www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বিএনসিসি ও আমার কিছু অনুভূতি

কাছের কোন মানুষ যখন তাচ্ছিল্য করে জিজ্ঞাসা করে বিএনসিসি করে কি লাভ...? কেন জানিনা মনের মধ্যে একরকম কষ্ট অনুভব হয়।

সবকিছু লাভ দিয়ে বিচার করা যায় না।

আমি বলবো না বিএনসিসিই একমাত্র সংগঠন যার মাধ্যমে আমি নিতে পেরেছি দেশের যে কোন সংকটময় পরিস্থিতিতে সামরিক বাহিনীর সাথে অস্ত্র হাতে মোকাবেলা করার দুঃসাহসিক সসস্ত্র ট্রেনিং। অংশ গ্রহণ করতে পেরেছি কয়েকটি ফায়ারিং ক্যাম্পে।

আমি বলবো না বিএনসিসি একমাত্র সংগঠন যেখান থেকে আমি দেশের অন্যতম বৃহৎ যুদ্ধ-জাহাজে করে ঘুরে এসেছি বিশাল সমুদ্রের বুকে। জেনেছি নৌ পথে যুদ্ধ করার রণকৌশলের, জেনেছি রাডারের ব্যবহার, জাহাজ যুদ্ধ-জাহাজ পরিচালনার পন্থা আর শত্রুকে পরাজিত করার আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার।

আমি বলবো না বিএনসিসি একমাত্র সংগঠন যার মাধ্যমে আমি ঘুরার সুযোগ পেয়েছি দেশের অন্যতম বিমান ঘাটি বাফ বেজ জহুরুল হক ভ্রমণ করার। পরিচয় পেয়েছি ১২ টার বেশী এয়ারক্রাফটের আর সেগুলোর দ্বারা ফায়ারিং ও যুদ্ধ পরিচালনার কৌশল। পরিচিত হয়েছি প্রত্যেক এয়ার ক্রাফটের পাইলটগণের সাথে আর ছেলফি তুলে তা আপলোড করে মাস্তি করেছি ফেসবুকে।

আমি বলবো না বিএনসিসি একমাত্র সংগঠন যেখান থেকে আমি শিক্ষা নিয়েছি কিভাবে রাতের পর রাত জেগে, কিভাবে এক কাপড়ে সপ্তাহ কাটায়ে, পেটে ক্ষুধার যন্ত্রণা নিয়েও দেশের জন্য সদা চৌকশ আর অটল থেকে দায়ীত্ব পালন করতে হয়।

আমি বলবো না বিএনসিসি একমাত্র সংগঠন যেখান থেকে শিক্ষা পেয়েছি পথের মাঝে হটাৎ এক্সিডেন্ট দেখলে আমার কি করা উচিৎ আর কি প্রাথমিক চিকিৎসা হবে। আমার সামনে কোথাও আগুন লাগলে আমার কি করা উচিৎ এবং কিভাবে করতে হবে।

আমি বলবো না বিএনসিসি একমাত্র সংগঠন যেখান পেয়েছি জ্ঞানের অজস্র ধারা। যেখানে আমি প্রথম আমার নিজের প্রতিভার পরিচয় পেয়েছি। যেখান থেকেই আমি পেয়েছি আবৃতি, অভিনয়,বক্তৃতা কিংবা রচনা প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়ে পুরষ্কার। যে পুরষ্কার আমাকে আগ্রহী করেছে এসকল বিষয়ে চর্চা করার।

আমাকে এ কথা বলতে হবে না যে, বিএনসিসি একমাত্র সংগঠন যেখানে আমি শিখেছি মানুষ হয়ে মানুষের প্রতি দায়ীত্ব পালনের, শিখেছি সৎ, সত্যবাদিতা, কর্মোঠ, হওয়ার, পাহাড় সমান ধৈর্য্য ধারনের কিংবা শৃংখলা আর মানুষে মানুষ সবাই সমান হয়ে একতাবদ্ধভাবে জীবন জাপন করার শক্ত ট্রেনিং। যা আমার জীবনের প্রতি মুহুর্তে মুহুর্তে আমাকের বিবেকের সাথে সন্ধি করে আমাকে পরিচালনা করে।

আমাকে এটাও বলতে হবে না যে, দেশের প্রতিটি ক্রান্তি লগ্নে ঝড়-জলচ্ছাসে সবাই যখন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য অস্থির। তখন আমি বিএনসিসির ড্রেস পরে সকল ক্যাডেটের সাথে অপেক্ষা করি কোথায় যেতে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করতে। কোথায় যেতে খাদ্য আর ওষুধ বিতারনে। কোথায় যেতে হবে উদ্ধারকর্মে।

আমি উল্লেখ করতে চাইনা যেখানে দেশের আবেগে উচ্ছ্বাসিত ছেলেমেয়েরা বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে শুধু প্রোফাইল পিকচারে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে কর্পোরেট দেশপ্রেমের মহড়া দেখায়। সেখানে বিএনসিসির এই আমি, আমরা ক্যাডেটরা এসকল ভার্চুয়াল প্রেমের পাশাপাশি খাকি ড্রেস পরে তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়ি রাত ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যারকে পাশে নিয়ে চলি শহীদ সৃতি স্মারকে সম্মান জানাতে, চেষ্টা করি বিজয় দিবসের তাৎপর্য - ইতিহাস নিয়ে দেয়ালিকা বানায়ে সাধারণের সামনে তুলে ধরতে, চেষ্টা করি দেশের গরীব-দুখী মানুষের পাশে দাঁড়াতে, তাদেরকে শীতবস্ত্র পৌছায়ে দিতে। সবই করি বিএনসিসির কল্যাণে।

বলতে হবে না। বৃক্ষরোপণ, রক্তদান, মাদক - ধর্ষণ- অপরাধের প্রতি জনসচেতনতা মূলক র‍্যালী কিংবা গণসংযোগের কথা। বিভিন্ন সামাজিক সেবায় কর্মসূচী পালনের কথা।

আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই যে যখন কোন ক্যাম্পের ফায়ারিং রেঞ্জে ৭.৬২ মি:মি: রাইফেল হাতে নিয়ে সারী বেধে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকি আর কমান্ডার স্যার নির্দেশ দেন অল ক্যাডেট টেক ইউর ওউন টাইম এন্ড ফায়ার - তখন একটা একটা করে টার্গেটের দিকে গুলি ছুড়তে থাকি টিগারে আঙ্গুল চেপে খুব সতর্কে, ধীর নিশ্বাসে।
ঠিক তখন !
ঠিক তখন মনে হতে থাকে আমি যেন স্বয়ং যুদ্ধে আছি আর আমার দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, দেশের লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত আব্রু রক্ষার জন্য, দেশের প্রতি ইঞ্চি ইঞ্চি মাটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অস্ত্র হাতে যুদ্ধে নেমেছি। প্রতিটা গুলিতে শেষ করে দিচ্ছি অত্যাচারীর কালো দেহ !
আমার মনে হতে থাকে,
এ দেশ, মাটি, মা সকলের বোঝা যেন একা আমি আমার কাধে নিয়ে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছি। আমার শ্বাস-প্রশ্বাস যেন গভীর হয়ে আসে, আমার রক্তের সঞ্চালন যেন টগবগিয়ে উঠে, আমার শিরা-উপশিরাগুলো ফুলেফুলে উঠে, আমার শরীরের পশমগুলো দাঁড়িয়ে গিয়ে যেন বীরত্বের দর্প দেখাতে চাই। আমি অনুভব করি। আমার মনে বিশ্বাস জাগে দেশের প্রতি আমার একটু হলেও ভালোবাসা আছে আমি যেন আমার সততা আর নিষ্ঠার প্রমাণ খুঁজে পাই।

বিশ্বাস করুন শুধুমাত্র এই সামান্য অনুভূতিটুকু পাওয়ার জন্যই আমি বিএনসিসি করি। ক্যাম্পাসের আরাম বিছানা আর বন্ধু-বান্ধবের আড্ডার মায়া ত্যাগ করে বন-বাদরে মশা আর পোকা মাকড়ের সাথে গিয়ে রাত কাটাই। ট্রেনিং করি
হল্ট.....
সাবধান.....
মার্চ......!!!

বড় হতভাগা আমি। হতভাগা না হলে কেন আমাকে এভাবে এ অনুভূতি পাওয়ার জন্য মিথ্যে যুদ্ধকে প্রকৃত মনে করতে হয়। আসলে সকল প্রজন্মই দেশের জন্য একটা যুদ্ধের সময় সামনে নিয়ে জন্মায় না। জন্মায় একবার, যে কোন একটা প্রজন্ম। যেমন জন্মায়েছিল ১৯৭১ সালে শহীদ বিএনসিসি ক্যাডেট সার্জেন্ট রুমি, ক্যাডেট শহীদ আল মুকিদ। তারাই ভাগ্যবান। হতভাগা বলেই পারিনি সে প্রজন্মের সাথে জন্ম নিতে।

তবুও স্বপ্ন দেখি শহীদি মৃত্যুর। মরতে যখন হবেই তা যেন হয় দেশের মাটি আর মানুষের কল্যাণে উৎসর্গিত মৃত্যু। যে মৃত্যু বিফলে যায় না। এটাই আমার বিএনসিসির শিক্ষা।
প্লিজ আমার প্রাণের প্রিয় এই সংগঠনটি নিয়ে তাচ্ছিল্য করে প্রশ্ন করবেন না। বিএনসিসিতে কোন লাভ বা নেওয়ার জন্য আসিনি। এসেছি বিএনসিসির মাধ্যমে দেশ, মানুষ আর মানবতাকে কিছু দেওয়ার জন্য।

বিএনসিসিকে ভালোবাসুন, আপনার ছোট ভাইবোনকে সৎ, মেধাবী, আর কর্মোঠ করে গড়ে তুলতে বিএনসিসিতে অংশ নেওয়ার আগ্রহ তৈরি করুন।

ক্যাডেট সার্জেন্ট রফছান আল মাসুম খাঁন
১ নং ব্যাটেলিয়ন (আর্মি)
কর্ণফুলী রেজিমেন্ট।
শিক্ষার্থী - চবি ।
ফেসবুকে আমি
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৯৫৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২০/০১/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • স্বপ্নীল মিহান ০৩/০২/২০১৫
    সত্যিই সুন্দর ভাবে বিষয় গুলো ফুটিয়ে তুলেছেন। আপনার কথাটা মনে থাকবে।অনেক শুভেচ্ছা রইল।
  • ঐশ্বরিক হিমা ৩১/০১/২০১৫
    আমারও অনেক ইচ্ছে ছিল বিএনসিসিতে যোগ দিতে...... কিন্তু সেই ইচ্ছে আর পরিপূর্ণতা পায়নি।
    • রফছান খাঁন ২২/০২/২০১৫
      বাংলাদেশে অনেক ভলেন্টিয়ার সংগঠন রয়েছে যেগুলোরে যে কোন সময়ে যে কোন বয়সেই যোগ দেওয়া যায়।
  • আবিদ আল আহসান ২৫/০১/২০১৫
    সুন্দর হয়েছে
  • সায়েম খান ২৫/০১/২০১৫
    এবার কোন একটা বাহিনীতে যোগদান করুন।
  • বদরুল আম ২১/০১/২০১৫
    খুব ভাল লাগল।
  • বদরুল আমীন ২১/০১/২০১৫
    খুব ভাল লাগল।
  • সবুজ আহমেদ কক্স ২১/০১/২০১৫
    আমার ভালো লেগেছে ।ভাই রফছান খানঁ
  • ২০/০১/২০১৫
    সুন্দর লেখা ।
 
Quantcast