www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

কিছু ট্যাবু আর আমাদের অবস্থান

যৌনতা একটা আদি এবং প্রাকৃতিক বিষয়। স্বাভাবিক হলেও বিকৃতরুচি আর এর অস্বাভাবিকতা অনেকের স্বপ্ন, শৈশব, এবং স্বাভাবিক জীবন কেড়ে নিয়েছে। আমরা যারা ভাবি এরকম শুধু মেয়েদের সাথেই হয়, হয়েছে বা হচ্ছে তাদের বলার জন্য আমার জীবনের কিছু বাজে অভিজ্ঞতা আছে।

১.
তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। আমাদের দুটো ঘর তখন। একটাতে আমি থাকতাম, অন্যটাতে আম্মা, বাবা, আর ছোটো ভাই, বোন থাকতো। কোনো কারণে বাবা বাসায় নেই। আম্মা আমি আর ছোটো ভাই বোন বাসায়। রাতে আম্মার খালাতো ভাই আসলেন। যথারীতি রাতে খেয়ে ঘুমোতে গ্যালাম। আমার সেই মামা আমার সাথে ঘুমোতে আসলেন। গভীর রাতে আড়াইটা বা তিনটার দিকে টের পেলাম কেউ আমার পেছনে খোঁচাচ্ছে। চুপ কোরে বোঝার চেষ্টা কোরলাম। কয়েক মুহূর্তেই বুঝতে পারলাম আমার সেই মামা পেছন থেকে প্যান্টের ভেতর হাত ঢুকিয়ে অনবরত আঙ্গুল আর শিশ্ন দিয়ে খোঁচাচ্ছে। ক্যামন অস্বস্তি হচ্ছিলো। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না কি হচ্ছে, উঠে মাকে ডাকলাম। রাগ উঠছিলো খুব, ভাবলাম মা'কে বলে দেবো। কিন্তু আম্মা বোলে ডাক দেবার পর আর কিছু বেরুলো না মুখ থেকে। আম্মা ততক্ষণে উঠেছেন। জিজ্ঞেস কোরলেন কি হয়েছে, বোললাম টয়লেটে যাবো। টয়লেট থেকে ফিরে মায়ের কাছে আসলাম, গলা জড়িয়ে বোললাম ঘুম আসে না। সেইদিনের পর থেকে আজও আম্মাকে কিছু বোলতে পারিনি। ভালো ছাত্র ছিলাম। চঞ্চল আর দুষ্টু ছিলাম। কিন্তু সেদিনের পর থেকে আমি একদম গুটিয়ে গ্যাছি। ভয় পেতাম। একটু বড় হতেই যেখন যৌনতা সম্পর্কে জানলাম। ঐ রাতের ঘটনা মনে কোরতেই গা গুলিয়ে যেতো। মাথা ঝিমঝিম কোরতো। কিচ্ছু ভাবতে পারতাম না।

২.
আমি তখন ক্লাস এইটে উঠেছি। স্কুলে কেউ কেউ ফোন ব্যবহার করে। বাজারে চায়না মাল্টিমিডিয়া ফোন নতুন এসেছে। আমার এক বন্ধু টাকা জমিয়েছিলো, আমরা ফোন কিনতে গ্যালাম পরিচিত এক দোকানে। দোকানের মালিককে চাচা ডাকতাম। বোললাম ফোন নিতে এসেছি। কর্মচারিকে ফোন দিতে বোলে উনি আমার সাথে গল্প জুড়ে দিলেন। হাত ধরলেন। ভাবলাম সন্তানতুল্য আমি, স্নেহভরে তিনি আদর কোরছেন। কিন্তু অস্বাভাবিক কিছু কথা বোলতে শুরু কোরলেন। প্রেম করি কি না! গার্লফ্রেন্ড আছে কি না! আরো অনেক কিছু, যেগুলো স্বভাবত নানা-দাদারা ইয়ার্কি ঠাট্টা কোরে বলেন। আমার ক্যামন লাগছিলো কথা গুলো। একটু পরে উনি আমার প্যান্টের জিপার টানা শুরু কোরলেন। আড়ালে এখানে ওখানে গুঁতো দিচ্ছেন। ততোক্ষণে আমার বন্ধুর ফোন নেয়া হয়ে গ্যাছে। দাম দিচ্ছে। হঠাৎ সেই দোকানদার বোললেন "এই চাচাকেও একটা ফোন প্যাক কোরে দে"
আমি বোললাম আমার কাছে টাকা নাই। উনি একরকম জোর কোরেই দিলেন। বোললেন "চাচা বাকীতে দিলাম, পরে দিয়েন আস্তে আস্তে"
আমি নিতে চাই না, তবু নিতে হলো। আর সেই লোক ফোনের টাকা নেয়ার ছলে বাসায় আসতেন। আম্মার সামনে পিঠে মাথায় হাত দিতেন, জড়িয়ে ধরতেন। আশ্চর্য হয়ে আম্মার দিকে তাকাতাম। আম্মা স্বাভাবিক। যেনো বাচ্চাকে আদর কোরবে এটাই স্বাভাবিক। আমি তো বোলতে পারতাম না, এই আদর আসলে কোন আদর। আমাকে ঐ লোক তার বাসায় যেতে বোলতেন। বোলতেন চাচা বাসায় আসেন, ভিডিওগেম দিবো। অনেক খেলনা দিবো। তারপর খাওয়াদাওয়া করে বাসায় রেখে যাবো।
আমি ভয়ে কাঁপতাম। তার কিছুদিন পরে টাকা দিয়ে দিয়েছিলাম আর সেই লোক আসলে আমি পালিয়ে যেতাম। এভাবে তাকে এড়িয়ে যেতে পেতেছিলাম। কিন্তু কাউকেই কিছু বোলতে বা বোঝাতে পারিনি।

৩.
তখন আমি এসএসসি দিয়েছি। কাজ নেই, ক্লাস নেই, পড়ার চাপ নেই। খুব উড়ে বেড়াচ্ছি। গান শুনতাম। আড্ডা, গান, কবিতা আর বন্ধুবান্ধব নিয়ে সারাটা সময় কাটতো। আমার পাশের বাসায় এক লোক আসতো। চাচ্চু বোলে ডাকতাম। লোকটা একটু মেয়েলি স্বভাবের ছিলো দেখে আমরা হাসাহাসি কোরতাম। আমাদের বাসায় আসতো। গল্প কোরতো। বেশ ভালো ব্যবহার। প্রায়ই চা খাওয়াতো, এটাওটা নিয়ে আসতো। কলম আর প্যাড দিতো। স্বাভাবিক মনে হচ্ছিলো সব। কিন্তু একদিন সন্ধ্যাবেলা সে আমার ঘরে আসলো। শীতের সন্ধ্যা। আমি গান শুনছিলাম। সে বোললো "ভাতিজ চলো চা খাইতে যাই।" আমি উঠলাম। খুব ফ্রেন্ডলি হওয়ায় সে কাঁধে হাত দিলো, স্বাভাবিক লাগলো। দুইহাত কাঁধে দিলো, স্বাভাবিক লাগলো। জড়িয়ে ধরলেন, সেটাও স্বাভাবিক লাগলো। কিন্তু যখন চুমু খেলেল, গা ঘিনঘিন কোরলো। মাথা ঝিমঝিম কোরতে লাগলো। কি হচ্ছে এসব ভাবতে আমি যখন একটা ট্রমায় চলে গ্যাছি, সে আমার আরো তীব্র চুমু খেতে শুরু কোরলো। ঝটকা দিয়ে সরিয়ে দিতেই সে চলে গ্যালো। কাউকে কি বোলবো? আমি একটা ছেলে মানুষ! একটা ছেলের সাথে একজন পুরুষ মানুষ এরকম কিভাবে কোরতে পাতে? ব্যাপারটা আমাকে খুব মুষড়ে দিচ্ছে, আমি গুটিয়ে যাচ্ছি। আমাকে কিছু একটা খেয়ে ফেলতে লাগলো। আমি আর তার সামনে যাই না। বাড়ি থেকে বাইরে যাই না। কাউকে কিচ্ছু বলি না। আমি এতোটাই শকড ছিলাম যে আমি মানতেই পারছিলাম না। এটা কিভাবে সম্ভব। এর পরে অনেকদিন কেটে গ্যালো। সেই লোক আবার নিয়মিত আসে বাসায়। আমি কথা বলি না। সামনে যাই না। তারপর সে আবার এরকম নোংরা ব্যবহার শুরু কোরলো, বিভিন্ন বাজে কথা, পর্ণফিল্ম দ্যাখাতো ফোনে, আমি পালিয়ে যেতাম। ঐ চেহারাটার চাইতে ভয়ঙ্কর কিছু আমার মাথায় আসে না।

এই ঘটনা গুলো আমার জীবন থেকে আমার শৈশব আর স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে। আমার মনোযোগ আমার পড়াশোনা তছনছ কোরে দিয়েছে। আমি স্বাভাবিক হতে পারিনি দীর্ঘদিন। প্রেম, যৌনা, শরীর আমার কাছে ঘেন্নার বিষয় হয়ে গ্যাছিলো। আমি মানুষ দেখলেই পালাতাম। একা একা থাকতাম। আমি অস্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিলাম। আজ আমার অনেক দিকে পিছিয়ে পড়ার জন্য এই ঘটনা গুলো কি দায়ী নয়? আমার জীবনে, বর্তমান আর ভবিষ্যতে দমিয়ে দেবার জন্য কি দায়ী নয়? আমি তো ছেলেমানুষ তাই না? আমার সাথে এসব ঘটবে এগুলো কেউ মানবে? কাউকে কিচ্ছু বোলতে পারি না। বলিওনি। আজ বোলছি কারণ আমি চাই না আর একটা "শাহরিয়ার শুভ" ভুক্তভোগী হোক। তার জীবনটা এরকম হয়ে যাক।
আপনারা ক্যানো আপনাদের বাচ্চাদের এসব সম্পর্কে জানান না? পরোক্ষভাবে আমি প্যারেন্টিং'এর দিকে আঙ্গুল তুলতে পারি,য় দোষ দিতেই পারি। আওয়াজ তোলা আর সচেতনার চর্চাটা ঘর থেকে শুরু হওয়াটা উচিৎ ছিলো। বাবা মায়েরা ক্যানো এসবকে ট্যাবু ভাবেন? তারা ক্যানো তাদের সন্তানকে শেখান না কোনটা স্নেহময় আদর আর কোনটা নোংরা? আর এরকম কিছু ঘটে গ্যালে বাবা মাকে বলা যায় না ক্যানো? যে দ্বিধাটার সৃষ্টি হয়েছে সেটি কি বাবা মায়ের উদাসীনতায় হয়নি? কোনটা সুস্থ স্পর্শ আর কোনটা নোংরা ক্যানো শেখান না? ক্যানো শেখান না কেউ তোমার সাথে নোংরা ব্যবহার কোরলে আমাদের জানাবে? এতো গ্যাপ ক্যানো থাকবে? ক্যানো এইসব ব্যাপার ট্যাবু হবে? আমার শৈশব কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে? আমার স্বাভাবিক সুস্থ জীবন কে ফিরিয়ে দেবে?
সময় আছে। ভাবুন। আপনারা শুরুতেই তাদের বিভাজিত কোরে ফেলছেন। আপনার সন্তানকে শেখান নারী নয়, মানুষকে সম্মান করো। প্রত্যেকটা শিশুর নিরাপদ শৈশবের অধিকার আছে। প্রত্যেকটা মানুষের নিরাপদ জীবনের অধিকার আছে। সুস্থ জীবন সবার কাম্য, স্বাভাকিক জীবন সবার কাম্য। আসুন ভবিষ্যতকে নিরাপদ করি। আওয়াজ তুলুন। ট্যাবু ভাঙ্গুন।
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৮৭০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৯/০৩/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast