www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মাতৃভাষার মর্যাদা কী রক্ষা করতে পেরেছি

একুশে ফেব্রুয়ারী আমাদের জন্য স্মরনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন।এ দিনে মাতৃভাষার জন্য রাজপথে নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে ইতিহাস রচনা করেছিলো ছাত্র সমাজ।
আজ পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাসে বাঙালিই একমাত্র জাতি যারা নিজের মাতৃভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে।এমন দৃষ্টান্ত আর কোথাও নেই।
ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধের পথ প্রসারিত হয়েছে।বলা চলে,মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ধাপই হচ্ছে ভাষা আন্দোলন। মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হওয়ার পিছনে ভাষা আন্দোলনের ভূমিকা অবিস্মরণীয়।
একুশে ফেব্রুয়ারীর ইতিহাস সম্পর্কে আমরা সকলেই কমবেশী অবগত। তাই সেটা আলোচনা না করে মূল আলোচনায় যাচ্ছি।
ভাষা আন্দোলনের এতটা বছর পরেও আমরা আমাদেরকে ভাষা আন্দোলনের চেতনায় উজ্জীবিত করতে পারি নাই।
আমাদের পূর্বপুরুষেরা যে ভাষাকে রক্ষা করার জন্য জেল-জুলুম আর নির্যাতিত হলো। আন্দোলন-সংগ্রাম আর বুকের তাজা রক্ত দিলো।
সেই বাংলা ভাষার মান কী আমরা রাখতে পেরেছি?না! আমরা রাখতে পারি নাই বরং শহীদদের রক্তের অবমাননা করেছি !
আজ আমরা আমাদের বাংলা ভাষাকে বাদ দিয়ে ভিনদেশী ভাষা চর্চায় ব্যাস্ত।আমি বলছি না ইংরেজি, ফরাসী কিংবা হিব্রু ভাষা আমাদের জানা যাবে না।শেখা যাবে না।অবশ্যই আমাদের ভিন দেশী ভাষা জানা প্রয়োজন আছে।কিন্তু বাংলাকে বাদ দিয়ে নয়।
বাংলাকে অবশ্যই আমাদের হৃদয়ে ধারণ করতে হবে।কিন্তু আজ কথায় কথায় ইংরেজি আর ভিন দেশী ভাষা বলা আমাদের বাঙালিদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।অথচ আমরা বাংলা ভাষার সঠিক ব্যাবহার করছি না, যথাযথ মর্যাদা দিচ্ছি না।

আমরা অনেকেই হিন্দি-ইংরেজি মানে ভিন দেশী সংগীত শুনছি অথচ নিজদের বাংলা সংগীত শুনছি না।হিন্দি-ইংরেজি গান শুনা নাকি এখন আধুনিকতার অংশ।হায় আফসোস! বাংলা সংগীত শুনে যতটা তৃপ্তি পাওয়া যায় ভিন দেশী সংগীতে তা কখনো পাওয়া যায় না। যাবে না।

আমাদের বাংলা সাহিত্যে এখন অনেক কবিতা,গল্প,উপন্যাস বিশ্বমানের।সেগুলো যদি অনুবাদ করা হয় তাহলে আন্তর্জাতিক ভাবে বেশ প্রশংসিত হবে।বিশ্বমানের লেখাগুলোর সাথে স্থান পাবে।অথচ আজ দুঃখের সাথে বলতে হয় বাংলা একাডেমি যথাযথভাবে সেগুলো অনুবাদ করছে না।

অফিসে-আদালতে এখনো পূনাঙ্গভাবে বাংলা ভাষার প্রচলন ঘটেনি এবং বর্তমানে উচ্চ শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ভাষার ব্যাপক ব্যবহার দেখতে পাই।সেখানে বাংলা বলা এখন রীতিমতো পাপ হয়ে দাড়িয়েছে।

কিছু কিছু ঘটনা দেখলে নিজেকে বাঙালি হিসাবে পরিচয় দিতে লজ্জা হয়!আজ বাংলাদেশ পুলিশের মতো একটি প্রতিষ্ঠান যারা নাকি ভাষা শহীদদের চিনে না।এই লজ্জা কোথায় রাখি?
উদাহারণ হিসাবে ২২ শে ফেব্রুয়ারী,২০২০ সালের কালের কন্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবরই যথেষ্ট। খবরে দেখানো হয়েছে 'ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কতৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার ব্যানারে
ভাষা-শহীদদের ছবির পরিবর্তে সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের ছবি'।

এবং ১৬ ই ডিসেম্বর,২০২০ সালের ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে' চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভার ব্যানারে শহীদ মিনারের ছবি ছাপানো হয়েছে'।
এই খবরগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারি বাঙালি হিসাবে আমরা আজ কতটা অজ্ঞ। নিজেদের গৌরবময় স্বাধীনতা দিবস আর মাতৃভাষা দিবসের সঠিক ইতিহাস পর্যন্ত জানি না। বীরশ্রেষ্ঠ আর ভাষা-শহীদদের ঠিকভাবে চিনতে পারি না। স্মৃতিসৌধ আর শহীদ মিনারের পার্থক্য করতে পারি না।

একুশে ফেব্রুয়ারী এলেই এখন শুধু ভাষা-শহীদদের স্মরণ করি।বাংলা ভাষা নিয়ে মাতামাতি করি।শহীদ মিনারে ফুল অপর্ণ করি।আর সারাবছর ফাক্কা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কী ভাষা-শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলা ভাষার মর্যাদা রাখতে পেরেছি?তাদের আত্মত্যাগের মূল্য কী দিতে পেরেছি?আমরা কী সত্যিকার অর্থে বাঙালি?
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ২১৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১০/১১/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • রইসউদ্দিন গায়েন ০৭/১২/২০২১
    ধন্যবাদ আপনাকে এই প্রবন্ধটি উপস্থাপন করার জন্য! আপনি কিছু ব্যক্তির প্রতি সামান্য আলোকপাত করেছেন-তা ঠিকই। ভাষার জন্য আত্ম-বলিদান, সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। মাতুভাষার প্রতি তাঁদের আত্ম-নিবেদনের ইতিহাস জানার জন্য চাই, নবগঠিত বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস-যা মাতৃভাষা বাংলা ও ভাষা-শহিদদের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত।...শুভেচ্ছা নিরন্তর!!
  • বেশ রচিলেন।
 
Quantcast