www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

অমূল্য রতন ও তিন ভাই


এক বামুনের তিনটি ছেলে হয় । কিন্তু ভাগ্যের খেলায় ছেলে হওয়ার দু’দিন পরেই বামুন মারা যায় । মারা যাওয়ার আগের দিন রাতে বামুন বামনীকে বলেছিল , “ তোমার এই ছেলেরাই দেশ ও দশের মঙ্গল করবে ।”
তিন ছেলে তিন রকমের । বড়টির রয়েছে দুটি ডানা , মেজটির আছে বাঘের মত নখ আর ছোটটি মানুষের মতই । বরং ছোট অন্য ভাইদের তুলনায় অনেক দুর্বল ।

বছর যায় । ছেলেরা বড় হয়ে ওঠে । একদিন বামনী তিন ছেলেকে কাছে ডেকে বলে , “ বাছারা আমি মড়ার পর তোমরা কোনদিনও একে অপরকে ছেড়ে যেও না ; জানবে একতাই বল ।”
বড় ছেলেকে বলে , “ বাছা , তোমাদের বাবা এক ভিক্ষুকের মনে খুব আঘাত দিয়েছিল । তার আভিশাপেই তোমাদের এই শরীর হয়েছে । তবে জেনো , তোমার ডানার মাঝেই আছে এক দামী জিনিস । যা একদিন কাজে লাগবে ।”
সেবার আকাল । চারিদিকে হাহাকার । বড় ডানা মেলে উড়তে উড়তে নগরের কাছে এসে শোনে সেই নগরের ঘোষক ঘোষণা করছে –
“ শোন শোন সব ভাই বোন -
রাজা হারিয়েছে অমূল্য রতন ।
যে পারবে দিতে তার সন্ধান –
রাজা তারে কন্যা দিয়ে রাখবে মান ।”
রাতে বাড়ী ফিরে সব জানায় ভাইদের । তাদের আদরের ছোটভাই মানুষের মত দেখতে , তাই , তারা ঠিক করলে ছোটকেই রাজপ্রাসাদে গিয়ে বলতে যে সে-ই রাজার রতন ফিরিয়ে আনবে ।

রুগ্ন ভাই পরদিন প্রাসাদে এসে রাজাকে বলে –
“ রতন আনবো খুঁজে কল্য প্রভাতেই –
প্রজাদের খাজনা মুকুব করেন এ শর্তেই ।”
নিষ্ঠুর রাজা ভাবলেন সামান্য রুগ্ন ছেলে রাজকন্যার বদলে প্রজাদের খাজনা মুকুব করাতে চায় ! খানিক ভেবে রাজা বলে –“ বেশ তাই হবে ।”
ভাই বাড়ী ফিরে দাদাদের সাথে শলা করতে বসল । এমন সময় বড়র মনে পরে গেল তার মায়ের সেই কথা । সে মেজকে বলে , “ দেখ ভাই আমার পিঠে লাল মত কি ?” মেজ ভাল করে দেখে বলে , “ দাদা এ যে এক দামী পাথর ।”
বড়ভাই তখন ছোটর দিকে তাকিয়ে স্নেহের স্বরে বলে , “ ভাই এটাই সেই অমূল্য রতন । রাজার নিষ্ঠুরতায় মা লক্ষ্মীর রতন অনেক কাল ধরে আমার ডানার মাঝেই ধীরে ধীরে চলে আসে ।”
ছোট তখন অবাক হয়ে বলে “ এখন কী উপায় তবে ?”
ছোটর মাথায় হাত রেখে বলে , “ আমার ডানা দুটি তুমি কেটে ফেললেই এ রতন পাবে । তবে এর সাথে সাথেই আমার মৃত্যু ঘটবে ।”
এ কথা শুনে ছোট , মেজ খুব কাঁদলে । তাদের চোখ দিয়ে সারা রাত জল গড়ায় । সেই অশ্রুর জলেই এক স্বচ্ছ সরোবর তৈরী হয়েছিল তা নাকি আজও আছে ।

পরদিন তিন ভাই রাজার কাছে যায় । ছোটভাই বড়র নির্দেশ মত তলোয়ারের কোপে ডানা দুটি কেটে ফেলতেই রাজার অমূল্য রতন বেরিয়ে আসে । কিন্তু তাদের প্রিয় দাদা মুহূর্তেই মারা যায় । আজকাল কেই বা ভাইয়ের জন্য প্রাণ দেয় ?
রাজা তার রতন পেয়ে খুব খুশী । ছোট চোখ মুছে রাজার সেই শর্ত রাখার কথা মনে করিয়ে দেয় । শর্তের কথা শুনেই রাজা বলে ওঠে –
“ কী এত বড় তোর স্পর্ধা –
রাজার কাছে শর্তের কথা ।”
এ কথা শুনে দুই ভাই খুবই রেগে যায় । তারা যাচ্ছে না দেখে , রাজা নিজের তলোয়ার দিয়ে যেই না ছোটকে হত্যা করতে আসে , অমনি মেজভাই বাঘের মত তীক্ষ্ণ নখ দিয়ে রাজার বুক ফালাফালা করে ফেলে । রাজা ধড়ফড়িয়ে মারা যায় ।

নিষ্ঠুর রাজার মৃত্যুতে সকলেই খুশী । ছোটভাইকে সকলে রাজা নির্বাচন করে । লক্ষ্মীর আশীর্বাদে আবার শস্য-শ্যামলা হয়ে ওঠে রাজ্য । মেজভাই সেই রাজ্যের প্রধান রক্ষক হিসাবে থাকে । কোন শত্রুই দেশের ধারে ঘেঁষে না আর । রাজকন্যার সাথে বিবাহ করে সুখেই প্রজা পালন করতে থাকে ছোট ভাই । সারা দেশময় তিন ভাইয়ের মিল ও সেবার কথা আজও ঘরে ঘরে শোনানো হয় ।।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৫৩৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০১/০৫/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast