www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন

দেশে এখনও গণতন্ত্র অনুপস্থিত রয়েছে। কারণ এখন আর ভোটাধিকার নেই। দেশে আজ নিয়ন্ত্রিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সরকার সংবিধানকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। আগামী নির্বাচনে ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ইসি (ইলেকশন কমিশন) এ ব্যবস্থাকে আরো প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। তড়িঘরি করে ইভিএম ব্যবহার করলে এর দায়ভার ইসিকেই নিতে হবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে সেন্টার ফর গবর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত “নির্বাচনের রাজনীতি ও জনগণের ভোটাধিকার” শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সিজিএস’র চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার আমীর উল হক, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, প্রফেসর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক, ফেমার চেয়ারম্যান ড. মনিরা খান, লেঃ জেনারেল (অবঃ) মাইনুল ইসলাম, দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, এডভোকেট স ম রেজাউল, ব্যবসায়ী আব্দুল হক, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য জহিরউদ্দিন স্বপন প্রমুখ।
ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, নির্বাচন নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা বেশি। কিন্তু এখন কিছু মানুষ জামিন নিয়ে হাইকোর্টে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। তারা ঘর ছাড়া। তারা জামিন কখন নেবেন আর নির্বাচনে কখন আসবেন। আবার প্রিজাইডিং অফিসার কে হবেন তা নিয়েও নানা কথা হচ্ছে। ফেয়ার নির্বাচন নিয়ে আমাদের প্রথমে দেখতে হবে গ্রাম-শহর-বস্তির মানুষ হয়রানি শিকার হচ্ছে কিনা, তারা জামিন পাচ্ছে কিনা। তিনি বলেন, অন্তত একটি মাস সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করলে ভোট সুষ্ঠু হবে। কারণ ভোট মানুষের মুক্তির পথ, উন্নয়নের পথ, ক্ষমতায়নের পথ। জনগণকে চলার পথ সুগম করে দেন, তাদের প্রতি ভরসা রাখুন। ভোটের অধিকার দিন, জনগণ জানে কাকে ভোট দিতে হয়।
আগামী নির্বাচন ফ্রি হলেও ফেয়ার নাও হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, তাই আগামী নির্বাচন কেমন হবে তা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। ফেয়ার ইকেলশনের জন্য সরকারকেও এ চ্যালেঞ্জ নিতে হবে, কারণ আন্তর্জাতিক মহল তাকিয়ে আগামী নির্বাচনের দিকে।
নির্বাচন ফ্রি হলেও ফেয়ার না হওয়ার অনেক ইতিহাস রয়েছে জানিয়ে এম শাখাওয়াত হোসেন বলেন, দীর্ঘলাইনে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছেন ভোট দেওয়ার জন্য অথচ বুথে ঘটে অন্য ঘটনা। বুথে গিয়ে তাকে বলা হলো তুমি হাতে কালি মেখে চলে যাও আর ব্যালট পেপার দিয়ে দাও- এমন যেন না হয়।
সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, এসব দেখার বিষয় ইসির। কিন্তু এখন ইসি নিজেরা মাঝে মধ্যে এমন সব কথা বলছে যা তারা নিজেদের বিতর্কিত করে ফেলছে। মনে রাখতে হবে বিশ্ব তাকিয়ে আগামী নির্বাচনের দিকে। সরকারের অধীনে এর আগে নির্বাচন হলেও এবারই প্রথম দলীয় সরকারের অধীনে সব দল অংশ নিচ্ছে। মনে রাখতে হবে, আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন ফ্রি ও ফেয়ার করতে ইসির জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। একে গ্রহণযোগ্য করতে সব রকম সহযোগিতা করতে হবে সরকারকে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় যেসব হামলার ঘটনা ঘটেছে সেগুলো তদন্তে কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের সময় যেসব হামলার ঘটনা ঘটে, সেগুলোর তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠন করতে হবে। তদন্তে যারা দোষী হবে, তাদের শাস্তি দিতে হবে।
মিন্টু বলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ও পরে নানা ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্নজনের ওপর হামলাও হয়েছে। সেসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এখনও হয়নি। ওই ঘটনাগুলোর তদন্তের জন্য একটি তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। তদন্তে যারা দোষী হবে, তাদের শাস্তি দিতে হবে। ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে আসছেন বলে অনেকেই সমালোচনা করছেন। তবে আমি কখনও সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করিনি। আমি আমার মতো করে ব্যবসা করেছি, যোগ করেন এফবিসিসিআই-এর সাবেক এই সভাপতি। তিনি বলেন, দেশের বর্তমান সামাজিক রাজনৈতিক অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে জিন-পরীকে আসতে হবে। তাতে যদি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন করা নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। আমরা জেনুইন একটি ইলেকশন চাই। সেটা করতে হলে বেশ কয়েকটি কাজ করতে হবে। তার মধ্যে রয়েছে- সুষ্ঠু ভোটার তালিকা, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান, নির্বিঘেœ ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়টি। এসব নির্বাচন কমিশনকেই নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, দেশে এখনও গণতন্ত্র অনুপস্থিত রয়েছে। কারণ এখন আর ভোটাধিকার নেই। দেশে আজ নিয়ন্ত্রিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সরকার সংবিধানকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। আগামী নির্বাচনে ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ইসি (ইলেকশন কমিশন) এ ব্যবস্থাকে আর প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। তড়িঘরি করে ইভিএম ব্যবহার করলে এর দায়ভার ইসিকেই নিতে হবে।
মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ড. কামাল হোসেনের মতো দায়িত্বশীল ও বিচক্ষণ নেতা যখন নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। যখন কর্নেল (অব.) অলি আহমেদের মতো নেতাও শঙ্কা প্রকাশ করেন। তখন তাদের কথা উড়িয়ে দিতে পারি না। আমরা জানি না আদৌ এই নির্বাচন নিয়ে কোনো খেলা হচ্ছে কি-না। তবে আমরা এই নির্বাচন নিয়ে কোনো খেলা দেখতে চাই না।
মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, কক্সবাজারের এমপি বদির পরিবর্তে তার স্ত্রীকে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে সমালোচনা চলছে। বদির বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে। সব অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও তাকে এবার মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না। এখন তার স্ত্রীকে মনোয়ন দেওয়ায় অনেকেই সমালোচনা করছেন। তবে আমি বলতে চাই, তারেক রহমান একজন দণ্ডিত অপরাধী। তার স্ত্রী জোবায়দা রহমান যখন রাজনীতিতে আসবেন, নির্বাচনে আসবেন- এই সমালোচনাকারীরা তখন কী করবেন। তিনি বলেন, আমরা ফ্রি-ফেয়ার নির্বাচন চাই। নির্বাচনে যে দলই জিতবে, তারাই ক্ষমতায় আসবে। আমরা জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
লেঃ জেঃ (অবঃ) মাইনুল ইসলাম বলেন, আমাদের নির্বাচন কমিশন বাঘ কিন্তু খাচার বাঘ। তাকে সব ক্ষমতা দেয়া আছে। কিন্তু তিনি তা প্রয়োগ করার সাহস পাচ্ছেন না। এমনকি তিনি প্রশাসন রদবদলও করার সাহস পাচ্ছেন না। ইসি যদি নিরাপত্তার চিন্তা করে তাহলে সাধারণ ভোটাররা কি করবে।
এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এই নির্বাচনে ইভিএম নিয়েও আলোচনা চলছে। তবে ইভিএম ব্যবহার করার মতো মানুষের মধ্যে এখনও সচেতনতা আসেনি। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন করার দায়িত্ব ইসির। কিন্তু তাদের কর্মকা- দেখে মনে হয় না তারা ভালো কিছু করতে পারবে। সাধারণ মানুষের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নেই। তাহলে তারা কীভাবে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিবে আমার বুঝে আসে না। তিনি বলেন, তারা এখনও প্রশাসন রদবদল করতে পারেনি। রদবদল করলেতো তাদের কোনো অসুবিধা নেই। যে ডিসি, সে তো ডিসিই থাকছে। তাহলে বদলি করতে তার অসুবিধা কোথায়। তাদের কর্মকা- দেখে মনে হয়না দেশে সুষ্ঠু কোনো নির্বাচন হবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের আর এক মাস বাকি। কিন্তু সারা দেশে এখনও বিরোধী নেতা কর্মীরা এলাকায় যেতে পারছে না। তাহলে তারা কিভাবে নির্বাচন করবে। ইসি সাহস করে তার ক্ষমতা প্রয়োগ করলেই সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। কিন্তু তারা তা করছে না। আর এ কারণেই বুড়িগঙ্গায় বিএনপি প্রার্থীর লাশ পাওয়া যাচ্ছে।
স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা, না রাখা কোনভাবেই ঠিক হয়নি। ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা, না রাখায় আমার ভোটটিও অন্য কেউ দিয়ে দিচ্ছে। আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে চাচ্ছে ইসি। এটি সারা বিশ্বে একটি বিতর্কিত ইস্যু। এটি কোনভাবেই ব্যবহার করা ঠিক হবে না।
এডভোকেট স ম রেজাউল বলেন, সরকারের সুষ্ঠু নির্বাচন করার ইচ্ছা রয়েছে। নির্বাচনে ইসিকে সব ধরনের ক্ষমতা রয়েছে। ইসি চাইলেই তা ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু তিনি যদি নিজেই তা ব্যবহার না করে আওয়ামী লীগার সাজেন তাহলে আমাদের কি করার আছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে আমরা কোনো দিনই সাফাই গাইনি। কিন্তু এ নির্বাচন না করার কোনো উপায় ছিল না। আমরাও ভোটাধিকার চাই। আমরাও চাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এজন্য সব ধরনের সহযোগিতা আমাদের পক্ষ থেকে থাকবে।
বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, আমাদের দেশে দলবাজি থাকলেও রাজনীতি নেই। আগামী নির্বাচনে আমি নিজেও একজন প্রার্থী। কিন্তু আমি এখনও এলাকায় যেতে পারিনি। তাহলে কীভাবে নির্বাচন হবে। তিনি আরও বলেন, দেশে আজ মানুষের কোনো ভোটাধিকার নেই। কিন্তু মানুষ ভোট দিতে চায়। মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু কমিশন সে অবস্থা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ফেমার চেয়ারম্যান ড. মনিরা খান বলেন, সময় এসেছে ইসির দায়িত্ব পালনের। কিন্তু ইসির কার্যক্রমে আমরা এখনও সন্তুষ্ট হতে পারিনি। কমিশনের যদি স্বদ ইচ্ছা থাকে তাহলে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে। তা না হলে দেশে আবারও ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচন হবে। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।
ব্যবসায়ী আব্দুল হক বলেন, দেশে কোনো অপরাধীর বিচার হচ্ছে না। প্রতিদিনই দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। ব্যাংক লুট হচ্ছে। কিন্তু কোন প্রতিকার নেই। বিচার বিভাগ কি করছে। এসবের বিচার না হওয়ার কারণেই অপরাধ বাড়ছে। তিনি বলেন, ভোটাধিকারের জন্য পাকিস্তান ভাগ হয়েছিল। জানি না আমাদেরও ভোটাধিকারের জন্য কি করতে হয়। আমাদের সময় এসেছে ভোটাধিকার নিয়ে কথা বলতে হবে। তা না হলে মানুষ আর তার ভোটাধিকার ফিরে পাবে না।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৫২৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৫/১১/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast