www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সাইকোপ্যাথিক

দেখতে দেখতে কতগুলো দিন জীবন থেকে চলে গেলো আজ আমরা কোথায় এসে দাঁড়িয়েছি প্রিয়া, এটা কি হবার কথা ছিল এরকম দিন আবার আমাদের জীবনে আসবে স্বপ্নেও কি ভেবেছিলাম। আজ আমাদের দশম বিবাহ বার্ষিকী।

খুব চলছিল আমাদের সংসার, এখনো চলছে, চলছে কিনা বল! তুমি কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে তুমি আমায় আগের মত ভালোবাসো না? বলতে পারবে তুমি? পারবেনা, পারবেনা আমি জানি।

প্রিয়া আমি নিশ্চয়ই ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখছি, দেখছি কিনা বল! হুম গত কয়েক বছর কিন্তু তুমি আমাদের বিয়ে বার্ষিকী একদম মনেই রাখোনি! একবার ও বলোনি যে আমাদের দাম্পত্য জীবনে আমরা কতটা সুখী আছি অথবা সুখী ছিলাম, একে অপরের সঙ্গ চাইতাম, অবাক করা সব ভালোবাসা প্রকাশ করতাম, তুমি আমার দেয়া সারপ্রাইজ গুলো দেখে কি খুশিই না হতে তারপর কি হতে কি হয়ে গেলো আমি তোমার চোখে একদম অতিষ্ঠ হয়ে উঠলাম, কিছুতেই তোমায় সুখী করতে পারলাম না, থাক আজ এই আনন্দের দিনে ওসব বাজে কথা একদম মনে করতে চাইনা।
আমাদের দশ বছরের দাম্পত্য জীবনে কোন সন্তান এলোনা, আমি তাতেও অসুখী ছিলাম না, বেশ তো আছি দুজন মিলে, কিন্তু তবু তুমি মুখ ফিরিয়ে নিলে আমার উপর থেকে!!

আমি তারপর ও সব মেনে নিয়েই তোমার সাথে আছি, গত এক বছর, হ্যাঁ ঠিক এক বছর আমার সাথে কথা বলোনি আমাকে খাবার বেড়ে দাওনি, কোথাও আমার সাথে বেড়াতে যাওনি, ছুটির দিনেও নানা কাজে বাইরে বাইরে থাকতে, আমার সামনে তো এক মুহূর্ত থাকতে চাইতে না, সেই তোমার কি হল আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকী স্মরণ করিয়ে দিলে! আমার সাথে বেড়াতে যেতে চাইলে আমি নির্ঘাত স্বপ্নে দেখছি।

পাশের ঘরে তোমার মা ঘুমাচ্ছে নিশ্চিন্তে আর শান্তিতে; তাকে আমি কখনো বুঝতে দেইনি যে আমি তার নিজের ছেলে নই; তার মেয়ের জামাই, কিন্তু দেখো ভাগ্য আজ কোথায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে সবাইকে, উনার ঘুমটা কি গাঢ়ো দেখেছ? বেশ অনেকদিন হাঁটুর ব্যথায় ভুগছিলেন উনি, ডায়াবেটিস ও বেড়ে গিয়েছিলো খুব, বিধবা মানুষ একা আমাদের সাথে থাকতে থাকতে কি অসুখীই না হয়ে গিয়েছিলো তাই না?
সেও অনেকদিন আমার মত ঘুমাতে পারেননি অনেকদিন তার কান্না শুনেছি আমরা। উনার কান্না কি রুক্ষ আর অসহ্য। মাঝে মাঝে তো অতিষ্ঠ হয়ে যেতাম তারপর ও কিছু বলিনি কখনো;
আমি তো তার ছেলের মতই।

তোমার মনে আছে যেদিন প্রথম দেখা হল তোমার সাথে? আমি তোমায় কি বলেছিলাম? বলেছিলাম তোমার নাম গোলাপ হওয়া উচিৎ অথবা গোলাপের রানী! আমি কিন্তু তখনি তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম কিন্তু তোমাকে বুঝতে দেইনি, কিছু আবেগ কিছুটা অনুরোধ অনুনয় পেতে চেয়েছিলাম তোমার দিক থেকেও, আর তুমিও কিনা করেছ বলতো??

ওগো প্রিয়া, প্রিয় স্ত্রী আমার; আজো তোমায় সেদিনের মতই বিশ্বাস করি, যেদিন তুমি তোমার বন্ধু বাবুল সাহেবের সাথে খুব রাত করে বাড়ি ফিরলে, উনি বোধহয় তোমায় পৌঁছে দিয়ে গিয়েছিলো গেটের কাছে আসতে আসতে তোমার কাঁধের উপর দু হাত তুলে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গভীর ভাবে তোমার চোখে চোখ রেখে কি সব যে বলেছিল আমি সব দেখেছি জানলা দিয়ে, তারপর ও আমি তোমায় বিশ্বাস করেছি, ভালবেসেছি বুঝলে।

আচ্ছা শোন এই যে তুমি বায়না ধরলে আমার সাথে আজ পুরো দিন কাটাবে, লং ড্রাইভে যাবে; প্রকৃতির কাছে যাবে, শুধু তুমি আর আমি মিলে আমাদের দশম বিবাহ বার্ষিকী উদযাপন করবো, আমি যে কি খুশি হয়েছি জানো।
এই শোন না মাকে ও আমাদের সাথে নিয়ে যাই কি বল বৃদ্ধা মানুষ একা একা থাকবে বাড়িতে?

আজ বৃষ্টি এলে ভালো হত প্রিয়া! আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখো ঝলমলে আলো খেলা করছে সবখানে, এও অবশ্য মন্দ না, আর তুমি? তুমি তো ফুলের মত ফুটে আছো সেই প্রথম দিনের মত, সত্যি বলছি প্রিয়া তুমি একদম বদলাওনি, দিনে দিনে এত সুন্দর হচ্ছো যে যতই তোমায় দেখি ততই মুগ্ধ না হয়ে পারিনা।

এই যে একা একা কথা বলে যাচ্ছি তুমি তো কিছুই বলছোনা প্রিয়া, চারপাশে সবুজ গাছ দিগন্ত জুড়ে বিস্তৃত খোলা মাঠ বেগুনী আকাশ, আকাশ যে বেগুনী হয় এই ব্যাপারটা জানতামই না জানো; আমি প্রথম বেগুনী আকাশ দেখেছিলাম স্বপ্নে আমার মায়ের মৃত্যুর পর, সে ধোয়ায় ঢাকা এক অচেনা পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে ছিল একা, মাথার উপর বেগুনী আকাশ।
তোমার বেগুনী শাড়ির মত, সীটের বেগুনী কভারের মত, আমার শাশুরির বেগুনী গাউনের মত, হেডলাইটের বেগুনী আলোর মত। এই রঙটা যে আমার একদম পছন্দ না এটা জানার পর ও তুমি কেন পড়েছ এই রঙটা? অবশ্য আমি ঠিক করেছি আজ আমরা কোন ঝগড়া করবোনা কতদিন পর আমাদের বিবাহ বার্ষিকী পালন করছি। আজ আমাদের দশম বিবাহ বার্ষিকী।

একদিক থেকে তুমি ব্যস্ত তোমার মার্কেটিং এর ছাই পাস চাকরী নিয়ে, ও সরি তোমাকে অপমানজনক কথা বলেছি বলে, তবু বিষয়টা যখন উঠলোই বলেই দেই মেয়েদের জন্য মার্কেটিং এর চাকরী আমার একদম পছন্দ না, কোথায় কোথায় কত কত জেলায় ঘুরে ঘুরে কাজ করতে হয়, প্রথম প্রথম যখন তুমি রাতে বাড়ি ফিরতে না, আমার খুব অভিমান হত; রাগ করতাম খুব। মন ছোট ছিল কিনা।

সামনে পেট্রল পাম্প থেকে গাড়িতে একটু তেল ভরে নেই কি বলো? আজ সারাদিন শুধু ঘুরবো ঠিকাছে?
পেট্রল পাম্প পৌঁছাতেই কিছু পুলিশ পথরোধ করলো পিস্তল তাক করে দুহাত উঁচু করতে বলছে কেন বলতো? আশ্চর্য!
আমার প্রিয় কুড়ালটা; যেটা সব সময় আমার সাথে থাকে, ওটা দিয়ে কোপ বসিয়ে দিয়ে এসেছি ওদের।

কিন্তু! কিন্তু তুমি এভাবে পড়ে আছো কেন? তোমার শরীরে এত রক্ত কেন! কথা ও বলছনা একদম!! কি অদ্ভুত ভাবেই না তোমার দু’চোখ খোলা! বেগুনী আকাশের দিকে চেয়ে এত কি দেখছ তুমি? কে করলো তোমার এই অবস্থা? পেছনে তোমার মা পড়ে আছে কাঁটা মাথা নিয়ে।

সব কিছু ওলটপালট লাগছে! কি যে হচ্ছে আমার সাথে! প্রিয়া প্রিয়া ওঠো!
প্লিজ সাহায্য করুন কেউ তো সাহায্য করুন, পেট্রোল পাম্পের লোকগুলো কোথায়!!

কি অদ্ভুত ওরাও সব পড়ে আছে মাটিতে, রক্তে ভেসে যাচ্ছে, দূরে সাইরেন, অনেকগুলো সাইরেনের শব্দ, আমি সহ্য করতে পারছিনা! ওরা দূর থেকে আমায় হাত উঁচু করতে বলছে! কেন! কাকে বলছে তেরটা খুনের জন্য সারেন্ডার করতে? কাকে?
প্রিয়া প্রিয়া চল আমরা এখান থেকে পালিয়ে যাই
আকাশের রঙ লাল আমার হাতে ধরা রক্তে ভেজা কুরালটার মত, ভালোই হল বেগুনী রঙ আমার একদম পছন্দ না।
আজ আমাদের দশম বিবাহ বার্ষিকী!
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৯৭৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৯/০১/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast