www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক

রুদ্র হাঁপাতে- হাঁপাতে মনীষদের বাড়ির জানালার সামনে এসে দাঁড়ালো। মনীষদের বাড়ির জানালার পাশেই পিঁচে মোড়া সদ্য গজিয়ে ওঠা শহরটার নতুন ত্রিফলা ল্যাম্পপোস্ট। রাত্রের অন্ধকারে খাঁ- খাঁ করে চোখ ধাঁধাঁনো আলো। চারিপাশে বিস্তর নতুন আবাসন,কংক্রিটের রাস্তা, রাস্তার পাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ইট,বালি,খোয়া তার সাথে একটি আদিবাসী কুঁড়ে ঘর যা-কিছু দিন আগের গোটা এলাকার প্রধান বৈশিষ্ট বহন করে চলছিল। প্রখর আলোতে জানালার দিকে তাকিয়েই রুদ্রকে চিনতে পেরেছিল মনীষ, সেই ছোট্ট বেলাকার বাল্যবন্ধু বলে কথা। এক সাথে স্নান সেরে স্কুল- কলেজে যাতায়াত।তাছাড়াও রুদ্রকে কাছে থেকে চেনা বা জানার আরও একটি কারণ হলো ওর বোনকে খুবই পছন্দ করত মনীষ।তাই ওদের বাড়িতে যাতায়াতও ছিলো অবাধ।মনীষ এখন রাষ্ট্র বিজ্ঞানের প্রফেসর।নিজের এলাকাতে মনীষ ও রুদ্র ছিলো মেধাবী শিক্ষিত ছাত্র।মনীষ জানালাটা ধরে ভাবতে লাগলো সেই একগুঁয়ে প্রতিবাদী বন্ধুটির কথা যে স্কুলে ভর্তির ফিস বেশি করায় আমরণ অনশন করে শিক্ষককে ভর্তি ফিস কমাতে একপ্রকার বাধ্য করেছিল তার বাবার দেখানো পথে হেঁটে।আজ উস্কো-খুস্কো চুলে মনীষকে জানালার সামনে দেখে কেমন যেন অগোছালো লাগছিলো রুদ্রকে।নিজের পুরানো ভিটে জমিটুকু মনীষ বেঁচে দিয়েছে কিছুদিন পরে এখানেও তৈরি হবে আবাসন।তাই অনেকদিন ধরে শহরে যাবার ফলে ঘরদুয়ার অগোছালো।
মনীষ হঠাৎ করে রুদ্রকে ডেকে ওঠে, কি রে বন্ধু আজ অনেকদিন বাদে!
রুদ্র বলে ওঠে বন্ধু ভীষণ বিপদের সন্মুখিন হয়ে আজ এখানে। একগ্লাস জল হবে?এরপর হাঁপাতে থাকল রুদ্র।
নিশ্চয়! অবশ্যই হবে,আয় ঘরে আয় বোস আমি জল নিয়ে আসছি,এই বলে মনীষ জল আনতে গেল। মনীষ এক বোতল জল এনে রুদ্রকে দিল।রুদ্র বলে উঠলো বন্ধু তোর ফ্লাট বাড়ি ছেড়ে এখানে কেন?শহরের ওই বিলাসবহুল জীবন যাপন ছেড়ে স্মৃতি বিজরিত কুঁড়েঘরে কি করছিস তুই?আর এটা না তুই বিক্রি করে দিয়েছিলিস?
হ্যাঁ বন্ধু আগামীকাল ঘরটা ভেঙে ফেলবে আর শপিংমল তৈরী হবে। কয়েকটা জিনিস রাখাছিল তাই নিতে এসেছিলাম তারপর তো এসে কিছুই চিনতে পারছিলাম না, তোদের কুঁড়েঘরটা আজও দেখলাম সেই রকমই আছে। তুই ওটা বিক্রি করেদিসনি? ভালোই তো দাম দিচ্ছিলো!বলতে থাকল মনীষ।
পুঁজিবাদী সমাজ সাধারণ মানুষদেরকে ক্রিতদাসের সমতুল্য মনে করে। অর্থের সামনে সবাই বিকিয়ে গেলেও আমি আজও আমার মনুষত্ত্ব বিকিয়ে দেবো না।ওরা অর্থের বলে মন্ত্রীদের সমর্থনে প্রশাসনের সহায়তায় দু পায়ে মারিয়ে ফেলতে চায়ছে। এই অঞ্চলের একটা নিজস্ব সংস্কৃতি ছিল, মাদল,হারিয়া,ঝুমুর, নবান্ন কতই না চাষের জমি। সব আজ আধুনিক শপিংমলের পায়ের নিচে দমবন্ধ হয়ে আর্তনাদ করে চলছে।
ঝুমুরের কথা মনে পরে? আমাদের নরেন কাকুর মেয়ে।
আমার সাথে জমি না দেওয়ানোর দলে যোগ দিয়েছিল ওর সাথে আরও দেড়শো জন।একদিন মিছিল ডেকেছিলাম D.M অফিসে ধর্ণা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম রাত্রি বেলাতে টুকাই,বাবলু ওদের দলবল নিয়ে আমাদের উপর চড়াও হল।আমি পারিনি সেদিন ঝুমুরকে রক্ষা করতে, একটা নিষ্পাপ মেয়েকে রাত্রের অন্ধকারে তুলে নিয়ে গিয়ে ওর উপর পশুর মতো আচরণ করেছিল। পরদিন ওর লাশ পাওয়া গেলো আমাদের পুকুরের জলে। এইসব দেখে সবাই তো জলের দরে নিজেদের জমি ওদের হাতে তুলে দিল।আমি আন্দোলন করেছি তবুও। তারপর আমার বোনটাকেও একদিন তুলে নিয়ে গিয়ে রাত্রের অন্ধকারে ধর্ষণ করে কুপিয়ে খুন করল পুলিশ একবার দেখতে পর্যযন্ত আসলো না । আমার মা কে ঘরের ভিতর আগুন জ্বালিয়ে মেরে ফেলে দিল আর আমি হলাম মাওবাদী।
আর কী দেখি আজকাল এরা টিভি চ্যানেলে বসে মানুষকে বোঝায় গণতন্ত্রের মানে।আমি কখনই এই জমি দেবো না ওদের হাতে আমার শরীরের শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত।
মনীষ একটু বিচলিত হয়ে উঠে বলল বন্ধু পুলিশের গাড়ির আওয়াজ পেলাম। তুই পালা শিগগিরি। হ্যাঁ বন্ধু ওরা আমার আসার খবর পেয়ে গেছে উৎকন্ঠার স্বরে বলে উঠলো রুদ্র।
হ্যাঁ এবার যেতেই হবে, তবে প্রতিনিয়ত এই হাঁতুড়ি আর ছেনির আওয়াজ আর নিত্যনতুন গজিয়ে ওঠা এইসব আবাসন আমার হৃদয়টাকে যেন ক্ষত বিক্ষত করে তুলছে। আজও আমারা কয়েকজন এদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালাচ্ছি, কোটে কেস লড়ছি । এই অঞ্চলের আদিবাসী চাষিরা আজ সর্বহারা হয়ে অনাহারে বস্তিবাসী হয়ে আছে। বলতে- বলতে বিব্রত হয়ে উঠলো রুদ্র।
বন্ধু আমি চলে যাচ্ছি তবে তুই
ভালো থাকিস।
রুদ্র পিছনের দরজা দিয়ে ল্যম্প পোস্টটার কাছে যেতেই
একটা গুলি মাথার ভিতর এসে বিঁধল গণতন্ত্রকে এফোর -ওফোর করে । লুটিয়ে পরল কংক্রিটের রাস্তার উপর। "বিপ্লব দীর্ঘ জীবী হোক" শেষ কথা উচ্চারণের সাথে সাথেই পুঁজিবাদী শ্রেণীর বিরুদ্ধে স্বোচ্চার হওয়া সলতের শেষ শিখাটার সূর্যাস্ত ঘটল। এই বিপ্লবে হাঁতির জয় জেনেও পিঁপড়েরা লড়াই করেগেল। সমাজ থেকে এভাবেই বিলুপ্ত হবে ক্ষুধাতুর শ্রেণী সরকারের নতুন উন্নয়নের নতুন ধারায়।মনীষের মতো নপুংসক সমাজ আজও জানলা দিয়ে দেখে সমাজের কমরেড রুদ্রের হার না মানার লড়াই।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৫৬৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৭/১১/২০১৯

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • পরিতোষ ভৌমিক ২ ২৩/১১/২০১৯
    সবটা গল্প একশ্বাসে পড়লাম , মনে মনে বেশ কয়েকবার নিজেও বললাম, "বিপ্লব দীর্ঘ্যজীবি হউক" ।
    অসাধারন লিখেছেন বন্ধু ।
  • অসাম। সাড়া জাগানো লেখা।
  • ভালো।
  • নুর হোসেন ১৭/১১/২০১৯
    অসাধারন,
    বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক শিরোনামে অনুপেরিত।
 
Quantcast