www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

সাপ্তাহিক ছুটি

বিকেলে ঘুরতে বেরিয়েছিল সুনীল। আজ তার ছুটি। অফিসের ব্যস্ততায় ইদানিং তার হাঁটা হয় না। বাসা থেকে বের হয়েই অফিসের গাড়ি, আর তারপর সোজা অফিস। সেখানে গিয়ে নিজের চেম্বারের নরম গদির চেয়ারে বসে থাকা। অফিস ছুটির পর আবার গাড়ি, বাড়ি ফেরা, বিছানায় বালিশে হেলান দিয়ে বসে ল্যাপটপে ভিডিও দেখা। বাসায় ওয়াইফাই সংযোগ দেওয়ার পর তার আর তেমন টিভি দেখা হয়ে ওঠে না। কারণ টিভিতে বিজ্ঞাপনের ফাঁকে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া নাটক দেখার চেয়ে, ইউটিউবে নাটক দেখা অনেক ভাল। মাঝে মধ্যে সে ফেসবুকেও ঢু মারে অবশ্য। তার মোট তিনটি আইডি। একটি স্বনামে, আরেকটির নাম ‘মেঘে ঢাকা সন্দেশ’ আর আরেকটির নাম বলা যাবে না, ওটায় কিঞ্চিৎ ঝামেলা আছে। তো যাইহোক, এইভাবেই রাত নেমে আসে। টিভি সিরিয়াল দেখে ক্লান্ত স্ত্রী টেবিলে ভাত সাজিয়ে তাকে ডাক দেয়। সেও গিয়ে বসে। খানাপিনা শেষে আবার বিছানায়। সেখানে কি হয়, তা নিশ্চয়ই আর বলে দিতে হবে না।
প্রতিদিনকার এই একঘেঁয়ে রুটিন থেকে মুক্তি পেয়ে আজ সে হাঁটতে বেরিয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে চলে এলো নদীর ঘাটে। জলভরার ঘাট নয়, মাল তোলার ঘাট। নদীতে থাকা জাহাজের পাটাতন থেকে তীরের মধ্যে একটি কাঠের তক্তা ফেলে রাখা। তার উপর দিয়ে হাঁটার কথা সুনীল ভাবতেই পারে না। কিন্তু আটদশজন লোক ঐ তক্তার উপর দিয়েই স্বচ্ছন্দে হাঁটাচলা করছে। জাহাজ থেকে মাথায় করে মালের বস্তা নিয়ে তীরের নির্দিষ্ট জায়গায় জমা করছে। ওদের মধ্য থেকে একজন সুনীলের পাশ দিয়ে নদীতে নামল। নেমেই এক ডুব। তারপর জলে দাঁড়িয়ে লোকটা নিজের কালো শরীরটাকে হাত দিয়ে ঘষে ঘষে মাজতে লাগল।
“আজকেও তোমরা কাজে এসেছ?” লোকটিকে জিজ্ঞেস করল সুনীল।
“কেন্? কি আইজকা?” বুক ঘষতে ঘষতে বিরক্তিভরে প্রশ্ন করল সে।
“শুক্রবার।সাপ্তাহিক ছুটি।”
“ও!” বলেই সে আরেক ডুব দিল। জলে বেশ খানিকটা তরঙ্গ সৃষ্টি করে মাথা তুলল। তারপর বলল,
“ঘরে বইয়া থাকলে ছুটিয়ে খাওন দিব? আমগ দিন হিসাবে টেহা ! ঐসব ছুটি ফুটি আমগ লেইগা না।” বলেই আরেক ডুব।
সুনীলের আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। নদীর বুকে ভেসে চলেছে আরেকটি জাহাজ। সেদিকেই তাকিয়ে আছে সে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৫৬১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০১/০৮/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast