www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

রোহিঙ্গা সংকট খারার উপর মরার ঘা

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। জাতিসংঘ মহাসচিবকে জটিল এই পরিস্থিতির প্রতি আরও বেশি মনোনিবেশের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যদি অতি দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করা না হয়, তাহলে এই অঞ্চলে আরও অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ হলে মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ উত্থাপিত জাতিসংঘের বার্ষিক রিপোর্ট এবং ২০২১ সালের অগ্রাধিকারসমূহের উপর আয়োজিত ব্রিফিংয়ে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা এসব কথা বলেন। করোনা মহামারির ভয়াবহ পরিস্থিতি দক্ষতার সঙ্গে এবং কার্যকর ও সমন্বিতভাবে মোকাবিলার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। গতকাল শনিবার জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
রাষ্ট্রদূত ফাতিমা স্মরণ করিয়ে দেন, বাংলাদেশ ১.১ মিলিয়ন জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই সঙ্কটের টেকসই সমাধানে আরও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপের প্রয়োজন।
এসময় করোনা টিকা নিশ্চিত করা, জরুরি জলবায়ু পরিস্থিতি মোকাবিলা, এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণ, এজেন্ডা ২০৩০ এর বাস্তবায়ন, ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার, শান্তিরক্ষা ও রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবিলার মতো বাংলাদেশের জাতীয় অগ্রাধিকারসমূহের কথা তুলে ধরেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি। মহামারি কাটিয়ে পুনরায় ভালো অবস্থায় ফিরতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে অংশীদারিত্ব ও সংহতি গড়ে তোলার গুরুত্ব ও তাৎপর্যের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, বিভিন্ন দেশ ও জাতিসমূহের মধ্যে আসন্ন টিকা বৈষম্য কাটিয়ে তুলতে প্রয়োজন ন্যায়সঙ্গত, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী টিকার বিশ্বব্যাপী প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা, যার নেতৃত্ব দিতে পারে জাতিসংঘ। টিকার উৎপাদন পর্যায়ে যেভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বিতরণের ক্ষেত্রেও একইরকম গুরুত্ব দিতে হবে।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, উত্তরণের পথে থাকা এবং উত্তরিত দেশগুলোর জন্য সময়সীমা ভিত্তিক সহযোগিতার পদক্ষেপসমূহ এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য প্রণোদনা ভিত্তিক উত্তরণ পথ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। যদি তা না করা হ, তবে, করোনার কারণে নেতিবাচক পরিস্থিতিসহ বিদ্যমান নাজুক পরিস্থিতির কারণে এসকল দেশের কষ্টার্জিত উন্নয়ন-অর্জন মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়বে। কার্বন-নিরপেক্ষতা না আসা পর্যন্ত জলবায়ু জরুরি অবস্থা ঘোষণা’র বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বিশ্বনেতাদের প্রতি যে আহ্বান জানিয়েছেন তার প্রশংসা করে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ এক্ষেত্রে গ্রহকেন্দ্রিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে এবং জলবায়ু পরিবর্তন রোধে যুদ্ধ অবস্থার মতো করে কাজ করার জন্য বিশ্বকে আহ্বান জানিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ৪৮ সদস্য বিশিষ্ট ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের চলতি সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু বিষয়ক সকল ক্ষেত্রে জলবায়ু-ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহ বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশ ও ক্ষুদ্র উন্নয়নশীল দ্বীপরাষ্ট্রসমূহের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এবছর নভেম্বর মাসে গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিতব্য কোপ২৬ এর সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিবের নতুন জলবায়ু লক্ষ্য এবং জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতিসমূহ পূরণ হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, শান্তি বিনির্মাণ ও টেকসই শান্তি পদক্ষেপ এবং এগুলো অর্জনে নারী ও যুবদের উপর বিশেষভাবে মনোনিবেশ প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। কোভিড-১৯ সত্ত্বেও বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীসহ অন্যান্য ফ্রন্টলাইন কর্মীগণ বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা প্রচেষ্টায় অব্যাহত ও নিবেদিতভাবে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে মর্মে উল্লেখ করেন তিনি। ভবিষ্যৎ মহামারি বা এ ধরনের যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে শান্তিরক্ষীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় শান্তিরক্ষা ম্যান্ডেট অনুয়ায়ী অবশ্যই প্রয়োজনীয় পূর্বপ্রস্তুতি নিশ্চিত করা উচিত বলে জানান তিনি।
প্রথাগতভাবে প্রতিবছরের শুরুতে জাতিসংঘ মহাসচিব একটি অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে জাতিসংঘের অগ্রাধিকারসমূহের কথা তুলে ধরেন। এবছর জাতিসংঘের অগ্রাধিকারসমূহ হলো- কোভিড-১৯ এর টিকার সুষ্ঠু ও সমবন্টন এবং বিশ্বস্বাস্থ্য ব্যবস্থা রক্ষা, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, জলবায়ু ও জীববৈচিত্র্য, দারিদ্র্য ও অসমতা মোকাবিলা, মানবাধিকার, লিঙ্গ সমতা, শান্তি ও নিরাপত্তাহীনতা রোধ, পারমানবিক নিরস্ত্রীকরণ, ডিজিটাল প্রযুক্তির বিপদজনক দিকসমূহ প্রতিরোধ করা এবং সার্বজনীন বিশ্বব্যবস্থা অব্যাহত রাখা। জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রসমূহের স্থায়ীপ্রতিনিধি/প্রতিনিধিগণ মহাসচিবের এই ব্রিফিংয়ে অংশগ্রহণ করেন।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৪০১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ৩০/০১/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast