www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

স্বপ্নরা এখানে মৃত

আজহার সাহেব টং দোকানে বসে আছে,হাতে চায়ের কাপ।বিকালবেলা হাঁটতে বের হওয়া তার পুরানো অভ্যাস। আজ এসেছেন নদীর পাড়ে। একটি বিশেষ কারণে তার মন ভালো নেই।অনেকক্ষণ হাঁটার পর দোকানে বসে চা খাচ্ছেন।
আরে আজহার,কেমন আছো??
চোখ উপরে তুলে দেখলেন তার বন্ধু এনামুল হক।

আজহার সাহেবঃএই বয়সে যতটুকু ভালো থাকা যায় ঠিক ততটুকুই ভালো আছি।তোমার কথা বলো।
এনামুল হকঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।অনেকদিন পর দেখা আমাদের ঠিক নাহ?
আজহার সাহেবঃ হুম,প্রায় বছর ছয়েক।
এনামুল হকঃ হুম।তা বাসার সবাই কেমন আছে?তোমার ছেলের কি অবস্থা?

মিনিট দুয়েক চুপ থাকার পর।
আজহার সাহেবঃ ছেলে!! আছে হয়তো ভালোই।
এনামুল হকঃ তোমার ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে কোথায় জয়েন করেছে??প্রাইভেট নাকি সরকারি চাকরি করে??
আজহার সাহেব নিশ্চুপ।।
এনামুল হকঃতবে কি বেকার?চিন্তা করো নাহ চাকরি হয়ে যাবে।

আজহার সাহেব একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন।
আজহার সাহেবঃ বেকার হলেও তো ভালো হতো।
মিনিট পাঁচেক চুপ থাকার পর।
আজহার সাহেবঃ এনামুল আজ মনটা ভালো নেই। একটা গল্প বলতে ইচ্ছে করছে। শুনবে???
এনামুল হকঃ আমার তো অফুরন্ত সময়।
আজহার সাহেবঃ তাহলে শুনো।
আজহার সাহেব গল্প বলা শুরু করলেন-
এক দম্পত্তির প্রথম সন্তান হিসেবে ছেলে জন্ম নিলো। ছেলের বাবা ছেলের মুখ দেখা মাত্রই বলে উঠলো আমার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে। যেই ভাবা সেই কাজ।
ছেলে বড় হতে থাকলো ছেলের উপর লেখাপড়ার চাপ বাড়াতে থাকলো।কিন্তু ছেলেটা ছিলো ভাবুক প্রকৃতির।
উপন্যাসের প্রতি তার ছোটোবেলা থেকে টান। ছেলে এসএসসি পাস করলো,এইচএসসি পাস করলো। রেজাল্ট ভালোই ছিলো।এরপর শুরু হলো এডমিশন এর প্রস্তুতি। ছেলে বাবা দেখলো কোচিং এ তার পরীক্ষার নাম্বার অনেক কম। ছেলের লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগ কম। হঠাৎ ছেলের বাবা দেখলেন ছেলে লুকিয়ে লুকিয়ে উপন্যাসের বই পড়ে।ছেলেকে জিজ্ঞেস করার পর জানতে পারে ছেলে সাহিত্যিক হতে চায়।ছেলের বাবা রাগে ছেলের সব উপন্যাসের বই আগুনে পুড়ে ফেলে।
এরপর সময় চাকা ঘুরতে থাকলো।
ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং এ চান্স পেলো,কিন্তু তার ছেলে কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেলো।
প্রথম,দ্বিতীয় সেমিস্টার ভালোই কাটলো।তৃতীয় সেমিস্টারে ছেলেটি দুই কোর্সে ফেইল করে।
ছেলের বাবা ছেলেকে অনেক বকাবকি করার পর বললোঃকাল তোমার জন্মদিন। নতুন করে সব শুরু করো।বি সিরিয়াস।
এনামুল হকঃ তারপর??নিশ্চয়ই পরে ভালো করেছে।
আজহার সাহেবঃপরের দিন একটি নোট পাওয়া গেল।ছেলেটির প্রথম সাহিত্য। সাহিত্যিক হতে চাওয়া ছেলেটি সুইসাইড নোটের চেয়ে বেশি কিছু লিখতে পারে নি।
আজহার সাহেব এবং এনামুল হক দুইজনই নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে।
এনামুল হকঃআচ্ছা তুমি এই ঘটনাটি যে বললে এটি কি সত্যি???
আজহার সাহেবঃআজ সেই ছেলেটির জন্মদিন এবং ছেলেটি আমার।

আজহার সাহেব উঠে দাঁড়ালেন এবং হাঁটতে হাঁটতে অন্ধকারে মিলিয়ে গেলেন।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ২৬০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৪/১১/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast