www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

উপন্যাস

কিরণবাবুর অনেকদিনের ইচ্ছে তার স্বরচিত উপন্যাসটি ছাপা অক্ষরে প্রকাশিত হোক। কিন্তু পোস্ট অফিসের পিওন কিরণবাবু অর্থাৎ কিরণময় ঘোষের গাঁটের জোর না থাকায় তা আর সম্ভবপর হয়ে ওঠে নি। যখনই তিনি তার উপন্যাসের জন্য কিছু টাকা জমান কোনো না কোনো কারনে তা ঠিক বেরিয়ে যায়। এদিকে ইচ্ছে প্রবল। অগত্যা তিনি প্রকাশকদের দরজায় দরজায় ঘোরা শুরু করলেন।
প্রথমবার যে প্রকাশকের কাছে গেলেন তিনি পাণ্ডুলিপি পড়ে বললেন - 'এসব কি লিখেছেন! না না এ লেখা আমি ছাপতে পারব না। আপনি অন্য কোথাও দেখুন'।
দ্বিতীয়বার তাকে শুনতে হলো - 'আপনার এ লেখা যদি আমি ছাপি আমার পুরোপুরি লস'।
তৃতীয়বার - 'লিখতে জানেন আদৌ! আগে শিখুন তারপর লিখবেন। যত্তসব পাগল-ছাগল'।
ভেঙে পড়লেন কিরণবাবু। যতটা সম্ভব সংশোধন করে গেলেন চতুর্থ প্রকাশকের কাছে। মনে মনে ঠিক করে নিলেন যদি ইনিও প্রকাশ করতে রাজি না হন তবে পাড়ার চপের দোকানে পাণ্ডুলিপি দিয়ে দেবেন। চপ ক্রেতারা ঠোঙাটা ফেলার আগে যদি পড়ে তার লেখা, তাহলেও তিনি সার্থক।
না, চপের দোকানে তাকে পাণ্ডুলিপি দিতে হয়নি। প্রকাশক তার পান্ডুলিপি নেন এবং সময়মতো প্রকাশও করেন।
আজ কিরণময় ঘোষকে সাহিত্যজগতে চেনেন না এমন কেউ নেই। তার নাম ছড়িয়ে পড়েছে দিক-দিগন্তে। কিরণবাবুর আলোর ছটায় চারিদিক কিরণময়, প্রানবন্ত, উদ্ভাসিত। তবে ক্যান্সারে আক্রান্ত কিরণবাবু দেখে যেতে পারেননি তার সাফল্য।

আজ বসন্তের কচি কিরন যেন অনন্তের উপন্যাস এঁকে চলেছে মাটির ভিতরে। কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো টুপটাপ ঝরে পড়েছে সমাধির উপর। আজ অনেক কান্না; তবুও একটা কান্নাহীন প্রশান্তি ঘুমিয়ে আছে অনন্ত আগুনপলাশের মৃত্যুহীন চাদর জড়িয়ে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮০৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৭/১২/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast