নীল কেবল রং নয়
সময়কাল: ১৮৫৮ সাল
প্রেক্ষাপট:নীলকুটির কুটিবাড়ী
বর্তমানস্থান: চরগোবিন্দ,খাগডহর,সদর,ময়মনসিংহ
সুতিয়া নদীর কলকল ধ্বনি আর ব্রহ্মপুত্রের বিশালতার দক্ষিণে ছোট্ট এক শান্ত গ্রাম—চরগোবিন্দ। কিন্তু এই শান্তির উপর নেমে এসেছে অন্ধকার এক অধ্যায়—নীলকরদের অত্যাচার।
গ্রামের মাথা স্বাধীনতাকামী রামেশ্বর কাকা বলতেন,
"নীল তো রঙ না রে, এ হলো বিষ। যারা একবার এই নীলের সঙ্গে জড়ায়, তারা ধ্বংস হয়ে যায়।"
১৮৫৮ সাল — ব্রিটিশ শাসনের অন্ধকার যুগে পূর্ববাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল নীল চাষের বাধ্যবাধকতা তেমটার বিপরীত হয়নি চরগোবিন্দতে। ইউরোপে কাপড় রঙ করার জন্য নীল রঙের চাহিদা বাড়লো, ইংরেজ নীলকররা বাংলার উর্বর জমিগুলোকে দখল করতে শুরু করে।
নীলকর সাহেব উইলিয়াম হার্ডি প্রতি বছর গাঁয়ের চাষিদের “দাদন” নামক অগ্রিম ঋণ দিত, যার শর্ত ছিল: "ঋণ নিতে হলে ধান বা শস্য নয়, চাষ করতে হবে নীল"। প্রথমে প্রলোভন মনে হলেও, কৃষকরা পরে দেখল এই নীল চাষে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, ধানের জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, অথচ নীলের দাম নির্ধারণ করছে ইংরেজি সাহেবরা নিজেদের মতো করে ফলে চরগোবিন্দের অর্থনীতি ভেঙে পড়ল, কৃষকরা ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়ল; ফলাফল গিয়ে দাড়াল-
ঋণ → নীল চাষ → লোকসান → আরও ঋণ → সর্বস্বান্ত!
ইংরেজ সাহেবের গোয়েন্দারা গ্রামের পথে পথে ঘুরে বেড়াত।যার জমিতে নীল চাষ হয়নি — তাকে টেনে নীলকুঠিতে নিয়ে যাওয়া হতো।বাঁশের লাঠি, চামড়ার বেত, কখনো মাটিতে শুইয়ে পায়ে বেঁধে মারা আর নিষ্ঠুর হাসি।
“তোরা নীল চাষ করবি না কেন?”
“সাহেবের অর্ডার অমান্য করেছিস?”
কৃষাণী কমলা একদিন নিজের চোখে দেখেছিল—তার স্বামী গোপাল কে কুঠির আঙিনায় বেঁধে পেটানো হচ্ছিল। শুধু এই কারণে যে সে এক বিঘা জমিতে ধান লাগিয়ে ছিল।কমলা কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করেছিল,
“আমরা কি মানুষ নই গো? এই মাটি কি আমাদের না?”
কেউ উত্তর দেয়নি।
শুধু হাওয়ায় ভেসে গিয়েছিল নীলকুঠির নির্মম নিস্তব্ধতা।
রামেশ্বর কাকা তখন গ্রামের মানুষদের একত্র করলেন।
তারা ঠিক করলেন—আর নয়, এবার নিজেদের জমি বাঁচাতে হবে।
রাতের অন্ধকারে চাষিরা একসাথে গেল নীলকুঠির দিকে।
কেউ লাঠি ধরল, কেউ মশাল,
আর সবাই একসাথে বলল—
“আমরা ধান চাষ করব! এই মাটি আমাদের!”
ভোরের আলোয় নীলকুঠির দেয়াল নিঃশব্দ,
কিন্তু চরগোবিন্দের মানুষের চোখে তখন জেগে উঠেছে এক নতুন সূর্য।
(কাল্পনিক ভিত্তিতে চরগোবিন্দের ঐতিহাসিক বাস্তবতা)
"কিন্তু দুঃখের বিষয় এই ত্যাগ বিপ্লবাত্মক আন্দোলন, যা পরবর্তীকালে বাংলার কৃষক বিদ্রোহ ও জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করেছিল তাকে কেউ মনে রাখে নি"
"আমাদের দাবি খাগডহর ইউনিয়নের চরগোবিন্দ গ্রামের কুটিবাড়ির ইতিহাস সরকারি ভাবে সংরক্ষণ করা হোক"
প্রেক্ষাপট:নীলকুটির কুটিবাড়ী
বর্তমানস্থান: চরগোবিন্দ,খাগডহর,সদর,ময়মনসিংহ
সুতিয়া নদীর কলকল ধ্বনি আর ব্রহ্মপুত্রের বিশালতার দক্ষিণে ছোট্ট এক শান্ত গ্রাম—চরগোবিন্দ। কিন্তু এই শান্তির উপর নেমে এসেছে অন্ধকার এক অধ্যায়—নীলকরদের অত্যাচার।
গ্রামের মাথা স্বাধীনতাকামী রামেশ্বর কাকা বলতেন,
"নীল তো রঙ না রে, এ হলো বিষ। যারা একবার এই নীলের সঙ্গে জড়ায়, তারা ধ্বংস হয়ে যায়।"
১৮৫৮ সাল — ব্রিটিশ শাসনের অন্ধকার যুগে পূর্ববাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল নীল চাষের বাধ্যবাধকতা তেমটার বিপরীত হয়নি চরগোবিন্দতে। ইউরোপে কাপড় রঙ করার জন্য নীল রঙের চাহিদা বাড়লো, ইংরেজ নীলকররা বাংলার উর্বর জমিগুলোকে দখল করতে শুরু করে।
নীলকর সাহেব উইলিয়াম হার্ডি প্রতি বছর গাঁয়ের চাষিদের “দাদন” নামক অগ্রিম ঋণ দিত, যার শর্ত ছিল: "ঋণ নিতে হলে ধান বা শস্য নয়, চাষ করতে হবে নীল"। প্রথমে প্রলোভন মনে হলেও, কৃষকরা পরে দেখল এই নীল চাষে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, ধানের জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, অথচ নীলের দাম নির্ধারণ করছে ইংরেজি সাহেবরা নিজেদের মতো করে ফলে চরগোবিন্দের অর্থনীতি ভেঙে পড়ল, কৃষকরা ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়ল; ফলাফল গিয়ে দাড়াল-
ঋণ → নীল চাষ → লোকসান → আরও ঋণ → সর্বস্বান্ত!
ইংরেজ সাহেবের গোয়েন্দারা গ্রামের পথে পথে ঘুরে বেড়াত।যার জমিতে নীল চাষ হয়নি — তাকে টেনে নীলকুঠিতে নিয়ে যাওয়া হতো।বাঁশের লাঠি, চামড়ার বেত, কখনো মাটিতে শুইয়ে পায়ে বেঁধে মারা আর নিষ্ঠুর হাসি।
“তোরা নীল চাষ করবি না কেন?”
“সাহেবের অর্ডার অমান্য করেছিস?”
কৃষাণী কমলা একদিন নিজের চোখে দেখেছিল—তার স্বামী গোপাল কে কুঠির আঙিনায় বেঁধে পেটানো হচ্ছিল। শুধু এই কারণে যে সে এক বিঘা জমিতে ধান লাগিয়ে ছিল।কমলা কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করেছিল,
“আমরা কি মানুষ নই গো? এই মাটি কি আমাদের না?”
কেউ উত্তর দেয়নি।
শুধু হাওয়ায় ভেসে গিয়েছিল নীলকুঠির নির্মম নিস্তব্ধতা।
রামেশ্বর কাকা তখন গ্রামের মানুষদের একত্র করলেন।
তারা ঠিক করলেন—আর নয়, এবার নিজেদের জমি বাঁচাতে হবে।
রাতের অন্ধকারে চাষিরা একসাথে গেল নীলকুঠির দিকে।
কেউ লাঠি ধরল, কেউ মশাল,
আর সবাই একসাথে বলল—
“আমরা ধান চাষ করব! এই মাটি আমাদের!”
ভোরের আলোয় নীলকুঠির দেয়াল নিঃশব্দ,
কিন্তু চরগোবিন্দের মানুষের চোখে তখন জেগে উঠেছে এক নতুন সূর্য।
(কাল্পনিক ভিত্তিতে চরগোবিন্দের ঐতিহাসিক বাস্তবতা)
"কিন্তু দুঃখের বিষয় এই ত্যাগ বিপ্লবাত্মক আন্দোলন, যা পরবর্তীকালে বাংলার কৃষক বিদ্রোহ ও জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করেছিল তাকে কেউ মনে রাখে নি"
"আমাদের দাবি খাগডহর ইউনিয়নের চরগোবিন্দ গ্রামের কুটিবাড়ির ইতিহাস সরকারি ভাবে সংরক্ষণ করা হোক"
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ফয়জুল মহী ১৩/১০/২০২৫অত্যন্ত সুন্দর লিখেছেন