www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ভালো থেকো রাত্রি

বড় ভাইয়ার ফ্রেন্ডের বিয়ে ছিল। সেখানেই প্রথম তার সাথে আমার দেখা । মেয়েটির নাম রাত্রি । আমি কোনো ভাবেই রাত্রিকে ভালো লাগার কথাটি বলার সুযোগ পাচ্ছিলাম না। আমি কিছুটা সাহস নিয়েই  রাত্রিকে প্রপোজ করে বসি। ভেবেছিলাম সে রিজেক্ট করে দিবে অথবা চড় থাপ্পড়ও জুটবে । কিন্তু সে আমাকে বেশ চমকে দিল। তার ফেসবুক আইডি দেখিয়ে বললো,তুমি যদি আমাকে ভালোবাসো তাহলে তোমার সেই অবুঝ বালিকার কি হবে ? ফেসবুকের এই অবুঝ বালিকার সাথে আমি আজ দুবছর যাবৎ চ্যাটিং করছি। কিন্তু অবুঝ বালিকার আইডিটি যে রাত্রিরই হবে।সেটি জানতাম না। অনেক বার ছবি দেখতে চেয়েছি। কিন্তু কখনো কোনো ছবি পাঠায়নি। আজ সেই অবুঝ বালিকার কাছেই আটকে গেলাম। এভাবে আমাদের মাঝে ভালোবাসা শুরু হয়।আমাদের এই ভালোবাসা কেউ জানতো না।আমরা বেশ লুকিয়ে প্রেম করতাম।ফোনে কথা বলতাম,মেসেঞ্জারে চ্যাটিং আবার কখনো বা ঘুরতে যেতাম। সব কিছু বেশ ভালোভাবেই চলছিল।হটাৎ আমার বাবা স্ট্রোক করেন। আমরা সবাই তখন হসপিটালে। রাত্রির ফোনটা সুইচ অফ ছিল।তার ফেসবুক একাউন্টও দেখলাম ডিএক্টিভ। আমি প্রায় প্রতিদিনই রাত্রির ফোনে ট্রাই করেছি। কিন্তু নাম্বারটি সুইচ অফ করা ছিল।দেড় মাস পরে বাবাকে হসপিটাল থেকে বাসায় নিয়ে আসি। বাবা এখন কিছুটা সুস্থ।তাকে এখন সম্পূণ রেস্টে থাকতে বলেছে।আমি আমার বেডরুমে যেয়ে রাত্রির নাম্বারে ফোন দেই। হটাৎ কেউ একজন ফোনটা রিসিভ করলো। পুরুষালি কন্ঠ। আমি বললাম,প্লিজ রাত্রিকে একটু দিন না। লোকটি বললো,রাত্রির আজ বিয়ে। ওকে নাকি ওর বান্ধবীরা কনে সাজাতে নিয়ে গেছে। কথাটি শুনে আমি যেনো হতবম্ভ হয়ে গেলাম। যেনো আমার কোনো ভাবেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। আমি আর দেড়ি করলাম না। এক কাপড়েই বেরিয়ে পড়লাম। বাসায় বললাম আমার বন্ধু খুব অসুস্থ আমাকে এখনই যেতে হবে। এই মিথ্যা কথাটি বলা ছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায় ছিল না। যেতে যেতে আমার রাত হয়ে যায়। আমি রাত্রিদের বাসার এডড্রেসটা জানতাম না। আমি সেখানে যেয়ে ওদের বাসাটা খুঁজতে থাকি । অবশেষে একজন আমাকে বিয়ের সাজে সাজানো বাড়িটি দেখিয়ে বললেন,এটাই রাত্রিদের বাড়ি। আমি ঠিক কি করবো বুঝতে পারলাম না। আমি বাড়ির সামনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। হটাৎ রাত্রি আমাকে পিছন থেকে হাত টেনে ধরে বললো,তুমি এখন এলে ?আমি অনেক দিনপর আজ রাত্রির সেই হাস্যজ্বল মুখটা দেখতে পারলাম।। আমাকে জোর করে বিয়ে দেয়া হচ্ছে। আমার ফোনটাও নিয়ে নেয়া হয়েছে। যেনো কারও সাথে কোনো কথা না বলতে পারি। আমি বাড়ান্দা  থেকে তোমাকে দেখেছি। চলো আমরা পালিয়ে যাই। তুমি আমাকে যেখানে রাখবে আমি সেখানেই থাকবো। আমি কোনো দিন কোনো কিছুর আবদার করবো না। শুধু তোমার ভালোবাসার ছোট্ট কুঠিরে আমায় যত্নে রেখে দিও। আমি যেনো সেদিন সত্যি বেশ নিরুপায় এক নিষ্ঠুর যুবক ছিলাম। আমি রাত্রিকে ফিরে যেতে বললাম। রাত্রির চোখে তখন পানি। রাত্রি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,তাহলে কেন আসলে এখানে ? আর কখনো আসবে না আমাকে দেখতে ! এই বলে রাত্রি অঝোরে কাঁন্না করে চলে যায়। আমি নীরবে চোখের জল ফেলি। আমার আর কি বা করার ছিল ! আমার অসুস্থ বাবা সবে মেডিকেল থেকে বাসায় ফিরেছেন। আমি এখনো পড়াশোনা শেষ করতে পারিনি। তেমন কিছুই করি না। এখন যদি আমি রাত্রিকে নিয়ে পালিয়ে যাই। আর বাবা যদি জানতে পারেন তাহলে তিনি ভীষণভাবে কষ্ট পাবেন। সাথে মা ভাই বোন সবাই। হয়তোবা আবার নতুন করে অসুস্থ হয়ে পড়বেন। আমি বাসায় ফিরে আসি। মা আমাকে দেখে বলে,কিরে খোকা তোর ফ্রেন্ড এখন কেমন আছে ?আমি মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,জানো মা আমাকে দেখে সে অনেক খুশি হয়েছিল। কিন্তু আমি তার সুখটা রাখতে পারলাম না। এরপর আমি দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যাই। অঝোরে কান্না করতে থাকি। পানির ট্যাবটা ছেড়ে দেই। যেনো পানির আওয়াজে কান্নার শব্দটা বাহিরে না যায়।এভাবে ঠিক কতবার যে কেঁদেছি তা জানি না।কিছু ভালোবাসার কথা হয়তো বা দেয়ালেই আটকা পড়ে যায়। তা কখনো কেউ জানতে পারে না। যে আমি কখনো কোনো মানুষের মনে কষ্ট দিয়ে কথা বলিনি।আর আজ সেই আমি আমার ভালবাসার মানুষটিকে কষ্ট দিলাম। রাত্রি আজও হয়তোবা আমার উপর বেশ অভিমান করে আছে। কখনও যদি সুযোগ আসে। আমি রাত্রির কাছে সেদিনের আমার সেই অপরাগতার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিবো। ভালোবাসা মানে এই নয় যে,তাকে পাইনি বলে তাকে ভুলে যাবো।আমি সবসময়ই সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থণা করি, সে যেনো অনেক সুখে থাকে। অনেক ভালো থাকে। তার সংসার জীবনটা যেনো অনেক সুখের হয়। আর এভাবেই হয়তোবা কিছু ভালোবাসা পূর্ণতা পাবার আশায়, আজও অপূর্ণ রয়ে যায় !!
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৪৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৭/০৬/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast