www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

উম্মুক্ত কারাগার

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে যখন মিয়ানমারকে চাপ দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, ঠিক সেই মুহূর্তেই রোহিঙ্গাদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাং। গত ৩০ এপ্রিল মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে দেশটিতে সফররত জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলের কর্মকর্তাদের তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গারা শুধু তাদের জন্য তৈরি ‘আদর্শ গ্রামে’ই নিরাপদ। বার্তা সংস্থা এএফপি’র বরাত দিয়ে গতকাল শনিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে র‌্যাপলার। বাংলাট্রিবিউন
বার্মিজ সেনাপ্রধানের বক্তব্যে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরা এবং ফিরে যাওয়ার পর তাদের স্থায়ী বসতি নিয়ে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কেননা, তার বক্তব্যের মানে দাঁড়ায়, কথিত ‘আদর্শ গ্রামে’র বাইরে যেতে দেওয়া হবে না রোহিঙ্গাদের। অর্থাৎ, আবদ্ধ পরিবেশেই দিন যাপন করতে হবে তাদের।
মিন অং হ্লাং বলেন, রোহিঙ্গারা যত দিন তাদের জন্য তৈরি ‘আদর্শ গ্রামে’ থাকবে, তত দিন তারা নিরাপদ। নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে, রোহিঙ্গারা তাদের জন্য সুনির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে থাকলে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও দুশ্চিন্তার প্রয়োজন নেই।
এর আগে জাতিসংঘের অনুসন্ধানে বার্মিজ সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ যৌন সন্ত্রাসের আলামত পেলেও মিয়ানমারের সেনাপ্রধান তা নাকচ করে দেন। এরইমধ্যে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে তাদেরকে ‘নিষিদ্ধ তালিকা’য় রেখেছে জাতিসংঘ। তবে সম্প্রতি নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বার্মিজ সেনাপ্রধান দাবি করেছেন, মিয়ানমারের সেনা-ইতিহাসে কোনও যৌন নিপীড়নের নজির নেই।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে জাতিগত নিধনযজ্ঞ শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী বৌদ্ধরা। জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় সাত লাখ মানুষ।
জাতিসংঘের এক অনুসন্ধানী তদন্তে উঠে আসে, রোহিঙ্গা নারীরা ধারাবাহিকভাবে দেশটির সেনাবাহিনীর সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। ঘটনা তদন্তে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে গিয়ে সেইসব ভয়াবহ যৌন নিপীড়নের ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারে সহিংসতা ও যৌন নিপীড়নের ঘটনা তদন্তে গঠিত জাতিসংঘের অনুসন্ধানী দল।
জাতিসংঘের দুই কর্মকর্তা জানান, রোহিঙ্গাদের রাখাইন থেকে তাড়ানোর অস্ত্র হিসেবে সংঘবদ্ধ ধর্ষণকে ব্যবহার করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তবে সম্প্রতি জাতিসংঘ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে শীর্ষ জেনারেল দাবি করেন, রোহিঙ্গা নারীদের ওপর কোনও রকম যৌন নিপীড়ন চালানো হয়নি। তার ভাষায়, ‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সবসময় নিয়মতান্ত্রিক। যারা আইন ভঙ্গ করে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেই আমরা।’
তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের ধর্ম ও সংস্কৃতির সঙ্গে পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। যদি কাউকে দোষী পাওয়া যায় তাকে অবশ্যই শাস্তি দেওয়া হবে।’
এদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর আক্রমণাত্মক অবস্থানের মুখেও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। গত ১ মে রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনের পর পরিষদের প্রতিনিধি দলটি এ আহ্বান জানায়। নেপিদোতে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা জাতিসংঘের সদস্য দেশ হিসেবে মিয়ানমারকে কিছু বাধ্যবাধকতা পালনের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
জাতিসংঘে নিয়োজিত কুয়েতের প্রতিনিধি মানসুর আল ওতাইবি বলেন, ‘আমরা মিয়ানমার সরকারকে নতুন কিছু করতে বলছি না। দেশটি জাতিসংঘের সদস্য এবং জাতিসংঘের অনেক কনভেশনেরও সদস্য। শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানদ-ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন।’
জাতিসংঘে নিয়োজিত পেরুর দূত গুস্তাভো মেজা-চুয়াদ্রা বলেন, ‘মূলত আমরা যে বার্তাটি দিতে চাইছি তা হলো, প্রত্যাবাসনকৃত শরণার্থীদের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক সংগঠন বিশেষ করে জাতিসংঘের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করা। বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার আগে এখানে (মিয়ানমার) রোহিঙ্গাদের কী পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল তা নিয়ে তদন্ত করার গুরুত্ব উপস্থাপন করেছি আমরা।’
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৬৯৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৬/০৫/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast