www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বিয়েবাড়ির নিমন্ত্রণ

ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন চারপাশ। বাড়ি ফিরলাম। তখন ঘড়িতে এগারোটা বাজে। আমার বাড়ি থেকে একটু দূরে জোরে জোরে গান বাজছে সাউন্ড বক্সে। ভাবলাম ছেলেরা হয়তো শীতের আগমনী বার্তা পেয়েই পিকনিক আয়োজন করেছে। হাতমুখ ধুয়ে এসে খাওয়া দাওয়া সেরে বাইরে বসে কিছুক্ষণ ফেসবুকের নিউজ ফিডে ঘোরাঘুরি করলাম।

এদিকে ইনবক্সে জমা পড়ে গেছে অনেক বার্তা। কিন্তু ততক্ষণে চোখে ঘুম চলে এসেছে। ঠিকঠাকভাবে ঘুম না হলে শরীর খারাপ হবে। কিন্তু বকাবকি করার মত কেউ না থাকায় নিজের প্রতি অনেক সময় খেয়ালই থাকে না। শীত করছে প্রচুর। গায়ে একটা মোটা চাদর পেঁচিয়ে শুয়ে পড়লাম বিছানার উপর। হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে ঘরের বাতিটা নিভিয়ে দিলাম।

সবাই ঘুমিয়ে গেছে। আশেপাশের কোনো বাড়িতেই কোনো প্রকার সাড়া শব্দ নেই। কিন্তু দূরের পরের পল্লী থেকে ভেসে আসছে বামাস্বর। একটু মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগলাম। সেই স্বরগুলো আমার চিরচেনা। স্বরগুলো আমাদের অনেক পুরনো ঐতিহ্য। যা আমরা বিয়েবাড়ির গীত হিসেবে জানি। কালের পরিক্রমায় এই ঐতিহ্য সমূহের তেমন একটা প্রচলন নেই।

আগেকার বিয়েবাড়িতে অনেক আমোদ ফুর্তি করতে দেখেছি। বর্তমানে পাড়া প্রতিবেশী কারও বিয়ে হলেও সেদিকে খেয়াল রাখার সময় হয়না। এসব ভাবতে ভাবতে নিজের কথাই মনে পড়ে গেল। সময়টা বুঝি খুব কাছে চলে আসছে। নিমন্ত্রণের বিষয়টি নিয়ে কেউ চিন্তিত হবেন না। সময়ই সবকিছু বলে দেবে। গন্তব্য এখনও বহুদূরে, তবে বদলে যেতে পারি আমিও।

এই লেখাটা পড়ে অবিবাহিত পাঠকগণ অনুপ্রাণিত হলে আমাকে আমন্ত্রণ জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন, মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর ও ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছরের কম বয়সী কেউ নিমন্ত্রণ করলে সেটা গ্রহণ করবো না। বরং প্রশাসনকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। কেননা বাল্য বিবাহ আমাদের জন্য একটি বড় ধরনের অভিশাপ।

আমাদের অঞ্চলে বাল্য বিবাহ সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। এটি প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি এনজিও সংস্থা ও সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সচেতনতা মূলক প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। এই অল্প বয়সে ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়ার কারণেই নানান সমস্যার সৃষ্টি হয়। গর্ভপাত সহ প্রসব কালীন সময়ে প্রসূতি মা ও শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে অনেক বেশি।

আমি একটি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাজ করার সুবাধে একটি বিষয় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি। ডেলিভারি রোগিদের রক্তের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আর স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে রক্তদান করতে গেলে দেখা যায় তাদের ৮০/৮৫ ভাগই অপ্রাপ্তবয়স্ক। তারা সবাই রক্ত শূন্যতায় ভুগছে। একেকজনের জন্য ৪ থেকে ৫ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়ে থাকে। যার জোগান দেওয়াটাও দুষ্কর। এছাড়াও নানান সমস্যার সম্মুখীন হন তারা।

তাই অভিভাবক সহ সমাজের সকলকে আরও সচেতন হতে হবে। অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দিয়ে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বাল্য বিবাহ প্রতিরোধের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করে দেশকে আরও সমৃদ্ধশালী গড়ে তোলা সম্ভব।

আমার উদ্দেশ্য গল্প লেখা ছিল না। একভাবে শুরু করে অন্যখানে নিয়ে আসার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। যারা মূল্যবান সময় ব্যয় করে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন তাদের সকলেরই প্রতি রইলো ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

#nurnobifulkuri
12 November 2020
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৩১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৬/১০/২০২৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast