www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

চার ভাঁজের চিরকুট

হটাৎ টুপটাপ বৃষ্টি শুরু হল , এক্কেবারে কাক ভেজা অবস্থা , জহিরের টংএ বসে দিব্বি চা খাচ্ছিলাম আর কি হল এটা ?
ধ্যাত কিচ্ছু ভালো লাগে না ... কাক ভেজা অবস্থাতেই মেসে ফিরলাম , মেসে ফিরতেই ফোনের ক্রিং ক্রিং শব্দ !!!
আম্মা ফোন করছেন ধুর ফোন ধরতে ইচ্ছা করছে না । কি হবে ধরে ঐ একই ঘ্যানরঘ্যানর পেনরপেনর !!!
বাবা চাকরী বাকরির কি হল চেষ্টা করছিস তো না বাবা ?
তুই তো জানিস পরিবারের কি অবস্থা ! তোর আব্বা মারা যাবার পর থেকে শুধু পেনশনের টাকায় ফ্যামিলিটা চালাতে আমার কি কষ্ট হচ্ছে ?
বুঝস তো না বাবা?
আম্মার কথা শুনলে মনে হয় বড় বড় কম্পানীর লোকেরা আমাকে চাকরী দেওয়ার জন্য বসে আছেন শুধু মাত্র আমার যাওয়ার অপেক্ষা ,
আসো বাবা আনাফ আমরা তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম তুমি এত দিন দেরি করলে কেন ?
এই নাও তোমার চাকরী কালকে থেকেই জয়েন করো ঠিক আছে ?
উফফ মেজাজ টা আবারও খারাপ হয়ে গেলো ধ্যাত !!!
গত তিন বছর যাবত বেকার হয়ে বসে আছি ,
এই তিন বছরে যত গুলো কোম্পানি সার্কুলার দিল প্রায় সব গুলোতে এপ্লাই করলাম ভাইভা পর্যন্তই যাওয়া যায়
এর পর আর কেউ ডাকে না !!! ডাকবেই বা কেন ? কি এমন result আমার ?
সিজিপিএ ৩ এই সিজিপিএ দিয়ে কি হয় ? আর চাচা মামাও নাই বড় বড় জায়গায় , ইসস কেন যে পড়াশুনাটা ঠিক মত করলাম না ?
বৃষ্টি কমে গেছে অনেক্ষন আগেই বের হয়ে পড়লাম দুইটা টিউশনি করাতে হবে
এক একটাতে দেড় ঘণ্টা করে পড়ালেও তিন ঘণ্টা আর হেটে আসা যাওয়া আরও এক ঘণ্টা । মোট চার ঘণ্টা ।
দেশের খারাপ অবস্থার কারনে গত দুই মাস যাবত কোন ভাইভার ডাক পরে নাই তাই এই দুই মাসে নরসুন্দরের মুখ দর্শন করা হয়
নাই যার ফলে মুখে দাড়ি গোঁফের জঙ্গলে পরিনত হয়েছে যেখানে অনেক ধরনের পশুপাখি বিস্থার করতে পারবে !!
চেহারায় কিছুটা দেবদাস ভাব চলে এসেছে । দেখে মনে হচ্ছে পার্বতী তাকে ধোঁকা দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়েছে ,
কিন্তু আমাকে দেবদাস ভাবার কোন কারন নাই অবশ্য আমার পার্বতী আমার তরু ।
যে কখনোই এমন করবে না , কিন্তু ইদানিং আর তরুকে আমার সাথে জড়াতে ইচ্ছা করে না ...
যে মেয়েটাকে এতটা ভালোবাসি জেনে শুনে মেয়েটার জীবনটা কেনই বা নষ্ট করবো ?
আমি যখন মাস্টার্সে তখন তরুর সাথে প্রথম পরিচয় । সে ঢাকা ভার্সিটির চারুকলা বিভাগের প্রথম বর্ষের স্টুডেন্ট ।
খুব ভালো ছবি আঁকত মেয়েটা এখন আঁকে কিনা জানি না ...
ও আমার খুব কাছের এক বন্ধুর কাজিন । কয়েকবার কথা বলার পরই বুঝতে পারি মেয়েটা আমার প্রেমে পরে গেছে ,
আমি ঠিক বুঝতে পারনি কেন সে আমার প্রেমে পড়লো ? আমার যত টুকু মনে হয় প্রেমে পড়ার মত কোন ম্যাটেরিয়াল আমার মধ্যে নাই ।
ভাবলাম হয়তো একটা মোহ কাজ করছে তার ভেতর । আমারও তার প্রতি ভাললাগা কাজ করতে শুরু করলো ,
অনেক জমে উঠলো আমাদের প্রেম সারাদিন প্রায় একসাথে থাকতাম , ঢাকার নিরিবিলি রাস্তা গুলো খুজে বের করতাম রিক্সায় ঘুরে বেড়াবার জন্য ।
খুব কথা বলতো মেয়েটা আমি মাঝে মাঝে নচিকেতার গানের এক দুইটা লাইন গেয়ে শোনাতাম , জানিনা কেমন গাইতাম কিন্তু গান গাওয়ার পর তরুর দিকে তাকালে বুঝতে পারতাম সে আমার গান মুগ্ধ হয়ে শুনেছে । বুঝতে পারতাম আমার প্রতি মোহ না প্রেম কিছু একটা কাজ করছে তরুর ভেতর , ভয় হত কখনো যদি তরুর মোহ কেটে যায় যদি আমাকে ছেড়ে কখনো চলে যায় !!!!
প্রেমে পড়ার প্রায় একমাস পর একদিন তরুর চোখ দেখে মনে হল এই চোখের দিকে তাকিয়ে আমি সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারবো ।
সন্ধ্যায় নামিয়ে দিয়ে আসতাম তরুকে তার সেন্ট্রাল রোডের বাসায় । আর আমি ফিরতাম আমার এক রুমের মেসে ।
সময় ভালোই কাটছিল ঠিক যত দিন কল্পনার মধ্যে ছিলাম ।
কিন্তু যখনই মাস্টার্স শেষ হল তার কয়েকদিন পরই বাবা মারা গেলেন ঘাড়ের উপর পড়লো অনেক বড় বোঝা আর এদিকে চাকরীর কোন খবর নাই ।
বেকার ছেলেদের জীবন যে কতটা দুঃসহ সেটা যে বেকার থাকে সে জানে । বাড়ি যেতে পারতাম না,
সবাই দেখলেই জিজ্ঞেস করতো বাবা কোথায় চাকরী করছ ? সবাই এমন ভাবে তাকাত যেন বেকার থাকা আর কয়েকটা খুন করে সবার সামনে দিয়ে হেটে বেড়ানো একই জিনিস ।।
খুব অসহায় লাগতো নিজেকে তাই বাড়ি যাওয়া বন্ধ করে দিলাম ।
দুইটা টিউশনি করিয়ে যে টাকা নিজের খরচ লাগে তা রেখে বাকি টাকা বাসায় পাঠিয়ে দিতাম ।
আর রিক্সায় ঘোরা প্রেম করা সব তুঙ্গে উঠলো ।
তরু বার বার জিজ্ঞেস করতো কি হয়েছে বল আমাকে বল প্লিস কিন্তু আমি কিছুই বলতাম না ।
ছেলেদের একটা সাইকলজি নিজের কাছে স্পষ্ট হতে শুরু করলো নিজের দৈন্যতার কথা কাউকে বলতেই ভালো লাগে না এমনকি নিজের প্রেমিকাকেও না ।
মনে হত যদি তরু জানতে পারে আর যদি আমাকে ছোট ভাবতে শুরু করে ।
একসময় আমি ভয় পেতাম যদি কখনো তরু আমাকে ছেড়ে চলে যায় তবে কি হবে ?
কিন্তু এখন মনে হয় তরু যদি আমাকে ছেড়ে চলে যেত তবেই ভালো হত অন্তত একটা দায়িত্ব ঘাড় ছাড়া হত । আর তাছাড়া তরুদের পরিবারের অবস্থা আমাদের চেয়ে অনেক ভালো she deserves more better than me !!!
মনে মনে ভাবতাম কিভাবে তরুকে সরানো যায় আমি আগে ভেবেছিলাম আমার প্রতির তরুর হয়তো একটা মোহ কাজ করে কিন্তু দিন দিন তার প্রতি ধরনা আমার পরিবর্তন হতে শুরু করলো,
আমি বুঝতে পারতাম মেয়েটা হয়তো আমকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে ।
জীবন অনেক সহজ কিন্তু বাস্থবতা অনেক কঠিন , জানিনা তরুকে ছাড়া কিভাবে থাকবো ? কিন্তু তবুও তাকে সরিয়ে ফেলতে হবে অনেক Rude হতে হবে আমার !!!
হটাৎ করে পকেট থেকে ফোনটা বের করলাম নাহ গত রাত ৪ টায় শেষ ফোন করেছিল পাগলীটা আর কোন ফোন আসে নি ।
হয়ত অনেক অভিমানে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে , থাকারই কথা গত রাতে আমাকে প্রায় দুই ঘণ্টা ফোনে ওয়েটিং পেয়েছে , কি ভেবেছে সে ? কোন মেয়ের সাথে কথা বলছি ? তাকে খুব বলতে ইচ্ছা করছিল তরু আমি তোমাকে ইচ্ছে করেই ওয়েটিং এ রেখেছিলাম রুমমেট সাজ্জাদের ফোন থেকে আমার ফোন কল দিয়ে রেখে দিয়েছিলাম যাতে তুমি ওয়েটিং এ পাও এবং আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাও । কিন্তু যাকে সরানোর জন্য এত নাটক তাকে কেন বলতে যাবো সত্যিটা ?
দুইটা টিউশনি করিয়ে প্রচণ্ড ক্লান্ত হয়ে হেটে হেটে মেসে ফিরলাম ,
হাত মুখ ধুতে ওয়াসরুমে গেলাম তখনই ফোন বেজে উঠলো দৌড়ে বের হয়ে আসলাম । তরু ফোন করেছে । ফোনের স্ক্রিনে তরুর অবাক দুটি চোখ । আমি তাকিয়ে আছি ফোনের স্রিনের দিকে । ভেতরটা ভেঙে যাচ্ছে কিন্তু কোন ভাবেই ফোনটা ধরা যাবে না । রাত সাড়ে আঁটটা থেকে পৌনে দশটা পর্যন্ত ফোন আসলো , যতক্ষণ ফোন আসলো ঠিক ততক্ষণ আমি ফোনটা হাতে নিয়ে বসে ছিলাম ।
১৮৭ টা মিসডকল !!!
ভাবলাম মেয়েটা শান্ত হয়েছে ।
ক্ষুদা অনুভব করছিলাম ভাবলাম নিচে গিয়ে কিছু খেয়ে আসবো গত দুইদিন যাবত মেসে মিল নাই , খাওয়া দাওয়ার অবস্থা সূচনীয় । দুইবেলার জায়গায় একবেলা খেয়ে দিনাতিপাত করছি আমি আর সাজ্জাদ ...
হটাত দেখি একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন !!
আস্তে করে ফোনটা ধরলাম । ঐ পাশ থেকে ভেসে আসলো মামা আমি জহির, টং এ আপনার জন্য একটা জিনিস একজন রাইখ্যা গেছে আইয়্যা লইয়্যা যান ...
তড়িঘড়ি করে নিচে গেলাম গিয়ে দেখি একটা নীল রঙের হটপট । হটপট টা আমার পরিচিত খুব । বুঝতে বাকি রইলো না তরু এসেছিল খুব খারাপ লাগলো আমার এই রাতের বেলা মেয়েটাকে দাড় করিয়ে রেখেছি ফোনটাও ধরি নি !!! খুব খারাপ লাগলো আমার । হটপট হাতে আস্তে আস্তে বাসায় ফিরলাম । আমার হাতে হটপট দেখে সাজ্জাদ ও আনন্দিত ।
হটপট খুলতেই পেলাম চার ভাজের একটা চিরকুট । তরু চিঠি লিখতে খুব পছন্দ করে । আগে পারতো না আমি তাকে শিখিয়েছিলাম কিভাবে আঞ্চলিক ভাষায় প্রেমের কথা না লিখেও ভালবাসা প্রকাশ করা যায় চিঠিতে ।
আস্তে করে চার ভাজের চিরকুটটা খুললাম ।
হ্যালো মিস্টার
ক্ষুদা পেয়েছে নিশ্চয়ই ? তোমার জন্য নিজ হাতে তেহারি রান্না করলাম , একটাও কাঁচা মরিচ দেই নি ঝালে অরুচি তোমার এত আমার অজানা নয় !!!
তুমি গোল করে কাটা সালাদ পছন্দ কর না তাই কুচিকুচি করে কেটে সালাদ বানিয়ে দিলাম দেখো দুই নম্বর বাটিতে আছে, লবন দেওয়া নাই আলাদা করে পলিথিনে মোড়ানো লবন আছে মাখিয়ে নিও আগে মাখালে সালাদে পানি উঠে যেত তাই মাখাইনি । আর শোন না তিন নম্বার বাটিটা তোমার , কারন ঐটায় একটু বেশি আছে আর সবটুকুই ভালবাসায় মোড়ানো ।
ওহ আরেকটা কথা
আনাফ
(কিচ্ছু না তোমাকে ডাকতে আমার ভালো লাগে তাই ডাক দিলাম)
ইতি
তরু
আমার চোখ জ্বলজ্বল করছে মনে হয় কেউ একটু নাড়া দিলেই ঝরঝর করে পানি চলে আসবে ।
আবারও ফোন আসলো আবারও দুটি চোখের ছবি ভেসে উঠলো ফোনের স্ক্রিনে ।
তরুকে একটা কথা বলতে ইচ্ছা করছে
‘’গোপনে তোমারে সখা কত ভালোবাসি !!!’’
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৪৫৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৫/০২/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আবিদ আল আহসান ১৭/০৩/২০১৫
    বেশি রকমের সুন্দর
  • নহাজা য়াজিনা ০৩/০৩/২০১৫
    ভালোই। :)
  • ২৮/০২/২০১৫
    সুন্দর গল্প ।
  • সাইদুর রহমান ২৭/০২/২০১৫
    গল্পটি খুব ভালো লাগলো।
    শুভ কামনা রইলো।
  • গোপনের লেখাটি পড়লাম।
  • নাহিদ হাসান ২৬/০২/২০১৫
    ছোট ছোট অনুভূতির বিশাল মহাকাব্য।
  • স্বপ্নীল মিহান ২৫/০২/২০১৫
    ভালো লাগলো।
  • জাহিদুর রহমান ২৫/০২/২০১৫
    Valo laglo
  • রেশমী মণি ২৫/০২/২০১৫
    অসাধারণ গল্প, বানানো? নাকি সত্যি? তরুর ফোন উঠাইলা না কেন? এরকম ভালভাসার একটা মেয়ে হলেই যতেষ্ট। অবশ্য আমি তো মেয়ে। জানি না আমার..........
    • ফাহমিদা ফাম্মী ২৫/০২/২০১৫
      আসলে আনাফ চায় নাই তার এই বেকার জীবনের সাথে তরুকে জড়াতে ... তাই হয়তো ফোনটা ধরে নি :)
      এক একটা জীবন মানেই তো এক একটা গল্প !!! সত্য মিথ্যা কি আসে যায় :)
  • সবুজ আহমেদ কক্স ২৫/০২/২০১৫
    মুগ্ধ হলাম পড়ে...............। দারুন
  • প্রিয়তে রেখে দিলাম। কত ভালো লেগেছে বলে বোঝাতে পারবো না।
    • ফাহমিদা ফাম্মী ২৫/০২/২০১৫
      অসংখ্য ধন্যবাদ ... কেমন আছেন ভাই ?
      • শরীর ভালো না। আপনি ভালো?
 
Quantcast