www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ি নয় (পর্ব-১)

১.
বাড়ির মাজে অসংখ্য ভীর জমে আছে।নানা ধরণের মানুষ প্রিয় অপ্রিয় সবাই এসেছে।শেষ সময়টায় সবাই ই হয়তো আসে দুচোখ ভরে পরিনতি দেখতে।ইতিমধ্যে থানার লোকজন ও চলে এসেছে।থানার এসপি রমজান আলি লোকজনের ভীর ভাট্টা ভেদ করে ঢুকে গেলেন বাড়ির ভেতরে।
দুটি মৃত চোখ তাকিয়ে আছে তার দিকে।সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে একটি দেহ।হাতটাও কাঁটা!মৃত্যুর আগে নিশ্চই ব্লেড দিয়ে হাত কাঁটা হয়েছে।হাতের মাজে কিছুটা রক্ত লেগে আছে।পুরোটা রুমের দেয়াল জুরে লেখা আছে অনেক গুলো কবিতা।সেখানে চোখ বুলাতে বুলাতে একটি কবিতা রমজান আলি পড়তে লাগলেন,
‘‘মুক্তি দাঁও গো তোমরা এভার আমাকে মুক্তি দাঁও
এই যে শোনো সুশীল সমাজ আমাকে বাঁচতে দাঁও
পুড়ছি দেখো রোজই কত; আর কি পারাজায়
সভ্য নগর আর কত গো!মারছ কেনো আমায়’’
কবিতাটা পড়েই গাঁ কেমন শিউরে উঠে রমজান আলির।যেন তার চোখের সামনে কঠিন যন্ত্রণা নিয়ে খুন হচ্ছে কেউ।
‘স্যার!লাসটা নামাতে বলবো?’ পেছন থেকে বলে উঠলো কনস্টেবল রহীম।
‘হ্যাঁ।লাশটা নামিয়ে পোস্টমোডাম এর জন্য পাটিয়ে দাও।আর বাড়ির লোক দের থানায় আসতে বলো।’
‘স্যার,বাড়ির লোক সবাই কান্নাকাটি করতাসে।এই সময় থানায় ডাকা কি ঠিক অইব?’
‘ঠিকাছে, তাহলে পোসমোডাম রিপোর্টটা পাটিয়ে দিয়।আর এই পুরো রুম টাকে সিল করে দাঁও।’
‘আচ্ছা স্যার।’
২.
রমজান আলী ছাদের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছেন।রহীম একজন ৫০ মতো বয়সের একজন লোককে নিয়ে এলো।এই বয়স্ক লোকই হচ্ছেন এক সপ্তাহ আগের আত্বহত্যা করা নাইমের বাবা।ভদ্র লোকের দিকে তাকিয়ে অনেকটা অবাক হলেন রমজান আলী।ভদ্রলোকের গায়ে সাদা একটি পাঙ্গাবি মাথায় টুপি।কিন্তু চোখে একটু ও কষ্টের প্রকাশ পাচ্ছে না।তাকে দেখে মনেই হচ্ছে না যে কিছুদিন আগেই তিনি তার ছেলেকে হারিয়েছেন।সে সব কষ্টের চেয়ে বেশি তার চেহারায় ফুটে উঠছে প্রভাবশালী ভাব।
রমজান আলী নরম গলায় বললেন,‘বসেন’।
বয়স্কলোক বসে রমজান আলির দিকে তাকালেন।
‘আপনি নাইমের বাবা?’
‘জী’।
আপনার নাম!
‘আজিজ চৌধুরী’।
‘আচ্ছা আপনার কি মনে হয়?আপনার ছেলের মৃত্যুর মাজে কারো হাত আছে?’
‘এটা একটা আত্বহত্যা ছিলো’।
‘জি,কিন্তু তাও হতে পারে না যে কারো কারণে সে আত্বহত্যা করেছে?’
‘আপনি মনে হয় সুইসাইড নোটটা পড়েননি!এটা পরিষ্কার একটা আত্বহত্যা।আমি বিষয়টা আর বাড়াতে চাইছি না।আপনি কেসটা ক্লোজ করে দিবেন।’
‘কেস ক্লোজ এর বিষয়টা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।সেটা আমার আমার উপর ছেরে দিন।’
‘আপনি বিষয়টা বাড়াচ্ছেন!’
‘তদন্ত চলছে,আর চলবে’।
‘রমজান সাহেব,জীবনে প্রায় সময় আমরা ভুল করে থাকি।ভুল সিদ্ধান্ত নেই।আসলে কি জানেন আমাদের শেষটা,‘শূন্য’।
‘সেটা না হয় শেষে দেখা যাবে’।
‘দেখেন তাহলে।’
‘আপনি আসতে পারেন,তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আপনাকে আবার আসতে হবে’।
আজিজ সাহেব একটু হেসে বেরিয়ে গেলেন।রমজাল আলী জানালার সামনে দাঁড়িয়ে একটি সিগারেট দরালেন।সিগারেটের ধোয়ার সাথে করে যেন তার চোখে ভেসে উঠছে নাইমের সুইসাইড নোট।
তার টেবিলের উপর রাখা ছিলো সেই ৩ পাতার একটি গল্প।প্রথমেই বড় বড় করে লেখা ছিলো আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ি নয়।তারপর অনেক গুলো কথা।হয়তো এই কথা গুলোই কাউকে বলা হ্য়নি।মুখ ফুটে বলার সাহস হয়নি তার কখনোই।রমজান আলী ভাবতে লাগলেন, ‘তার কি কোনো প্রিয় কেউ ছিলো?খুব প্রিয় কোনো বন্ধু অথবা গালফ্রেন্ড!হয়তো ছিলো।অবস্য সবার ই থাকে।জগতের প্রতিটি মানুষের একজন প্রিয় মানুষ থাকে,যার কাছে সে নিজেকে পুরোপুরি ভাংতে পারে;কিন্তু আসলেও কি সবকিছু বলাযায় সেই প্রিয় মানুষটার কাছে!নাকি জীবনে এমন ও কিছু থেকে যায় যা কাউকে বলা যায়না!হয়তো সবকিছু বলা যায়না।
রমজান আলী বুজতে পারছেন যে এটা একটা আত্বহত্যা মাত্র!তাও তিনি কারন টা জানতে চাচ্ছেন।তিনি যেন অনুভব করতে পারছেন একটা চিৎকার।আস্তে আস্তে কেসটা নিয়ে গভীর ভাবে ভাবতে থাকেন তিনি।তার কাছে আজিজ সাহেবের ব্যবহারটা অদ্ভুত লাগছে।একটা রহস্যের গন্ধ যেন এখান থেকেই ভেসে আসছে।যদিও তিনি জানেন শেষটা শূন্য।
৩.
নাইমের রুমের দিকে তাকিয়ে আছে নাইমা।দেখতে কি অদ্ভুৎ লাগসে আজ নাইমের রুমটা।রুমের এক কোনায় পরে আছে তার গিটারটা।এই গিটারটা নাইমের অনেক প্রিয় ছিলো…প্রত্যক বিকালে গিটার হাতে নিয়ে ছাদে গিয়ে গান গাইত চিৎকার করে।তার গান শুনলে মনে হতো কষ্টগুলো যেন গড়িয়ে পড়ছে বুকফুটে।আবার নাইম সেগুলোকে নিজের মাজে ডুকিয়ে নিচ্ছে।নাইমার হঠাৎ করে নীলার কথা মনেপরলো।‘নীলার কি মনে পরে এখন আর নাইমকে।সে কি জানতে পেরেছে যে নাইম আর নেই!’ কথাটা ভাবতেই কেমন অদ্ভুত লাগছে তাঁর,সে যেন নিজেই বিশ্বাস করতে পারছেনা নাইম আর নেই।কি এক শুণ্যতার অনুভতি কাজ করছে তাঁর মাজে।আবার নিলার কথাটাও ভাবছে।নাইম কেমন গিটার হাতে করে ছুটে যেত নীলাকে গান শুনাবে বলে।নীলাও কেমন যেন হয়ে যেত নাইমের গলার স্বর শুনে।নাইমের গলা তেমন ভালো না থাকলেও নীলার খুব ভালো লাগত।নাইমের গান না শুনলে যেন দিনটাই ভালো লাগত না তাঁর।কলেজ থেকেই তাঁদের প্রেম; কি দারুন ছিলো তাঁদের সবকিছু,সেই সময়টাও নিলয় দুঃখ পুষে হাসত কি দারুণ রকম।তাকে কখনো দুঃখী দেখা জায়নি।সে চুপচাপ থাকত প্রায়,অনেকটা শান্ত স্বভাবের।তবে যখনি কথা বলতো কি দারুন ভাবে হাসত।কেউই দেখতে পায়নি তাঁর হাসির পিছনের কান্না গুলো।নীলা কি তাঁর খুব প্রিয় ছিলো!নীলা কি তাঁর ভেতর কান্না বুজেছিলো?নাহ নীলা হয়তো বুজতে পারেনি।নাইমের কান্না বুজলে তাকে ছেরে যাওয়ার ক্ষমতা হয়তো তাঁর হতো না।নাইম ও কি অদ্ভুত ছিলো।কি কঠিন ভাবেই বলে ছিলো, ‘তুমি চাইলেই যেতে পারো তোমাকে আর ভাববো না’।
সেদিন নীলার চোখে জল ছিলো আর নাইম মাথা নিচু করে বসে ছিলো।
জ্বল চোখেই নীলা বলেছিলো,‘আমাকে ক্ষমা করে দিয় প্লিজ’।
নাইম চুপ করে বসে রইলো।নীলা রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। দুদিন পর নীলার বিয়ে হয়ে গেলো,তাঁর স্বামি লন্ডন থাকে।বিয়ের মাস খানেক পর নীলাকে ও নিয়ে গেলো।বেকারত্ব কেরে নিলো নিলয়ের প্রিয় কিছু।তার থেকে অনেক দূরে।আচ্ছা সেদিন এর পর কি নাইম আর নীলাকে ভাবেনি?হয়তো ভেবেছিলো কিন্তু কাঁদেনি।তবে সেদিন তাঁর রুমের দেয়ালে আঁকা হয়েছিলো আরেকটি কবিতা।নাইমার চোখ পরলো সেই কবিতাটার দিকে,কিছুটা বড় বড় করে লেখা ছিলো,
‘‘তুমি যাওগো চলে যাও ও প্রিয়তমা
আমাহতে বহুদূরে;
আমি ভাববো না আর কাঁদবো না গো
ভাসবো না আর সৃতিঘরে।’’
কবিতাটা পরে নাইমার মনে হলো কবিতাটা মিথ্যা।নাইম ভেবেছিলো এরপরও অনেক বার,কেঁদেছিল অনেক রাত।তবে হয়তো কাউকে বুজতে দেয়নি।হয়ত নাইমা ও বুজতে পারেনি।
নাইমা অনেক কষ্টে নীলার ফোন নাম্বরটা খুঁজে বের করে কল দিলো।নাইমার মনে হচ্ছে নাইমের মৃত্যুর বিষয়টা নীলার হয়তো জানার দরকার।তিনটে রিং পরতেই ওপাশ থেকে একজন ভদ্রলোক কল রিসিভ করেই বললেন,‘কে?’
‘জী আমি নাইমা,নীলার সাথে একটু কথা বলা যাবে?’
‘আপনি কি পরিচিত কেউ!’
‘জী,আপনি নীলাকে বলুন নাইমা কল দিয়েছে উনি চিনবে’।
কিছুক্ষণ পর ওপাশ থেকে আওয়াজ আসলো,‘হ্যালো!’
‘কেমন আছেন আপু?’
‘ওহ নাইমা;ভালো আছি বোন।তুমি কেমন আছ?’
‘জী আপু এইতো ভালো’।
‘তা এতদিন পর মনে পরলো আমাকে?’
‘আসলে আপু আপনাকে একটা খবর দেয়ার জন্য কল করেছি;’
‘হ্যাঁ,বলো’।
‘ভাইয়া আর নেই।৯ দিন আগে ভাইয়া নিজের রুমে সুইসাইড করেছে;’
নীলা চুপ হয়ে যায়,সে যেন কিছু বলতে পারছে না।কল কেটে গেলো।
নীলার মাজে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো।৫ বছরের পুরনো এক অধ্যায় যেন নতুন করে কষ্টের রচনা করছে তার মনে।এই ৫ বছরের মাজে নাইমের সাথে তার একবার ও কথা হয়নি।প্রথম প্রথম নাইমের কথা মনে পরলেও আস্তে আস্তে সে অনেকটা ভুলেই গিয়েছিলো নাইমকে।কিন্তু নাইমের মৃত্যু যেন কেমন মোচর দিয়ে উঠছে তার ভেতরে।সে কখনই নাইমের মৃত্যু চায়নি।সে চেয়েছিলো নাইম যেন তাকে ভুলে যায়,ভালো থাকে।যদিও সেদিন সে নাইমের চোখে দেখেছিলো এক আকাশ ভালোবাসা আর একফোটা বিরহ।তবুও তার এক বিশ্বাস ছিলো-একটা আশা ছিলো হয়তো নাইম ভালো থাকবে।নীলার কয়েক মুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছিলো, তার পায়ের মাটি যেন সরে যাচ্ছে।নিলা কিছু ভাবতে পারছে না।নাইমকে কি আসলেও ভাবা উচিত?কিন্তু তার তো সংসার আছে, দুটি ছেলে মেয়ে! অনেক কস্ট করেও নিলা তার মাথার ভেতর থেকে নাইমকে সরাতে পারছে না।নীলার মাথার মাজে কি অদ্ভুৎ এক জায়গা জুরে আছে নাইম।
চলবে............
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৬৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৩/০৯/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast