www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

নাম বিভ্রাট

"তিন তের দিয়া বার, নয় দিয়া পূরণ কর;
এই আমার স্বামীর নাম, পার করে দাও বাড়ী যাই"!
    এটা কি কবিতা? না, এটা কবিতা নয়, শোলক। গ্রাম-বাংলার চিরায়ত গল্প-গাঁথা। তবে শুনুন,- বেশী দিন আগের কথা নয়, এই তো সেদিন।আমাদের মা, চাচী অথবা প্রতিবেশী যে কোন মহিলাগন মুরুব্বীদের নাম মুখে আনতেন না। তারা ভাবতেন মুরুব্বীদের নাম মুখে আনলে তাদের অসম্মান করা হয়। এমন কথা তারা বলবেন তো দুরে থাক কল্পনাও করতে সাহস পেতেন না। এখনো সমাজের কিছু কিছু পরিবার বা মহিলা দেখা যায়, তারা এ প্রথা ধরে রেখেছেন। স্বামীর নাম মুখে আনলে তাকে অপমানিত করা হবে এ তর্কে আমি যেতে চাই না, তবে প্রয়োজনে তাদের নামের ব্যবহার করা যাবে না এটা আমার বোধগম্য নয়। ধরুন আমার বাবার নাম ইছুব সেখ, আমার মা, চাচী এবং ভাবীগণেও সে নাম মুখে আনতেন না। জ্ঞান হওয়ার পর মাকে জিজ্ঞেস করে ছিলাম-‘মা ! আমার বাবার নাম কি?’ মা মুখে আচঁল টেনে লজ্জাবনতঃ হয়ে কোন উত্তর দিতে পারেনি। শুধু আস্তে করে বলেছিলেন,-‘স্বামীর নাম মুখে নিতে হয়না, তোর বাবাকেই জিজ্ঞেস করিস’। শুধু এটুকুন শেষ নয়, বাবার নামের সাথে কোন বস্তুর নামে মিল থাকলে সেটিও মুখে বলতেন না।
    তাহলে বলতে পারেন, সেই বস্তুর প্রয়োজন হলে কিভাবে প্রকাশ করতেন? যেমন ধরুণ, চিংড়ি মাছ কে না চেনেন? গ্রামবাংলায় (অঞ্চলভেদে) এটিকে ইছা মাছ নামে ডাকা হতো- সমস্যাটা এখানেই। মা, চাচী, ভাবী, ফুফু এরা কোনদিন এ সুস্বাদু মাছ টি কে তার সঠিক নামে ডাকতে শুনিনি। বলতেন, “শুংগা মাছ”। কারণ ইছু নামের সাথে ইছা কথাটির মিল আছে। আবার, কেউ কেউ বাবার নাম ইদু বলতেন, তাই এখানেও বিড়ম্বনা। এখানে ধর্মীয় উৎসব ঈদ এর নামের স্থলে “মাঠ”, “মাঠ পড়তে” বা “মাঠের দিন” বলতে হতো। ঈদগাহে নামাজ পড়ার জন্য যে বিশাল মাঠ ব্যবহৃত হতো সেইটি। এমনি গ্রামবাংলার প্রচলিত শব্দ গুলি মুরুব্বিদের সম্মানের স্বার্থে বিকল্প নামে ব্যবহার করা হতো।
এমনি আরো শব্দ পাওয়া যায়, যেমন-
    দিনু নামের সাথে দিন মিল থাকায় দিনের পরিবর্তে বেলা শব্দের ব্যবহার হতো। খুদি নামের সাথে খুদ (চালের ক্ষুদ্র কণা)মিল থাকায় এর পরিবর্তে ফ্যাস নামে ডাকতেন। এই নাম বিভ্রাটের জ্বালায় পড়ে মোহডাঙ্গা গ্রামের বেটার বউ কি ভাবে তা সমাধান করেছিলেন সেই কাহিনী দিয়েই শেষ করবো।
    মোহডাঙ্গার বউ বাপের বাড়ী কাপাসহাটিয়া গ্রামে নাইওর গিয়ে ছিলেন। একদা তার বাপের বাড়ীতে কারো মারফত খবর গেল যে, তার স্বামী খুব অসুখ। তাকে জরুরী শশুরবাড়ী ফিরতে হবে। শশুরবাড়ী যাওয়ার পথে ঝিনাই নদী, পার হতে হয় খেয়া নৌকা দিয়ে। সকাল বেলা খেয়াঘাটে অন্য যাত্রী না থাকায় মাঝিকে পার করতে বললেন। মাঝি বিপদে পড়লো যে, তাকে চিনেন না, কারো বউ পালিয়ে যায় নাকি! তাছাড়া বছর শেষে বাড়ী থেকে ধান নিয়ে আসতে হবে। স্বামীর নাম না বললে তাকে পার করবেন না, মোহডাঙ্গার বউকে সাফ জানিয়ে দিলেন। মহিলা বিপদে পড়ে গেলেন, তাকে জরুরী যেতেই হবে। মনে মনে ফঁন্দি আটলেন, এবং বললেন,-“তিন তের দিয়া বার, নয় দিয়া পূরণ কর; এই আমার স্বামীর নাম, পার করে দাও বাড়ী যাই”।
    মাঝি ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন এবং তাকে স্বসম্মানে নদী পার করে দিলেন। এবার বলুনতো, তার স্বামী নাম কি ছিল?
=*=
{3x13+12+9=60(Shaithal)}
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ১৩৩১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ৩০/১২/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • জে এস সাব্বির ৩১/১২/২০১৫
    গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে লালন করে এসব ঘটনা আর তার অসাধারণ বিবরণ পেয়ে ভাল লাগল ।ভাল থাকবেন ,আরো ভাল লিখবেন -সবসময়
  • এডিটিং এর প্রয়োজন আছে। তারুণ্যে স্বাগত।
 
Quantcast