাজার আছে। বিউটিপার্লার খোলা যেতে পারে। যারা ভালো হাতের কাজ পারে তারা হাতের কাজ করবে। অনলাইনে পার্ট টাইম জব ওয়ার্ক ফ্রম হোমে করা যেতে পারে। তাছাড়া এখন ইউটিউবের যুগ। স্কিল না থাকলেও ইউটিউবে অনেক কিছু শেখা যায় ফ্রিতে, তাই সবসময় সিরিয়াল দেখা বাদ দিয়ে কিছু শিক্ষার জিনিসও দেখা উচিত। অবশেষে ইউটিউবে চ‍্যানেল খুলেও বাড়িতে বসে রোজগার করা যেতে পারে।

এইযুগে একজনের রোজগারে সংসার চালানো কঠোর― জিনিসপত্রের যা দাম বাড়ছে! তবে স্বামী যদি সত‍্যিই খুব ভালোবাসে, তোমার কথার দাম দেয় এবং একাই যথেষ্ট রোজগার করে― সেক্ষেত্রে স্ত্রী রোজগার না করলেও চলে। সন্তানদের সময় দেওয়া কিন্তু দুজনেরই কর্তব‍্য― সন্তানকে ভালোভাবে মানুষ করতে হবে। রোজগার করাটা মূল উদ্দেশ্য নয়। মূল উদ্দেশ্য হল― পরিবারের, সমাজের এবং পরিবেশের সেবা করা, অর্থাৎ মানবজন্মটিকে সাফল‍্যমন্ডিত করাই একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। এটা নারী পুরুষ উভয়ের জন‍্যেই প্রযোজ্য। তবে উভয়ে মিলে বা একজনে সৎপথে যথেষ্ট রোজগার করতে হবে যাতে পরিবারের need পূরণ হবার পরেও কিছু দান করা যায়। বৃদ্ধ বয়সের জন্য কিছু সঞ্চয় করে রাখো― কারণ বড়ো হয়ে সন্তান যদি না দেখে, তখন? তাই যথেষ্ট রোজগার করো। সাথে এই কথাটিও মাথায় রেখো― আরও চাই আরও চাই করলে সুখ চলে যাবে― ধনীরা কি সবাই খুশি? ধনে সন্তুষ্টি নেই, সন্তুষ্টিই আসল ধন। চাণক‍্যের মতে― "অধমেরা ধন চায়, মধ্যমেরা ধন ও মান চায়। উত্তমেরা শুধু মান চায়। মানই মহতের ধন।" আর সন্দীপ মাহেশ্বরীর মতে― "জীবনে টাকার ততটাই দরকার যতটা গাড়িতে পেট্রোলের, না তার থেকে কম, না তার থেকে বেশি।" টাকাপয়সা লক্ষ্মী তাই আল্তুফাল্তু কাজে ফুর্তি করাতে তার খরচ করতে নেই। নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে টাকা বেশি রোজগার করো বেশি দান করার জন্য।

স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন― "গৃহস্থকে প্রথমতঃ জ্ঞান, দ্বিতীয়তঃ ধন উপার্জনের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করিতে হইবে। ইহাই তাহার কর্তব্য, আর গৃহস্থ যদি তাহার এই কর্তব্য পালন না করে, তাহাকে তো মানুষ বলিয়াই গণনা করা যাইতে পারে না। যদি কোন গৃহস্থ অর্থোপার্জনের চেষ্টা না করে, তাহাকে দুর্নীতিপরায়ণ বলিতে হইবে। যদি সে অলসভাবে জীবনযাপন করে এবং তাহাতেই সন্তুষ্ট থাকে, তাহাকে অসৎপ্রকৃতি বলিতে হইবে, কারণ তাহার উপর শত শত ব্যক্তি নির্ভর করিতেছে। যদি সে যথেষ্ট ধন উপার্জন করে, তবে তাহাতে শত শত ব্যক্তির ভরণপোষণ হইবে।

যদি এই শহরে শত শত ব্যক্তি ধনী হইবার চেষ্টা করিয়া ধনী না হইতেন, তাহা হইলে এই সভ্যতা-দরিদ্রালয় ও বড় বড় বাড়ি কোথায় থাকিত?

এক্ষেত্রে অর্থোপার্জন অন্যায় নয়, কারণ ঐ অর্থ বিতরণের জন্য। গৃহস্থই জীবন ও সমাজের কেন্দ্র। অর্থোপার্জন ও সৎকার্যে অর্থব্যয় করা তাঁহার পক্ষে উপাসনা, কারণ যে গৃহস্থ সদুপায়ে ও সদুদ্দেশ্যে ধনী হইবার চেষ্টা করিতেছেন-সন্ন্যাসী নিজ কুটিরে বসিয়া উপাসনা করিলে উহা যেমন তাঁহার মুক্তিলাভের সহায় হয়-সেই গৃহস্থেরও ঠিক তাহাই হইয়া থাকে; যেহেতু উভয়ের মধ্যে আমরা ঈশ্বর ও তাঁহার সবকিছুর উপর ভক্তিভার-প্রণোদিত আত্মসমর্পণ ও ত্যাগরূপ একই ধর্মভাবের বিভিন্ন বিকাশ মাত্র দেখিতেছি।"



10. শুধু খাদ‍্য রেঁধো না, খাদ‍্যের সাথে সাথে বিশুদ্ধ ভালোবাসা রেঁধো। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রান্না করো। যদি দরিদ্র হও তবে কম পয়সার কিন্তু উপযুক্ত পুষ্টিকর খাবার খাও― কথায় আছে "যেমন অন্ন তেমন মন"। এমনভাবে রাঁধো যেন ভগবানের প্রসাদ বানাচ্ছো। রান্নাটা একটা আর্ট। খাবারের অপচয় করো না― ভারতের ত্রিশ কোটি মানুষ দিনে দুবেলা পর্যন্ত খেতে পায় না। পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ না খেয়ে মারা যাচ্ছে। আর জলের অপচয় বা সঞ্চয় সম্বন্ধে কিছু বলছি না― ক'দিন যাক নিজে নিজেই বুঝবে।



11. ছোট পরিবার সুখী পরিবার। দুটির বেশি সন্তান নিও না, কারণ সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করতে হবে তো।

সন্তানদের সামনে মা বাবাকে সদাসর্বদা এবং আমৃত্যু সুচরিত্র থাকতে হবে― ভদ্র আচরণ করতে হবে এবং ভদ্র কথা বলতে হবে। আর সন্তান এবং সন্তানের বাবা মা উভয়ের জন‍্যেই উপনিষদের একথা প্রযোজ্য― "পিতৃদেবো ভবঃ, মাতৃদেবো ভবঃ, আচার্যদেবো ভবঃ, অতিথিদেবো ভবঃ।" চাণক্য পন্ডিতের মতে― "গুণহীন মানুষ যদি উচ্চ বংশেও জন্মায় তাতে কিছু আসে যায় না। নীচকুলে জন্মেও যদি কেউ শাস্ত্রজ্ঞ হয়, তবে দেবতারাও তাঁকে সম্মান করেন।" চাণক্য পন্ডিত আরও বলেছেন― "পুত্রকে যারা পড়ান না, সেই পিতামাতা তার শত্রু। হাঁসদের মধ্যে বক যেমন শোভা পায় না, সভার মধ্যে সেই মূর্খও তেমনি শোভা পায় না।" তবে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে সন্তান নিজের strength (যে সাবজেক্টে ভালো), কেরিয়ারের সুযোগ বা জব মার্কেট এবং পরিবারের আর্থিক অবস্থা এই তিনটির মধ্যে ভারসাম্য রেখে নিজে নিজের ইচ্ছামতো শিক্ষা choose করবে― এই বিষয়ে সমস্যায় পড়লে ভালো কারোর সাহায্য নিতে পারে।



12. চাণক্য পন্ডিত বলেছেন― "পাঁচ বছর বয়স অবধি পুত্রদের লালন করবে, দশ বছর অবধি তাদের চালনা করবে, ষোল বছরে পড়লে তাদের সঙ্গে বন্ধুর মত আচরণ করবে।" শৈশব মানুষের জীবনে একবারই আসে। তাই অতিরিক্ত পড়ার বোঝা দিয়ে কম্পিটিশনের বাজারে নিজের শিশুর শৈশবকে বলী দিও না। বেসিক এডুকেশন যতটুকু না শিখলেই নয়, ততটুকুই শিখুক, অক্ষরজ্ঞান হোক, মুখে মুখে গল্প কবিতার ছলে শিখুক, বাবা মায়ের কোলে চড়ে প্রকৃতি দেখতে দেখতে প্রশ্ন করতে করতে শিখুক এবং মা বাবাকে দেখে সুঅভ‍্যাস শিখুক। শিখার প্রতি আগ্রহ জন্মাক। কিন্তু পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত যেগুলো সবচেয়ে দরকার সেগুলো হল― খেলাধুলা, পুষ্টি এবং ভালোবাসা‌। আইসিডিএস(অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্র) বা প্লে স্কুলে যাক।

পরবর্তী ধাপে পাঁচ থেকে ষোল বছর বয়স পর্যন্ত সন্তানকে শাষন করতে হবে। বাইরে বা ইস্কুলে ঝগড়া করে আসলে নিজের সন্তানকে বকতে হবে― তাকে উন্নত করতে হবে। আদর দিয়ে সন্তানকে বাঁদর করে তুলো না। অন‍্যের সন্তানের দোষ দেখে কী লাভ? তবে নিজের সন্তানের ক্ষতি হলে অন‍্যের কাছে নালিশ করতে হবে বইকি! এই পর্যায়ে পুত্রসন্তানকে মেয়েদেরকে সম্মান করা শেখাতে হবে― এক্ষেত্রে no compromise. আর কন‍্যাসন্তানকে আত্মরক্ষার skill শেখাতে হবে। ইস্কুলে কী পড়াশোনা হচ্ছে প্রতিদিন সন্তানের কাছে খোঁজ নিতে হবে― তাতে তুমি পড়াশোনা জানো আর নাই জানো। বাপ মাকে ত‍্যাগস্বীকার করতে হবে― পড়ার সময় টিভি চালানো চলবে না। সন্তান যে ক্লাসে পড়ে সেই ক্লাসের এবং তার আগের দুই ক্লাসের কয়েকজন ভালো student-এর অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করে জানতে হবে তারা কিভাবে তাদের সন্তানদের পড়াচ্ছেন, সেইরকম পথ নিতে হবে। আর বাড়ির পরিবেশ হবে সবসময় উচ্চ চিন্তায় ভরপুর। বাড়িতে পরচর্চা পরনিন্দা ছেড়ে― সবসময় অন‍্যের ভালো কাজের প্রশংসা করতে হবে। এটা দেখেই সন্তান অন‍্যের ভালো গুণ এবং কাজকে প্রাণখুলে প্রসংশা করতে শিখবে, যা অজান্তেই তাকে ভালো গুণ রপ্ত করতে এবং ভালো কাজ বা পড়াশোনা করতে প্রেরণা দেবে। সন্তানদের শেখাও কিভাবে শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করবে― তোমাদের সময়কার ভালো ছাত্রছাত্রীদের উদাহরণ বারবার দাও‌। "Charity begins at home." ভারতের former রাস্ট্রপতি মিসাইল ম‍্যান Dr. A. P. J. Abdul Kalam বলেছেন― “If a country is to be corruption free and become a nation of beautiful minds, I strongly feel there are three key societal members who can make a difference. They are the father, the mother and the teacher.” "পরের ছেলে পরমানন্দ যতই উচ্ছন্নে যায় ততই আনন্দ"― এই ভাবনা ছেড়ে সন্তান যাদের সাথে মেশে তাদেরও ভালো চাইতে হবে, তারাও যাতে ভালো হয় সেটাও দেখতে হবে― নইলে সন্তান "সঙ্গদোষে ভঙ্গ" হয়ে যাবে।

ক্লাস ইলেভেনে উঠে অধিকাংশ ছেলেমেয়ের লেজ গজায়। তাই এই সময় তাদের সঙ্গে মা বাবা বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করবে। ভালোও বাসতে হবে আবার সবকিছু ভালোভাবে বুঝিয়েও দিতে হবে। বুঝিয়ে দিতে হবে― প্রথমে কেরিয়ার তারপর প্রেম। বুঝিয়ে বলতে হবে প্রেম করা মানেই বিয়ে পাকা নয়― 75% প্রেম পরবর্তীতে ব্রেকাপ হয়ে যায়। উদাহরণ দিতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে যাতে সে ব্রেকাপ প‍্যাচাপের ফাঁদে পড়ে নিজের কেরিয়ার না বর্বাদ করে! তারপর বিভিন্ন প্রকার প্রেমিক প্রেমিকার স্বভাব, সেক্স করে ছেড়ে দেওয়া স্বভাবের প্রেমিক ইত্যাদি সবকিছু বুঝিয়ে বলতে হবে। নিজের সম্মান নিজের কাছে― পার্কে গিয়ে সর্বসমক্ষে ভাদ্রমাসের কুত্তা হওয়ার মধ্যে জীবনের সার্থকতা নেই! সাথে বলতে হবে সে এখনও পরিণত মনের হয়নি তাই তার আজ যাকে পছন্দ হবে ভবিষ্যতে তাকে নাও পছন্দ হতে পারে। সবশেষে বলতে হবে একান্তই প্রেমে পড়লে কেমন চরিত্রের মানুষের সাথে প্রেম করবে। ব‍্যাস এইটুকুই। আর কিছু বলা চলবে না। তবে এগুলো সব খোলামেলা আলোচনা করতে হবে― বাপ না বলতে পারলে মা বুঝিয়ে বলবে। এই বয়সেই বলতে হবে, পরে হলে কিন্তু অনেক দেরি হয়ে যাবে।

কেরিয়ার বাছা এবং জীবনসঙ্গী বাছা― এইদুটো সন্তানের উপর ছেড়ে দিতে হবে। কারণ― এই দুটোতে কেউ চাপিয়ে দিলে সেই বোঝা আজীবন বহন করা যায় না। সন্তানের ভালো চাও? তবে গাছটিকে বড়ো করে কেটে দিও না। প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের পছন্দের মর্যাদা দাও― এটা তার জন্মগত স্বাধীনতা, তুমি কেড়ে নেবার কে? তুমি বড়োজোর বলতে পারো এতগুলো অপসন এবং সবগুলোর আলাদা আলাদা করে ভালো দিক এবং মন্দ দিক বলতে পারো। এরপর সন্তানের জীবন সন্তানের choice. ওর জীবনে বাধা হয়ো না। শুধু শিক্ষা দিলেই হয় না, প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানকে স্বাধীনতাও দিতে হবে। সন্তান সুখে থাক এটা কি চাও না? যে বাপ মা সম্বন্ধ বা কেরিয়ার চাপিয়ে দেয় তারা পাষাণ হৃদয়। সেই প্রাচীন যুগে স্বয়ম্ভর সভা ছিল আবার সাথে সাথে সেই মহাভারতের যুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে উস্কানি দিচ্ছে ভগবানের বোন সুভদ্রাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে কারণ অর্জুন সুপুরুষ এবং মনে মনে সুভদ্রাকে চায়! আর তুমি আধুনিক যুগে এসেও এমন! সন্তানের জীবনকে মরুভূমি করে দিতে চাইছো! হাঃ হাঃ! প্রেমে পড়ার আগেই বলে দাও কেমন চরিত্রের মানুষের সাথে প্রেম করবে― তারপর তার ইচ্ছাকে মেনে নাও। যদি একান্তই সন্তান বাড়িতে প্রেমের কথা না বলতে পারে, তখন তার arrange marriage দেওয়ার আগে তার কাছে পরিস্কার ভাষায় জানতে চাও― সে কাউকে ভালোবাসে কিনা এবং তাকেই বিয়ে করতে চায় কিনা? যদি সেরকম কেউ না থাকে তবেই তার arrange marriage হোক― সেখানেও তার ইচ্ছার মর্যাদা দাও। নিজের বা পরিবারের সম্মানের আগে সন্তান প্রেম বা বিয়ের ক্ষেত্রে সন্তানের ভবিষ্যতকে রাখো। বিয়ের আগেই কন‍্যাকে শিখিয়ে দাও যেন শ্বশুর শাশুড়িকে বৃদ্ধাশ্রমে না পাঠায়।

ছেলেমেয়েদের ব্রেকাপ বা ডিভোর্স হলে তাদের পাশে থাকবে, সমব‍্যাথী হবে এবং ভালোবাসবে― কেউ যেন সুইসাইড না করে।

প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানকে কেবলমাত্র একটি ক্ষেত্রেই বাধা দেবে যখন দেখবে সে কোনো দন্ডনীয় অপরাধমূলক কাজ করতে যাচ্ছে। সে সময় তার বাধাস্বরূপ হয়ে দাঁড়াও। অন্য আর কোনো ক্ষেত্রে তার বাধা হয়ো না― ভুল করলে করুক, ভুল থেকে নিজে শিখুক।



13. সারা পৃথিবীর মহিলারা যেখানে খেলাধুলা, বিজ্ঞান গবেষণা, রাজনীতি এবং বিভিন্ন পেশায় জগত কাঁপাচ্ছে এবং দেশের অর্থনীতিতে যোগদান করছে তখন আমাদের দেশের মহিলারা হাজার হাজার বছর ধরে কেবল শাশুড়ি-পুত্রবধূ সেজে ঝগড়া লাগিয়ে নিজেদের সমগ্র আত্মশক্তি এবং প্রতিভার ধ্বংস করছে। এখন সময় এসেছে আরও ভালো ভাবে জীবনটাকে বোঝার। সময় এসেছে টিভিতে ওইসব ঝগড়া দেখানো নিকৃষ্টতর সিরিয়াল না দেখার। কারণ আমাদের মন যা দেখে তাই তার ওপর ছাপ পড়ে। এখন সময় এসেছে চিরতরে শাশুড়ি-বধূ লড়াই মুছে দেওয়ার। আমাদের ভুল ধারণা আছে যে, "সংসার সুখী হয় রমণীর গুণে", এটা ভুল― সঠিকটা হল "সংসার সুখী হয় শাশুড়ির গুণে!"

একেবারেই গোড়া থেকেই শুরু করা যাক। ছেলের বিয়ে দেওয়ার পরেও ছেলের মা চান― বৌমা তার control-এ চলুক! অদ্ভুত ব‍্যাপার! সব সমস্যার সূত্র এটাই। শাশুড়ির শাশুড়ি তাকে শাস্তি দিয়েছেন তাই তিনিও তাই করবেন! পাওয়ার দেখাতে চান! হাজার বছরের পাপ তাই এবার একটা কঠোর কথা না বললেই নয়। "সাপের কাজ সাপ করেছে কামড় দিয়েছে পায়/ তা বলে কি সাপ হয়ে যাওয়া মানুষের শোভা পায়?" পায় কি? এনারা ভুলে যান― আজকের যুগে শাশুড়ি যেমন দজ্জাল বধূও তেমন ঝগড়ুটে। ফলে অশান্তি আর অশান্তি। সংসারটা কি অশান্তি করার জায়গা?

সমাধান হল― শাশুড়িকে সংসারের চাবিকাঠিটা বৌমায়ের হাতে তুলে দিতে হবে! তাদের নতুন সংসার জীবন তারা তাদের মতো সাজাক। আপনারা তাদের সংসারে থাকুন― সংসারের কাজে সাহায্য করুন, তাদের অসুবিধায় পাশে থাকুন এবং ছোট ছোট নাতিনাতনিদের সুঅভ‍্যাস দিন ও গল্প বলুন। এইসময়ে বা অবসর জীবনে একটু বেড়িয়ে আসুন, ভালো সাহিত্য পড়ুন এবং একটু ঈশ্বরের দিকে মন দিন। আর যেহুতু বেশিদিন বাঁচবেন না সেইহেতু নিজের আত্ম উন্নতিতে মন দিন, ওদের সংসার ওদেরকে করতে দিন! এতদিন সংসার করেও কি মন ভরলো না? বাড়িতে অশান্তি করে কী কীর্তি স্থাপন করতে চান? যান রাস্তায় গিয়ে বলুন যে আপনি আপনার ছেলে-বউয়ের দাম্পত্য জীবনটাকে একেবারে নরক করে দিয়েছেন― এটা বলে লোককে জিজ্ঞেস করুন, আপনি কি প্রসংশার যোগ্য? বউমাকে মেয়ে হিসেবে দেখতে যারা পারেন সেই শাশুড়িগণ দেবী! আর যারা পারেন না, তারা অন্তত এভাবে দেখুক, যে বউমা হল ছেলের নারীরূপ। তাহলেই আপনাদের দেবালয়ে অর্থাৎ বাড়িতে শান্তি ফিরে আসবে। বউমাকে পাওয়ার দেখিয়ে কী লাভ― এ তো immature মানসিকতার প্রকাশ। বউমাকে আপন করে নিলে এবং ভালোবাসলে বউমাও শাশুড়িকে ভালো বাসবে। তবে হ‍্যাঁ না মরা অব্দি সম্পত্তির ভাগ করবেন না― এখন তো এমন অনেক হচ্ছে যারা সন্তান তারা সম্পত্তি পেয়ে বৃদ্ধ মা বাবাকে দেখছে না। তাই সাবধান। আর নিজের তরুণ বয়সে শেষ বয়সের জন্য কিছু সঞ্চয় করে রাখুন।



14. বউমায়েরও উচিত স্বামীর মা বাবাকে নিজের মা বাবা ভাবা তবেই তো ভালোবাসা। স্বামীকে কষ্ট দেওয়াটা কি ভালোবাসা? সেবা করো― এটা পরিবার সেবারই অঙ্গ। মানুষ হিসেবে উন্নত হবে। ঠিক তেমনি স্বামীরও উচিত বউয়ের মা বাবাকেও নিজের মা বাবার মতো দেখা। তাদের দরকারে ছুটে যেতে হবে। At least স্বামী ও স্ত্রী নিজের নিজের মা বাবার যত্ন নেবে― কারণ মা বাবার থেকেই তাদের জন্ম এবং "পিতৃদেবো ভবঃ, মাতৃদেবো ভবঃ"। পশু হয়োনা। যে মা বাবা সারাজীবন তোমাদের জন্য এত ত‍্যাগস্বীকার করেছে, এতো ভালোবেসে মানুষ করেছে এবং ছোট থেকে তোমাদের জ্বালাতন হাসিমুখে সহ‍্য করেছে― তাদের সেবা না করা ঘোর অন‍্যায়। শেষ বয়সে মাবাবার ভরণপোষণের এবং তাদের শান্তিতে থাকতে দেওয়ার দায়িত্ব সন্তানের― ভারতের সুপ্রিম কোর্টও এই কথা বলেছে।

নিজের জন্য কাপড় কেনার সময় বাবার জন্যও কিনে নাও। বউকে উপহার দেওয়ার পরে মাকেও উপহার দাও। তুমি যদি ভালো মানুষ তবে বেশিরভাগ কৃতিত্ব তোমার পিতামাতার। তবে তুমি যদি ভাল পুত্র / কন্যা হন তবে পুরো কৃতিত্ব তোমার। যদি তোমার পিতা-মাতা তোমার জন্য গর্বিত হন তবে তুমি খুশি হওয়ার উপযুক্ত। এবং তোমার যত্নের কারণে যদি তোমার বাবা-মা সুখী জীবনযাপন করেন তবে তুমি নিজের জন্য গর্বিত হওয়ার অধিকারী। বাবা-মাও ভুল করতে পারে, তারাও মানুষ। আবার তুমি হাজার হাজার ভুল করেছো কিন্তু প্রতিবারই তারা তোমাকে ক্ষমা করেছেন, তাই তারা ঈশ্বরও। তুমি তোমার বাচ্চাদের যে সেরা দুটি উপহার দিতে পারো তা হ'ল ঠাকুমা দাদুর ভালোবাসা এবং ঠাকুমা দাদুর শিক্ষা। একজন পুরুষ গৃহস্থ তার সন্তানদের সেবা করবে ব্রাহ্মণের মতো তাকে সুঅভ‍্যাস এবং সুশিক্ষা দিয়ে। বউকে রক্ষা করবে ক্ষত্রিয়ের মতো হয়ে― ভোলাভালা থাকলে কবে দেখবে লোক তোমার বউকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। বৈশ‍্যের মতো হয়ে কর্ম উপার্জন করবে এবং মাবাবার সামনে শূদ্র মতো থেকে তাদের সেবা করবে। এখানে কেবলমাত্র বোঝার সুবিধার জন্য ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ‍্য-শূদ্র বললাম, এটাকে আবার অরিজিনাল ধরে নিও না।

এবার দেখে নেওয়া যাক এই বিষয়ে স্বামী বিবেকানন্দ তার "কর্মযোগ" বইতে "মহানির্বান তন্ত্র" থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে কী কী বলেছেন:

"মাতরং পিতরঞ্চৈব সাক্ষাৎ প্রত্যক্ষদেবতাম্।
মত্বা গৃহী নিষেবেত সদা সর্বপ্রযত্নতঃ।। 4

-মাতা ও পিতাকে প্রত্যক্ষ দেবতা জানিয়া গৃহী ব্যক্তি সর্বদা সর্বপ্রযত্নে তাঁহাদের সেবা করিবেন।

তুষ্টায়াং মাতরি শিবে তুষ্টে পিতরি পার্বতি।
তব প্রীতির্ভবেদ্দেবি পরব্রহ্ম প্রসীদতি।। 5

-যদি মাতা ও পিতা তুষ্ট থাকেন, তবে সেই ব্যক্তির প্রতি ভগবান্ প্রীত হন; হে পার্বতি, তুমিও তাহার প্রতি প্রীতা হও।

ঔদ্ধত্যং পরিহাসঞ্চ তর্জনং পরিভাষণম্।
পিত্রোরগ্রে ন কুর্বীত যদীচ্ছেদাত্মনো হিতম্।।
মাতরং পিতরং বীক্ষ্য নত্বোত্তিষ্ঠেৎ সসম্ভ্রমঃ।
বিনাজ্ঞায়া নোপবিশেৎ সংস্থিতঃ পিতৃশাসনে।। 6

-পিতামাতার সন্মুখে ঔদ্ধত্য, পরিহাস, চঞ্চলতা ও ক্রোধ প্রকাশ করিবে না। যে সন্তান পিতামাতাকে কখন কর্কশ কথা বলে না, সেই প্রকৃত সুসন্তান। পিতামাতাকে দর্শন করিয়া সসম্ভ্রমে প্রণাম করিবে, তাঁহাদের সস্মুখে দাঁড়াইয়া থাকিবে, আর যতক্ষণ না তাঁহারা বসিতে অনুমতি করেন, ততক্ষণ বসিবে না।

মাতরং পিতরং পুত্ত্রং দারানতিথিসোদরান্।
হিত্বা গৃহীন ভুঞ্জীয়াৎ প্রাণৈঃ কন্ঠগতৈরপি।।
বঞ্চয়িত্বা গুরূন্ বন্ধূন্ যো ভুঙ্‌ক্তে তে স্বোদরশ্ভরঃ।
ইহৈব লোকে গর্হ্যোহসৌ পরত্র নারকী ভবেৎ।। 7

-মাতা, পিতা, পত্নী, ভ্রাতা, অতিথিকে ভোজন না করাইয়া যে গৃহী ব্যক্তি নিজের উদরপূরণ করে, সে পাপ করিতেছে।

জনন্যা বর্ধিতো দেহো জনকেন প্রযোজিতঃ।
স্বজনৈঃ শিক্ষিতঃ প্রীত্যা সোহধমস্তান্ পরিত্যজেৎ।।

এষামর্থে মহেশানি কৃত্বা কষ্টশতান্যপি।
প্রীণয়েৎ সততং শক্ত্যা ধর্মো হ্যেষ সনাতন।। 8

-পিতামাতা হইতেই এই শরীর উৎপন্ন হইয়াছে, অতএব শত শত কষ্ট স্বীকার করিয়াও তাঁহাদের প্রীতিসাধন করা উচিত।"

অর্থাৎ ছেলে-বউমা এবং বউমায়ের শ্বশুর-শাশুড়ি উভয় পক্ষকে নিজের নিজের কর্তব্য পালন করতে হবে। যদিও বউয়ের আগে মা, তবুও মা সেজন্য এটা নিয়ে ব্ল‍্যাকমেল করতে পারেন না। পারেন কি? এসব বলার একমাত্র উদ্দেশ্য পরিবারে যেন শান্তি থাকে। আর সন্তান কর্মসূত্রে বাইরে থাকলে নিয়মিত ফোনে মা বাবার খবর নেবে, মাঝেমাঝে বাড়ি আসবে এবং মা বাবার জন্য ভালো ব‍্যবস্থা করে যাবে― প্রবীণ মানুষরা যেন একাকীত্বে না ভোগেন এটা দেখতে হবে।



15. বাড়ি ঘরের বাউন্ডারি এবং কাগজপত্র পাকা রাখো― সমাজে খারাপ লোকের অভাব নেই। আজীবন কত কত বার জায়গা নিয়ে ঝগড়া করবে? জায়গা নিয়ে ঝগড়া করার জন্যই কি জীবনটা? ভারত-পাকিস্তান হয়ো না― সলিড বাউন্ডারি দাও।

এর বাইরেও অনেক ঝামেলা লেগেই থাকে। তাই মা সারদা সংসারীদের বলেছেন― "যখন যেমন তখন তেমন, যেখানে যেমন সেখানে তেমন, যাকে যেমন তাকে তেমন।" নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর একটি বাণী এরকম― "অন‍্যায় ও মিথ‍্যার সাথে আপোষ করার মতো জঘন্য অপরাধ আর নাই।" চাণক্য পন্ডিতের একটি বাণী এরকম― “A person should not be too honest. Straight trees are cut first and honest people are screwed first.” আবার কোনো একজন মহাপুরুষ বলেছেন― "Just because you won't eat a lion, doesn't mean that it won't eat you." অর্থাৎ নিজের পরিবারের সুরক্ষার দিকটি নিশ্চিত করো।

এই বিষয়ে স্বামী বিবেকানন্দ তার "কর্মযোগ" গ্রন্থে "মহানির্বান তন্ত্র" থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন―

"শূরঃ শত্রৌ বিনীতঃ স্যাৎ বান্ধবে গুরুসন্নিধৌ। 14

-গৃহী ব্যক্তি শত্রুর সমক্ষে শৌর্য বীর্য অবলম্বন করিবে এবং গুরু ও বন্ধুগণের সমীপে বিনীত থাকিবে।

শত্রুগণকে বীর্যপ্রকাশ করিয়া শাসন করিতে হইবে। ইহা গৃহস্থের অবশ্য কর্তব্য। গৃহস্থ ঘরের এককোণে বসিয়া কাঁদিবে না, অপ্রতিকার-বিষয়ক বাজে কথা বলিবে না। গৃহস্থ যদি শত্রুগণের নিকট শৌর্য প্রদশন না করে, তাহা হইলে তাহার কর্তব্যের অবহেলা করা হয়। কিন্তু বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও গুরুর নিকট তাহাকে মেষতুল্য শান্ত নিরীহ ভাব অবলম্বন করিতে হইবে।

জুগুপ্সিতান্ ন মন্যেত নাবমন্যেত মানিনঃ।। 15

-নিন্দিত অসৎ ব্যক্তিদিগকে সন্মান দিবে না এবং সন্মানের যোগ্য ব্যক্তিগণের অবমাননা করিবে না।

অসৎ ব্যক্তিকে সন্মান প্রদর্শন করা গৃহীর কর্তব্য নয়; কারণ তাহাতে অসদ্বিষয়েরই প্রশ্রয় দেওয়া হয়। আবার যাঁহারা সন্মানের যোগ্য, তাঁহাদিগকে যদি গৃহস্থ সন্মান না করেন, তাহাও তাঁহার পক্ষে মহা অন্যয়।"



16. এসবই মূল কথা। এর বাইরে যা কিছু সেসব নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে করো বা তোমার এলাকার ভালো লোক যারা আছে তাদের ফলো করো। না হলে সবকিছু এখানে বলতে গেলে জীবন খুব জটিল হয়ে যাবে। আর যদি কখনও এরকম প্রায়োরিটি নেওয়ার দরকার পড়ে তখন পরিবারের আগে দেশকে রাখতে হবে― Country First.



17. সংসার কেবল ভোগের জন্য নয়। ভোগ করার পর সেই ভোগ ত‍্যাগ করাই সংসার। আত্মোন্নতি বা ঈশ্বরলাভ বা মুক্তিই জীবনের লক্ষ্য। সন্ন্যাসীরা সরাসরি ত‍্যাগ করেন, সংসারীরা ভোগ করে ভোগের ইচ্ছা ত‍্যাগ করেন। Detach হতে হবে। সেবা করে যেতে হবে। এটাই হিন্দু ধর্মের দর্শন।



18. অন‍্যের কথায় রাগ করে ভুঁইয়ে ভাত খেয়ো না। ইগনোর করতে শেখো― ওঁ ইগনোরায় নমঃ। সবাইকে খুশি করা সম্ভব নয়, তাই এই চেষ্টা ত‍্যাগ করো। নিজের কর্তব্য করে সরে পড়ো। কারোর কথায় রাগ পুষে রেখো না― সে তোমার কাছে ক্ষমা না চাইলেও রাগ পুষবে না। এতে নিজের ক্ষতি― প্রথমে মেন্টাল ব্লকেজ হয় পরে শরীরে বা হৃৎপিণ্ডে প্রভাব পড়ে। বাড়ি যেমন প্রতিদিন পরিচ্ছন্ন করো ঠিক তেমনই নিজের মনকে প্রতিদিন পরিস্কার করবে। এইটুকু জীবন তাতে এত চাপ নিলে চলে? কবিগুরু বলেছেন― "সুখী হতে চাইলে সবকথা মনে রাখিস নে।" অর্থাৎ সংসার জীবনে বা জগতে অনেকে অনেক কটূ কথা বলবে বা খারাপ ব‍্যবহার করবে সেসব আবর্জনা মনে রেখো না― নিজের মনের শুদ্ধতা ও শান্তি বজায় রাখতে যত্নবান হও।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৫২০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০১/০৭/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast