www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

রেইনকোট

বাইরে ঝমঝম করে বৃষ্টি হচ্ছে।শ্রাবণের একরোখা বৃষ্টি। সন্ধ্যার অন্ধকার বৃষ্টির শব্দকে আরও মোহনীয় করে তুলেছে।লীলা দরজা-জানালা বন্ধ করে একা একা শুয়ে আছে।অনেকক্ষণ হলো বিদ্যুত নেই।বিকেলে যখন আকাশে ভীষণ মেঘ করে লীলা স্বামীকে বাইরে যেতে দিতে চায়নি।স্বামী সরকারী কর্মকর্তা।জরুরী কাজ আছে বলে লীলার বাধা উপেক্ষা করে বেরিয়ে গেছে।
লীলা এখানে একমাস হলো এসেছে।আরো একমাস থাকবে।এরপর লীলার স্বামী ঢাকায় বদলী হবে।এই একমাসে লীলা বেশ শুকিয়ে গেছে।লীলা বাবা-মার পছন্দে বিয়ে করেছে।রাজশাহী ভার্সিটিতে অর্থনীতিতে পড়ত লীলা।অনার্স করে ঢাকায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে আসে।লীলার অজান্তে তার বাবা-মা,বোন দুলাভাই ছেলে ঠিক করে রাখে।লীলাকে প্রথম দেখেই পছন্দ হয়।লীলাও অপছন্দ করে না।এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের বিয়ে হয়ে যায়।
লীলার স্বামী তাকে খুব ভালোবাসে।বলে, “সংসারে নারী হবে দেয়ালের মতো।একপাশ দিয়ে ঝড় ঠেকাবে,আরেকপাশ দিয়ে আলো ছড়াবে।”
বিয়ের পর লীলাও তার স্বামীকে নিরাশ করেনি।শিক্ষিত তো,যতটা চোখ খুলেছে,তারও বেশি মন খুলেছ।ভার্সিটিতে থাকতে সে নিয়মিত রান্না করে খেত।এভাবে রান্নার হাতটা তার পাকা হয়ে ওঠে।সেই পাকা হাতের রান্না খেয়ে লীলার স্বামী শুধু বশই হয়নি,উচ্ছন্নেও গেছে।আর কারও হাতের রান্না খেতে পারে না।বাইরের খাবার তো একেবারেই পছন্দ করে না।
লীলার স্বামী বলে, “সংসারে নারী হবে বিধাতার মতো।একদিকে সৃষ্টির আনন্দ ভাগ করে দেবে,আরেকদিকে সৃষ্টির দুঃখ ভাগ করে নেবে”।
লীলা তার স্বামীর কথায় মাঝে মাঝে চমতকৃত হয়।ভার্সিটিতে যখন সে পড়ত অনেক ছেলেবন্ধু তার ছিলো।অনেকে প্রেমও নিবেদন করেছে।লীলার যে সাড়া দেবার ইচ্ছা করেনি তা নয়।
তবে লীলা দেখেছে, “ছেলেরা যা চায় তা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট ধৈর্য্য ধরতে রাজী নয়।আবার যেটুকো পায় তার অধিকাংশই অপচয় করে”।
ছেলেদের এই তাড়াহুড়ো স্বভাব লীলার ভালো লাগেনি।সব ছেলে বন্ধুর মাঝেই সে এই গুণটি খুঁজে পেয়েছে।তাই কাউকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়নি।কিন্তু লীলার স্বামী হয়েছে তার মনের মতো।কোন কিছুতেই তাড়া নেই।
লীলাকে বলে, “নারী হলো সেই মুক্তা যা পাওয়ার জন্য সাগর সেচা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।তাড়াহুড়া করলে বিপদ।তাতে মুক্তার বদলে বালি মিলবে”।
একবছরে লীলা তার স্বামীকে অনেক বুঝে ফেলেছে।সে ভার্সিটি জীবনের অনেক কথা অনেকবার তার স্বামীকে বলেছে।লীলার স্বামী সে সব শুনে খুশি হয়।কিন্তু নিজের কথা কখনো লীলার কাছে খুলে বলে না।লীলাও আগ্রহ দেখায় না।ভাবে, “ধ্যান ভাঙার চেয়ে পুরুষকে ধ্যান করাই ভালো।এতে বেশি লাভ হয় নারীরই।শঙ্কা থাকলে তা মুছে যায়”।
হঠাত বাইরের বারান্দায় শব্দ হলো।লীলার মনে হলো কে যেন বাইরের বারান্দায় দাঁড়িয়েছে।জানালা খুলে বাইরে তাকাল।দেখল একজন মধ্যবয়সী পুরুষ কাক ভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।লীলা দরজা খুলে দিয়ে বলল, “আপনি তো শীতে কাঁপছেন।ভেতরে আসুন”।
তখন বৃষ্টি আরও জোরে পড়তে শুরু করেছে।বৃষ্টির তীব্রতায় সামনের পথও ভালো করে দেখা যাচ্ছে না।পথের অধিকাংশ পানিতে তলিয়ে গেছে।লীলা একটি তোয়ালে এনে লোকটিকে দিলো।শুকনো কাপড় পরতে দিলো।গরম চা করে দিলো।লোকটিকে ঘরে ঢুকতে দিতে লীলার একটুও ভয় করেনি।সে মনে মনে ভাবে, “শয়তানও বিপদে পড়লে মানুষ হয়।স্রষ্টার নাম মুখে আনে।আর মানুষ তো বিপদে পড়লে দেবতা হয়”।
তাই বিপদে পড়া মানুষকে ভয়ের কিছু নেই।লীলা নারী,কিন্তু নারীত ঊর্দ্ধে সে মানুষ।তাই মানুষকে সে ভয় পেতে চায় না।এমনকি খারাপ মানুষদেরও না।লোকটি লীলার প্রতি সন্তুষ্ট হলো।অনেকক্ষণ বসে তারা গল্প করল।
বৃষ্টি থামছে না দেখে লোকটি বলল, “আমাকে যেতে হবে।স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে।আমি না গেলে ওষুধ খাওয়ানোর মানুষ নেই”।
লীলা বলে, “এই বৃষ্টিতে ভিজে গেলে আপনিও অসুখে পড়বেন।বৃষ্টি থামলে তারপর যাবেন”।লোকটি উঠে দাঁড়াল।
সে আর বসে থাকতে চাইল না।লীলা ভেতর থেকে তার স্বামীর একটি রেইনকোট এনে লোকটিকে দেয়।বলে, “এটা পরে যান।কোন অজুহাত চলবে না”।
লোকটি বিষ্মিত হয়, “অপরিচিত মানুষকে এতটা বিশ্বাস!ক্ষতিও তো করতে পারতাম?” রেইনকোট পরে লোকটি বৃষ্টির মধ্যে হাঁটা দেয়।
তখনও ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছিল।যতদূর দেখা গেল লীলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে লোকটিকে দেখল।একসময় সবকিছু ঝাঁপসা হয়ে এলো।তারও এখন বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করছে।লীলার মন আনন্দে ভরে ওঠে।বৃষ্টির মতই বিরামহীন আর তীব্র হতে থাকে তার সুখের অনুভূতি।
“না মানুষকে বিশ্বাস করা যায়”-লীলার আস্থা জন্মে নিজের প্রতি।

সমাপ্ত
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭১১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৭/১১/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • রহিমুল্লাহ শরিফ ১৩/১১/২০১৪
    বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে ৷
  • আমিন চৌধুরী ১১/১১/২০১৪
    ভাল হইছে...
  • বিষয়টি দারুন লেগেছে। কারন ছোট গল্পের বৈশিষ্টি যে এতে ভালোই আছে।
  • পরিতোষ ভৌমিক ০৮/১১/২০১৪
    গল্পটি শেষ হল-কিন্তু যেন শেষ হলনা । এটাই ছোট গল্পের একটা বড় বৈশিষ্ট্য । দারুন লেগেছে তবে আরও সাহিত্য চর্চার প্রয়োজন বলে মনে করি । যদিও আমি এ বিষয়ে এতটা জানিনা তবুও ধৃষ্টতা করলাম ।
    • গল্পটি লিখেছিলাম ২০০৭ সালে। সম্ভবত প্রথম আলো,বন্ধুসভা'র বন্ধুদের প্রকাশিত একটি লিটল ম্যাগে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিলো। কিছুদিন হলো তখন গল্প লেখা শুরু করেছি। এটি প্রথম যেমন ভাবে লিখেছিলাম সেভাবেই প্রকাশ করেছি।বাক্য কিংবা ভাষাতে কোন পরিবর্তন নিয়ে আসিনি। তাই গল্পে আনাড়িপনা থাকতে পারে।
  • নাবিক ০৮/১১/২০১৪
    বেশ ভালো।
  • দিপু ০৭/১১/২০১৪
    খুব ভাল
 
Quantcast