www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

একটি আমের জন্য

টুপটুপ বৃষ্টি পড়ছে। মৃদু ঠান্ডা হাওয়াও বইছে। বোশেক মাস। আমের দিন। প্রচন্ড গরমের মধ্যে এ যেন খানিকটা প্রশান্তি ও প্রস্বস্থি। রাব্বির কঁচি চঞ্চলা মন বারবার চাইছে একটু বাইরে বেরুতে। কিন্তু মায়ের বকুনি শুনতে হবে ভয়ে বের হচ্ছেনা। ক্লাস সিক্সে পড়–য়া একটা ছেলের মন কেমন হয় সেটা হয়তো সকলে আমরা বুঝি। কারণ সে শৈশবকালটি আমরা সকলে পেরিয়ে এসেছি। একটু খেলাধুলা, বাইরে বন্ধুদের সাথে দৌড়াদৌড়ি, দাপাদাপি, আমের দিনে আম কুড়ানো, আম গাছে ঢিল ছোড়া, ভরদুপুরে বাড়ীর সামনের পুকুরে সাঁতার কেটে পানি ঘোলা করা এই যা।
রব্বির স্কুল গ্রীষ্মের বন্ধ। স্কুল যেদিন বন্ধ দিয়েছে সেদিন তার কী যে খুশি। এই তো সূযোগ। এবার বেশী করে বন্ধুদের সাথে খেলতে পারবো, আড্ডা দিতে পারবো, আম কুড়াতে পারবো। কত মজা হবে।
রাব্বিদের কোন আম গাছ নেই। থাকবে কোত্থকে ? থাকার মতো যার দ’ুদন্ড জায়গা নেই , সেখানে আম গাছ থাকবে কোত্থকে ?
রাব্বীর বাবা দরিদ্র শ্রমিক। দিনে এনে দিনে খায়। কোন দিন কাজে যেতে না পারলে সেদিন স্ত্রী, পুত্র নিয়ে উপোস থাকতে হয়। তার বাবার উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া মাত্র দুই রুমের একটি কুড়ে ঘরে কোন রকম দিন কাটাতে হয়। কষ্ট করে সংসার চালায় আর স্বপ্ন দেখে একমাত্র পুত্র রাব্বীকে লেখা-পড়া শিখিয়ে বড় মানুষ করবে।
রাব্বীর পাশের ঘরে চাচাদের একটি আম গাছ আছে। ঐ গাছে আম পাকলে সেগুলো একটু বাতাসেই ঝরে পড়ে। টিনের চাল, তাই আম পড়লে ঝন্ করে শব্দ হয়। রাব্বী চায়, ঐ ঝরে পড়া আম নিতে। কিন্তু মা নিতে দেয় না। তারা দরিদ্র হলে কী হবে, আতœসম্মানবোধ আছে। ঐ আম নিতে গেলে যদি বড় কথা বলে। তাই মা নিষেধ করে দিয়েছে উঠোনে আম পড়ে থাকলেও যেন না ধরে। মায়ের সুবোধ বালক রাব্বীও তাই ঔ আম ধরে না।
মায়ের কাছে সে বায়না ধরেছে, যেন বাজার থেকে তার জন্য বাবা আম এনে দেয়। কিন্তু দরিদ্র পিতার যেখানে নুন্ আনতে পান্তা ফুরায় সেখানে বাজার থেকে আম কিনে আনা কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। তবুও বাবা চেষ্টা করছে আম কিনে এনে ছেলেকে খাওয়াতে। একদিন দু’দিন করে সপ্তাহ চলে যায়। আম আনতে পারেনা। ছেলেকে বারবার আনবে বলে আশ্বস্থ করে।
একদিন রাতের ঘটনা। রাব্বী রাতের খাবার খেয়ে পড়ার টেবিলে পড়ছে। পরিশ্রমী পিতা সারাদিন মেহনত করে এসে রাতে খাবার পর আর বসে থাকতে পারে না। শুয়ে পড়ে। মা ছেলের পড়ার জন্য রাত জেগে থাকে, বসে থাকে পাশে। কিন্তু সেদিন মাও সারাদিন খাটুনি খাটায় শরীর যেন ঝিমিয়ে পড়েছে। তাই মাও তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েছে। রাব্বী মনোযোগ দিয়ে টেবিলে পড়ছে। এমন সময় ঝন্ করে টিনের চালে শব্দ হলো। তার মানে গাছ থেকে আম পড়েছে। হঠাৎ তার মন উৎলা হয়ে ওঠলো। আম খাওয়ার ইচ্ছা হলো। ছোট ছেলে তো। মায়ের নিষেধ থাকলেও আজ কেন জানি তার মন চাইলো ঐ আম খেতে। আধাঁর রাত। সবাই ঘুমিয়ে। এখন একটি আম নিলে হয়তো কেউ দেখবে না। আর একটি আম নিলে কী বা হবে। মায়েরাও ঘুমিয়ে, চাচারাও ঘুমিয়ে। এখনি মুক্ষম সময়।
রাব্বী কান পেতে শুনল কেউ চাচাদের ঘর থেকে বের হলো কিনা। না, কোন সাড়া শব্দ নাই। নিশ্চিত হয়ে সে চুপিসারে ঘরের দরজা খুললো। অন্ধকার রাত। সামনে দু’কদমও দেখা যাচ্ছে না। সে কুপিটা একটু বের করে উঠোনের কোন্ জায়গায় আমটি আছে নিশ্চিত হলো। তারপর কুপিটা ঘরে রেখে তটস্থ মনে কম্পিত কদমে আমের লক্ষ্যে এগিয়ে গেল। আমের খুব কাছাকছি পৌঁছে সে যেইমাত্র আমে হাত দিবে এমন সময় চাচাদের ঘর থেকে দরজা খুলে গর্জন দিয়ে ওঠলো, কে ?
রাব্বী ভয় পেয়ে গেল। সে কম্পিত কন্ঠে বলল, চাচা আমি রাব্বী।
এখানে কি করছ ? -চাচার ঝাঁঝালো কন্ঠ।
তিনি বলতে লাগলেন, আম চুরি করতে আসছ ? তোমার বাবা তো তোমারে লেখা-পড়া শেখায়। কী, চুরি করার জন্য ? বেটা, লেখাপড়া শিখছে না চুরি শিখছে। ঐতো আমি বলিনা ! যে যত বড় শিক্ষিত, সে তত বড় চোর। তোমার মা তোমারে পেটে নিয়ে কোন দিন আম খাইনি তো। তুমি চুরি করবেনা কি করবে ?- আরো সব বিশ্রি শব্দ চাচার কন্ঠে।
রাব্বীর বাবা-মা ইতোমধ্যে ঘুম থেকে ওঠে এসেছে। বাইরে বেরিয়ে দেখে তাদের একমাত্র আদরের ছেলেটি একটি আমের জন্য সাজাপ্রাপ্ত চোরের মতো নিতর দাঁড়িয়ে আছে আর চোখ দিয়ে টপটপ পানি পড়ছে। ঐ দিকে চাচা অশ্রাব্য ভাষায় কি সব বলে যাচ্ছে। ছেলের ঐ অবস্থা দেখে বাবা-মা চোখে পানি ধরে রাখতে পারলো না।
বাবা গিয়ে ছেলেকে হাত ধরে ঘরে নিয়ে আসলো। কিন্তু রাব্বীকে কিছুই বললো না।
পরের দিন গুড়িগুড়ি বৃষ্টি আর হালকা বাতাসে যখন আম গাছ থেকে আম পড়ছে, অবুঝ রাব্বী সেই আমের দিকে চেয়ে চেয়ে কী যেন ভাবছে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ২৫৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৩/০৫/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast