www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

অপূর্ণতা কিংবা কিছু জীবন

বাজারে ঢোকার
মুখটাতে ছোট্ট
একটা বটগাছ। শফিকুর
বটগাছের
গোড়াতে বসে আছে। তার
হাতে জ্বলন্ত বিড়ি।
শফিকের বিড়িতে ছোট
একটা টান
দিয়ে চারপাশে তাকাল।
লোকজন তেমন
একটা হয়নি। পনের-
ষোল জন লোক বসে আছে।
তাদের অর্ধেকই শিশু।
অনেকদিন
ধরে ভাবছে একটা
হ্যান্ডমাইক কিনবে।
হ্যান্ডমাইক
ছাড়া লেকচার তেমন
জমে না।
শফিকুর
বিড়ি ফেলে উঠে দাড়ায়।
তার বাক্স
খুলে ট্যাবলেটের
প্যাকেটগুলো সামনে
বিছানো কাপড়ে সাজিয়ে
রাখে।
শফিকুর
ধীরে ধীরে বলতে শুরু
করে। লেকচার শুরুর
আগেই সে শিশুদের
চলে যেতে বলে।
বাচ্চারা তার
কথা শুনে নড়ে চড়ে বসে,
তাদের আগ্রহ
বাড়তে থাকে। দুর্বলতা,
অক্ষমতা শব্দগুলো তারা
বুঝতে পারেনা, কিন্তু
এগুলো শোনার পর
তারা এক ভিন্ন
অনুভূতি অনুভব করে।
শফিকুরের গলার স্বর
ধীরে ধীরে উঁচুতে উঠতে
থাকে। সে তার ওষুধের
গুণাবলী বলে যেতে
থাকে, " দাম্পত্য
জীবনে অসুখী, স্ত্রীর
কাছে লজ্জা পাচ্ছেন,
সন্তান
হচ্ছেনা, .....................................
..।"
শফিকুর
বলে যেতে থাকে।
সে জানে এখানে যারা
তার লেকচার
শুনছে তাদের অল্প
কয়েকজনই তার ওষুধ
কিনবে। তার
বেশিরভাগ ক্রেতাই
আসে গোপনে। অনেক
শিক্ষিত লোকজনও আসে।
শফিকুর তাদের
ট্যাবলেট দেয় আর
মনে মনে হাসে।
কয়েকমাস আগে উপজেলা
চেয়ারম্যান
শফিকুরকে তার
বাড়িতে ডেকে পাঠান।
নিঃসন্তান
চেয়ারম্যান তার কাছ
থেকে দশ ফাইল
ট্যাবলেট নিয়ে যান।
গরমটা বেশী পরে গেছে।
চারদিক
তেতে উঠছে গরমে।
শফিকুর পাশের দোকান
থেকে একগ্লাস
পানি খেয়ে নেয়।
জীবনের এক বিশাল অংশ
নিয়ে তার ব্যাবসা।
মানুষের
অতৃপ্তিগুলো তার
ব্যাবসার মূলধন।
জীবনের শেষ মুহূর্তেও
মানুষ
ব্যাপারটাকে এড়িয়ে
যেতে পারেনা।
জীবনের লক্ষ্য
এবং উদ্দেশ্যগুলো এখানে
এসে মিলিত হয়।
ধনী দরিদ্র সবাই
এখানে এক। যারা এই
ব্যাপারটা এড়িয়ে
গেছেন তারাই
মহাপুরুষ। কিন্তু
জীবনের
একটা গুরুত্বপূর্ণ
সত্যকে অস্বীকার করার
মধ্যে কৃতিত্বের কিছু
নেই।
শফিকুর গামছা দিয়ে মুখ
মুছে উঠে দাড়ায়।
তাকে ঘিরে ধরা লোকজন
আবার নড়েচড়ে বসে।
শফিকুর তার লেকচার শুরু
করে,
"দাম্পত্য জীবনে অসুখী,
স্ত্রীর
কাছে লজ্জা পাচ্ছেন,
সন্তান
হচ্ছেনা, .....................................
..।"
পাশ
দিয়ে যাওয়া মহিলারা
একে অপরের
গায়ে ধাক্কা দেয়,
হাসাহাসি করে।
শফিকুর বলে যায়, একেই
কথা বারবার
বলতে থাকে।
সন্ধ্যা হলে শফিকুর
ঘরে ফিরে। তার
প্রতীক্ষারত বউ
আমেনার মুখে আনন্দের
হাসি খেলে যায়।
সারাদিনের গল্প
করে শফিকুর।
আমেনা গল্প শুনে আর
ময়দা আর
চিনি মাখিয়ে ট্যাবলেট
বানায়।
তার স্বামী যখন তার
পাশে বসে গল্প
করে তখন তার
নিজেকে সবচেয়ে সুখী
মনে হয়।
শফিকুর আমেনার
দিকে তাকায়,
হারিকেনের মৃদু
আলো তার
চোখে খেলা করছে।
শফিকুর মুগ্ধ
হয়ে তাকায়। প্রায় দশ
বছর হয়ে গেল তার
বিয়ে হয়েছে।
সে নিজেকে ভাগ্যবান
ভাবে আমেনার মত একজন
বউ পেয়েছে বলে।
রাতে খাওয়া শেষ
করে তারা শুতে যায়।
আমেনা ফুপিয়ে ফুপিয়ে
কাঁদছে। এই কষ্ট
মাতৃত্ববোধের কষ্ট।
একটা সন্তানের জন্য
তার মনে তীব্র
আখাংকা। অনেক
চেষ্টা করেছে দশ
বছরে, কিন্তু
একটা সন্তানের মুখ
দেখতে পারেনি।
আমেনা কাঁদতে থাকে,
তার কান্নায় কষ্ট
ভেসে যাচ্ছে।
মাতৃত্ববোধের
অপূর্ণতা অশ্রু
হয়ে ঝরে পড়ছে তার
চোখ দিয়ে।
শফিকুর
বিছানা ছেড়ে উঠে
বাইরে গিয়ে দাড়ায়।
শেয়ালগুলো ক্রমাগত
ডেকে যাচ্ছে। শফিকুর
অন্ধকারের
দিকে তাকিয়ে থাকে।
সে আস্তে আস্তে তার
লেকচার বলতে থাকে।
তার গাল বেয়ে অশ্রু
ঝরে পরছে। অন্ধকার
আরও ঘন হয়ে যায়
জীবনের কষ্টগুলোতে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭৯৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১২/০৯/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • রাসেল আল মাসুদ ১৩/০৯/২০১৩
    পড়ে ভাল লাগলো। তবে অনিত্যের সাথে একমত। লাইনগুলো ভেঙে ভেঙে লেখাতে দেখতে কবিতা কবিতা লাগলেও পড়তে বারবার কেমন যেন লাগছিল।
  • Înšigniã Āvî ১৩/০৯/২০১৩
    অনবদ্য....
  • অনিত্য ১৩/০৯/২০১৩
    ভাল লিখেছেন। তবে গল্পটি এভাবে কবিতার মতো লাইন ভেঙ্গে লেখায় পড়তে বেশ কষ্ট হয়েছে।
 
Quantcast