www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

উগ্র ভারত নীতি

এশিয়ার দুই বৃহৎ প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারত ও গণচীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে এবং এই ‘যুদ্ধ’ ব্যবসা-বাণিজ্যের সীমা ছাড়িয়ে দু’ দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপরও অশুভ প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে, ভুটান সংলগ্ন ভূখ- ডোকলামের মালিকানা নিয়ে কয়েক মাস ধরে চলমান তীব্র উত্তেজনাকর ও সংঘাতময় পরিস্থিতির মধ্যে ভারত গত সপ্তাহে হঠাৎ চীনের ৯৩টি পণ্যের ওপর শাস্তিমূলক শুল্ক তথা অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি আরোপ করেছে। এর ফলে ভারতে চীনের কেবল রফতানিই অনেক কমে যাবে না, বৈদেশিক মুদ্রার আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি চীনের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ওদিকে নিজেদের সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ভারত সরকার অভিযোগ করেছে, দেশটির বাজারে বিক্রি বাড়ানোর উদ্দেশ্যে চীন উৎপাদন খরচের চাইতেও কম মূল্যে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে। এর ফলে একদিকে চীনা পণ্যের বিক্রি বাড়ছে অন্যদিকে ক্রমাগত কমছে ভারতীয় পণ্যের বিক্রি। এভাবে ভারতের দেশীয় পণ্য মার খাচ্ছে এবং ক্ষতি স্বীকার করতে গিয়ে অনেক শিল্প-কারখানা এমনকি বন্ধও হয়ে যাচ্ছে। এসবের মধ্যে মোবাইল ফোনের মতো বেশি প্রচলিত পণ্যের পাশাপাশি ইস্পাতের তৈরি ভারি অনেক পণ্যও রয়েছে। মূলত দেশীয় পণ্যকে নিরাপত্তা দেয়ার অজুহাত দেখিয়ে অতীতেও ভারত চীনা পণ্যের ওপর শাস্তিমূলক অ্যান্টি ডাম্পিং ডিউটি আরোপ করে দেখেছে। কিন্তু পরিস্থিতিতে উন্নতি হয়নি। সে কারণেই ৯৩টি পণ্যের ওপর নতুন করে এই শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার।
অন্যদিকে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ভারতকে ভয়াবহ কুফল ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করেছে চীন। দেশটির কমিউনিস্ট সরকারের মুখপাত্র গ্লোবাল টাইমসের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের এ ধরনের ‘দুর্বল সিদ্ধান্তের জন্য’ চীনের অর্থনৈতিক স্বার্থ সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সত্য, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে ভয়াবহ কুফল ভোগ করার জন্য ভারতকেও প্রস্তুত থাকতে হবে। চীনা পণ্যের ব্যাপারে ভারতের নেতিবাচক ও শত্রুতাপূর্ণ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির কমিউনিস্ট সরকার চীনা কোম্পানিগুলোকে ভারতে বিনিয়োগ করার এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর আগে দ্বিতীয়বার ভেবে দেখার এবং সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির স্বীকার করার জন্য প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এককেন্দ্রিক কঠোর কমিউনিস্ট সরকারের অধীনস্ত বলে চীনের কোনো কেম্পানির পক্ষেই সরকারকে পাশ কাটিয়ে ভারতে বিনিয়োগ বাড়ানো কিংবা উৎপাদনসহ ব্যবসা-বাণিজ্য অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে না। তেমন অবস্থায় বন্ধ হয়ে যাবে ভারতে তৎপর অসংখ্য চীনা শিল্প-কারখানা এবং চাকরি হারাবে হাজার হাজার ভারতীয় শ্রমিক। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে ভারতের সমাজ ও অর্থনীতির ওপর। শুল্কবিরোধী প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এ বিষয়টিকেই সামনে নিয়ে এসেছে চীন।
দেশ দুটির অর্থনৈতিক সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যাভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ডোকলামকেন্দ্রিক সাম্প্রতিক সংকটে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারত। কারণ, চীনে ভারতের রফতানি কমেছে ১২ দশমিক তিন শতাংশ তথা এক হাজার ১৭৫ কোটি মার্কিন ডলার। কৌতূহলোদ্দীপক একটি তথ্য হলো, রফতানি কমলেও একই সময়ে চীন থেকে ভারতের আমদানি বেড়েছে প্রায় দুই শতাংশ- মার্কিন মুদ্রায় যার পরিমাণ পাঁচ হাজার নয়শ’ কোটি ডলার। জানা গেছে, এমনিতেই ভারতের তুলনায় চীন চার হাজার সাতশ’ কোটি ডলারের বেশি পণ্য রফতানি করে থাকে। এমন অবস্থায় ভারত সত্যিই শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করলে এবং সিদ্ধান্তটি বজায় রাখলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে কমিউনিস্ট দেশটিকে। জবাবে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে চীন যদি ভারতে চীনা কোম্পানিগুলোর শিল্প-কারখানা বন্ধ করে দেয় এবং চীনের শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ীরা যদি আর বিনিয়োগ না করেন তাহলে ভারতীয় শ্রমিকরা তো চাকরি হারাবেই, অন্য অনেকভাবেও ভারতকে যথেষ্ট পরিমাণে খেসারত দিতে হবে। এজন্যই ডোকলামের দখল ও মালিকানাকেন্দ্রিক সংকটের ঘটনাপ্রবাহে ভারতের প্রতি সংযম দেখানোর আহবান এসেছে বিভিন্ন দেশ ও গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে। গত সোমবার ভারতে আশ্রিত চীনের ধর্মীয় নেতা দালাইলামা একথা পর্যন্ত বলেছেন যে, যুদ্ধ-সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার পরিবর্তে চীনা বৌদ্ধদের আরো বেশি সংখ্যায় তীর্থে আসার সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে ভারতের উচিত চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা এবং শান্তি বজায় রাখা। যুদ্ধ শুরু হলে চীন ও ভারতের কেউই জিততে পারবে না বলেও মন্তব্য করেছেন দালাইলামা।
বলার অপেক্ষা রাখে না, দুই বিরাট প্রতিবেশি রাষ্ট্র চীন ও ভারতের বাণিজ্য যুদ্ধ এবং ডোকলামের দখল ও মালিকানা নিয়ে চলমান সংকট সকল বিচারেই অত্যন্ত আশংকাজনক। প্রায় তিনশ’ কোটি জনসংখ্যার কারণে শুধু নয়, উভয় দেশের হাতেই পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে বলেও বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ দেশ দুটির মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কামনা করে। প্রতিবেশি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশও চায় চীন ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যাতে সংঘাতমুখী না হয়। আমরা আশা করতে চাই ডোকলাম সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য উভয় দেশই উদ্যোগী হয়ে উঠবে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে দু’দেশের বাণিজ্য যুদ্ধের অবসান ঘটবে। এশিয়ার এ অঞ্চলের জন্য তো বটেই, বিশ্বশান্তির জন্যও চীন ও ভারতের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া ও বন্ধুত্বপূর্ণ থাকা দরকার বলে আমরা মনে করি। আমরা তাই সংযম দেখানোর জন্য উভয় দেশের প্রতি আহবান জানাই।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৬৬২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২১/০৮/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • একটা ব্যাপার কি এমন বলা যায় যে , ভারতের একটা প্রস্তুতিই আছে নিজের শিল্প প্রসারে ? যার কারনে চিনা শিল্প উঠিয়ে নিয়ে গেলেও ভারত তার নিজস্ব বিনিয়োগ বাড়াবে । এমন নয় তো ব্যাপার টা ?
  • ‌‍ধ্রুবক ২২/০৮/২০১৭
    ভারত-চীন সম্পর্কে চীন বেশি উগ্রভাব দেখিয়েছে, যদি বিগত এক বছরের হিসেব করা যায়।
 
Quantcast