www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মজার ভ্রমন

এক

ভ্রমনের জন্য যে নতুন করে সময় করে নিবো, তা হয়ে উঠেনা। অতএব কাজের অজুহাতেই কর্মব্যস্ততার মধ্য থেকে ক্লান্তির অবসরে কিছুটা সময় যদি কাছেই কোন দরশনীয় স্থানে যাওয়া যায় তো মন্দ হয় না। আর তেমনি করে এবারের ভ্রমনটা ছিল ছোট বোনের অনার্স ভর্তি পরীক্ষার অজহাতে। ঐতিহ্যের নিদর্শন মন্ডিত দিনাজপুরের প্রকৃতি। হ্যা সেটা ছিল জানুয়ারীর দিকে। আমরা যাচ্ছি দু’বোন চাচার বাসায়। পরদিন শুক্রবার পরীক্ষা। সরকারি কলেজে পরীক্ষা শেষে ফিরে এলাম চাচার বাসায়। বিকেল বেলা আমরা ঘুরলাম, আমাদের সঙ্গে চাচাত ভাই মাহ্বুব। রামনগরের এক বিশাল বাগানে আমরা কিছুটা  সময় ব্যয় করলাম। বেশ ভালোলাগ ছিল বাগানে। প্রায় চাঁর টার দিকে চাচার বাসা থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলাম চাচাত বোনের বাসায় ৫নং নিউটাউন। আমাদের পেয়ে ওনারা সকলেই মহা খুশি। ছোট ভাগনে ভাগনি সহ আপুর ননদ এবং অন্য এক ননদের ছেলেকে নিয়ে তাদের ছিমছাম একটি সাজানো সংসার। দুলাভাই ও   বেশ মজার মানুষ অতএব ভালোই কাটছে অবসরের ভ্রমন বেলা।
পরদিন সকালে আপু বলল চল সবাই মিলে আমার বাবার বাড়ী থেকে ঘুরে আসি।আমি কিছুটা বির্বত বোধ করলাম কিন্তু পরক্ষনেই বললাম সেটা কতদুর আপু ?
এই তো কাঞ্চন ব্রীজের ওপারে। বেশি দুর হবে না ।তাছাড়া এখন নদীতে পানি নাই,আমরা ব্রিজে না গিয়ে অন্যপাশে খুব তাড়াতাড়ি যেতে পারবো। নদীর কথা শুনেই মন্টা নেচে উঠলো। তৎক্ষনাত রাজি হয়ে গেলাম।
পরদিন প্লান অনুযায়ী সকালের নাস্থা সেরেই বেরিয়ে পড়লাম। হাটছি আমরা লাভলি আপু ,তার দুই সন্তান,লাবিব ,তন্নি এবং আমরা দুবোন। আমরা হাটছি,হাটতে ভালোলাগছে বলেই রিস্কায় উঠলাম না। সেই যে মিশন রোডের সামনে দিয়ে হেটে হেটে লাইন পারে শশ্বানের কাছে গিয়ে পূর্ণভবা নদীর দেখা। নদীতে তেমন পানি নেই ।নদীর কুল বেয়ে চলছি মুক্ত হাওয়ায় উষ্ণ বালুর মধ্যখানে বয়ে চলা শান্ত জল স্রোত। ওপারে অবারিত সবুজ ফসলের মাঠ যেন এই সেই রূপসি বাংলার রূপছবি। প্রয়োজনের তাগিতে লোকালয়ের সাড়ায় তৈরি  করা  একটি ঘাট। এ ঘাটে নেমেই প্রায় হাটু পানি অতিক্রম করে ও পারে যেতে হবে। প্রস্তুতি নিয়ে নামলাম পানিতে। নদীর পানি হিম শীতল। আসে পাশে লোক জন ছিলনা বলেই রক্ষে। নদীর সচ্ছল পানির নিচের বালু দেখা যাচ্ছে। সত্যি চমৎকার অনুভূতি।আমরা যখন চাচার বাসায় পৌছালাম তখন প্রায় একটা বাজে। চাচার আরো তিন টি ছোট মেয়ে ছিল ওরা বরই মেখে খাচ্ছিল।আমাদের দেখে সে কি আনন্দ। নতুন করে বস্তি গড়ে উঠেছে। আর তাতে সব নিম্ন শ্রেনির লোকের বসবাস। আমি এখান কার পরিবেশ অনুধাবনে মনে মনে অবাক হলাম। চাচা একজন সমভ্রাম্ত পরিবারের ছেলে হয়ে এ পরিবেশে  কেমন করে নিজেকে খাপ খাওয়াচ্ছে ? তবু যাই হোক ভালোই আছে ওরা।বিস্তৃত জায়গায় অনেক গাছ গাছালি লাগিয়েছে। খোলা -মেলা উন্মুক্ত পরিবেশ। শহরের কোলাহল এখানে বাতাসে ভেসে আসে। কষ্ট হয় তবুও শহরের সুবিধা পেতে ওরা অনেকটা পথ অতিক্রম করে  চলে যায় শহরে। চাচি আম্মা আমাদের নাস্তা দিলেন। নাস্তা খেয়ে আমরা ঘুরছি,দেখছি এখার কার সব কিছু-এখানের সব গুলো ঘর বাসের বেড়ায় নির্মিত। সকলে অসহায় আর সুবিধা বঞ্চিত লোক কোন মতে মাথা গুজার ঠাই করে আছে। প্রায় সকলের আয়ের উৎস দিন মজুরি। সাইজি বলল ,আপু চল  আমাদের বস্তিতে একটি মেয়ের বিয়ে,আজ গায়ে হলুদ,নাচবে গাইবে। আমরা বললাম হ্যা চল..
যেতে যেতে সাইজি গল্প শুনালো, যে মেয়ের বিয়ে তার বাবা মা কেউ নেই। মা চলে গেছে অন্য এক লোকের সঙে,বাবা চলে গেছে অন্য এক মেয়ের সঙ্গে । তারা দুজনে দুটি নতুন ঘর পেয়েছে আর মাঝে এই মেয়েটা একা থাকে এই বস্তিতে । ছাউনি পাতার ছাওয়া আধভাঙা  একটি র্দুবল ঘর। মাঝে মধ্যে মা টা নাকি পয়সা পাঠায় তাই দিয়ে চলে যায় তার দিন। বিয়ের কদিন আগেই  মেয়েটার ঘর থেকে সন্ধারাতে এক লোককে বেরিয়ে যেতে দেখলেন বস্তির এক মহিলা। মহিলা ব্যাপার কিছু বুঝতে না পেরে কাছে গিয়ে বললেন-
সেফালী তোর ঘর থেকে কে বেরিয়ে গেল রে? তোর বাবা এসে ছিল ?
সেফালি তখন ঘরে বাতি জ্বালালো বলল কই নাতো কেউ আসে নাই ।
সে কিরে আমি যে নিজেই দেখলাম একটু আগেই বেরিয়ে গেল।তো এখন তো অনেক অন্ধকার , সন্ধায় ঘরে বাতি জ্বালাসনি ?
নাগো বেটি তেল ছিলনা ।
কিন্তু তুই কি ঘরে ছিলি ?
হা ঘরেই ছিলাম।এখন তেল নিয়ে আসলাম।
সে তো বুঝলাম তো লোক টা কে? এত বড় ডাংগর মেয়ের ঘরে কেন এসেছিল?
দেখ, আর একবার মিথ্যে কথা বলছো তো ?
সে কি মিছে কথা বলবো কেন? আমি যে নিজে দেখলাম। ক্ষেপে উঠলো সেফালি,,কয়েক ঘা বসিয়ে দিলেন মহিলা কে। বিয়ের পর নাকি সে মারের বিচার হবে  ।
আমরা বিয়ে বাড়িতে পৌছাতেই সেফালি আমাদের বসতে দিলো। ওর মা এসেছে,মেয়েটাকে দেখেই কেন যেন অন্য রকম মনে হল,আমরা বসলাম কিছুক্ষণ উনামুক্ত বারান্দায় বেন্চি দিয়েছে কেউ নেই লোকজন । বিয়ের কোন প্রমান নেই শুধু সেফালির পরনে বাসন্তি শাড়ী। চলে আসলাম আমরা সাইজি বলল চল আপু ও বাড়িতে যাই। হা গেলাম, ছোট দুটি ছাওনি পাতার ছাওয়া ঘর।

একি ! অপুরূপা একটি মেয়ে,বড় বোন কে সাজিয়ে দিচ্ছে মেয়েটা ।এমন সুন্দর মেয়ে যেন আগে কখনো দেখিনি আমি। নাক ,মুখ ,চোখ ,চুল,দেহের গড়ন যেন যতনে র্নিমিত এক সাক্ষাত প্রতিমা। বিধাতার আপন মহিমা যেন লুটিয়ে পড়েছে এখানে ,এই মাটিত।আহা ! ধন্য নয়ন এমন সৌন্দয্য দর্শনে।
নাম সুধালো আমার ছোট বোন।
অপরূপা মিষ্টি হেসে বলল আমি মায়া,আর আপুর নাম সাবিত্রী।চমকে উঠলাম দুজনে,হিন্দু ওরা।
হ্যা চলে যাচ্ছি আমরা কিন্তু সে সৌন্দয্য কিছুতেই সরাতে পারছিনা ।
হা থাক এমনি করে যেন ভুলিনা কোন দিন। তবু কোথায় যেন ছোট্ট একটা জীঞ্জাসা, কেন সে মুসলমান হলনা। অহেতুক সে জিঞ্চাসার কারন জানা নেই । আমরা চলে আসলাম ছায়া পুরির মায়া থেকে।যাবার পথে সেই নদীর তীর। তখন সন্ধা নেমেছে নদীর পানি আরো বেশি ঠান্ডা। নদীর তীরে অনেক লোক । বিকেলের শেষ আলোতে ঘুরতে এসেছে হয়তো? নদী পার হতে গিয়ে কিছুটা ভিজতে হল এবার। তীরে উঠে আমার চোখে পড়লো ছোট ছোট শামুক ঝিনুক ।তন্নিকে বলতেই সে লাফিয়ে উঠলো।কিছুক্ষণ ঝিনুক কুড়ালাম। তারপর চলে আসলাম আপুর বাসায়। তখন ক্লান্ত দেহ চায় বিশ্রাম।আহ্...!
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ৮৮৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৩/০৩/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • দ্বীপ সরকার ০৪/০৩/২০১৭
    ভালো /
  • ভ্রমণ করার চেয়েও ভ্রমণকাহীনি শুনতে বা পড়তে আমার ভীষন ভালো লাগে। তার মধ্যে যদি আবার লেখা হয়ে থাকে আপনার মত কোন নন্দিত লেখিকার সুনিপুন শব্দ চয়নের ছোঁয়ায় লেখা তবে সেটা শুধু আমারই নয় বরং আশা করি সব পাঠকেরই হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।।

    অঅশা করি ভালো থাকবেন এবং ভাল লিখবেন।
    অনেক-অেনক ধন্যবাদ।।
  • বানানের দিকে একটু খেয়াল রাখবেন। ধন্যবাদ।
 
Quantcast