www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বোকা ভূত

শেষ পর্যন্ত তার বৌ এরকম একটা কান্ড করবে রমেশ ভাবতেই পারছে না। সংসারে দন্যতা আছে, তার মাঝেই কোন রকম সংসার চলছে। একটা মাত্র পুত্র। যার বয়স এখন দশে পরেছে। রমেশ ভাবে, না করেই বা কি করবে? এরকম করে কি আর কারো জীবন চলে? রমেশের আবাদ করার মতো কোন জমি জমা নাই যে, চাষ বাস করে খাবে। পশ্চিম পাড়ার এক বাড়িতে রাখালের কাজ করে। তারা যা দেয় তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক দিন থেকে তার বৌ কমলা বলছিল অন্য কিছু করার জন্য, যাতে কয়েকটা পয়সা আসে। অন্তত দু মুঠো খাবারের যেন ব্যবস্থা হয়। তা রমেশ কি করবে? কি বা করতে পারে? আজ দুপুরে বৌটি খেতে না পেরে মাথাটাই যেন নষ্ট হয়েগেছে। রমেশকে বাড়ি থেকে তাঁড়িয়ে দিয়ে বলেছে যদি সে খাবার নিয়ে আসতে না পারে তবে তারা গলায় দড়ি দেবে। রমেশ এমনিতেই সাদাসিধে ধরণের। বৌ-এর এরকম আচরণে তার চোখ দুটো জলে ভিজে উঠেছে। সে হাঁটতে হাঁটতে কখন যে পুরান ভিটার বনের দিকে এসেছে নিজেই জানে না। আর ভেবেই বা কি হবে? তার কাছে জীবনটা অর্থহীন মনে হচ্ছে। কিসে খায় খাক সে এই বনের মধ্যেই পড়ে থাকবে। একটা বট গাছের নিচে বসতেই ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছে। হঠাৎ রমেশের ঘুম ভেঙ্গে যায় কার যেন কান্নার শব্দে। সে চোখ খুলে দেখে বট গাছের ডালে বসে একটা ভূত অঝোরে কাঁদছে। প্রথমে ভয়ে সে রাম নাম যপ করতে থাকে। হঠাৎ করেই যেন ভূতটা রমেশকে দেখে নিচে নেমে এলো। রমেশ ভয়ে চুপ চাপ থাকল কোন কথা মুখ দিয়ে বের হচ্ছিল না। ভূতটা কিছুক্ষণ তাকে দেখে বলল,
- শোন বাপু আমি এখন মরব। যাক ভালই হলো যে একজন মানুষকে স্বাক্ষী রেখে মরতে পারলাম।
রমেশ মনে মনে ভাবল এ নিজেই মরতে এসেছে তাকে দেখে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। দেখি কিছুক্ষণ কি রকম অদ্ভ‚ত কান্ড ঘটায়।
- তোমার কি দুঃখ যে মরতে এসেছো?
- কি বলব তোমায়, আমি বিয়ে করবো কিন্তু আমাকে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে না সবাই বলে আমি নাকি বোকা ভূত। বোকা ভূতের বিয়ে হতে নাই।
- তাই নাকি?
- হ্যা।
- আচ্ছা শোন, সবাই যদি বলে তুমি চালাক ভূত তবে কি তোমার বিয়ে হবে?
ভূতটার চোখ জ্বল জ্বল করে উঠল। সবাইকি আমাকে চালাক ভূত বলবে?
- হ্যা বলবে যদি আমার কথা শোন তবে তোমাকে চালাক ভূত বলবে। কিন্তু কিছু যোগার জন্তের দরকার আছে।
- কি রকম যোগার জন্ত?
- না মানে কিছু খরচা পাতির দরকার আছে। যেমন তোমাকে চালাক বানাতে পূজা পাঠের ব্যাপার আছে তো।
- ও নিয়ে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না, তুমি শুধু আমাকে চালাক বানিয়ে দাও।
রমেশ কিছুক্ষণ ভাবল কি করে এই অদ্ভ‚ত ভ‚তটাকে বিশ্বাস করাবে যে সে চালাক হয়ে গেছে। নানান চিন্তা ভাবনা করে রমেশ কিছু খড় কুটো একখানে করে আগুন জ্বালিয়ে নিজের থলিতে থাকা কিছু ধুপ বের করে বার বার আগুনে নিক্ষেপ করে ভুতকে শুনিয়ে মন্ত্রপাঠ করছে-
ওঁ ভুতং চালাকং
সর্বতং ভুতছারা
কাচি তং
ভুতং ছু, ভুতং ছু।
এই বলে বার বার মন্ত্র পড়ছে আর ধুপ ছুড়ে মারছে। তোমরাতো জানই ভূত আগুন দেখে ভয় পায়। তাই বোকা ভূতও একটি শ্যাওড়া গাছে দাঁড়িয়ে দূর থেকে রমেশের পূজা করা দেখছে, আর মনে মনে ভাবছে এই বার আমাকে আর কেউ বোকা ভূত বলতে পারবে না। বাঁশ পেত্মীর সাথে তার বিয়ে হবেই হবে। রমেশ এই ভাবে কিছুক্ষণ আগুন নিয়ে ভূত দেখানো পূজা করে আগুন নিভিয়ে দিয়ে এবার বোকা ভূতকে ডেকে বলল শোন বাপু, এখন থেকে তোমাকে একটা কাজ করতে হবে।
ভূতটা খুশিতে বলল- বল
- এখন থেকে তোমাকে সত্য কথা বলা যাবে না। সর্বক্ষণ মিথ্যা কথা দ্বারা অন্যকে খুশি রাখতে হবে, তবেই তুমি আস্তে আস্তে চালাক হয়ে উঠবে।
- মিথ্যা কথা?
-হ্যা, মিথ্যা কথা। তুমি যত মিথ্যা কথা বলতে পারবে তোমাকে তত বেশি চালাক বলবে। কেননা এখন মিথ্যাবাদীকে সবাই সমীহ করে, তাদেরকেই চালাক বলে। আর হ্যাঁ এই মালাটা সব সময় তোমার গলায় ঝুলিয়ে রাখবে।
রমেশ একটা ডাল-পাতা দিয়ে বানানো মালা ভূতটার দিকে এগিয়ে দেয়। ভূতটা খুশিমনে মালাটা নিয়ে গলায় পড়ে। কিন্তু কি মনে হতেই সে বলল, দাঁড়াও তোমার ওষুধে কাজ করে কিনা সেটা আগে আমি দেখতে চাই। আমি না আসা পর্যন্ত তুমি এখানেই থাকবা।
বলে বোকা ভূত হাওয়া হয়ে যায়। রমেশ ভয় পেয়ে যায় যদি তার কথায় কাজ না হয় তবেতো ভূতটা তাঁর ক্ষতি করতে পারে, কিন্তু কি আর করা। ভূত বলে কথা, সে যদি পালিয়েও যায় ভূতটা তাকে ঠিক খুঁজে বের করবে, অগ্যতা সে চুপ-চাপ বসে থাকল। এমনিতেই তার মনটা খারাপ, এর মধ্যে যদি ভূতটা তাঁকে মেরেও ফেলে তাতে তার কোন অসুবিধা নেই। কিছুক্ষন পর হঠাৎ হাসির শব্দ শোনা যায়। ভূতের হাঁসি। তার মানে ভূতটা ফিরে এসেছে। ঠিক তাই ভূতটা এবার তার সামনে এলো। বেশ হাসছে, হাসতে হাসতে বলল, হয়েছে হয়েছে কাজ হয়েছে তোমার ওষুধে কাজ হয়েছে। ভূতটা একটি পয়সা বেড় করে দিল, এই নাও তোমার পাওনা।
রমেশের পয়সাটা দেখে মনটাই খারাপ হয়ে গেল। সে ভয়ে ভয়ে বলল, তোমার এতো বড় উপকার করলাম আর তুমি কিনা একটা তামার পয়সা আমায় দিলে।
ভুতটা তার কথায় বলল- এটা যে সে পয়সা নয়, এটা অফুরন পয়সা।
- মানে!
- মানে এটা একটা হাড়ির মধ্যে রেখে দিবে, আর তুমি হাড়ির দিকে না তাঁকিয়ে পয়সা উঠাবে। যত ইচ্ছে পয়সা উঠাতে পারবে, কিন্তু পয়সা শেষ হবে না। কিন্তু সাবধান ভিতরে দেখা যাবে না।
রমেশ অবাক হয়ে বোকা ভুতের কথা শুনছিল। সে পয়সাটা নিয়ে খুশি মনে বাড়ি ফিরে এলো। বৌ- তাকে জিজ্ঞেস করল কি এনেছে। সে তাঁর বৌকে সব বুঝিয়ে বলল। প্রথমে বৌ বিশ্বাস না করলেও পরে পরীক্ষা করে দেখল বোকা ভূত আসলে সত্য কথায় বলেছে। রমেশের বৌ হাত ঢুকিয়ে একটার পর একটা পয়সা বেড় করে রাখছে। এভাবে রমেশের অভাব কেঁটে গেল। রমেশ এখন ব্যবসা করে। একদিন ব্যবসা করে সে ঐ বনের পথ দিয়ে ফিড়ছিল। ফিড়তে বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ সে দেখল সেই বোকা ভূতকে। বোকা ভূতের সঙ্গে আরো দশ বার জন ভূত। তারা বোকা ভূতকে বেশ সমীহ করছে। রমেশকে দেখে বোকা ভূত বলল কি খবর দাদা কেমন আছো? রমেশ বলল সে ভাল আছে। রমেশ তার কথা জিজ্ঞেস করল। বোকা ভূত বলল, দেখছো না কেমন আছি তোমার কথা আর সেই মালার জোরে আমি এখন ভূতদের লিডার হয়েছি।
- আর বিয়ের খবর কি?
- আমি রাজ পেকে বিয়ে করেছি।
- রাজ পেত্মী কেন? বাঁশ পেত্মী কোথায়?
- ঐ ছোট জাতের ভূতকে কেন বিয়ে করব, আমি তো এখন ভূতদের নেতা তাই নেতাদের জন্য হচ্ছে রাজ পেত্মী।
রমেশ মনে মনে ভাবল ভাল মানুষদের দাম নেই। যারা অগনিত মিথ্যার বেসাদে ঢেকে রাখে নিজেদের তাদের কদর এ সমাজে বেশি। হউক মিথ্যার জয়।

(তবুও আমি বলব মিথ্যা ছাড় সত্য কথা বলুন)
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ২৩১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১০/০১/২০২২

মন্তব্যসমূহ

  • রাসেল মিয়া ১৬/০১/২০২২
    চমৎকার
  • অসাধারণ
  • বেশ।
 
Quantcast