www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

রাত পোহাবার আগে ৯

উপন্যাস
গত সপ্তাহের পরে..  

মাসুম মুক্তাকে কোলে টেনে নিয়ে ভাত খাইয়ে দেয়। মুক্তা আদর পেয়ে চুপটি মেরে থাকে। “হ্যাঁ ভাইয়া, এবার বলো।” মুন্নির কথাই মাসুম ফিরে যায় সেই গল্পের পেক্ষাপটে। “আমার সেই রাগি এমডি স্যারের একটা মেয়ে আছে। বড় জেদি আর এ রোখ, এক কথার মানুষ। যখন যা ইচ্ছে করে তখন তাই করে। এবার পরীক্ষা দিয়ে মনে করলো, চাকরী করবে। আর অমনি জানিয়ে দিলো তার বাবাকে। বাবা তো রেগে আগুন। কিন্তু তবু কিছু করার নেই।
তাই বুদ্ধি খাটিয়ে বললো, মারে, আমার অফিসে একটা উপযুক্ত লোক দরকার কিন্তু সমস্যা হলো, লোক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বলছি কি, তুই না হয় আপাতত আমার অফিসেই জয়েন্ট কর, পরে অন্য কোথাও চাকরী পেলে চলে যাবি। মেয়েটা রাজি হয়েছে। জয়েন্ট করার আগে স্যার আমাকে সব জানিয়ে বললো, আমি যেন তাকে একটু সময় দেয়। কারণ, তিনি নাকি আমাকে ছাড়া কাউকে এতোটা বিশ্বাস করেন না। মেয়েতো সবে তরণী। কি করতে কি করে বসে?কিন্তু সমস্যা হলো, যখন মেয়েটা এলো। আমাকে মেয়েটা মোটেও পছন্দ করছে না। আমাকে দেখলেই চেঁচিয়ে উঠছে। বার বার বলছে, আমি যেন আমার কাজ করি। তার সামনে অকারণে না যাই। স্যার তো অবাক! তিনি যা ভাবেন নি তাই দেখে..
ঃ বলিস কী ভাইয়া? তোকে পছন্দ করলো না মেয়েটা?
ঃ হ্যাঁ। আর্চয্য মেয়ে। যেমনি জেদী তেমনি সুন্দর। স্যার বলেছিলো, ওর নাকি নিজের প্রতি প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস।
ঃ তাই বলে তোমাকে বিটরে করে! মনে হচ্ছে মেয়েটা তোমাকে পছন্দ না করার পেছনে কোনো কারণ আছে?
ঃ আরে না। ওরা আদরে বেড়ে উঠেছে তো, তাই। অভাব জীবনের কঠিন রূপ দেখেনি। ঘোরের মধ্যে আছে, ঘোর কেটে গেলেই মানুষ হবে। সে যাক গে, ওসব আমাদের ভাবনা নয়। যারা মানুষকে মানুষ ভাবে না তারা পশুর চেয়েও অধম। আচ্ছা,এবার বাবার জন্য কি করা যায় বলতো?
মলিন হলো সকলের উজ্জ্বল মুখশ্রী। তাদের এভাবে থাকতে দেখে মাসুম জিজ্ঞেস করলো,“কীরে অমন করে থাকবি নাকি? আমি ভাবছি, একটা মিলাদ করে নিবো?”
ঃ হ্যাঁ ভাইয়া, তুমি যা ভালো মনে করো তাই করো।
চলে গেলো মাসুম মুক্তাকে নিয়ে। খুব খারাপ লাগছে তার। বলতে বলতে তিন তিনটা বছর পার হয়ে গেলো বাবা-মায়ের মৃত্যুর। অথচ এক সময় মনে হতো বাবা-মাকে ছাড়া তাদের চলবেই না। কি নির্মম সত্য যে, কতো সহজেই চলে যাচ্ছে তাদের দিন। বাবার মৃত্যুর পর কিছুটা সমস্যায় পড়েছিলো ওরা। কিন্তু তাৎক্ষনিক মাসুমের চাকরীটা হওয়ার সব সমস্যার সমাপ্তি হয়েছে। এখন ওরা সুখেই আছে। মাসুম ক’দিন থেকেই ভাবছে মুন্নির বিয়ের কথা। কিন্তু বিয়ের জন্য অনেক টাকার দরকার। দেশের যা অবস্থা। উপযুক্ত ছেলে পেতে হলে উপযুক্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করেই এগুতে হবে। মাসুমের কি সেই উপযুক্ত অবস্থান আছে? কি আছে তার। গ্রামে বাবার যে সামান্য সম্পত্তি ছিলো সে তো তাদের চিকিৎসাতেই চলে গেছে। আর ব্যাংকে তার বাবার নামে কিছু টাকা আছে তাতে কি পারবে মাসুম একটা উপযুক্ত ছেলের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে?
না না, এখনি তা হবার নয়। আর একটা সুনির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছানোর পর মাসুম পারবে তখন। পারতেই হবে তাকে। মমটাও বেড়ে উঠছে। তাদের দিকে লোলপ দৃষ্টিতে তাকায় এলাকার বাজে ছেলেগুলো। মাসুম জানলেও না জানার ভাব করেই চলতে হয় তাকে। কারণ, প্রতিবাদ করার মতো শক্তি বা সামর্থ কিছুই নেই তার। ঘরে দুই দুইটা যুবতী বোন। তাদের সঙ্গে প্রতিবাদ করা মানেই শত্রতা সৃষ্টি করা। সুতরাং যায় হোক, সয়ে যায় মাসুম। কষ্ট হয় তার সমাজের অযোগ্য মানুষগুলোর জন্য। কষ্ট হয় সেই সব পরিবারে জন্য যেখানে বেড়ে উঠেছে হাজারো মম-মুন্নি। যাদের চোখে স্বপ্ন বুকে ভীতি। আর অন্তরে আকাংক্ষা লুকানো যন্ত্রণা। মাসুম ভাবে, আমাদের সমাজ এতোটাই অভাবগ্রস্থ যে, অর্থসহ ভালোবাসা চায় এ সমাজের মানুষ। আচ্ছা, মাসুমও কী তা চায়?কেন চায় এ চাওয়া কি অন্যায় নয়,র্স্বাথপরতা নয়,নয় বিবেক বর্জিতা হীন পশুত্বের পরিচয়।একই জন্মে পুরুষ নারী তাহলে কেন, কেন এই না  না ,মনে পড়ে সেই নির্বাক প্রিয়ার শান্ত ছবি। যেখানে অজস্র ভালোবাসা যৌতুকের মতো হীনমন্ন্যতাকে হারিয়ে দিচ্ছে। মুক্ত হচ্ছে মাসুম কল্পলোকে অমানিশা থেকে। সে তার সবটাই উৎসর্গ করতে চায় হৃদয় দেবীর চরম মূলে। তাকে পেতে চায় সমস্ত সত্তায়।


চলবেই
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ৬০৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০১/১২/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast