www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

প্রতীক্ষা তোমার জন্য 2

এখনো আকাশে পাখি উড়ে,
মেঘেরা ছুটে বেড়ায় আকাশকে ঘিরে।
প্রতিটি পূর্নিমায় চাঁদ উঠে হেসে,
গাছেরা গান গায় নিঝুম অরণ্যে।

এখনো শীত আসে কুয়াশা নিয়ে,
বসন্তে কোকিল ডাকে গাছে।
বর্ষায় বৃষ্টি ঝরে অঝোরে,
খরায় ফাটল ধরে মাটিতে।
সবই ঠিক আছে সেই. আগের মতন,
তোমার জানতে ইচ্ছে হয়না,
আমি আছি এখন কেমন?

শীতের শুষ্ক পাতার মত,
কখন ঝরে পরব এই আমি।
একসময় উরন্ত মনা,
কচি ডালে প্রস্ফুটিত এই আমি।
ছিল আমার জীবন যৌবন,
ছিল আমার ভালবাসার মন।
সেই আমি আজ,
শুকনো কড়কড়ে পাতায় পরিণত।
আমিজানি তোমার অভিযোগ শত শত,
থাকবেই না কেন?
তোমায় আমি স্বপ্ন দেখিয়েছি কত।
সেই আমি আজ,
হ্মত বিক্ষত  রক্তাক্ত।

জানি তুমি আজো আছ অভিমানে,
স্বরণ করো তুমি আমায় ক্ষনে ক্ষনে।
জানতে চাইবে না তুমি,
ছেড়ে এলাম তোমায় কি কারণে?
যাও কি আজও তুমি সেই নদীর ধারে,
যেখানে আমাদের দিনগুলো গিয়েছিল চলে।
আছে কি শিমুল গাছটি ধারে,
যেখানে অপেক্ষায় থাকতাম আমি আঁচল বিছিয়ে।

আমি বলিনি তখন সেই সময়ে,
কোন কারণে ছেড়ে এলাম এই তোমাকে।
না বলার অনেক কারণ ছিল,
তাইতো আমি বলিনি তা এখনো।
জানি তুমি ঘৃণা কর, 
আমি অবলা কি আর করব।
করেছিলাম তোমার  সাথে সম্পর্ক,
আশা ছিল সুখের ঘর বাঁধবো।
অনেক দিন কথাগুলো রেখেছি চেপে,
এখন তা আমি রাখতে পারছি না ধরে।

জাবেদ কে তুমি ভালোই চিনতে,
যে চেয়েছিল আমাকে আগে ভালবাসতে।
কখনো রাজি ছিলাম না তার কথাতে,
তাকে আমার লাগতো খুবই বাজে।
কারণে অকারণে আমাদের বাড়ি আসত,
বিপদে আপদে আগবাড়িয়ে সাহায্য করত।
জানতে না আমার বড় বোনের কি হয়েছিল,
সেই লজ্জার কথা বলিনি তোমায় কখনো।
জানতাম বোন ভালবাসে একজনকে,
বলেননি কখনো আমায় কোন জন সে।
হঠাৎই একদিন ধরা পড়ল সে,
তার গর্ভেতে বাচ্চা এসেছে।

খবর শুনে মা বিছানাতে,
বাবাকে নিতে হলো হাসপাতালে।
সে খবর জানায়নি তোমাকে কখনো,
তোমাকে জানায় কোন মুখেতে বল।
বাবার হয়েছে হার্ট ব্লগ,
টাকা লাগলো তখন অনেক।
তখন আমি ছিলাম খুবই বিমর্ষ ,
তুমি করতে আমায় কত প্রশ্ন।

কোন কিছুই. আমি বলিনি তখনো,
তখন তোমার সাথে দেখা কম হতো।
কিছুদিন পর বাবাকে নিয়ে এলাম বাড়িতে,
বাবার সব খরচ জাবেদ করেছিল নিজে।
বুবুকে আমি জিজ্ঞাসি বার বার,
এই সন্তানটা বল তুই কার।
কিছুই বলে না বুবু আমার প্রশ্নের উত্তরে,
তার ভয়ার্ত চাহনি দেখে আমি যায় ঘাবড়ে।

বুবু চেয়েছিল করতে আত্মহনন,
আমি বুঝলাম তাকে অনেক তখন।
শেষে জাবেদ এলো এগিয়ে,
এ্যাবরশন করালো ক্লিনিকে তাকে।
নিয়ে এলো ছেলে একটা ধরে,
দিয়েদিল তার সাথে জোর করে বিয়ে।

বাবার উপর তখন অনেক বোঝা,
সব টাকা পয়সা খরচ করলেন জাবেদ ভাই একা।
তুমি জানতে চাকরি নিয়েছিলাম একখানে,
তাই খুবই কম দেখা হত তোমার সাথে।
বাবার ঔষধ ভাইয়ের ফিস মায়ের সংসার,
সবকিছু নিয়ে আমার মাথা তোলপাড়।
তখন ভেবেছিলাম তোমাকে বলা কি দরকার,
চাকরি ছিলনা তখন তোমার।

হঠাৎই জাবেদ ভাই খেললো এক খেলা,
তিনি চাইলেন পরাতে আমার তার বিয়ের মালা।
কি করব আমি ভেবে নাই,
চারদিকে কোন কূল ঠিকানা নাই।
সব মিলিয়ে দিশেহারা এক অবস্থা,
তখন আমারই নেই নিজের উপর কোন  আস্থা।
পরিবারের সবাই রাজি সবাই খুশি,
বোনটি ছিল না কোন হাসি খুশি।

কদিন পর বাজচ্ছে বিয়ের বাঁশি,
আমি পড়ে আছি বিয়ের বেনারসি।
তখন আমি তোমার থেকে অনেক দূরে থাকি,
বল তখন কি করতাম এই আমি।
বাজলে বিয়ের বাঁশি ,
চলে গেলাম আমি শশুর বাড়ি।
তোমাকে কখনো জানতে দেয় নি,
কেমন করে পারলাম আমি।
জানতে চাওনা কেমন আছি?
কেমন স্বামী আমি পেয়েছি?

বুঝিনি প্রথমে স্বামীর রূপ,
কতগুলো অপরাধের সে একমাত্র কূপ।
তার ঘরে ছিল আরো অনেক স্ত্রী,
আগে কখনো তা জানতে পারিনি।
সেই করেছিল আমার বোনকে নষ্ট,
তার জন্য আজ আমাদের এত কষ্ট।
যায় সাথে দিয়েছিল বোনের বিয়ে
ছিল সন্ত্রাস ও ঘোর মাতাল সে।
সুখ পায়নি বোন কখনো,
করে সতীনের ঘর এখনো।

কথা ছিল জাবেদ চালাবে আমাদের  সংসার,
কথা রাখেনি, সে যে এক বাটপার।
নামিয়ে দিয়েছে পথে তাদের,
কি করে চলে সংসার আমাদের।
পড়ালেখা হয়নি আমার ভাইয়ের,
কাধেঁ নিয়েছিল দ্বায়িত্ব সে সংসারের।
বাবা আমার মারা যায় পেয়ে অনেক দুঃখ,
কমেনি এখনো আমার  মায়ের বুক ভরা কষ্ট।

এভাবেই বেঁচে আছি আশাহীন এই পৃথিবীতে,
জানি আমি পুড়ছি তোমরাই অভিশাপে।
আমি দিয়েছি তোমায় অনেক কষ্ট,
নিজেও বেঁচে আছি নিয়ে অনেক দুঃখ।
ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে,
ছুটে যায় তোমার কাছে।
বলি তোমায় আমার কি কষ্ট,
কিন্তু কখনো পারিনি তা।
যে অসীম জ্বালা দিয়েছি ঐ বুকে,
তোমার সামনে দাড়াব আমি কোন মুখে।
জানি তুমি বুঝে আছ ভুল এখনো,
জানবেনা তুমি আমার এই দুঃখ কখনো।

তাইতো বলি শুষ্ক পাতার মত,
একদিন ঝড়ে পরে যাব মাটিতে।
কুড়িয়ে নিয়ে যাবে কোন পাতা কুড়োনি,
নিয়ে ঠেলে দিবে চুলায়।
জ্বলে অঙ্গার হয়ে হব আমি ছাই।
একদিন উড়বে আমার ছাই আকাশে বাতাসে,
ধূলায় মিশে যাবো একদিন,
আমি আছি এখন সেই প্রতীক্ষায়

30/12/12
বিষয়শ্রেণী: কবিতা
ব্লগটি ৭৯৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৯/০৯/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আরজু নাসরিন পনি ৩১/১০/২০১৩
    পাঠককে মোটেও বেকায়দায় ফেলেন না...সুন্দর বোধগম্য করে লেখা কবিতা ...জীবনের নানা বাকেঁর উপস্থাপন...পড়তে বেশ লাগলো, সাখাওয়াৎ ।

    শুভ সকাল ।।
    • আপনার প্রতি হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা সবসময়।এটি একটি সিক্যুয়েল কবিতা।এর প্রথম অংশ টি পড়লে আরোও ভালো লাগবে, যদি পড়ে না থাকেন।শুভকামনা আপনার জন্য।
  • দুইটা কবিতাই সহজ সুন্দর আর সাবলিল ভাষায় লেখা। বক্তব্য স্পষ্ট যেকোন পর্যায়ের মানুষ বোঝবে।

    মন ছোঁয়ে গেলো আপনার কবিতা। কিছু বলার নেই আর।
    মনে হয়েছে যেনো বাস্তবেই এমনটি ঘটছে
    • খুবই খুশি হলাম দাদাভাই।অশেষ অশেষ ধন্যবাদ গ্রহণ করবেন।সেই সাথে থাকছে অফুরন্ত ভালবাসা।আশা করব সবসময় এভাবে পাশে থাকবেন গঠনমূলক মন্তব্যের মাধ্যমে।ভালো থাকুক সর্বদাই এই কামনা।
  • Înšigniã Āvî ২৯/০৯/২০১৩
    দারুন দারুন দারুন
  • আহমেদ রব্বানী ২৯/০৯/২০১৩
    অসাম হয়েছে প্রিয়।
  • ইব্রাহীম রাসেল ২৯/০৯/২০১৩
    দীর্ঘ কবিতার জনক ধন্যবাদ--চালিয়ে যান
  • তোমার পদস্পর্শে সে ধূলা পাবে প্রাণ
    তোমার শরীর ছুঁয়ে ছড়াবে সুঘ্রান
    ধূলোয় ধূসর তোমার চুল হবে অনন্য
    এখন শুধুই প্রতীক্ষা তোমার জন্য
    অসাধারণ অবিস্মরণীয় এক কবিতা
  • সহিদুল হক ২৯/০৯/২০১৩
    জাবেদের দুই রূপ খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে কবিতাটিতে,মেয়েটির অসহায়তাও প্রকাশ পেয়েছে দারূণভাবে।
    • সহিদুল ভাই আমি সবসময়ই অপেক্ষা করি আপনার গঠন মূলক সমালোচনার জন্য।খুবই ভালো লাগলো।কোন ভুল ভ্রান্তি থাকলে তা শুধরে দিলে খুবই উপকৃত হবো।অশেষ অশেষ ধন্যবাদ।ভালবাসা রইল অফুরন্ত।
  • নির্ঝর রাজু ২৯/০৯/২০১৩
    কবিতা সমালোচনায় আমি আপোষ করি না তবে এটা সত্যিই প্রশংশার যোগ্য! নেতিবাচক মন্তব্য করার মত কিছু পেলাম না, দারুন লিখেছেন
    দাদা! প্রেম আর প্রকৃতি মিলে নান্দনিক মেলবন্ধন! তবে কথা গুলে হিয়া হুমরে যায়||
    ****নির্ঝরের ব্লগ বাড়িতে ঘুরে আসার নিমন্ত্রন রইল কবিতে-
    বিনীত :(
    • অসংখ্য ধন্যবাদ।সেই সাথে অফুরন্ত ভালবাসা আপনার জন্য।এই কবিতা র প্রথম একটা অংশ আছে।ওটা পড়লে আরও ভালো লাগবে আশা করি।খুবই খুশি হলাম আপনার মন্তব্যে।অবশ্যই আমি যাবো।
 
Quantcast