www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বান্দরবান ভ্রমণ

কর্মবন্ধী মানুষের জীবনকে কিছুক্ষণের জন্য মুক্ত নিঃশ্বাস দিতে, প্রকৃতির কাছাকাছি গিয়ে জীবনকে উপভোগ করাতে, মাঝে মাঝে সময় করে ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়া প্রয়োজন। গত ৭ নভেম্বর, ২০১৯ তারিখে আমরা কয়েকজন গিয়েছিলাম সবুজের সমারোহে, পাহাড়ের কোল ঘেসে খেলে যাওয়া নির্মল বায়ুর দেশে, স্নিগ্ধতার রূপশ্রী বান্দরবানে। এ ভ্রমণে যে সকল দর্শনীয় স্থানগুলো দেখেছি, তার কিছুটা বর্ণনা তুলে ধরার প্রয়াস করেছি মাত্র।

নীলাচলঃ- বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে টাইগারপাড়ার পাহাড়চূড়ায় গড়ে তোলা হয়েছে আকর্ষণীয় এই পর্যটন কেন্দ্র, যার নাম- নীলাচল পর্যটন কমপ্লেক্স। নীলাচলকে বাংলাদেশে দার্জিলিং বললেই এর সৌন্দর্য সঠিকভাবে বোঝা যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬শ’ ফুট উঁচু এই পাহাড়ের চূড়া থেকে বর্ষা, শরৎ এমনকি হেমন্ত ঋতুতেও মেঘ ছোঁয়া যায়। অসীম মাধুরীময় এ নীলাচল দেখে চোখের ক্ষুধা মিটিয়ে এলাম। নিয়ে এলাম বিক্ষিপ্ত প্রাণের প্রশান্তির ছোঁয়া।

স্বর্ণমন্দিরঃ- 'বুদ্ধ ধাতু জাদি'- যা স্বর্ণ মন্দির নামে সুপরিচিত। এটি মূলতঃ বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের উপসনালয়। স্থানীয়রা একে কিয়াং বলেন। এই বৌদ্ধ মন্দিরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বুদ্ধ মূর্তিটি রয়েছে। কারুকার্যময় এ স্থাপনাটি স্বর্ণমন্দির নামে খ্যাত হলেও, এই মন্দির কিন্তু সোনা দিয়ে তৈরী নয়।

রূপালী ঝর্ণাঃ- বান্দরবান সদরের খুবই কাছে রেইচা ক্যাম্পের অনতিদূরে অনবরত বয়ে চলছে রূপালী ঝর্ণার জল। পাহাড়ি কন্যার কেশের মতোন নিরবধি ধারায়, অবিরাম বয়ে চলা রূপালী ঝর্ণার অপরূপ দৃশ্য মুগ্ধকর। রূপার মতোন চকচক করে এর ঝরে পড়া জলের ধারা। এখানে পর্যটন সুবিধা তেমন গড়ে না উঠলেও দর্শনার্থীরা ভীড় করে থাকে।

নীলগিরিঃ- সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২০০ ফুট উচ্চে নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র। সর্বদা মেঘমণ্ডিত আর এটাই এই পর্যটন কেন্দ্রের বিশেষ আকর্ষণ। এই পর্যটন কেন্দ্রটি বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে কাফ্রুপাড়াসংলগ্ন পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত। বান্দরবানের আঁকাবাঁকা পথ ধরে, ঘন শ্যামলের বুক চিরে রমণীর বেনীর মতো রমণীয় সুন্দর পথ ধরে চলে গেছে নীলগিরি পর্বতের শিখরে। পাখির দৃষ্টিতে দেখে এলাম দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়ের কোল ঘেসে মেঘেদের ছুটোছুটি। আহা! অপরূপ সেই সব দৃশ্য! এ সব দৃশ্যাবলী দেখতে দেখতে ভুলে যাওয়া যায়, জীবনের চাওয়া পাওয়ার কথা। ভুলে যাওয়ার যায়, ব্যাংকারের হিসেব নিকেশের কর্মবন্ধী জীবনের কথা। ভুলে যাওয়া যায়, নুন আনতে পান্তা ফুরানো টানা-পোড়েন সংসারের দুঃখের কথা। ভুলে যাওয়া যায়, প্রিয়ার বিধুর চোখের কটাক্ষের কথা। অপার সৌন্দর্যের আবিরে রাঙিয়ে তোলে বিস্তৃর্ণ প্রকৃতিকে। এ রকম অপূর্ব সৌন্দর্য দেখেই অকপটে বলে দেয়া যায়- আমি ঘুমাতে চাই এইখানে, এই ঘাসের ভিতরে। তুমি চলে যাও ; তোমার দম্ভের কাছে। ধনের দেবতা! তুমি ফিরে যাও; ক্ষুধার রাক্ষুসী! তুমি জাগাইও না আমায়। আমি মিশে রবো এইখানে, এই প্রকৃতির সাথে।

চিম্বুক পাহাড়ঃ- বান্দরবান শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক পাহাড়ের অবস্থান। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ২৫০০ ফুট। এ পাহাড় থেকে সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের দৃশ্য যে কোনো পর্যটককে মুগ্ধ করে। ( যদিও বৃষ্টির জল থেকে নিজেকে রক্ষা করার প্রয়োজনে আমি ছাতা মাথায় চিম্বুকের চূড়ায় উঠেছিলেম!) পাহাড় এবং সাগর- এই দুটি প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মধ্যে পাহাড়, নাকি সাগর কোনটা বেশি প্রিয়? তা হয়তো নির্দিষ্ট করে বলতে পারবে না অনেক পর্যটন প্রেমীরা। তবে, আমার মতো অনেক প্রকৃতি প্রেমিকেরা, তার প্রিয়াকে পাহাড় কিনে দেওয়া রোমান্টিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে থাকবেন নিশ্চয়ই। বাংলাদেশের পাহাড়ী সৌন্দর্যের মধ্যে পাহাড়ের রানী হিসেবে সর্বাধিক পরিচিত চিম্বুক পাহাড়। এটি বাংলদেশের তৃতীয় বৃহত্তম পাহাড়। সৌন্দর্যের রূপের বাটি উপুর করে মেলে ধরে সে পর্যটন পিয়াসী মানুষের কাছে।

শৈলপ্রপাতঃ- বান্দরবান সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-নীলগিরি সড়কের পাশেই অবস্থিত শৈলপ্রপাত ঝর্ণা। স্বচ্ছ ও ঠাণ্ডার পানির এ ঝর্ণাটি প্রকৃতির অনন্য সৃষ্টি। বর্ষার এর রূপ হয়ে উঠে ভয়ংকর সুন্দর! কুলুকুলু স্বরে বয়ে যায় পাথুরে মাটির বুকের উপর দিয়ে। যদিও এ ঝর্ণার জলে স্নান করার প্রত্যাশা নিয়ে গিয়েছিলেম; কিন্তু ঘুর্ণিঝড় 'বুলবুল'-এর আশঙ্কায় দ্রুত ফিরে আসতে হয়েছিলো।

যখন আমরা প্রকৃতির কাছে যাই, মনটাকে হারিয়ে ফেলি, খুঁজে পাই আমাদের আত্মাকে। কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ বলেছেন, 'প্রকৃতি কখনো হৃদয় আর ভালোবাসার সঙ্গে ধোঁকা দিতে পারে না। প্রকৃতির কাছে গেলে মন ভালো হয়ে যায়, প্রকৃতি সুন্দর হলে মনও সুন্দর হয়ে যায়'। কিন্তু আমরা যারা নিজেদের মানুষ বলে দাবি করি, সেই আমরা হৃদয় ভাঙি, ভালোবাসার সঙ্গে মিথ্যাচার করি। প্রকৃতির উপর অত্যাচার করি। প্রকৃতিও মানুষের মতো প্রাণের দাবি রাখে। গাছেরও প্রাণ আছে। নদীরও প্রাণ আছে। তারাও আমাদের মতো বেঁচে থাকার অধিকার রাখে। সহনশীলতা সম্প্রীতি বোধের মাত্রা প্রকৃতিরও আছে। প্রকৃতি কখনো প্রতিহিংসাপরায়ণ হয় না। কিন্তু, সময়ের তাগিদে কখনো কখনো প্রতিশোধপরায়ণ তাকেও হতে হয়। এই আলো-বাতাস-নদী-পাহাড়-ঝরনা-ফুল-প্রজাপতি-মেঘ এমনকি গহীন অরণ্য সব প্রকৃতির দান। আমাদের প্রয়োজনেই এ সকলের যত্ন নেয়া উচিৎ।
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ৫৬৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১১/০৬/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • বিভুতি দাস ০২/০৭/২০২১
    ২০২০ র ১৯ শে ফেব্রুয়ারি আমি, দোস্ত অনিরুদ্ধ এবং মনিরুল গিয়েছিলাম। আমি বা আমার সাথীরা কেউ জানতাম না বিদেশীদের ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমোদন নিতে হয়। সে কারণে সারারাত বাস যাত্রার পরে আমার জন্য ওদের বেশ ধকল পোহাতে হয়েছিল। আমি আটকে ছিলাম চেকপোস্টে। পরে সমস্যা মিটিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম। ভালো জায়গা নিশ্চয়ই। তবে আমার মনে ধরেছে রাঙ্গামাটির নৈসর্গিক রূপ। আহা কোনদিন ভুলবো না। রাঙা মাটিতে ২০১৯ শের ফেব্রুয়ারিতে গিয়েছিলাম। য়াবার যদি সময় পাই তবে রাঙামাটি তে যাবোই। আর টেকনাফ আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে দুর্যোগের কারণে, স্টীমার থেকে নেমে আসতে হয়েছে । এ দুঃখ ভোলার নয়। তবে খানি মিটেছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে।
  • দীপঙ্কর বেরা ২৩/০৬/২০২০
    ভাল বর্ণনা
  • সুন্দর বর্ণনা খুব ভালো লাগলো, ঘুরতে যাওয়ার সখ আছে
  • ফয়জুল মহী ১১/০৬/২০২০
    Best wishes
 
Quantcast