www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে এদেশে আর কত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হবে

বাংলাদেশ সাংবিধানিক ভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এদেশে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও এদেশে বসবাস করেন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান সহ নানান ধর্মের, নানান জাতি এবং বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। তাই ধর্মনিরপেক্ষতাই হলো রাষ্ট্রের মুল ধর্ম বা নীতি। ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ইসলাম বিরোধী নয়; বরং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সকল ধর্মের লোকজনই তাদের ধর্ম সঠিক ভাবে পালন করতে পারেন। এখানে রাষ্ট্র তথা সরকার সকল ধর্মের সমন্বয়ে সকল ধর্মের কল্যাণে কাজ করে থাকে।
আমরা একটু বহির্বিশ্বের দিকে তাকাতে পারি। যেমন আমেরিকা; যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলো খ্রীষ্টানরা। দেখুন সেদেশে কিন্তু মুসলমানরা সুন্দরভাবে ইসলাম ধর্মানুসারে জীবন-যাপন এবং ইবাদত করতে পারেন। অনুরুপ ভাবে শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও সেখানেও মুসলমানরা তাদের ব্যক্তিগত জীবনে ইসলাম ধর্মানুসারে ইবাদত করতে পারেন। এক্ষেত্রে ভারত অনেকটা পিছিয়ে আছে কারণ ভারত একটি দুর্নীতিগ্রস্থ এবং মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। যদিও তাদের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হলেও সেখানে মুসলিমদের উপর খুব অত্যাচার করা হয়।

অথচ আজ আমরা বাংলাদেশের মুসলমানরা চাই হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত যেনো প্রকৃতপক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ হয়৷ কেনোনা ভারত ধর্মনিরপেক্ষ হলে সেদেশের মুসলমানরা অত্যাচার, নিপীড়ন বা উগ্র মৌলবাদের শিকার হবেনা। এবার আসি বাংলাদেশ প্রসঙ্গে; মুলত এদেশে কিছু অসাধু ধর্মব্যবসায়ীরা মহা পবিত্র ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন অপব্যাখ্যা দিয়ে দেশে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে৷ মৌলবাদী, জঙ্গিবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এরা ইসলামের বহু ভুল ফতোয়া দিচ্ছেন নিজেদের ব্যক্তি ও রাজনৈতিক স্বার্থে। এরা আজ বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্যের বিরোধিতা করেছেন! কথা হলো ইসলাম ধর্ম তো প্রায় দেড় হাজার বছর আগে থেকে এই পৃথিবীতে রয়েছে। তাহলে যখন জিয়াউর রহমানের ভাষ্কর্য তৈরি করা হয়েছিল তখন এইসব ইমানদার দাবী করা মৌলভীরা কি ঘুমিয়ে ছিলেন? জিয়াউর রহমানের ভাষ্কর্য তৈরিকালীন সময়ে আপনাদের অবস্থান কি ছিলো তা জাতির নিকট স্পষ্ট করা আপনাদের ইমানী দায়িত্ব বলে মনে করি; যদি আপনারা সত্যিকারের ইমানদার হয়ে থাকেন। আপনাদের ফতোয়া কেবল জাতির জনকের ভাষ্কর্য নিয়ে কেনো? এটা কি রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করার এক ব্যর্থ অভিপ্রায় নয়কি? এরা ভাষ্কর্যকে ইস্যু করে ইসলাম ধর্মকে সুযোগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বর্তমান সরকার ও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। মুলত এইসব মৌলবাদীরা হলো সেই একাত্তরের পরাজিত শক্তি, রাজাকার ও জামায়াতের দোসর। নারী নেতৃত্বকে একসময় আপনারা হারাম বলে ফতোয়া দিয়ে প্রচার করেছেন পুরো দেশব্যাপী। আজ আপনারা যখন নারীর নেতৃত্বাধীন বিএনপির সঙ্গে জোট করলেন তখন বিভিন্ন খোড়া যুক্তি ও ভুল ফতোয়া দিয়ে নারী নেতৃত্বকে হালাল করেছেন। একই মঞ্চে নারীর সঙ্গে উঠে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি, জাতির জনক, তার কন্যা ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধাচারন করেছেন। আজ আপনারা যদি নারীর সঙ্গে ঐক্য না করতেন তাহলে নারী নেতৃত্ব হারাম এই প্রচারণা কি চালাতেন না? নিশ্চয়ই চালাতেন। তাহলে এখন নিশ্চুপ কেনো? কারণ হলো এতে আপনাদের আতে ঘা লাগবে, রাজনৈতিক স্বার্থ ভূলুন্ঠিত হবে। আর এসব কর্ম ও দ্বিচারিতা নিশ্চয়ই কোনো প্রকৃত মুসলমানের হতে পারেনা। এসব কর্ম অবশ্যই মুনাফিকদের। মহান আল্লাহ তাআলা দ্বীনকে তথা ইসলাম ধর্মকে পরিপূর্ণ করেছেন। কিন্তু এদেশে কি আপনারা ইসলাম ধর্মকে পরিপূর্ণ আনতে ব্যর্থ হয়েছেন? যদি ব্যর্থ হয়ে থাকেন, তাহলে তার দায়ভার কি আপনাদের নিতে হবেনা??

যারা ভাস্কর্যকে হারাম হারাম বলে চিলাচ্ছেন তারা তাদের ব্যক্তিগত জীবন কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক পরিপূর্ণ রুপে পরিচালনা করতে পারছেন কী? আপনাদের হুজুরদের তো পোস্টারে ছবি দেখা যায়, ইসলামে ছবি কি হারাম নয়? আপনারা আগে প্রচার করতেন জামায়াত ইসলামকে ভোট দেওয়া মানে জান্নাতের টিকেট হাতে পাওয়া৷ আর ভোট না দিলে জাহান্নামে চলে যাওয়া(নাউজুবিল্লাহ)! এই আপনারাই চাঁদে দেলোয়ার সাইদিকে দেখছেন, করোনাকালে গুজব রটনা করেছেন? আজ আপনারা জাতির জনকের ভাষ্কর্যের বিরুদ্ধে সরব; প্রশ্ন হলো এতিমখানায় যখন শিশু বলাৎকার হলো তখন আপনারা নিরব ছিলেন কেনো? ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নারীকে ধর্ষণ করাকে জায়েজ বলে কারা ফতোয়া দিয়েছিলো? ইসলামের অপব্যখ্যা করে হিল্লা বিয়ের প্রচলন কারা করেছিলো? আপনারা(মৌলভীরা)। অথচ মহা পবিত্র ইসলাম ধর্মে এসব হারাম। সারাদেশের বহু মাজারে দেদারছে ধর্ম ব্যবসা চলছে, ইসলাম বিরোধী কাজ চলছে, আপনারা আলেম সমাজকে তো কখনও দেখলাম না এইসব মাজার পূজারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে।
এদেশে বহু পতিতাপল্লি রয়েছে, যা ইসলামে সম্পূর্ণ রুপে হারাম। কই আপনাদের তো কখনও দেখিনি এইসব পাপাচারের স্থান পতিতালয় বন্ধ করে অসহায় পতিতাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর জন্য কখনও সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে। ইসলামে নেশা জাতিয় দ্রব্য যেমন বিড়ি, সিগারেট হারাম, কখনও শুনলাম যে আপনারা কোনো বিড়ি সিগারেটের দোকানের বিরুদ্ধে গিয়েছেন। বরং এই আপনারাই সেই বিড়ি, সিগারেটের দোকানে বসে আরামছে চা ও জর্দ্দা-তামাক দিয়ে পান খাচ্ছেন!! আরব দেশ সৌদী আরব থেকে আমাদের বহু মা-বোনেরা যৌন নিপিড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়ে কেউবা লাশ হয়ে আবার কেউ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে জিন্দালাশ হয়ে দেশে ফিরেছেন! আপনাদের তো কখনও এর বিপক্ষে কথা বলতে, আন্দোলন করতে বা সৌদি দূতাবাস ঘেরাও করতে দেখেনি। আজ যখন আমরা সাধারণ জণগন বলছি যে ভাষ্কর্য আরব দেশেও আছে, আপনারা বলছেন "এটা হারাম, আরব দেশে থাকলে তো আর এটা হালাল হতে পারেনা"। কিন্তু যৌন নিপিড়ন ও হত্যা ও হারাম, যা সৌদি আরব করেছে, আপনারা তখন কুরআন ও হাদীসের আলোকে যুক্তি তুলে ধরে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে আন্দোলন কেনো করেননি? আজ যদি ভারত থেকে আমাদের শতশত মা-বোন ইজ্জত হারিয়ে লাশ হয়ে দেশে ফিরতেন তাহলে আপনারা কি নিশ্চুপ থাকতেন? দেখুন মহা পবিত্র ইসলাম ধর্মে কোনো দৈত্ব নীতি নেই। আজ আপনাদের হুঙ্কার দেখলে মনে হয় ইসলাম শুধুমাত্র ভাষ্কর্যকে হারাম করেছে; তাও আবার বঙ্গবন্ধুর ও কিছু কবি-সাহিত্যিকের, লালনের। কারণ জিয়াউর রহমানের ভাষ্কর্য যখন তৈরি করা হয়েছিল তখন আপনারা কোথায় ছিলেন, আন্দোলন কেনো করেননি, কেনো তখন আপনারা ভাষ্কর্যকে হারাম বলেননি? আজ জাতির জনকের ভাষ্কর্য ভাঙার জন্য কেনো ইন্ধন দেওয়া হচ্ছে? ইসলামে অন্যসব ভাষ্কর্য কি জায়েজ আছে? জাতির জনকের ভাষ্কর্য আপনারা ভেঙেছেন; জিয়াউর রহমানের ভাষ্কর্য অক্ষত কেনো তা জাতি কি জানতে পারে? যদিও সাধারণ জণগণ, রাষ্ট্র ও বর্তমান সরকার কারো ভাষ্কর্য ভাঙ্গার পক্ষে নয়। রাষ্ট্রে সকল দল, মত নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকার ও সম্মান রয়েছে। তাছাড়া ভাষ্কর্যের মাধ্যমে ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রখ্যাত ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের অনেক কিছু, জানার আছে, শেখার আছে। পাকিস্তান, তুরস্ক ও ইরানসহ আরব দেশসমূহ এর বাইরে নয়। সেদেশে কি প্রকৃত আলেম ও তৌহিদী জনতা নেই? প্রকৃত আলেম কি শুুধু আমাদের বাংলাদেশেই আছে?

হয়রত আলী(রাদিঃ) হতে বর্নিত নবী করিম(সাঃ) বলেছেনঃ- "আমি অচিরেই লোকদের উপর এমন একটি সময় আসার আশঙ্কা করছি যখন কেবলমাত্র নাম ছাড়া ইসলামের আর কিছুই থাকবেনা এবং কুরআনের লিখিত রুপটি ছাড়া তার বাস্তবায়ন থাকবেনা। মসজিদগুলো চাকচিক্যে ভরপুর হলেও হিদায়াত থেকে বঞ্চিত হবে। ঐ সময়কার আলেমরা হবে আসমানের নিচে বিচরণকারী সর্ব নিকৃষ্ট জীব। তাদের থেকেই বিভিন্ন ফিৎনা ছড়াবে এবং তারা নিজেরাও সেই ফিৎনায় আবর্তিত হবে।"(সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
বাস্তবে পবিত্র সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফের অত্র হাদিস দ্বারা দেখা যাচ্ছে আলেমগণই বর্তমান সময় বিভিন্ন ফিৎনা-ফ্যাসাদ তৈরি করছেন। ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। অথচ মহা পবিত্র ইসলাম ধর্মে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও জঘন্য। সম্প্রতি লালমনিরহাটের পাটগ্রামে ধর্মীয় অবমাননার গুজব ছড়িয়ে মিথ্যা অভিযোগে শহীদুন্নবী জুয়েল নামক একজন নিরাপরাধী ব্যক্তিকে মসজিদের মুয়াজ্জিন, খাদেমসহ কথিত তৌহিদী জনতা অন্যায় ভাবে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। অথচ মহা পবিত্র ইসলাম ধর্মে হত্যা করাতো মহাপাপই বটে বরং আগুনে পোড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ তথা হারাম। আপনাদের এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে আপনারা সাধারণ মানুষকে নাস্তিক, মুরতাদ ও কাফির বলে দাবিয়ে রেখে ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে অপকর্ম চালিয়ে যান ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে। তাহলে আপনারা কি মুনাফিক ও ইসলামের শত্রু নন? তাছাড়া যাচাই-বাছাই না করে যে কেউকে নাস্তিক, মুরতাদ, কাফির বলে আখ্যা দেওয়া কি ইসলামে জায়েজ আছে? এদেশে আরো কত ইসলাম বিরোধী হারাম কাজ চলছে। অথচ এইসব হারাম কাজকে নিয়ে আমাদের দেশের আলেম সমাজকে সেরকম প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি, তারা কেবল ইসলামের আইন-কানুন বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের উপর চাপিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ব্যর্থ পায়তারা চালাচ্ছে, ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। কিন্তু পরাজিত শক্তিদের বোঝা উচিত তারা মিথ্যা ও ভুলের পথে তাই এদেশের মুক্তিকামী মানুষের সঙ্গে, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির সঙ্গে তারা পারবেনা, তারা ১৯৭১ সালের মত আবারও পরাজিত হবেই হবে ইনশাআল্লাহ।

শিশুপুত্র রাসেল ও বঙ্গবন্ধু সহ(শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ব্যতীত) তার পরিবারের সকল সদস্যদের যখন ১৯৭৫ সালে অন্যায় ভাবে হত্যা করা হয়েছিল, তখন আপনারা কোথায় ছিলেন, কোথায় ছিলো আপনাদের ফতোয়া, কোথায় ছিলো এই অন্যায় তথা পাপের বিরুদ্ধে আপনাদের আন্দোলন ও হুঙ্কার? বরং আপনারা অনেক মৌলভী খুঁশি হয়েছিলেন। আজ যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মা-বাবা, ভাই-বোন হারা অসহায় শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে সেইসব কুলাঙ্গার খুনীদের ফাঁসি দিচ্ছেন তখন আপনাদের খুব ব্যথা লাগে! ওরা যারা যুদ্ধাপরাধী ৭১ সনে হত্যা, ধর্ষণ অগ্নি সংযোগের মত ভয়াবহ মানবতারিরোধী অন্যায় ও পাপাচার করেছিলো আপনাদের ফতোয়া তখন কোথায় ছিলো? বরং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ট্রাইবুনাল গঠন করে রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন অনুযায়ী পাপীদের বিচারের ব্যবস্থা করলেন; তখন আপনারা তৌহিদী জনতা এই পাপীদের পক্ষ নিয়ে রাস্তায় নেমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন, যা ইসলাম পরিপন্থী। একসময় এই আপনারাই ছবি তোলাকে হারাম বলে ফতোয়া দিছেন, অথচ আজ আপনাদের কতই ছবি দেখা যাচ্ছে। আপনারা কুসংস্কারও এইদেশে ছড়িয়েছেন, অথচ ইসলামে কুসংস্কার শিরক ও চরম গুনাহের কাজ৷ টেলিভিশন কে আপনারাই হারাম বলে আখ্যা দিয়েছিলেন অথচ আজ আপনারা ও আপনাদের পরিবার কিন্তু টেলিভিশন দেখছেন। একসময় আপনারা রেললাইন স্থাপন করাকে হারাম বলেছেন কারণ মাটির উপর থেকে রেল(ট্রেন) চললে নাকি মাটিতে ব্যথা পায় এই ফতোয়া দিয়ে! অথচ আজ আপনারা কিন্তু আরামছে ট্রেনে যাতায়াত করছেন।

ইসলামকে ব্যবহার করে আপনারা স্বাধীনতার মহান স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ও তার পরিবারকে সেই ৭১ সন হতে আজ অব্দি দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আপনারা সফল হতে পেরেছেন কি? ইসলামের কল্যাণে বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে যা করেছেন, আপনারা তাকি করতে পেরেছেন? পারেননি; বরং আপনারা ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সাধারণ মানুষের নিকট ইসলামকে জঙ্গিবাদী বানিয়েছেন আপনাদের স্বার্থে। আপনারা ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে এদেশের নতুন প্রজন্মকে গোমরা ও ধর্মান্ধ করে রেখেছেন!! কারণ আপনারা ইসলামের শত্রু। ২০০৪ সালের ২১ শে অগাস্ট যখন মুফতি হান্নানসহ তার দলবল শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য গ্রেনেড হামলা করে বহু মানুষকে হত্যা করে, তখন আপনারা কোথায় ছিলেন, কেনো কথা বলেননি এই অন্যায়, পাপাচার ও হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে? আলেম সমাজ তখন কোথায় ছিলো? নিরীহ, অসহায়, এতিম, আহত(অসুস্থ) শেখ হাসিনাকে যখন কোনো হাসপাতাল চিকিৎসা করায়নি, তখন আপনাদের আহত, অসহায়, এতিম শেখ হাসিনার জন্য কি একটুও মায়া লাগেনি? তখন আপনাদের ইমানী দায়িত্ব কোথায় ছিলো? দেখুন মহান আল্লাহ তাআলা আজ ঠিকই সেই অসহায় শেখ হাসিনাকে এই দেশের রাজত্ব দিয়েছেন। কারণ রাজত্ব দেওয়ার একমাত্র মালিক মহান আল্লাহ তাআলাই; তাতে আপনারা যতই ষড়যন্ত্র করুন না কেনো। তাছাড়া মুফতি হান্নান তো আপনাদেরই লোক। তাই ২১ শে অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় আপনারা খুঁশি হয়েছিলেন। অথচ মহা পবিত্র ইসলাম ধর্ম হত্যা ও হত্যার রাজনীতি কখনও সমর্থন করেনা। যা আপনারা সমর্থন করেন, কারণ মুনাফিকদের ক্ষমতার লোভ থাকবে এটা স্বাভাবিক; যেমন ক্ষমতার লোভ ছিলো ইয়াজিদের। অথচ এরা ইসলামের চরম শত্রু মুনাফিক। আর নিশ্চয়ই মুনাফিকদের স্থান জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে ভাষ্কর্য বিরোধীরা কি অশালীন ব্যবহার করছে, তাকি আপনারা দেখছেন? এরা অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ ও হত্যার হুমকী দিচ্ছে আপনাদের পক্ষ নিয়ে। অথচ ইসলামে গালি-গালাজ হারাম। যদি এরা আপনাদের সত্যিকারের ইমানদার অনুসারী না হয়, এবং গালি-গালাজ যদি হারাম হয় তাহলে আপনারা আলেম সমাজ কেনো তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন না, কেনো এদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন না? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণ হলে আপনারা আন্দোলন করে পুরো দেশ অচল করে দেন, কিন্তু মাদ্রাসা বা এতিমখানায় ছেলে শিশু বলাৎকার (যা সমকামীতা ও ধর্ষণ) হলে আপনাদের আন্দোলন তো দূরে থাক বরং এর বিরুদ্ধে কথাও বলতে দেখছিনা কেনো? এভাবে ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে এদেশে কালে কালে বহু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে মৌলবাদী শক্তিরা। এদের বেশভূষা আলেমদের মত হলেও মুলত এরা মুনাফিক। এরা ধর্মকে ব্যবহার করছে। অথচ আজ আমাদের রাষ্ট্র এদের বিরুদ্ধে কতটুকু সোচ্চার? সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এদের বিরুদ্ধে কিছু করতে পেরেছেন কি? এদের বিরুদ্ধে সংস্কৃতি কর্মিদের ও ভূমিকা কি? গণমাধ্যম ও কতটুকু এদের বিরুদ্ধে অবস্থান করতে পেরেছেন? আমরা লেখকরাই বা কি করছি এদের বিরুদ্ধে? এসব প্রশ্ন রাখাটা অস্বাভাবিক নয়। সময় এসেছে এইসব মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করে এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এদের মূলোৎপাটন করা।

মোদ্দাকথা হলো আমাদের এই মুসলিম অধ্যূষিত সুন্দর বাংলাদেশে তো অবশ্যই অনেক প্রকৃত হক্কানি আলেম রয়েছেন। সম্মানিত প্রকৃত আলেম সমাজকে অনুরোধ করছি আপনারা দয়া করে এইসব মৌলবাদী, ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন, এদেরকে আপনারা রুখে দিন। নিশ্চয়ই বর্তমান সরকার অতীতের ন্যায় সর্বদাই আপনাদের তথা প্রকৃত আলেমদের পাশে থাকবে। আপনারা ঐক্যবদ্ধ হউন এবং মুনাফিকদের মুঁখোশ উন্মোচন করুন। প্রকৃত আলেম সমাজই এদেশের মানুষকে আলো দেখাবে সেটাই প্রত্যাশা করে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায় যারা জিয়াউর রহমানের ভাষ্কর্য নিয়ে নিরব ছিলেন এবং জাতির জনকের ভাষ্কর্যের বিরোধিতা করছেন, তাদেরকে কি করে প্রকৃত আলেম বলি? বরং এরা মুনাফিক এবং ইসলামের শত্রু। যারা শিশু বলাৎকার করে এবং তথাকথিত আলেমসমাজ এহেন জঘন্য ঘৃন্য পাপ দেখেও চুপ করে থাকে, তাদেরকে প্রকৃত আলেম বললে নিশ্চয়ই মস্তবড় ভুল, অন্যায় ও পাপতো হবেই বটে। রাষ্ট্র আলেম বিরোধী নয়, বরং রাষ্ট্র হলো মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ এবং মুনাফিক বিরোধী। মনে রাখতে হবে মুনাফিকরাই হলো ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু। এদের লেবাস মুমিনদের মত হলেও মুলত এরা কাজে কর্মে পাপী, ধর্মব্যবসায়ী, সুযোগবাদী, মৌলবাদী, জঙ্গিবাদী ও মুনাফিক।

মুলত মহা পবিত্র ইসলাম ধর্মের বিধিনিষেধ সকলের জন্য সমান। কিন্তু একে মুসলমান নামধারী কিছু মুনাফিক বিভিন্ন ভাবে সুযোগ বুঝে ব্যক্তি ও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রয়োগ করে থাকে, যা রাষ্ট্র ও ইসলাম বিরোধী। এবং এইসব মুনাফিকরা হলো খুবই নিকৃষ্ট। এরা এই জাতির ভিতরে মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তি ঢুকিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল দেশে পরিণত করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। এরা মুলত মহাপবিত্র ইসলাম ধর্মকে সুযোগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে নির্দিষ্ট ব্যক্তিস্বার্থ ও রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য। অথচ এদেশের সচেতন মুক্তিকামী জনতা আপনাদের উদ্দেশ্য বুঝে গিয়েছে। আপনারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে পাড় পাবেন না। আপনাদের শাস্তি ও ধ্বংস হবেই হবে ইনশাআল্লাহ। এবং বাংলাদেশ হবে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ মুক্ত শান্তুির ও স্বাধীনতার এক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। যেখানে সকলের সমান অধিকার ও সুবিধা থাকবে। এবং এইদেশে ইসলামের কেউ ভুল ব্যাখ্যা দিতে পারবে না বরং সকল মানুষের নিকট কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী ইসলামের সত্যিকার শাশ্বত বাণী পৌঁছে যাবে ও সকল ধর্মব্যবসায়ীদের মূলোৎপাটন হবে বলে- প্রত্যাশা করি।।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৩৮২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০১/০১/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast