www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বিপন্ন অস্তিত্বের ঠাঁই (প্রথম পর্ব)

এই মালা, মালা লাগবো মালা। জুঁই ফুলের মালা। একেবারে টাটকা মালা। স্যার লাগবো। দেখেন না এককরে তাজা।

এভাবেই প্রতিদিন রাস্তার পাশে ফুলের মালা বিক্রি করে বিউটি। প্রতিদিন চলার পথের পথিকেরাই তার নিয়মিত গ্রহক। সেই সাথে গাড়িতে থাকা বড় বড় সাহেবেরা।  বয়স কত হবে। এই বার তের। চেহারায় যথেষ্ট সৌন্দর্য আছে। তবে জন্মের পর থেকে প্রকৃতির সাথে যে খোলামেলা মিতালী তাতে সেই সৌন্দর্যে ভাটা পড়াই স্বাভাবিক। রংটায় এখন সেই আগের শুভ্রতা নেই। অহর্নিশ প্রাকৃতিক অ প্রাকৃতিক ধূলো ময়লাতে আগের সৌন্দর্য ধরে রাখবেই বা কি করে। অবশ্য এ নিয়ে তার মাথা ব্যথা নেই।তার মতো রাস্তার মেয়েদের এতো সৌন্দর্য্য থাকা ভালো না। এতে মানুষের কুদৃষ্টি পড়ে। তাছাড়া  সেতো আর সিনেমার পাট করবে না। কি দরকার এতো সাজুগুজুর।

কিন্তু তবুও তো সে মেয়ে। তার নারীত্ব ফুটে উঠছে ধীরে ধীরে। যদিও সে চাই তা অগ্রাহ্য করতে। কিন্তু আমাদের সমাজের কিছু চোখ তা কিন্তু চায় না। কিন্তু চোখের শকুন দৃষ্টি জুড়ে এইসব মেয়ের প্রতি। তারই একজন জনি। থাকে ফুটপাতে। বাড়ি ঘর নেই। আর থাকবেই বা কিভাবে? যার জন্ম ই রাস্তায় তার ঘর বাধবে কোন বান্দায়। বয়স আনুমানিক পনের ষোলো। সদ্য যৌবনের আস্বাদ নিচ্ছে এখানে সেখানে। এই বয়স টাই তো সব ব্যপারে কৌতূহলী। তাই সবকিছু কেমন তা জানা চাই তার। তাইতো প্রায়সই এটা সেটা নেশা নিয়ে ব্যস্ত।আর তার নেশার ভার নিতে হয় বিউটিকে।তাই  সকাল সকাল বিউটির খোঁজ।

এই বিউটি। ক ই তু ই। একটু এ দি কে আ য় না।
রাস্তার ফুটপাতের ধার থেকে চেচাচ্ছে সে।
বিউটি জনির কথার ধার ধারে না। সে তার মনে মালা বিক্রি করতে থাকে এই গাড়ি থেকে ঐ গাড়ি তে। গাড়ি সিগন্যালে দাড়ালেই বিক্রি করে মজা আছে। কিন্তু চলাচল অবস্থায় মালা বিক্রি করা যায় না। জনি চেচামেচি করতে থাকে। কিন্তু ও পাত্তা দিতে চাই না। কিন্তু বেশীক্ষণ পাত্তা না দিয়ে থাকা যাবে না। তাকে তার কাছেই যেতে হবে। এখন না গেলেও রাতে ঠিকই তার অনুগ্রহে থাকতে হবে।

না! অন্য কিছু না। তার দেওয়া থাকার জায়গায় তাকে থাকতে হবে।  যখন সব হারিয়ে বিউটি এই নিষ্ঠুর শহরে আসে। তখন একমাত্র এই জনিই তাকে আশ্রয় দেয়। খুবই আদর যত্ন করে। আজ প্রায় পাঁচ বছর হলো এখানে বিউটির। বিউটি জানে কি জন্য জনি তাকে ডাকছে। টাকার জন্য। প্রতিদিন সকালে তার টাকা লাগে। আর সেই টাকা যোগান দিতে হয় বিউটি কেই। আগে কাজ কর্ম করত। এখন করে না। এখন চুরি চামারি করে। অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভ।

ইদানীং একটা চিন্তাই জনি করে। আর তাহলো বিউটি কে গার্মেন্টসে দেওয়া। কিন্তু বয়স কম বলে পারছে না। তাই কম করে হলেও আরও দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে। আর তখন বিউটি কামায় করবে সে বসে বসে খাবে। হ্যাঁ সে বসে বসে খাওয়া পরিকল্পনাই করছে। কিন্তু কিভাবে? খুবই সহজ বিউটি কে বিয়ে করবে। জনি খুবই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে বসে আছে। ইতিমধ্যে সে তা প্রকাশ ও করেছে।

এইতো গত কয়েক দিন আগে -
আর বেশি দিন কষ্ট করন লাগতো না। তুই কদিন বাদেই গেরামেন্টেসে যাবি। তখন আরামছে খাবি দাবি ঘুমাবি। কোন চিন্তা করন লাগদো না। জনির সহজ সরল কথা।

আমি গার্মেন্টসে গেলে আরামছে খামু ঘুমামু। তই ঐখানে কাম তুমি করবা নাকি আমি? বিউটির উত্তর।

না আ কাম তো তুই ই করবি। তই বহুত ট্যাকা পাবি। এই রইদে ঘুইরা ঘুইরা মরন লাগতো না।

হুন মিয়া। গার্মেন্টসে গেলে ও আমি ই কাম করমু। রইদে গেলে ও আমি ই পুরমু। তুমার তো কোন লচ নাই। বইয়া বইয়া খাইতে পাইরবা।

ক্যান? আমারে খাওয়ান তুর দ্বায়িত্ব না।
ক্যান তুমারে খাওয়ান আমার কাম?

এহন তো এমনি তেই খাওয়াচ। তই তখন তুরে বিয়া করমু। তই তহন আমি তুর সোয়ামী হমু না। হের লইগ্গা খাওয়াইবি।

ওমা, আফনের সখ কত। এহনও ব্যাডা হন নাই। আগে ব্যাডা হইয়া লন হেরপর না অয় দেহা যাইবো নে।

ঐ তোর হায়া শরম নাই? আমি ব্যাডা না হিজড়া হেইডা দেখবার চাস?

হুনেন জনি ভাই, আমি তুমার কিছুই দেখবার চাই না। আগে বিয়া করার মুরোদ যোগান তই দেহা যাইবো নে কে কারে বিয়া করে। কাম করজ নাই খালি পরের থেইক্কা খাইবার চিন্তা।

কি তুই আমারে খোটা দিলি? যহন তুমি খাইতে পারস নাই, তহন কোন তোর বাপ দাদা আইয়া তোরে খাওয়াইছে? এই জনি হ হ এই আমি জনি তুরে রাস্তা থেইক্যা তুইল্লা খাওঅন পরন দিচি।
বলতে বলতে জনি বিউটির চুলের মুটি ধরে টানতে থাকে।

চুল ছারো কইতাছি। দিন দিন তুমার সাবাস বাইড়া যাইতাছে।

এই বলে জোর করে চুল ছাড়িয়ে নেয় বিউটি।
দ্যাখো জনি ভাই, তুমি বহুত জ্বালান জ্বালাইছো। আর জ্বালাইয়ো না। তুমি আমার লাইগ্গা করছ আমিও তুমার লাইগ্গা কি করি নাই। হেরপর ও তুমার শুখর নাই? যাও এহন এইহান থেইক্যা। বিদায় হও চোখের সামনে থেইক্যা।

এই বলে কাঁদতে থাকে বিউটি। যখন কান্না শুরু হয়ে যায় তখন আর জনি দাড়ায় না ওখানে।গোধূলির শেষে যখন নিরবতা ভর করে, ঠিক তেমনই বিউটির ক্ষুদ্র হৃদয়ের মাঝে নিরব সান্ত্বনা ভর করে। নিরবে নিবৃত্তে অস্রু বিসর্জনই যেন তার সান্ত্বনা। বুক চিড়ে বেড়িয়ে আসতে চায় সব ক্ষোভ দুঃখ জ্বালা যন্ত্রণা। কিন্তু নিয়তির চরম লিখনে বিউটিদের কান্নার আওয়াজ শুনা যায় না। তাদের মাথায় পড়ে না কোন সান্ত্বনার মায়ার আবরণে হাত।

এই হচ্ছে জনির সাথে বিউটির নিত্য পথচলা।।



চলমান ..........

গল্পের সমালোচনা আশা করছি সবার কাছ থেকে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬৫৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৪/১২/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • মাত্র পড়া শুরু করলাম। প্রথম অংশ পড়েই মনে হচ্ছে বাস্তব জীবনের সাথে সামঞ্জস্য অসাধারণ কোন লেখা পেতে যাচ্ছি
  • Înšigniã Āvî ১৭/১২/২০১৩
    পরের পর্বের অপেক্ষায়
  • אולי כולנו טועים ১৪/১২/২০১৩
    নারী অত্যাচারের নির্মম দিকটি খুব সুন্দর ফুটিয়েছেন।
  • আতিক রহমান ১৪/১২/২০১৩
    বেশ লাগলো। চালিয়ে যান।
 
Quantcast