www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

দাদা গো নাক ব্যাথা

মদন নাক নিয়ে বেজায় বিড়ম্বনায় ! কয়েকদিন হল মাটির দিকে তাকাতেই পারে না । কি যে করবে ভেবেই আকুল । সবাইকে কাজ দিয়েও শান্তি নেই । সামনেই কত বড় বড় সব মহান ব্রত । এ নাকের চিকিৎসা হয় না ! ফেসবুকের মহান মহান ঈশ্বররূপী মানব কুল বলেছেন , ‘ বুঝলে মদন নাক হল পরম সম্পদ , যত নাকে ব্যথা হবে ততই বুঝবে তোমার উন্নতি !” আর সেই থেকে এই কথাটাটাকে হরিনাম জপের মত মনে মনে সবসময় মেনে চলে ।
“ দাদা গল্পটা কী পেয়েছেন , অনেক দিন হল প্রাপ্তি সংবাদ পেলাম না ” লেখাটা ফেসবুকের ইনবক্সে টিং করে আসতেই নাক কুঁচকে উঠলো উঠলো ।
মনে গাল পেড়ে অস্পৃশ্য মড়া ছোঁয়ার মত করে ঝটপট লিখল, “ যথা সময়ে জানানো হবে ।”
মনে মনে বলল, ‘এরা কীভাবে ! সম্পাদকের কী শুধুই একটাই কাজ, যত্তসব !’
“ ঘড়ের খেয়ে বনের মোষ না তাড়িয়ে বাজারটা করে নিয়ে এস ,” বাবা পাশের ঘড় থেকে ডেকে উঠলেন ।
সেলিব্রেটি সেলিব্রেটি ভাব উধাও মদনের । ঝাঁটা পিটা করবে কাজটা না করলে ।
মদনের নানা চিন্তা । বাড়ীর লোকেরাও বোঝে না ! তবে এটা ঠিক পেটে ভাত গুঁজে বাপের ধনে পোদ্দারি করতে দিব্যি লাগে অনেক সময় ।
রাত দশটা । পাশের মোবাইলটা ঝন্‌ঝন্‌ করে কেঁপে উঠল । আর চোখে তাকিয়ে দেখল । সামনেই বাবা বসে । খাওয়ার টাইম । ওদিকে ফোনও মৃগী রুগীর মত বার বার কেঁপে উঠছে ।
“ আহা ফোনটা ধর !” মা বলে বসলেন ।
“ ও যত ভুল ভাল লেখা পাঠায় আর ছাপছেন কিনা তার জন্য চোদ্দবার ফোন ” আবার মদনের সম্পাদকীয় নাক ব্যথা শুরু হয়ে যায় ।
রাত বারোটা । আদর্শ সময় ফেসবুক জগতের । পত্রিকা নামক মন্দিরের প্রধান ওঝার সাথে বার্তালাপ করার মহান টাইম । মদন ফেসবুকের দরজায় নাড়া দিতেই সারিবদ্ধ লেখক- লেখিকাকুল থেকে প্রতিবাদশীল কবিরাও জেগে উঠলেন ।
মদন হাফচোখ বন্ধ করে বিশেষ বিশেষ ভক্তের আহ্বানে সদয় হল ।
“ দাদা ব্যস্ত ”
“ হুম ”
“ পত্রিকা কবে বেরোচ্ছে ”
“ জানানো হবে, পেইজ ফলো রেখো , এখন খুবই ব্যস্ত আছি ” কথাটা লিখেই টুক করে দেখে নিল অরিজিন্যাল প্রফাইলে গিরলফ্রেন্ড অন লাইন কিনা !
তারপর নিজের পত্রিকার পেজে ক’জন লাইক দিল । ‘ যা মাত্র ১৭০ টা ’ ।
এ ভাবেই যায় মদন সম্পাদকের দপ্তর । যত না আওয়াজ বাজে তার থেকে বেশী । ভাগ্যিস ফেসবুক, অয়াটস্যাপ ছিল । আর তাতে কবিসুলভ প্রোফাইল পিকচার দিয়েছে । না হলে লেখা তো দূর অস্ত পাড়ার নেড়ি কুত্তার দলও পাত্তা দিত না ।
দিন কয়েক পরে মদন স্নানে ঢুকেছে । টেবিলের এক কোণে ফোণের পিছনে একহাত লম্বা তার গোঁজা । সারা রাত পরিশ্রমের পর একটু দম নিচ্ছেন ফোন মহাশয় । ঠিক তখনই সেটি সুরেলা কণ্ঠে গেয়ে উঠলো ‘ লুঙ্গী ড্যান্স লুঙ্গী ড্যান্স ’।
মা কী করবেন ভেবে না পেয়ে কানে তুলে নিল ফোন , “ হ্যালো , দাদা আমি বলছি চিনতে পারলেন ।”
“ কে বলছ , আমি ওর মা বলছি ”
যথাসম্ভব মার্জিত গলায় অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসল , “ মাসিমা, দাদা তো খুবই ব্যস্ত মানুষ , একটু বলবেন সাহিত্যক রঞ্জন ফোন করেছিল ।”
এ হেন কাকিমাও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন ! মদন স্নান করে বেড়িয়ে আসতে আসতে বিস্ফারিত চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললে , “ কার ফোন !”
“ হ্যাঁ রে মদন তুই আবার কবের থেকে ব্যস্ত বিখ্যাত হলি ! গত বছরও তো গ্র্যাজুয়েটে ফেল করলি , বাংলা অনার্স তো কাটা গেল ”বলেই মুখ ঝামটা দিয়ে বেড়িয়ে গেলেন মা ।
সেই রাতে মদন স্ট্যাটাস দিল ‘ বিশেষ কারণ বশত “নাক উঁচু” পত্রিকা বেরোচ্ছে না ।।’
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৪৫৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৬/০৫/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast