www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

নবশংঙ্খা ও নববর্ষ

বাংলাদেশ একটি কৃষিভিত্তিক দেশ। ‘খামার বাংলা’ হিসেবে আমাদের স্বদেশ বিশেষভাবে পরিচিত। কৃষিকে ভিত্তি করেই মানুষ এগিয়ে যায় শিল্পে। প্রগতির এই পথে ফসল উৎপাদনের সাথে সাথে প্রয়োজন হয় জ্ঞান-বিজ্ঞান, সুশাসন ও নৈতিকতার। প্রগতির এই অভিযাত্রাকে সাফল্যম-িত করতে হলে প্রয়োজন গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকার। বিগত বছরে গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকার সমুন্নত রাখার ব্যাপারে আমাদের সরকার, রাজনীতিবিদ ও পেশাজীবীরা কেমন ভূমিকা পালন করেছেন, তা নববর্ষের এই শুভলগ্নে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। এই হিসেবটা নিতে গেলে যে কোনো সচেতন মানুষের অন্তর দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়বে। কারণ বিগত বছরে রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সুশাসন তথা কোনো ক্ষেত্রেই আমরা আশাপ্রদ ভূমিকা পালনে সফল হইনি। বরং দেশ ও জাতির অগ্রগতির বদলে ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির উগ্রতা দেশকে হিংসা-বিদ্বেষ ও সহিংসতার এমন এক আগ্নেয়গিরিতে পরিণত করেছে, যেখানে মানুষের স্বাভাবিক জীবনই অচল হয়ে পড়েছে। যে সমাজে, যে রাষ্ট্রে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়ে সেখানে প্রগতি আসবে কেমন করে? আমরা জানি, শিক্ষা-দীক্ষা ও অর্থনীতিতে আমরা পিছিয়ে আছি। এমন অবস্থায় উন্নয়নের লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে আমাদের প্রয়োজন সহিষ্ণুতা, স্থিতিশীলতা ও কর্মসংস্কৃতির বিকাশ। কিন্তু এর বদলে আমরা লক্ষ্য করেছি হিংসা-বিদ্বেষ, অসহিষ্ণুতা ও ব্লেম-গেমের অপরাজনীতি। এমন অবস্থায় দিন বদলের ওয়াদাবদ্ধ সরকার কাক্সিক্ষত আচরণের মাধ্যমে উত্তম উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারতো। কিন্তু সরকার সে পথে হাঁটেনি। বরং সরকার দমন-অবদমন ও জেল-জুলুমের হিংসাত্মক পথে চলে গোটা দেশকে একটি কারাগারে পরিণত করেছে। সরকারের দায়িত্ব যেখানে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সংহতির চেতনায় এগিয়ে যাওয়া, সেখানে সরকার যেন জাতিকে বিভক্ত করার আত্মঘাতী পথকেই বেছে নিয়েছে। এমন দৃশ্যে জনগণ আশাবাদী হবে কেমন করে? সাম্প্রতিক সময়ে ব্লগারদের হত্যা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গণহত্যা ও হেফাজতে ইসলামের মহাজাগৃতি জাতিকে যেন কালান্তরের মোহনায় এনে দাঁড় করিয়েছে। ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও দলীয় স্বার্থের দামামার বদলে এখন প্রয়োজন আত্মবিশ্লেষণ ও নৈতিক জাগরণ। এমন জাগরণ ছাড়া আমাদের জাতীয় মুুক্তি সম্ভব নয়। কালান্তরের এমন এক সময়ে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি বাংলা ১৪২৪ সালকে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এ বছরও হালখাতা খুলবে, ইলিশ-পান্তা খাবে, আবেগে লোক-সঙ্গীত গাইবে, নববর্ষে মেলারও আয়োজন হবে। নববর্ষে সাধারণ মানুষের এমন আয়োজনে সাংস্কৃতিক চেতনার চিত্র যেমন লক্ষ্য করা যায়, তেমনি লক্ষ্য করা যায় জীবনকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার ইতিবাচক আকাক্সক্ষাও। কিন্তু উৎসবের আমেজ শেষ হওয়ার পর মানুষ যখন বাস্তবতায় ফিরবে, তখন কি সে আসলেই আশাবাদী হতে পারবে? এমন প্রশ্ন আজ সরকারের কাছে, রাজনীতিবিদদের কাছে এবং পেশাজীবীদের কাছে। নববর্ষের এ প্রশ্নের জবাব কে কিভাবে দেবেন সেটাই হবে আগামীতে দেখার বিষয়।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৭১৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৩/০৪/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast