www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

খাদ্যগ্রহণ সকালের নাস্তা

স্কুলে খাদ্যচক্র পড়ে মনে মনে ভাবতাম, খাদ্য মানে একে অন্যকে খাওয়া। এ খাদ্য চক্রের সর্ব উপরে থাকত মানুষ। মানুষ প্রাণি ও উদ্ভিদ উভয়ই খেতে পারে। আগুনে পুড়িয়ে খাওয়ার পর , বর্তমানে মানুষ প্রক্রিয়াজাত খাবারের দিকে ধাবমান। আগামীতে হয়তো মানুষ আরো বেশী রেডিমেইড খাবারের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

খাদ্য শুধু আমাদের শারীরীক গঠন, রোগ প্রতিরোধ ও শক্তি প্রদানের জন্য নয়। খাদ্য আমাদের সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যেও ভূমিকা রাখে। ইউকে মাইন্ড এর গবেষণা মতে, খাদ্যগ্রহণ ব্রেনের গঠনের উপর প্রভাব বিস্তার করে বিধায়, এর কার্যকারিতা, অনুভূতি ও আচরনের উপর ভূমিকা রাখে। অপরদিকে আবহায়া পরিবর্তন, বিভিন্ন শারীরীক সমস্যা আমাদের খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস পরিবর্তন করে দেয়। উদাহরন স্বরূপঃ যদি কেউ খাবারের প্রায় এক তৃতীয়াংশ শাক-সবজি, ফলমূল; অর্ধেকের কিছু কম মাছ গ্রহণ করে তবে তার মস্তিস্ক সঠিকভাবে কাজ করবে। কিন্তু আমরা যখন কোন মিস্টি খাবার খাই তা সাথে সাথে আমাদের রক্তের মাধ্যমে ব্রেনে চলে আসে। এতে ব্রেনের ডোপামিন হরমোন এ খাবার বেশী পরিমাণ বার বার খেতে আগ্রহী করে তোলে। ফলে আমরা তা অতিরিক্ত গ্রহণ করি এবং শরীরের ক্ষতি সাধন করি।


ছোটবেলা যখন আমার রোজা পালনের সময় হয়নি, আমি বলতাম আমি রাত্রে রোজা রেখেছি; সারা রাত কিছু খাইনি। আসলে সকালের নাস্তার ইংরেজি Breakfast এসেছে Break + Fast এর শব্দগত মানে রোজা ভঙ্গ। রোজা ভঙ্গের ইফতারে সাধারণত মুসলমানরা নরম ও সহজ খাদ্য খাই। যেন সারাদিনের রোজা শেষে শরীর সহজে গ্রহণ করতে পারে। আবার খাবারের বেশীরভাগ অংশই তরল জাতীয় হয়। পানি সরবত, সালাদ ইত্যাদি। আমাদের দেশে পান্তা ভাত জনপ্রিয় সকালের নাস্তা হলেও আমার জীবনে একবার মাত্র গ্রহণ করেছিলাম। এতে নাকি অনেক প্রয়োজনীয় খনিজ লবণ সঞ্চিত হয়। আবার অনেক ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে যা শরীরের জন্য উপকারী। আমরা দেশে সকালের চা বিস্কুট খেয়েই মসজিদে যেতাম এবং এসেই পূর্ণ খাবার খেয়ে স্কুলে যেতে হত। এছাড়াও আমরা ডিম ভাজি রুটি, ইত্যাদি নাস্তা করতাম। ব্রেড, চিড়া -কলা , দুধ চলত একেবারে প্রথমে , চায়ের সাথে। ইংলিশ ব্রেকফাস্টে সাধারণত ব্রেড টোস্ট, হ্যাস ব্রাউন, ডিম পুচ, বেকড বিনজ, ব্লেক পুডিং, মাশরুম, বেকন- সসেজ (হালাল নয়), বিভিন্ন ধরেনর সিরিয়েল, দুধ , চা কপি ইত্যাদি থিকে। আফ্রিকার সকালের নাস্তা যেমন-জ্যামাইকাতে নাকি যেকোন ধরনের মাছ দিয়ে করে থাকে। আসলে কোন খাবরে সকালের নাস্তা হবে তা ঐ স্থানে প্রাপ্য খাবার ও মানুষের অভ্যাসের উপর নির্ভরশীল।

পূর্ণবয়স্ক অনেকেই সকালের নাস্তাকে কোন কাজ হিসেবে গণ্য করেননা। এটি শুধু বাংলাদেশের চিত্র নয়, এমনটি সারা বিশ্বেই হয়ে থাকে। রাতের খাবার এবং দেরীতে খাবার যেমন ঘুমের সমস্যা করে তেমনি বিভিন্ন শারীরীক সমস্যা সুষ্টি করে। আগে এরকম ছিলনা। সন্ধ্যার পর নামাজ শেষ করে সবাই ঘুমিয়ে যেতেন। আমার দাদার মুখে শুনেছি, " সকাল বেলার মোটি- সারা দিনের খুটি"। তারা সূর্য্য উঠার আগে সকালের নামাজ পড়ে, খাবার খেয়ে হাল চাষে চলে যেতেন। গরু ডাকানোর হায় হির.. থিথি.. ইত্যাদি আমি নিজেও শুনেছি। মসজিদে একবার ফজরের পর সবাই কিছু তছবিহ পড়ে যখন হুজুর লম্বা হাত তোলে মোনাজাত শুরু করতেন, তখন কৃষক দাদারা বলতেন হুজুর দুয়া ছোট করেন, হালে যাব কোন সময়। দাদীরা আরো আগে ঘুম থেকে উঠতেন। খাবার দাবার তৈরী করতেন। ঘরের সকল কাজকর্ম রান্নাবান্না করে নামাজ পড়তেন, খাবার দাবার করে দিনের শুরু হতো। কারণ তারাও ঘরে কায়িক শ্রম করতেন। ধান ভাঙ্গা, গরুদের দেখাশুনা, বীজের যত্ন হাঁস মুরুগের খাবার দেয়া ইত্যাদি । তারা আমার মাকে বলতেন তাদের শাশুড়ীরা , জায়েরা নাকি আরো বেশী কাজ করতেন আর তাদের দিয়ে খাটাতেন। তাই আমার মা যতই কাজ করেননা কেন তাঁর মনপূত হতনা।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রায় ২৫ % মানুষ সকালের নাস্তা খায়না যাদের খাওয়ার যথেষ্ট সামর্থ আছে। আমাদের শরীরের খাবার ভেঙ্গে যে গ্লোকোজ হয় তা আমাদের শরীরের কাজকর্মে শক্তি যোগায় কিন্তু অতিরিক্ত হলে অগ্নাশয় হতে নির্গত ইনসুলিন তা নিয়ন্ত্রণ করে। সকালে ইনসুলিন নির্গতের পরিমাণ বেশী থাকে ও দিনের শেষদিকে কমতে থাকে। আমরা যদি সকালের দিকে কম খাই আর রাতে বেশী খাই তবে শরীরের ইনসুলিন নির্গত হতে সমস্যা হয় । এতে টাইপ ২ ডায়বেটিসের ঝুকি বেড়ে যায়। এমনকি বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, যারা সকালের নাস্তা ঠিকমত খান না তাদের উচ্চ রক্তচাপ, করোনারী হার্টের অসুখ, মোটা হওয়া, হাইপার মেটিবলিক সিনড্রম সহ বিভিন্ন সম্যা দেখা দেয়।

মোট কথা হলো তাদের সকালে শুরুটি ছিল অসাধারণ। শারীরীকভাবে তারা ছিলেন অনেক উন্নত। তাদের খাবার ছিল অসম্ভব স্বাস্থ্যকর আর মন ছিল প্রফুল্ল। যুগের পরিক্রমায়, নগর সভ্যতার বিকাশে মানুষ এখন যান্ত্রিক হয়েছে। খাবার দাবারেও পরিবর্তন এসেছে, পরিবর্তন এসেছে কাজকর্মে, শারীরীক গঠনেও। যদি এখনকার যুগেও মানুষ তাদের মত খাবার দাবার ও শারীরীক শ্রম দেয়, তাহলে তাদের মতই প্রাণশক্তি নিয়ে বেঁচে থাকবে কারণ আমাদের শরীর তাই আমরা যা খাই। সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ খাবার আমাদের অতি প্রয়োজন।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৫৯৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৫/০৩/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast