www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বন্ধুত্ব (তৃতীয় পর্ব)

তৃতীয় পর্ব

          অফিস থেকে ফেরার পথে অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটলো, যা আদির কোমল মনকে যতপরোনাস্তি নাড়া দিয়ে গেল। আদির বাড়ি ফেরার পথেই সায়ণদের বাড়ি। প্রতিদিনের মতো একবার উঁকি মারলো আদি। এক অদ্ভুত ঘটনা দেখতে পেল আদি। সায়ণের বাবা কখনো ছাদে ওঠেন না। উনার হাই প্রেসার। সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠলে হাঁপিয়ে পড়েন, তাই কখনো ছাদে ওঠেন না। আদি দেখলো সায়নের বাবা ছাদে পায়চারি করছেন। পরিস্কার বোঝা যাচ্ছিলো উনি খুব চিন্তিত। সাইকেলের গতি কিছুটা কমিয়ে আদি ভাবলো সায়নের বাড়িতে যাবে কিনা। গত প্রায় সাত বছর আদি সায়ণদের বাড়িতে যায়নি। ওর ভাই অনেক বার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করেছে, তথাপি আদির সেই গোঁ-ধরা। সায়নের ভাইকে বলেছে,
-যার জন্য তোমাদের সংগে সম্পর্ক,সেই যদি সম্পর্ক্য না রাখতে চায়,তবে আর কি করে তোমাদের বাড়ি যাই?
-কিন্তু দাদা আমি কি তোমার কেউ নই?
-দেখো ভাই তুমি আমার ভুল বুঝোনা। আসলে আমি তোমাদের বাড়ি যাবো কোন মুখে? আগে তো তোমার বাড়িতে পড়ে থাকতাম। এখন যাইনা কেন-তাতো তোমার বলে বোঝাতে হবেনা নিশ্চয়।
-মা কিন্তু তোমাকে বারবার যেতে বলেছেন।
-মাকে বুঝিয়ে বলো।
সায়নের আমন্ত্রণ প্রত্যেক বার ফিরিয়ে দিয়েছে আদি। একবার বাজারেই সায়নের মা'র সংগে আদির হঠাৎ করেই দেখা হয়ে যায়।
- কেমন আছো আদি?
-ভালো আছি কাকিমা। আপনি কেমন আছেন? কাকাবাবু?
-আমি ভালো আছি,তোমার কাকাবাবুও ভালো আছেন। কিন্তু তুমি কি সত্যিই ভালো আছো আদি?
আদি কি বলবে বুঝে ওঠার আগেই সায়নের মা বললেন,
-দেখো আদি তোমরা দু'জন দ'জনকে খুব ভালোবাসো সেটা আমি বেশ বালোভাবেই জানি। একটা মেয়ে তোমাদের এই বন্ধন ভাঙ্গতে পারেনা। ও ভালো মেয়ে নয়, তোমারা আবার নিজেদের ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নাও। আমি তো সায়ণকে অনেক বার বলেছি তোমাদের বাড়িতে যেতে। কিন্তু ওর জেদ তো তুমি জানো। তাই আমি বলছি তুমি একদিন আমাদের বাড়িতে এসো। আমি তোমাদের সব অভিমান ভেঙ্গে দেব।
- আছা কাকিমা যাব একদিন।
আদি তার কাকিমাকে যাবে বলেছিল ঠিকই কিন্তু ওটা ওর মুখের কথা। সে জানতো সায়ণের মতো তার জেদও কম নয়। সে আগে ওদের বাড়ি যাবেই না।

    এই সব ভাবতে ভাবতে আনমনে সাইকেল চালাচ্ছিল আদি। হঠাৎ ঘটলো সেই ঘটনা। ঘটনাটি আজও আদির মনকে নাড়া দিয়ে যায়। শিউরে ওঠে সারা শরীর। মনের গভীরে একটা দগদগে ক্ষত, যা কোনদিন শুকাবে না। এইখানে এলেই এখনো আদি সেই ঘটনাটা যেন দেখতে পাই।

        আদি যখন উপরের দিকে তাকিয়ে সায়ণের বাবাকে দেখছিল, তখন বিপরীত দিক থেকে একটি বাঁশ বোঝাই ভ্যান আসছিল। আর তার পেছন দিক থেকে দ্রুতগতিতে ছুটে আসছিল একটি যাত্রীবোঝায় বাস। সায়ণদের বাডির ঠিক উল্টোদিকে একটি রাস্তা সোজা গ্রামের দিকে ঢুকে পড়েছে। সেই রাস্তাতে ভ্যানটা টার্ণ নিল । বাঁশের ভ্যান, ভ্যানের পেছনের বাঁশ, পুরো যশোর রোডে আড়াআড়ি। কিন্তু ভ্যানের পেছনে যে দ্রুতগামী বাস ছিল তাকে ব্রেক কষে দাড় করানো সম্ভব ছিলনা। তাই বাসটা এমন ভাবে টার্ণ নিল যাতে কোন এক্সিডেন্ট না ঘটে। ভ্যান ওয়ালা যখন দেখলো পেছনের বাস প্রায় এসে পড়েছে, জীবন পন করে দিল টান আর বাসটি পাশের শিরিশ গাছের গা ঘেষে দ্রুত গতিতে বেরিয়ে গেল। এই ঘটনা মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ঘটে গেল। আদি যে কখন সাইকেল সোজা নামিয়ে দিয়েছে পাশের প্রায় শুকানো নয়ান জুলিতে তা খেয়ালই করেনি। সম্বিত ফিরলে সে দেখে , নিজে দাঁড়িয়ে আর পাশে পড়ে আছে তার সাইকেলটি।হাফ ছেড়ে বাঁচলো আদি। নিজের বুকে কয়েকটি কিল মেরে সাইকেলটি টেনে তুললো। রাস্তায় উঠেই আদির চক্ষু চড়কগাছ। ততক্ষণে সেখানে বাজারের অনেক মানুষজন জড়ো হয়ে গেছে। সে দেখলো রাস্তার উপড় গাছের গোড়ায় একটি হাত পড়ে আছে, ডান হাত, হাতের আঙুলে একটি সোনার আংটি। বুঝতে অসুবিধা হলনা কি ঘটেছে। কিন্তু তখন ঐ বাসটি নাগালের বাইরে চলে গেছে। সকলেই বুঝতে পারলো ঐ বাসে কোন এক ব্যক্তি হাত বাইরে ঝুলিয়ে রেখেছিল। গাছের গায়ে ঘেষে বাস বেরিয়ে গেল ঠিকই কিন্তু ঝুলে থাকা হাতটি কাটা পড়েছে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৯০০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০১/১১/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • এই কলকাতা শহরে সাইকেল চালিয়ে অফিস যাওয়া খুব বিপদজনক। গল্পটা খুব উত্তেজক মুহুর্তে আটকে আছে।
    • তপন দাস ০৩/১১/২০১৫
      একদম ঠিক বলেছেন দাদা। তবে গল্পটা কিন্তু একেবারে গ্রাম্য পরিবেশের পটভুমিতে।
  • কি ভয়ানক !! ওফ !! এরপরে কি ?
 
Quantcast