www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

নিষ্কৃতি দাও

আমি কোথা হইতে আরম্ভ করিব বুঝিতে পারিতেছিনা। বর্তমান সময়ে প্রায়শই প্রচলিত ধর্মের বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক পেইজে আর নাস্তিক্যবাদের অনলাইন পেইজে ভার্চুয়াললি ভ্রমণ করা আমার নেশা হইয়া দাঁড়াইয়াছে। অনলাইন ভিত্তিক সেইসব পেইজে পড়িতে পড়িতে দুই-একখানা মন্তব্য না করিলে যেন পেটের খাদ্য দুষ্পাচ্য হইয়া যায় আর বিনিদ্রায় রজনী কাটাইতে হয়।

ধর্ম আমাকে তত বেশি অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করাইনি যত বেশি করাইয়াছে তথাকথিত ইতর-ভদ্র সুশীল চিন্তাবিদরা। কারণ, যেইখানে লোকদেখানো ধার্মিকরা একটু আধটু হলেও মানুষের উপকারে আসিয়া থাকে সেইখানে ওই তথাকথিত চিন্তা-ভূতরা মানবতার কল্যাণতো দূরের কথা, দূর অতীতের যাহারা মরিয়া পঁচিয়া গলিয়া বাষ্পীভূত হইয়া গিয়াছে তাহাদের কৃষ্টি সংস্কৃতি এবং তাহাদের রচিত গ্রন্থের দোষ-ত্রুটি আলোচনা ছাড়া আর কিছুই করিতে সক্ষম নয়!

সৃষ্টি না থাকিলে তো স্রষ্টাও থাকিবেনা সেইটাইতো স্বাভাবিক। একদিন কোলকাতার নায়িকা শুভশ্রীর মুখ হইতে একটি কথা শুনিলাম। তাহা হইলো- "এতদিনে আমি একটা মানুষ সৃষ্টি করলাম" যাহা সে জি বাংলায় প্রচারিত দিদি নং-০১ আসিয়া তাহার সন্তান সম্পর্কে বলিয়াছিল। আসলেই যদি আমরা সবাই প্রকৃতির এক একটা অংশ হইয়া থাকি যাহার মধ্যে প্রাণী ও উদ্ভিদজগৎ, জড় ও জীবজগৎ- সবই একটার সাথে একটা ওতপ্রোত জড়িত, তাহা হইলে তো আমরাই আমাদের সৃষ্টি করিয়া থাকি বা একটা অপরটার খণ্ডিত অংশ যাহা সময়ের সাথে সাথে পূর্ণ। তবে কি আমরাই আমাদের স্রষ্টা? বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সব অংশই কি একটা অপরটা হইতে সৃষ্টি?

কেউই সৃষ্টি হয়নি। এইখানে যে সৃষ্টি শব্দিটি আমরা ব্যবহার করিয়াছি তাহার সংজ্ঞা নিরূপণে বলিতে পারি তৈরী করা বা বানানো। তৈরী করিতে অন্য জিনিসের প্রয়োজন হইয়া থাকে। ধর্মীয় বিশ্বাসের গ্রন্থানুযায়ী যদি মানুষের দেহ মাটি হইতে হইয়া থাকে তাহা হইলে মানুষের দেহের ভিতরের অন্যান্য উপাদান কোত্থেকে আসিয়াছে? "চিন্তা, কল্পনা বা বিশ্বাস" নামক শক্তির তৈরির উৎস কি হইবে? আর ঐ মাটিইবা কোত্থেকে তৈরী? তৈরী শব্দটির সঠিক সংজ্ঞা হইলেই হয়তো তৈয়ারকারীর সংজ্ঞা নিরূপণে একধাপ আগানো যাবে। যেহেতু সৃষ্টি, তৈরী বা বানানো- এসব শব্দগুলোর বৈশিষ্ট্যেই দীর্ঘ বাদানুবাদ সেহেতু শব্দগুলোকে বাদ দিলে স্রষ্টা বা তৈয়ারকারীও বাদ পড়িয়া যায়। আর আমি যেই অস্তিত্বশীল অংশ হইতে জন্ম বা খণ্ডিত শব্দ ব্যবহার করিয়াছি সেই জন্ম বা অন্য জীব ও জড় হইতে খন্ডিত হওয়ার উপায়টিকেই চৈতন্যপূর্ণ জীবেরা সৃষ্টি বলিতেছে! যেহেতু ঐ উপায়টিই আপাতঃ অনস্তিত্ব হইতে অস্তিত্বশীল। সেহেতু সৃষ্টির বিপরীতে স্রষ্টার বৈশিষ্ট্যে রচনায় জীবেরা অক্ষমতার পরিচায়ক! কারণ অস্তিত্বের মাঝে অনস্তিত্ব কিভাবে বসবাস করিতে পারে তাহা চৈতন্যপূর্ণ জীবদেরই অজানা যদিওবা সাকারে নিরাকারের ধ্যান বা কল্পনা সদা জাগ্রত!

পৃথিবীতে প্রচলিত লক্ষলক্ষ কাল্পনিক গল্পগুলো আর বর্তমানের জ্ঞানীদের স্বরচিত বাণীগুলো চার/পাঁচশো বা হাজার বছর পরে পবিত্র সত্য ধর্মের বাণী হিসেবে পরিগণিত হইবে যখন মানুষ দুভাগে বিভক্ত হইবে তথা বাস্তবতার নিরিখে জ্ঞানী আর অন্ধ বিশ্বাস বা গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানো জ্ঞানী। যাহারা বাস্তবতার নিরিখে জ্ঞানী বা অনুসন্ধানী হইবে তাহারা পুরাতন সকল বিশ্বাস, ভাষা, সংস্কৃতি ছাড়িয়া দিইয়া নতুনের জয়গান করিবে আর সেই সুযোগে অন্ধ বিশ্বাসীরা পুরাতন সকল বিশ্বাস, ভাষা, সংস্কৃতিকে পুঁজি করিয়া নির্বোধ লোকদিগকে আপন পালের গোদায় শামিল করিতে ঐসব কাল্পনিক গল্পগুলোর আশ্রয় লইবে বৈকি!

ঈশ্বর, ভগবান, আল্লাহ, খোদা, গড, লর্ড থাকুক বা না থাকুক সেইটা নিয়া জল্পনা-কল্পনা, তর্ক-বিতর্ক না করিয়া বাস্তবতার নিরিখে মানবিকতার সত্য শক্তি লইয়া বিবেকবান হইয়া মানুষ হিসেবে কর্ম সম্পাদন, মানুষের উপকার, অন্য জীবের প্রতি সদয় আর সকল অস্তিত্বশীলের সদ্ব্যবহার একান্ত কর্তব্য। ইহা ছাড়াও যাহারা গত হইয়া গিয়াছে তাহাদের দোষত্রুটি আলোচনা না করিয়া যদি তাহাদের সম্পাদিত ভালো কর্মগুলো অনুসরণের মাধ্যমে সদা বর্তমানের কল্যাণ হইয়া থাকে তাহা হইলে ওই সম্পাদিত ভালো কর্মগুলোই অনুসরণ, অনুকরণ করিয়া গত হওয়া লোকদিগকে সমালোচনার বিষাক্ত শব্দ বাণ হইতে নিষ্কৃতি দেওয়া আবশ্যক।

© মাহতাব বাঙ্গালী
চট্টগ্রাম
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ২২২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১০/১১/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast