www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ডির্ভোস

ডির্ভোস
মোঃ রায়হান কাজী

বেশ কিছু বছর আগে কথা এক গ্রামে সুমাইয়া ইসলাম নামের একটি মেয়ে বাস করতো৷ গ্রামটি ছিলো ছোট শস্য শ্যামলা গাছপালা দিয়ে আবৃত্ত।
সুমাইয়া নামের মেয়েটি সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে পছন্দ করতো৷সবার সামনে মেয়টি বেশ হাসি খুশি ও লাজময়ী যদিও।কিন্তু আড়ালের চিত্রতা ছিলো সম্পন্ন আলাদা।এর কারণ হিসেবে ছিলো তার বাবার নির্যাতন।

সুমাইয়া এখন দশম শ্রেনীতে পড়ে। এরি মধ্যে ওর মা পৃথিবী নামক বস্তুটার থেকে নির্যাতনের কারণে কিংবা সহ্য করতে না পেরে পরকালে গমন করেছেন।যার কারণে মেয়েটির সব থেকেও কেউ নেই৷ তাই সুমাইয়া সবসময় নিজেকে একা ভাবতো। তাই ওর মনে অনেক কষ্ট আর সবসময় আড়ালে লোকিয়ে মার জন্য কান্নাকাটি করতো। নিজে না চাইলেও মনের অজান্তে চোখের কোণে অশ্রু জমে থাকে। একরকম অবস্থ হয়ে গেছে।যার ফলে খুব অল্প বয়সেই অনেক কিছু শিখতে হয়েছে৷ যেমন ছোট একটা ভাই আছে ওকে রাখতে হয়। যদিও অন্যরা আছে তারপরও বোন হিসেবে দায়িত্বটা রয়ে গেছে।

দৃশ্যপট শুরু হয় সুমাইয়ার মা অন্য কোথাও প্রেম করে।তারপর তাদের বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়৷ তো ওদের নানীর বাড়ি থেকে মানা করে দেওয়া হয়৷ যার কারণে ওর মার অনিচ্ছা কৃতভাবে অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যায়।তো কিছু দিনের মধ্যে ওনি সংসার শুরু করে।
এর মধ্যে ওনার প্রতি তার শশুর বাড়ির লোকজনরা নির্যাতন শুরু করে। যার কারণে একরকম বাধ্য হয়ে তাদের মেয়েকে নিয়ে আসে।কারণবশত তাদের ডির্ভোস হয়ে যায়৷

তারপর কিছু দিনের মধ্যে দেখে শুনে অন্য জায়গায় বিয়ে দেওয়া হয়৷ সেখানেও বেশি দিন ঠিকে নাই। তার কারণ হিসেবে দেখা যায়,পূর্বের প্রেমিক এসব জায়গা গিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করতো৷ পরে ওখান থেকে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর।আগের প্রমিক সামিয়া আক্তারের বাবামার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। তারা প্রথমে মানা করলেও পরে বিয়ে দিতে বাধ্য হয়৷

বিয়ের প্রথম দিকে সবকিছু ভালোই ছিলো। দুএক বছরের মধ্যে তাদের ঘরে আলো করে একটি মেয়ে আসে৷ তার নাম রাখা হয় সুমাইয়া ইসলাম।

তো ছোটবেলা থেকেই সুমাইয়া ইসলামের সবখরচ ওর নানা-নানু চালাতো। ওর বাবা ওদেরকে ভালো মতো দেখতে পারতোনা। তেমন একটা আদরও করতো না৷ তো একদিন দুপুরবেলা তার বাবা ছাদির হোসেন তার মেয়েকে নিয়ে ঘুমিয়ে থাকে।
ঘুম থেকে ওঠে ওর পাঁচ বছরের মেয়েকে কিছু না বলে মারতে থাকে৷ সামিয়া মেয়েটির দাদী শুনতে পেয়ে বাইরের থেকে শুটে আসে।এসে দেখে দরজা বন্ধ। তো চিল্লাচিল্লি করে দরজা ভেঙে মেয়েটিকে বাহিরে নিয়ে আসে৷নিয়ে আসার পর মেয়েটি খুব কান্নাকাটি শুরু করে।

পরে মেয়েটিকে স্কুলে ভর্তি করা হয়৷ করার পর মেয়েটির একটি ভাই হয়। যখন ছেলেটি হয়েছিলো তখন মেয়েটি খেলা করছিলো দাদী এসে খবর দিলে দৌড়ে যায়। যার কারণে বাড়িতে খুশির জোয়ার বইয়ে যায়৷ হাসি উল্লাসে মিষ্টিতে ভরে ওঠে ছোট বাড়িখানা। এরি মাঝে ভাইটি একটু বেড়ে উঠতেই মেয়েটির দাদী স্টোক করে মারা যায়। ফলে বাড়ি জুড়ে কান্নার মাতম ওঠে।এতে করে সবাই ভেঙে পড়ে একরকম।

তো সুমাইয়ার বাবারা ছিলো তিনভাই৷ বড়জনের নাম ছিলো ইস্কান্দার মোজো হায়দার আর ছোট মানে মেয়েটির বাবার নাম ছাদির হোসেন। তো ইস্কান্দার এর এক ছেলে ছিলো। মেজো হায়দার একটি মেয়ের সাথে প্রেম করতো।মেয়েটুকে না পেয়ে একপর্যায়ে বিষ খেয়ে মরে যায়৷ তো মেয়েটির বড়চাচা আর বাবা মা মারা যাওয়ার পর জমি নিয়ে বিরোধ লেগে আলাদা হয়ে যান।
তারপর থেকে তাদের দুই ভায়ের মধ্যেকার কথাবার্তা বলা বন্ধ হয়ে যায়।

ছাদির হোসেন হঠাৎ করে বাড়িতে একদিন একটা কাজের মেয়ে নিয়ে আসে সম্পর্ক গড়ে।যার কারণে সব কথাবার্তায় কাজের মেয়ের কথা প্রাধান্য বেশি দিতো।মেয়েটি সম্পর্কে ছাদির আলীর পাশের বাড়ির বোন হতো।তখন ছিলো রমজান মাস। সুমাইয়ার মাকে ওর দাদী মারা যাওয়ার পর থেকে ওর বাবা কাজের মহিলার মতো রাখতো আর অনেক নির্যাতন করতো।
মেয়েটি আসার পর থেকে ছাদির আলী সামিয়ার উপর অত্যাচার করতে শুরু করে আর মেয়েটির যা বলে সে মোতাবেক কাজকর্ম করা শুরু করে। যার কারণবশত বউয়ের কথার কোনো মূল্য দিতোনা।

একদিন গরুর খাবার তৈরি করতে দেরি হলে মেয়েটির কথায় তার বউকে মারতে যায়৷ পড়ে সুমাইয়া মানে ছাদিরের মেয়ে। ছাদির ওকে মিথ্যা বলতে বলে। কিন্তু সুমাইয়া মিথ্যা না বলে সত্য কথা বলে দেয়।তারপর একদিন দুপুরবেলা ছাদির বাজার থেকে মাছ নিয়ে আসে। তো সামিয়া মাছ রেখে ঘরে যায়। তখন কাজের মেয়ে চকিনা দাঁড়িয়ে ছিলো। বিড়াল মাছ নিয়ে যাওয়ার সময় কিছু না করে দেখতে ছিলো। পরে ছাদির বাড়ি আসলে চকিনা সামিয়ার নামে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলা শুরু করে। ছাদির সবসময় চকিনার কথা শুনতো। ইফতারির সময় চকিনাকে তার পাশে বসিয়ে খাওয়াতো। ছেলেমেয়েকে সামনে বসাতো। আর সামিয়া বেগম কান্না করতো আর পানি দিয়ে ইফতার করতো। ইফতার শেষে চকিনা অবশিষ্ট খাবারটুকু না রেখে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যেত। তো রমজানের শেষের দিকে ছাদির একদিন তাদের পরিবারের লোকজনদেরকে মার্কেটে নিয়ে যায়। তো সুমাইয়া একটি জামা পছন্দ করলে চকিনা তা কিনতে বারণ করলে ছাদির আলী তা কিনতে অস্বীকৃতি জানায়। পড়ে অন্য একটা জামা কিনে।আর সামিয়া বেগমকে একটা সবুজ কালার শাড়ী কিনে দেয়৷

তার কিছুদিন পড়ে সামিয়া বেগম ব্যাংকে যায় টাকা তুলার জন্য। পড়ে আসার সময় তিনি সেখান থেকে টাকা দিয়ে একজোড়া জুতা কিনে আনে।বাড়িতে আসলে চকিনা বেগম তার জন্য একজোড়া জুতা কিনে না আনার কারণে ঝগড়া লাগে।
পড়ে সামিয়া বেগম শাড়ী আর জুতা পড়বেনা বলে রাগ করে। তার পরের দিন সামিয়া বেগম কিছু খাবার উঠিয়ে রাখে। খাবার উঠিয়ে রাখার কারণে ছাদির দরজা আটকিয়ে সামিয়া বেগমকে সবখাবার জোর করে খাওয়ে দেন। যার কারণবসত ওদের ছেলেমেয়ে বাহিরে দাঁড়িয়ে কাঁদতে ছিলো। সামিয়া বেগম বর্মি করে দিয়েছিলো খেতে খেতে। পড়ে সামিয়া বেগম মেয়েকে মাইরের দাগ দেখিয়ে অনেক কান্নাকাটি করে। এবং মেয়েকে বলে যেন তার বাবামাকে না বলে। পরে সেদিন মেয়েটির খালাতো বোন আসে বাড়িতে। আসলে মেয়েটি বায়না ধরে নানুর বাড়িতে যাওয়ার জন্য। তাই মেয়েটির মা তাদেরকে কিছু দূর এগিয়ে দেয়৷

পরের দিন সকালে খবর আসে সাদিয়া বেগম মারা গেছে। এ খবর শুনে তার বাবার বাড়ির লোকজন ছুটে যায়৷ গিয়ে দেখে তাকে উঠানে শুয়িয়ে রাখছে৷ তারপর শুনা যায় পুকুরে ডুবে মারা গেছে।আবার অনেকে বলাবলি করছিলো ছাদির আর চকিনা মিলে হত্যা করেছে৷ তারপর পুলিশ এসে লাশ মর্গে নিতে চাইলে বাড়ির লোকজন নিতে দেয়না। কারণ পোস্টমোর্টেম করলে নাকি জান্নাতে যেতে পারবেনা তাই। পড়ে পুলিশ ঐখানে থেকে লাশ দাফন করে চলে যায়। ছেলেমেয়ে দুজনকে তাদের নানা-নানী তাদের বাড়িতে নিয়ে আসে একেবারে।

তার কিছু দিনপর ছাদির চকিনাকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে যায়। ছাদির আবার ঐগ্রামের মেম্বার ছিলো।নিয়ে যাওয়ার কিছু দিনপর চকিনা বাড়ির টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়।অতঃপর তাদের ডির্ভোস হয়ে যায়।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৪০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৩/০১/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • Biswanath Banerjee ২৬/০১/২০২১
    VALO
  • Biswanath Banerjee ২৫/০১/২০২১
    valo
  • চমৎকার ভাবাদর্শ
  • দীপঙ্কর বেরা ২৪/০১/২০২১
    ভালো লেখা
  • পি পি আলী আকবর ২৪/০১/২০২১
    চমৎকার
  • চমৎকার
  • ফয়জুল মহী ২৩/০১/২০২১
    অনেক সুন্দর লেখা, শুভকামনা রইলো।
  • অনুভূতিটা সুন্দর!
 
Quantcast