www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ক্রস চিহ্ন

(১)
আমার জীবনে অভিজ্ঞতা খুব কম। অত অভিজ্ঞতা হবেই বা কি করে আমি তো এখনো জীবনের অর্থই বুঝি না। তবে একেক টা দিন শেষে ঠিকই অনুধাবন করি আমি বড় হচ্ছি। ধীরে ধীরে আমার নিজের ভিতরের খুব কোমল একটা রাজ্যে গড়ে উঠছে। তাই তো পাশের মানুষ গুলোর কষ্ট গুলো অনুভব করতে পারি। তাদের শেষ হয়ে যাওয়া কান্নার দাগ স্পষ্ট দেখতে পাই।
(২)
আমরা মানুষ বলেই হয়তো শুধু আমাদের দ্বারা সম্ভব   নিরাকৃত কোন প্রতিকৃতি কে ভালোবেসে সারাজীবন পার করে দেওয়া। ভালোবাসার চরমোৎকর্ষতা শেষে নিজের ভিতর কোন বীজ বোনার পরম সাধনায় আমাদের ভালোবাসার পরিপূর্ণতা। শরীরের ভিতর আস্তে আস্তে বেড়ে উঠা সেই বীজ টিকে নিজের অস্তিত্বের সাথে একটু একটু করে পরিচয় করিয়ে দিতে কাটে আমাদের ঘোরলাগা সময়অসময়। সেই মাংসপিণ্ডে যখন আমাদের সকাল, দুপুর সন্ধে গুলোকে একসাথে করে রাখতে ব্যস্ত। আমার আমি কে নূতন করে পরিচয় দেওয়ার রিহার্সেলে ব্যাস্ত থাকি আমরা তখন হয়তো উপরের একজন মুচকি হেসে আমাদের কপালে একটা ক্রস চিহ্ন এঁকে দেন। সেই চিহ্নটাই হয়ে উঠে আমাদের বেঁচে না থাকার তও্ব কথা, মন খারাপের অকাট্য যুক্তি আর অজস্র কান্নার ভীষণ কালো মেঘ। কখনো হারিয়ে যায় পরম নির্ভরতার দুটি হাত। শুধু সেই একদলা মাংসপিন্ডের হৃৎস্পন্দনের জন্য কত গভীর অপেক্ষা তা শুধু নিজের হাহাকার ভরা সময় গুলো সাক্ষী থাকে।
(৩)
হাসপাতালের বিছানায় অজস্র রক্তকণার প্রবাহে নিঃশেষ হতে থাকে নিজের শরীরের শক্তিটুকু। তবু কি ভীষন কান্না!! হতবিহ্বলতায় কড়িকাঠের দিকে চেয়ে সেই নিরাকার ভ্রুনের অস্তিত্ব খোজার বৃথা চেষ্টা। ফিনাইল, স্যাভলনের কড়া গন্ধে ভরা লেবার ওয়ার্ডে ভরে থাকে অনেক গুলো ভ্রুন হারানোর থক থকে কষ্ট। সেই কষ্টের রঙ একটু বা লেগেও আছে সেই রুমটার দেয়ালে,মেঝেতে।
নাহ সেদিন নিজের শরীর থেকে বেরিয়ে আসা রক্তকে আর ঘেন্না হয় না, পুরুষ কিংবা অন্যের চোখের আড়াল করতে কারো কোন তাড়াহুড়ো নেই। কারন এই চাপ চাপ রক্তদলা তার বুকের মানিক হারানোর সাক্ষ্য।
হাসপাতাল বিমুখ আমিও সেদিন সেই মানুষের ঘাম আর রক্তের গন্ধে ভরা উত্তপ্ত  রুমটাতে গিয়ে অনড় হয়েছিলাম। আমার সামনেপিছনে, চারপাশে প্রতিটা নারীর তাদের নারীরত্ন হারানোর কান্না স্তব্ধ করেছিল আমাকে ক্ষণকাল।
উপরের জনের একটা ক্রস চিহ্ন অথবা আমাদের ধৈর্য্যের পরীক্ষা যা বলেই তাদের সান্ত্বনা দেই না কেন দিনশেষে তারা সন্তানহারা আর আমরা সবাই মিলে তার দেওয়া জীবনের পরীক্ষায় কাঠেরপুতুল। তবুও তার কাছেই হাত তুলি আরেকটা প্রানের সঞ্চারে আর বেচে থাকার পরীক্ষায় অনেক গুলো প্রশ্নের উত্তর জানতে।
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৯৮৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২২/১২/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • দারুণ অনুভূতি সম্পন্ন মানবিক অভিজ্ঞতা।

    কোমল হৃদয়টা আরও অনেক অভিজ্ঞতা
    সঞ্চয় করুক, আমরা তার আহ্লাদি মুখ
    থেকে শুনব বা তার লেখা পাঠ করব।।

    এটাও জীবনের একটা বড় অভিজ্ঞতা।।

    অনেক বড় হও বন্ধু, মানবিক হও , এই প্রত্যাশা।
    ধন্যবাদ::::
    • সাবিরা শাওন ০৯/০৩/২০১৭
      এই দোয়া আর শুভকামনা থাকলে কখনো পথচ্যুত হবো না । আশ্বাস রইলো
  • ভালই লিখেছেন।
  • মোনালিসা ২৬/১২/২০১৬
    সুন্দর
  • সোলাইমান ২৩/১২/২০১৬
    সুন্দর
 
Quantcast