www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বিভ্রাট

গাছতলায় একা বসে আছি। সকলের চোখে আমি খুব সুখি। সফল মানুষ। মিথ্যে বলব না, আমারও নিজেকে তাই মনে হয়। একটা ছোটখাট চাকরি করতাম। অবসরে আছি। স্ত্রী, দুই ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। ছেলে দুইটির একজন ডাক্তার, আরেকজন ইঞ্জিনিয়ার। দুজনেই যুক্তরাষ্ট্রে আছে। মেয়েটি গ্রাজুয়্যাশন কমপ্লিট করেছে। বিয়ে দিলাম গতবছর। স্বামী অনেক বড় মাপের ব্যবসায়ী। বাড়িতে এখন শুধু আমরা বুড়ো বুড়ি। সবই ঠিক আছে। কিন্তু বাড়িটাতে কেমন যেন ফাঁকাফাঁকা লাগে। কিছুতেই সময় কাটতে চায় না।
আশ্চর্য ব্যাপার! আমার স্ত্রী কিন্তু দিব্যি আছে। তার অবশ্য সমস্যা তেমন হওয়ার কথা না! কারণ ছেলে মেয়ে বড় হয়ে যাওয়ার পরে ওরা থাকত স্কুল কলেজে আর আমি অফিসে। বাড়িতে তাকে একাই থাকতে হতো ।তাই একা থাকা তার সহ্য হয়ে গিয়েছে। এমনকি আমি এই নিঃসঙ্গতা নিয়ে কথা বললে সে এমনভাবে মুখভঙ্গি করে যেন আমি হিলারী ক্লিনটনকে বিয়ে করতে চাইছি!
বিকেল বেলা একটু বের হতে চাইলেও তার অমত। সে চায় আমি সর্বক্ষণ ঘরে বসে থাকি! বউয়ের শাসন মেনে চলা, তাও এই বয়সে এসে! আমার পক্ষে অসম্ভব। তাই আমি তোয়াক্কা না করেই চলে আসি। বিভিন্ন পার্কে গিয়ে বসি। লোকজনের চলাচল দেখি। ভালই লাগে।
আজ অনেকক্ষণ বসে আছি। একজন মধ্যবয়সী মহিলা দেখি আমার দিকেই আসছে।
“আপনি কুট্টি জয়নাল ভাই না?”
মহিলার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। আমার এই ‘কুট্টি জয়নাল’ নামটা তো আমার স্কুলের সহপাঠীরা ছাড়া আর কেউ জানে না। আমাদের ক্লাসে দুটি জয়নাল ছিল। আমি একটু বেটে ছিলাম বলে, নরেন স্যার আমার নাম দিয়েছিল কুট্টি জয়নাল। এই মহিলা নিশ্চয়ই আমার স্কুলজীবনের সহপাঠী। খেয়াল করে দেখে চিনতে পারলাম।
“হুম। আর তুই তো বকবকি সাবরিনা? “
আমার কথা শুনে সে হা হা করে হেসে ওঠল। ক্লাসে খুব বকবক করত বলে নরেন স্যার ওকে এই নাম দিয়েছিল। ওর হাসি আর থামছেই না। ওর হাসি দেখে আমারও হাসি পেয়ে গেল। আমি আর সাবরিনা একসাথে হাসছি। সময়টা খুব ভালই কাটছিল।
“হচ্ছেটা কী?” পরিচিত নারীকণ্ঠের জোরালো আওয়াজ। আমার স্ত্রী আমার পিছনে দাঁড়িয়ে।
“ও, তাইতো বলি, তোমার মুখে বারবার ‘একাকীত্ব’, নিঃসঙ্গতা কেন? এই ব্যাপার, না?”
“দেখো,জোহরা, তুমি যা ভাবছো, তা না”
“একদম চুপ। আমাকে বোকা পেয়েছ না? আমার কয়েকদিন ধরেই তোমাকে সন্দেহ হচ্ছিল। আজ হাতেনাতে ধরেছি।”
সাবরিনা কিছু বলতে যাচ্ছিল। জোহরা তাকে এক ধমকে থামিয়ে দিল। সাবরিনা সরি বলে চলে গেছে। জোহরা আঁচলের তলা থেকে মোবাইল বের করে মেয়ের জামাইকে ভিডিও কল দিচ্ছে। আমি বোকার মত ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৪৮৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৮/০৬/২০১৯

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আহারে,বেচারা খামাকাই ধরা খেলো।
  • Nice.
  • আজনাদ মুন ০৯/০৬/২০১৯
    বেশ বেশ
  • হাঃহাঃ
 
Quantcast