www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ডিজিটাল আইন

সাংবাদিকসহ গণমাধ্যম কর্মীরা অব্যাহতভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধিতা করে আসছেন। জনমনে প্রশ্ন জাগতে পারে, কেন এই বিরোধিতা? এমন প্রেক্ষাপটে সম্পাদক পরিষদের ব্যাখ্যা তুলে ধরা যায়। তাহলে বিষয়টি সবার কাছে স্পষ্ট হতে পারে।
জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কিছু মৌলিক ত্রুটি আছে, সে ব্যাপারে সম্পাদক পরিষদের ব্যাখ্যা হলো- ১. ডিজিটাল যন্ত্রের মাধ্যমে অপরাধ সংঘটন প্রতিহত করা এবং ডিজিটাল অঙ্গনে নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়নের চেষ্টা করতে গিয়ে এমন একটি আইন করা হয়েছে, যা সংবাদমাধ্যমের কর্মকা-ের ওপর নজরদারি, বিষয়বস্তুর ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং আমাদের সংবিধান প্রদত্ত সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং নাগরিকদের বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের সুযোগ সৃষ্টি করবে। ২. এই আইন পুলিশকে বাসা-বাড়িতে প্রবেশ, অফিসে তল্লাশি, লোকজনের দেহ তল্লাশি এবং কম্পিউটার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, সার্ভার ও ডিজিটাল প্লাটফর্ম সংক্রান্ত সবকিছু জব্দ করার ক্ষেত্রে সীমাহীন ক্ষমতা দিয়েছে। পুলিশ এই আইনে দেয়া ক্ষমতা বলে পরোয়ানা ছাড়াই সন্দেহবশত যে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারবে। এক্ষেত্রে পুলিশের কোনো কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের অনুমোদন নেয়ার প্রয়োজন নেই। ৩. এই আইনে অস্পষ্টতা আছে এবং এতে এমন অনেক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যার ভুল ব্যাখ্যা হতে পারে এবং সহজেই সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে। ৪. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এমন এক আতঙ্ক ও ভীতির পরিবেশ তৈরি করবে, যেখানে সাংবাদিকতা, বিশেষত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে। ৫. এই আইন সংবাদমাধ্যমের কর্মী ছাড়াও কম্পিউটার ও কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ইত্যাদি ব্যবহারকারীরা সব ব্যক্তির মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করবে।
সরকার পক্ষের বক্তব্য অবশ্য অন্যরকম। তারাতো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দোষের কিছু দেখছেন না। ২০০৬ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন (আইসিটি অ্যাক্ট) প্রণীত হওয়ার সময় সরকার বলেছিল, সাংবাদিকদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই; কারণ আইনটি করা হয়েছে সাইবার অপরাধ ঠেকানো ও সাইবার অপরাধীদের শাস্তি দেয়ার লক্ষ্যে। বাস্তবতা হলো, সাংবাদিকসহ অন্য যারা স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার চর্চা করতে গেছেন, তারা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় কারাভোগ করেছেন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। সম্পাদক পরিষদ তাদের ব্যাখ্যায় ওইসব উদাহরণ তুলে ধরে বলেছেন, এখনো একইভাবে বলা হচ্ছে যে, সাংবাদিকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ ঘটেনি, কিন্তু আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে যে, এই আইনেও সাংবাদিকরা আবার একই ধরনের হয়রানির মুখোমুখি হবেন। কারণ এই আইন স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রকৃতির পরিপন্থী এবং তা অনুশীলনের প্রতিকূল, যে সাংবাদিকতা জনগণের জানার অধিকার সুরক্ষা করে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি জনসমক্ষে উন্মোচন করে। সম্পাদক পরিষদের ব্যাখ্যায় আরো বলা হয়েছে, অন্য ক্ষেত্রগুলোতে প্রয়োজন ‘নিয়ন্ত্রণ’, কিন্তু সংবাদমাধ্যমের প্রয়োজন ‘স্বাধীনতা’। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কেন্দ্রীয় বিষয় কেবলই ‘নিয়ন্ত্রণ’, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা এতে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। এটা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অন্যতম মৌলিক ত্রুটি, এর ফলে এই আইন সংবাদমাধ্যমের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। আমরা মনে করি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রত্যাখ্যানের ব্যাপারে সম্পাদক পরিষদ যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তা খুবই স্পষ্ট এবং সকল বিবেচনায় গ্রহণযোগ্য। বাংলাদেশের সম্পাদকদের বক্তব্য মেনে নেয়ার মধ্যে রয়েছে সবারই কল্যাণ।
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৫৩৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ৩০/০৯/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

 
Quantcast