www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বাবার চোখের জল

একটা দড়িও তো জোটে না গলায়....! এমনই এক চাপাকান্নার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে ওঠা নিরুপায়, করুণ অবস্থাপন্ন, দুর্ভাগ্যবশত বাবার চোখের জল।
যে জল স্মৃতি হয়ে হৃদয়ে গঁাথা আছে ছেলের জন্মবেলায়। কোলে তুলে নিয়ে ছোট্ট ঋজুর গালে চুমু খেয়ে বাবা কান্নায় ভেঙে পড়েছিল পুত্রসন্তানের বাবা হয়ে, আনন্দে উৎফুল্লিত হয়ে।
জন্মকালে ঋজু হারিয়েছে মাকে! তাই তার একমাত্র সম্বল এই বাবাই। বাবার প্রানের ধন, চোখের মণি হয়েই সে বড় হয়েছে, জীবনকে সে উৎসর্গ করেছে বাবাকে। বাবার কঠোর পরিশ্্রম ও ঋজুর চাহিদা অনুযায়ী সে জীবনকে নিয়েছে বরণ করে সুন্দর এক খাতে। কিন্তু পড়াশোনার একঢালাও ছঁাচে সে জীবনকে ঢাললেও, পায়নি তার যোগ্য মর্যাদা...!
ঋজু বি.এ পাস করে চাকরির সন্ধানে আজ পঁাচ বছর ধরে ঘুরে চলেছে পথে-পথে ভবোঘুরের মত। শরীর তার গেছে ভেঙে, চোখে পড়েছে কালি,মাথার চুল তেলবিনা রুক্ষ, শরীরে ছাপ পড়েছে বৃদ্ধতার, পায়ে পড়েছে কড়া...! রোজই একটা ফাইল(যাতে রয়েছে তার জীবনভোর পড়াশোনার ডকুমেন্ট বা সার্টিফিকেট) হাতে করে সে বেড়িয়ে পড়ে চাকরির খঁোজে ।
"আশায় আশায় মরে চাষা"- এই প্রবাদটি যেন সত্যি হয়ে উঠেছে ঋজুর জীবনে! ....সত্যিই তো এতদূর পড়াশোনা করেও কী একটা চাকরি কপালে জুটবে না শেষপর্যন্ত...?
বাবা ঐ দিকে ভেঙে পড়েছেন মানসিক ও শারীরিকভাবে! কল্পনার রঙীন জালে বাবা রোজই স্বপ্ন দেখে- ছেলে পেয়েছে চাকরি, কিনেছে গাড়ি, বাড়ি... রয়েছে সুখে। কিন্তু কৈ?...এটা তো স্বপ্ন, বাস্তব নয়। রোজই সকালে ঋজু বের হয় চাকরির খঁোজে, আর বাড়ি ফেরে গভীর রাতে। ...হয়ত, চাকরি না পাওয়ার কথাটা বাবাকে প্রায়ই বলতে বলতে সে নিজের প্রতি চূড়ান্ত লজ্জাবোধ থেকেই গভীর রাতে বাড়ি ফেরে, যাতে বাবা ঘুমিয়ে পড়ে, আর প্রশ্ন করতে না পারে..!
কিন্তু বাবা রোজই জেগে থাকেন ছেলের প্রতীক্ষায়, চাকরির প্রতীক্ষায়।
পাড়ার প্রবীণ লোকেরা বলে, "ও তোমার ছেলের দ্বারা কিস্‌সু হবে না, ওকে এত স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে দিয়ে বড় করে তুলেছ যে ওর আর চাকরি করার প্রবৃত্তি নেই....।" ...সত্যিই কী তাই? বাবার মনে প্রশ্ন জাগে..? কিন্তু ছেলের প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস, একদিন সে চাকরি পাবেই, স্বপ্নরা একদিন সত্যি হবেই।
বাড়ি ফিরে গিয়ে বাবার কাছে প্রতিদিন চাকরি না পাওয়ার কথাটা বলতে বড়ই খারাপ লাগে ঋজুর। তাই সে হঠাৎ একদিন বেছে নিল মরণপথকে! আত্মহত্যার সহজ রাস্তাটাই তাকে পেয়ে বসল- এ সকল কিছু থেকে পালাবার সহজ উপায়...! কিন্তু সে একবারও ভেবে দেখল না বাবার কী হবে..? কে দেখবে বাবাকে? ...কে হবে তার বাবার শিবরাত্রির সল্‌তে, প্রানের ধন আর চোখের মণি...?
পরের দিন যথামত চাকরির খঁোজে বেরিয়েছে ঋজু, পথে পড়েছে প্রচুর নদী, রেললাইন এমনকি সাথে কিনে নিয়েছে বিষ! শত চেষ্টা করেও তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে অসহায় বাবার সে করুণ মুখ, আর বাবার চোখের জল..! তাই সে পারেনি আত্মহত্যা করতে, তার মনে প্রশ্ন জেগেছে,"আমি চলে গেলে বাবার কী হবে?
....তাই সে আজও চলেছে, ছুটে চলেছে চাকরির খঁোজে; না হয়ে দুর্বল, মনে রেখে বল্‌ আর বাবার চোখের জল- এরই বিনিময়ে....!!
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৫২১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১১/০১/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

 
Quantcast