www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ভুল


হালকা হাওয়া দিচ্ছে আজ। ব্যাগটা ভালো করে আরো একটু শক্ত করে কাছে ধরলেন নিখিল বিশ্বাস। সুন্দর পরিবেশ , রাত আটটা হবে তখন তিনি ফিরছেন অফিস থেকে। একটা বেসরকারি ফার্ম এ একাউন্টের কাজ সামলান উনি। আর্থিক অবস্থা বেশ স্বচ্ছল কোনো দুঃখ কষ্ট নেই সেরকম, হাঁটুর ব্যথা টা বাদ দিলে। বেসরকারি হলেও খুব বড় প্রতিষ্ঠান এবং সেখানের বেশ পুরোনো লোক উনি তাই কদর ও আছে বেশ খানিক টা। অফিসের বাস এসে বড় রাস্তার মোড় এ নামিয়ে দেয় সেখান থেকে হেঁটে দশ মিনিট মত লাগে বাড়ি ফিরতে। আজ ও সেই রাস্তা দিয়ে ফিরছেন উনি আর সাথে সুন্দর মিষ্টি একটা হাওয়া এসে যেনো সঙ্গ দিচ্ছে । কিন্তু মনের ভেতরের খচখচানি টা কোনো মতেই ঝেড়ে ফেলতে পারছেন না তিনি। কেমন একটা সুন্দর মাছের বড় একটা পিস খাওয়ার পর গলায় কাটা আটকে থাকলে যেমন লাগে, ঠিক সেরকম। ভুল টা আবার করলেন তিনি? এই নিয়ে মাসে 4 বার। বারবার এক ভুল যে কি করে হয়ে মানুষের সেটা নিয়ে বিস্তর খোটা তিনি অনেক বার শুনেছেন, তবে এবার নিশ্চিত কপালে দুঃখ আছে। হাঁটতে হাঁটতে আবার মনে করার চেষ্টা করলেন একবার । সবটা। কিন্তু না। এ স্মৃতি বড্ড বেয়াদব জিনিস। এখন তার মনে পরে যাচ্ছে তার ছোটবেলায় খেলত গিয়ে কিভাবে পা ভেঙেছিল কিন্তু আজকের দিনের কথা সেটা কিছুতেই মনে পড়বার জো নেই। ধুর, খুব রাগ হলো ওনার। বাড়িতে গেলে যে সমূহ বিপদ তার সে কথাটা তিনিও জানেন। কিন্তু “বউ” নামক বাঘের হাত থেকে আর কত মানুষ বেচেঁ ফিরতে পেরেছে। রাস্তা প্রায় শেষ , আর একটু হাঁটলেই ওই যে গলিটা দেখা যাচ্ছে ওটার শেষ বাড়িটা ওনার। ছোট্ট নীল রঙের বাড়িটা রাতের বেলায় যেনো আরো নীল রঙের দেখাচ্ছে। দরজার সামনে এসে দাঁড়ালেন। বেল টা বাজালেন। ভগবানের নাম নিলেন একবার, মিনা এসে দরজা টা খুলে দিয়ে ব্যাগ টা নিয়ে নিলেন, আর খালি হাতে দেখে পরীক্ষার গার্ড এর মতন কড়া চোখ করে তাকালেন নিখিলের দিকে। নিখিল বাবু বুঝলেন ভগবান ও বাঁচাতে পারবে না আজ।




মিনা নিখিলবাবুর স্ত্রী। ভালো মানুষ বেশ , স্বামী কে খুব ভালোবাসেন তবে রাগটা বড্ড বেশি। একবার রেগে গেলে সে যা রূপ অবশ্য বাঙালির সবাই প্রায় এই রূপ এর সাথে পরিচিত। কারণ বউ নামক বাঘিনী সবার বাড়িতেই যে রয়েছে। আজ যে অপরাধ করেছেন নিখিল বাবু সেটা একেবারে ক্ষমার অযোগ্য। এই নিয়ে মাসে চারবার । ছাতা টা হারিয়ে ফেলেছেন উনি। ঘরে ঢুকেই প্রথম প্রশ্নবাণ যেটা তার দিকে ছুটে এলো সেটা হচ্ছে “ছাতা কই? , আবার ও ?” কিছু জানেনা এমন ভালোমানুষের মুখ করে উনি বোঝাতে এলেন “দেখো আমার একদম মনেই পড়ছে না, আজ মনে হচ্ছে আমি নিইনি ছাতা টা, কারণ আমি তো রাস্তায় দাড়াই ও নি আজ কোথাও, আমি মনে হয় আজ….” কথা শেষ করবার আগেই তিনি বুঝলেন না হচ্ছেনা। মিনার রাগ একেবারেই কমছে না। আর কমবেই বা কেনো , এক ভুল এই নিয়ে চার বার। সব কটা ছাতা একে একে হারিয়ে ফেলেছেন উনি, আর এটা আরো ঘোরতর অপরাধ কারণ এই গোলাপী ছাতাটা ওনার স্ত্রীর প্রিয় ছিল।
এইবার শুরু হবে সাইলেন্ট ট্রিটমেন্ট। মিনা কোনো কথা বলবে না, আর পদে পদে বারবার বোঝাবেন কতটা ভুল করেছেন তিনি। শুরু ও হয়ে গেছে, নাহলে অন্যদিন কি না কি হলো সারাদিন সব খুঁটিনাটি বলতে থাকেন এখন, আজ চুপ করে রিমোট হাতে বসে আছেন, এমন কি স্নান ই যাওয়ার জন্য ও বললেন না। একটু খারাপ ও লাগলো নিজের উপর রাগ ও হলো নিখিলবাবুর। এখন সব কেমন যেনো ভুলে যান উনি আর সব থেকে বেশি সেটার প্রভাব পরে সুন্দর সুন্দর ছাতা গুলোতে। যা ই হোক কপালে দুর্ভোগ আছেই। কদিন এটা চলে সেটাই এখন দেখার বিষয়। রাতে খেতে বসে অবধি কোনো কথা বললে না মিনা। দু একবার যে চেষ্টা করেননি নিখিল বাবু, সেটা না। তবে ধুম করে রাখা জলের বোতল আর প্রায় ইচ্ছা করে ই নুনের বাটি উল্টে দেওয়ার অবস্থা দেখে উনি আর বেশি সাহস দেখাতে পারলেন না। রাত এ শোয়ার পর আরো অনেক অনেক বড় ভাবার চেষ্টা করলেন কোথায় রাখতে পারেন উনি ছাতাটা। কিন্তু বেমালুম ভুলে গেছেন যেনো। যেনো ছাতা টা একটা কর্পূর আর একদম উবে গেছে সেটা। মিনার দিকে দেখলেন উনি। বয়স হয়েছে ঠিক ই কিন্তু একেবারে সর্ষের মত ঝাজ টা একদম ই কমেনি। নিখিল বাবুর খারাপ লাগা আর ভালো লাগা একসাথে হলো। ভালো লাগলো তার বউ এর কথা মনে করে, আর খারাপ লাগলো ওই কর্পুরসম ছাতার কথাটা ভেবে। ঘুমিয়ে পড়লেন আর রাত এ স্বপ্নে দেখলেন একটা গোলাপী ছাতায় চেপে উনি শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছেন।




সকালে ঘুম ভাঙলো একটু দেরি করে, মিনা ডাকেনি একবার ও আজ। উঠে ঘড়ি দেখলেন সকাল ন টা, তবে কোনো চিন্তার কারণ নেই , আজ রবিবার। উঠে ফ্রেশ হয়ে খাওয়ার টেবিল এ বসলেন । ঢাকা দেওয়া ঠান্ডা চা দেখে আবারও বুঝলেন কপালে দুঃখ তার অশেষ। দু একবার চেষ্টা করলেন টুকটাক কথা বলার কিন্তু হু হা ছাড়া আর কিছু শুনলেন ন। ঠান্ডা চা’তেই গলা ভেজাতে যাবেন এমন সময় ঘরের বেল টা বাজলো একবার। কে এলো? মিনা উঠে গিয়ে দরজা খুললো আর এক মুখ হাসি দিয়ে বললো “আয়ে আয়ে , ভেতর এ আয়ে”
তড়াক করে ঘরে ঢুকলো ওনার শালা সুশীল। এক্কেবারে শালা ই বটে। কিসব কবিতা টবিতা লেখে নাকি পেপারে, ছেলে টা কে দেখলেই মাথা গরম হয়ে যায় ওনার। কিন্তু কিছু বলতেও পারেন না কারণ ছোট ভাই কে খুব ভালোবাসেন তার স্ত্রী। “কি জামাইবাবু , ভালো?” বলে বসে পড়লেন খাওয়ার টেবিলের সামনে সোফা তে। মনের রাগ টুক করে ভেজা চায়ের মতন গিলে নিয়ে, অমিয় গলায় বলেলন নিখিলবাবু “ এই তো বাবা চলে যাচ্ছে, তা তোমার খবর কেমন?” একেবারে শুনতেই পায়নি এমন করে মিনা কে বললো “দিদি একটু কিছু খাওয়া না, খিদে পেয়েছে খুব, সেই সকালে বেড়িয়েছি” । গা টা জ্বলে গেলো নিখিল বাবুর। যেনো রাজকার্য করেছে কোনো, মনে মনে বললেন “শালা” । দিদি তো ওদিকে একেবারে গদগদ মুখ করে “ একটু বস ভাই , এখুনি আনছি দারা, তোর তো পায়েস ভালো লাগে । করা আছে ওটা ই এনে দিচ্ছি দারা একটু” বলা মা যেমন ছেলের খিদে পেলে ব্যস্ত হয়ে যায় সেভাবে যেতে লাগলেন রান্নাঘর এর দিকে। থামিয়ে দিয়ে শালাবাবু বলে উঠলো “এই দিদি এটা আগের দিন তাড়াহুড়ো তে নিয়ে গেছিলাম আর বলা হয়নি, এটা নে” বলে ব্যাগ থেকে বড় করলো একটা জিনিস। তাকিয়ে দেখলেন নিখলবাবু । ছাতা। একটা গোলাপী ছাতা। ভাই হেসে হেসে বললো “আসলে মনেই ছিলনা একদম তাই আর কি। এটা রাখ দিদি। আর পায়েস টা আন তাড়াতাড়ি । তোর হাতের পায়েস আহা” নিখিল বাবু আসতে করে তাকালেন তার স্ত্রীর দিকে। কোথায় সেই সর্ষের ঝাঁজ , কোথায় সেই ত্বেজ? এক্কেবারে শান্ত নিরীহ কাচুমাচু মুখ করে ওনার ই দিকে তাকিয়ে আছেন। এবার নিখীলবাবু চায়ের কাপ টা রাখলেন ধুম করে। সাথে সাথে রান্নাঘরে চলে গেলেন তার স্ত্রী। ঠিক পাঁচ মিনিট পর এলেন হাতে দুটো পায়েসের বাটি। ভাই কে দেওয়ার আগে ওনার সামনে রাখলেন, আর কোনো ঝরে পড়া ফুলের মতন শান্ত আর ঠিক মধু মেশানো গলায় বললেন “বেশি করে কিশমিশ দিয়ে করেছি,নাও খেয়ে দেখো”।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ২৭৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৭/০৬/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast